হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-১৮

0
1430

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১৮

সবার বক্তব্যর মধ্যে আশিক হাল্কা গলায় কাশি দিয়ে বললো,
-বাবা আমরা হয়তো ভেবেছিলাম আমরা একটা সাধারণ ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে বোন এবাড়িতে রাখবো।কিন্তু আমরা ফুলের বেশি ভালো করতে গিয়ে শেষে খারাপ ফেলবো না তো?সে ছেলে কেমন হবে না হবে আমরা তো জেনে রাখি নি।আমাদের চোখের মণিকে তাঁরা মণি হিসেবে দেখবে নাকি পাথর সেটাও আমাদের জানা নেই।

বড় চাচা আশিকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-তুই ঠিক কি বুঝাতে চাইছিস?
-আমি বুঝাতে চাইছি বলতে, আমি আমার দিক থেকে চিন্তা করে দেখলাম অভ্রর সাথে পরীর জুটিটা বেঁধে দেয়া যায়।কারণ আমরা চাই আমাদের বোনের জীবনে এমন কেউ আসুক যে আমাদের বোনকে আমাদের মতোই মণির মতো যত্ন করে আগলে রাখবে , বোনকে অঢেল ভালোবাসবে।আর আমি বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছি অভ্র পরীর প্রতি খুব কেয়ারিং। ইন্ডাইরেক্টলি ও সব সময় পরীর ছায়া হয়ে আগলে রাখছে। পরীর দুষ্টুমি গুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রশ্রয় দিচ্ছে,ঠিক আমরা যেভাবে দেই। আমাদের কাছে হয়তো পরীর জন্য এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না।
আশিকের কথায় আকাশ একটু জোর পেলো ভেতরে,আশিকের কথা শেষ হতেই আকাশ বললো,

-অভ্রর মতো ছেলে চাইলে যেকোনো মেয়েকে পটাতে পারবে,ও চাইলে পরীকেও পটিয়ে নিজের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করতে পারতো,কিন্তু ও তা করে নি। ওর কাছে ফ্যামিলি প্রায়োরিটি টা সবার আগে। মানুষের পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে, বাই এনি চান্স দেখা গেলো প্রেম চলার পর জানতে পারলো আমাদের পরীবারের কেউ ওর কাছে দিতে রাজি না,কিংবা ওর পরিবার পরীকে নিতে রাজি না, তখন স্বপ্ন গুলো বৃথা স্বপ্নই থেকে যাবে। অভ্র যথেষ্ট প্র‍্যাকটিকাল তাই ও সরাসরি ওর পরিবারে জানিয়েছে।আর অভ্র পরীকে এমন ভাবে ভালোবেসেছে যেনো পরী কিছু বুঝতে না পারে।আমাদের কাছে পরী যতটা দামী অভ্রর কাছেও তাঁর থেকে বেশি দামী হয়ে উঠেছে এ কয়দিনে।

আকাশ আশিকের যুক্তিতে সবাই মত দেয়ার প্রচেষ্টাতেই আছে।তাঁরা যেরকম মন মানুষিকতার ছেলে চায় ফুলের জন্য, অভ্র সেদিকে গুণে ভরপুর।কিন্তু ফুলকে এতো ছোটো অবস্থায় বিয়ে দিতে চাচ্ছে না।সবার মন্তব্য এক জায়গায় এসে স্থির হলো,কোনো ভাবে যদি তাঁরা অকাদ করে রাখে। ফুল প্রাপ্ত বয়সী ম্যাচিউর হওয়ার পর বিয়েটা দেয়া যায় তাহলে রাজি।

সবার সিদ্ধান্ত এর থেকে বেশি হের ফের হলো না। এখন ফুলকে জানানোর পালা।ফুল যদি মত দেয় এই সম্বোধনে তবেই তাঁরা ব্যাপারটা নিয়ে এগুবে। ফুল রাজি না হলে ব্যাপারটা ওখানেই ফুল স্টপ।

রাতে ফুলকে কবিতা এসে ডেকে পাঠালো আয়মানের ঘরে ডাকছে।কবিতার সাথে আয়মানে রুমে গিয়ে দেখে সব ভাইয়েরা আয়মানের ঘরে বসে আছে। ফুল বুঝতে পারছে কিছু একটা বলা হবে ওকে এখানে।না হলে এই সময় ডাক দিয়ে ঘরে আনা,
শুধু আয়মান থাকলেও কোনো কথা ছিলো না,সব ভাই এক সাথে বসে আছে।মানে কোনো ব্যাপার আছে।

-তোমরা কি আমার বিচার বসাতে ডেকেছো?আমি তো বেশি কিছু করি নি শুধু সালমা বানুকে একটু ভয় দেখিয়েছি তাঁর গাছের পেয়ারাও খাই নি।আমি ভয় দেখিয়েছি তাঁর জন্য আলাদা কারণ আছে সালমা বানু আমাকে অপমান করেছিলো।

ফুলের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো,তখন আশিক হাসি থামিয়ে বললো,
-ভাইয়া জানো একটা প্রবাদ আছে,”ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি তো প্রসাদ খাই নি “ব্যাপার টা সেরকম হয়ে গেলো না? হা হা হা।
আয়মান ফুলকে ডেকে বললো,
-আয় বোন কাছে এসে বস একটু।কদিন ধরে তো তোকে দেখায় যায় না,নতুন বন্ধুবান্ধব পেয়েছিস সারাদিন শুধু আকাশ নানার সাথে থাকিস। বাকি ভাইরা জলে ভেসে গেলেও আপনার দেখার সময় নেই।

ফুল মুখ শুকনো করে বললো,
-এই দাদা কি বলছো তুমি?ভেবে বলছো?আমার সব ভাইরা আমার কাছে সমান। কেউ কম বেশি না।
-রাগ করে না বোন, আয় কাছে এসে বস দেখি।

ফুল আয়মানের কাছে গিয়ে বিছানায় উঠে পা ঝুলিয়ে বসলো,আয়মান ফুলের মাথা হাতিয়ে হাতিয়ে বললো,
-আমাদের পুতুলটা দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেলো।
-কোথায় বড় হলাম লম্বা হচ্ছি না তো।তোমরা সবাই কত লম্বা আর আমি কত ছোটো।তোমাদের সমান কবে হবো আমি?
– কে বলেছে আমাদের বোন লম্বা না? আর মেয়েরা ছেলেদের থেকে একটু খাটো হয়, এটাই নিয়ম।ছেলেদের মতো লম্বা হলে তো তাকে মেয়ে না ঐরাবত বলা হবে।
-তাও আরেকটু লম্বা হতে তো পারতাম।
আশিক ঠোঁট টিপে হেসে হেসে বললো,
-কেনো লম্বা হোস নি জানিস?
-কেনো?
-ছোটো বেলা থেকে দুধ,কমপ্ল্যান, হরলিক্স খাস নি বলে।যদি ঠিক মতো খেতিস তাহলে লম্বা হতি।আমরা খেয়েছি তাই আমরা লম্বা তুই খাস নি তাই লম্বাও হোস নি।
ফুল ঠোঁট উল্টে চুপ করে রইলো পাল্টা উত্তর নেই ওর কাছে। ছোটো বেলা থেকে এসব নিয়ে ফুলের পিছু পিছু ছুটেও কেউ খাওয়াতে পারে নি।

ফুলের বিয়ের টপিক টা কিভাবে উঠাবে কেউ বুঝতে পারছে না, মনে হচ্ছে বিয়ের কথা শুনে বোন কষ্ট পাবে।

তাই সবার আগে আকাশ কৌশলে ফুলকে প্রশ্ন করলো,
-আচ্ছা পরী একটা কথা বল তো,ধর তুই একটা সিনেমার গল্প লিখলি আর সেই সিনেমার জন্য তোকে যদি নায়িকার রোল দেয়া হয়, আর আমার বন্ধুদের মধ্যে থেকে একজনকে তোকে নায়ক হিসেবে দেয়া হয়,তুই কাকে বেছে নিতে চাইবি?
ফুল চট করে উত্তর দিলো,
-সবাইকেই।
-সবাইকে কি করে হবে?
-গল্পটা তো আমার লিখা তাই না?
আমার গল্পে শুধু থাকবে দুষ্টুদের জব্দ করা, গাছে গাছে চুরি করা। এগুলোর জন্য আমার অনেক গুলো নায়ক লাগবে।
-এরকম হওয়া যাবে না, একজনকে বেছে নিতে হবে।
-ওম্মম্ম কাব্য নানা!অভ্র ভাইয়াও চলে।কাব্য নানা কাজে পটু আর অভ্র ভাইয়া বুদ্ধিতে।

-আরে বললাম তো একজনকে নিতে হবে যাকে তুই অই সিনেমাতেই বিয়ে করতে পারিস আর বাকিদের তুই বন্ধু হিসেবে রাখিস তোর চুরি করার পার্টনার হিসেবে।
-দাঁড়াও ভেবে বলছি।

ফুল গালে হাত দিয়ে নিরপেক্ষ ভাবতে লাগলো ভাইয়েরা সবাই খানিকটা চিন্তিতো হয়ে পড়লো কার নাম যে আবার বলে উঠে।
ফুল ভেবে চিনতে উত্তর দিলো।
-আমি নায়ক হিসেবে অভ্র ভাইয়াকে নেবো।

অভ্রর নামটাই সবার প্রত্যাশা ছিলো।আকাশ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-কেনো?
-কারণ অভ্র ভাইয়ার মাথায় বাকিদের থেকে প্রচুর সুবুদ্ধি আমার মতো।দেখো না আমাকে কত্ত হেল্প করে। সালমা বানুকে জব্দ করার মাস্টার প্ল্যান গুলো তো অভ্র ভাইয়ার ই ছিলো তাই না?

-বুঝতে পেরেছি।তাহলে চল তোকে রিয়েল লাইফেই অভ্রর সাথে বিয়েটা দিয়ে দেই, কি বলিস?
ফুল মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-এ্যা এটা কি বলো তোমার বন্ধুকে আমি বিয়ে করতে যাবো কেনো!মাথার সিটে জং ধরছে তোমার!
কথা শেষ হতে না হতেই নিজাম ফুলের হাত ধরে বললো,
-বাদ দে ওর কথা পরী,তুই এটা বল তোর বিয়ের জন্য কেমন ছেলে চাই?
ফুল ব্লাশিং মুডে বললো,
-রাজপুত্রের মতো।
-রাজপুত্রটা দেখতে কেমন হবে?
-রূপকথার গল্পের মতো।

ফুলের থেকে তো কোনো ভাবেই কথা বের করা যাচ্ছে না।কোনো কৌশল ই কাজ করছে না।শেষ চেষ্টা পারভেজ করলো,
-পরী তোর কি কোনো পছন্দের ছেলে আছে? থাকলে বলতে পারিস আমাদের।ভাইয়েরা গিয়ে সেই ছেলেকে তোর কাছে এনে দেবে।
-এই তোমরা গল্প করার নামে এই গুলো কি বলছো?সিনেমা, বিয়ে, আবার পছন্দের ছেলে আছে কিনা।আমি কেনো ছেলে পছন্দ করতে যাবো?ওসব প্রেম করা ভালো না, আমার কলেজে দুটো বান্ধুবী আছে জানো ওরা না প্রেম করে, কলেজে এসে সারাদিন কানে ফোন নিয়ে কথা বলে,এতো কি কথা বলে কে জানে বাবা!আবার মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলার সময় কান্না করে,ওপাশের ছেলেটা ওকে অনেক কাঁদায় কেনো কাঁদায় তা জানি না।
আমাকে এক বান্ধুবী বলেছিলো একটা ছেলে আমায় পছন্দ করে আমার সাথে প্রেম করতে চায়, তারপর আমি বলেছি আমি ওসব প্রেম করবো না। আমার ফুপিমা বলেছে ভাইয়েরা আমার জন্য রাজপুত্র এনে দেবে।আমি রাজপুত্রর সাথে চলে যাবো।

বুঝার বাকি রইলো না, যে ফুলের পছন্দের কোনো ছেলে নেই,বা কারো সাথে সম্পর্ক নেই।

সবাই চোখে চোখে ইশারায় ঠিক করলো এতো না পেঁচিয়ে সোজাসুজি বলবে কথা।
আয়মান কন্ঠস্বর মৃদু করে ফুলকে বললো,
-পুতুল তোকে যদি আমরা ভাইয়েরা একটা রাজপুত্রের কাছে বিয়ে দেই তুই কি ভাইদের উপর রাগ করবি?
ফুল মাথা নাচিয়ে নাচিয়ে উত্তর দিলো
-আগে রাজপুত্র দেখাও।
-আগে তুই বল রাগ করবি কি?
-কেনো রাগ করবো কেনো?আমার ভাইয়েরা আমায় কিছু বললে আমি শুনি না?আমি তো জানি আমার জন্য তোমরা একটা রাজপুত্র আনবে,ফুপিমা বলেছে তো।
আচ্ছা তোমরা কি আমার জন্য রাজপুত্র পেয়েছো? রাজপুত্র কিন্তু অনেক সুন্দর হওয়া চাই বলে দিলাম।

-ফুপি মা কি বলেছে?
-আমাকে যখন রূপ কথার গল্প শুনাতো,গল্পে আমার রাজপুত্রকে খুব ভালো লাগতো।তখন ফুপিমাকে বলতো এরকম রাজপুত্র তোর ভাইয়েরা তোর জন্য নিয়ে আসবে।
-আমরা অভ্রর সাথে তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছি বোন তুই কি রাজি? অভ্রকে আমাদের কাছে রাজপুত্রের মতো মনে হয়েছে তাই ওকেই তোর জন্য বাছাই করেছি।যদি তোর কোনো আপত্তি থাকে, অভ্রকে পছন্দ না হয় আমাদের বলতে পারিস ভাইয়েরা তোকে জোর করবে না। অন্য একটা রাজপুত্রের সন্ধান করবে।

একদমে কথাটা আয়মান বলে দিলো। অভ্রর নাম শুনে ফুলের ভেতর ধক ধক করে উঠলো,মনে হচ্ছে যা শুনলো সবটা একটা ঘোর বা কানের মরিচিকা। এতোক্ষণ ফুল মজার ছলে এতো গুলো কথা বলছিলো।বুঝতে পারে নি ভাইয়েরা এই কথা বলবে,সিরিয়াসলি বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছে ।নিমেষেই ঠোঁটে থেকে হাসিটা বিলিন হয়ে গেলো।

সব ভাইয়েরা এখন নার্ভাস ফিল করছে ফুল এখন কি উত্তর দেবে।নিয়ম ফুলকে সাহস করে জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে বোন তুই কি রাজি?
ফুল উঠে দাঁড়িয়ে, ভাইদের দিকে তাকিয়ে বললো।
– তোমরা আমার জন্য যা ভালো বুঝো, আর যেটা ঠিক করবে সেটাই হবে। আমি জানি আমার ভাইয়েরা আমার জন্য সেটাই করবে যেটাতে আমার মঙ্গল হবে।

বড়দের মতো করে কথাটা বলেই ফুল চলে গেলো সবার সামনে থেকে।সবার এই টুকু ধারণা হলো,ফুলের কোনো আপত্তি নেই।ভাইয়েরা যেটা ঠিক করবে সেটাই হবে।

নির্লিপ্ত মুখের ভঙ্গিতে ফুল আয়মানের রুম ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দেখে অনু এখনো আসে নি,হয়তো অভ্রদের সাথে।রুমের দরজা লক করে দিয়ে ঘরের মাঝ বরাবর এসে দাঁড়ালো।
এবার ভেতরের সুপ্ত আনন্দের রাশ প্রকাশ পেলো।খুশিতে এখন অভ্রুর মতো নাচতে ইচ্ছে করছে।ফুল ভাবতেই পারে নি এতো কিছু ঘটনা ঘটে গেছে।

অবশেষে তাঁর কল্পনার রাজপুত্র বাস্তবে আসতে চলেছে।একদিন তাঁর রাজপুত্রের বউ হবে ভেবেই খুশিতে আত্মহারা লাগছে আবার লজ্জাও লাগছে।

খুশিতে চোখের কোণে পানি জমে গেলো। এতো বেশি আনন্দ লাগছে যে ফুল শুধু লাফাচ্ছে।মনে হচ্ছে জীবনের সব থেকে বড় গিফটটা ফুলের ভাইয়েরা ওকে উপহার দিলো।

অভ্রর চেহারাটা মনে মনে ভেসে উঠতেই ফুল লজ্জায় শেষ হয়ে যেতে লাগলো।

পরক্ষণেই মনে পড়লো ফুলের বিয়ে মানে সবাইকে ছেড়ে চলে যাওয়া, বিশেষ করে ভাইদের ছেড়ে থাকা অসম্ভব।ভাইদের কথা মনে হতেই ফুল দৌড়ে আবার আয়মানের রুমে গেলো,এখনো সবাই সেই একই পজিশনে বসে আছে,কথাবার্তা চলছিলো ফুলের ব্যাপারে।

ফুলকে দেখে সবাই আলোচনা থামিয়ে ওর দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
ফুলের চোখ দুটো টলমল করছে, কেনো জানি নিজের অজান্তেই চোখ দুটো পানিতে ভরে এলো।ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইদের জন্য।

চোখের পানি থামিয়ে রাখতে না পেরে ফুল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই দিলো।বোনের চোখের পানি সহ্য করতে না পেরে সব ভাই উঠে দাঁড়িয়ে ফুলের কাছে গেলো।
-বোন কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো?কেউ কিছু বলেছে?

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে ফুল উত্তর দিলো।
-তোমরা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে আমি তোমাদের ছাড়া থাকবো কি করে? আমি তো মরেই যাবো।আমাকে বিয়ে দিও না আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না, আমি কথা দিচ্ছি আমি গুড গার্ল হয়ে থাকবো,একটুও দুষ্টুমি করবো না।ঠিক মতো পড়াশুনা করবো, বাড়িতেই থাকবো সারাদিন বাইরে দিয়ে ঘুরবো না ।কিন্তু আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।বিশ্বাস করো আমি দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবো।আর যদি বিয়ে দাও ই ওদের বলে দিও আমি বিয়ের পর এখানেই থাকবো। আমি কোথাও যাবো না।

ফুলের কান্নার বেগ বেড়েই চলছে।ওর চোখের পানি সহ্য করতে না পেরে ভাইদের চোখ থেকেও বেপরোয়া জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আশিক ফুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,
-তোকে কোথাও যেতে হবে না বোন।তুই ভাইদের সাথেই থাকবি। তুই ছাড়া এই বাড়িটা যে পাখি ছাড়া শুন্য খাঁচার মতো।
ওদের বলে দিবো আমরা বোন দেবো না।এখানেই রাখবো।তাতে তাঁরা রাজি হলে হবে না হলে না হবে।কিচ্ছু যায় আসে না আমাদের।

ভাইদের জড়িয়ে ধরে ফুল কেঁদেই যাচ্ছে।সবার ভেতরেই হাহাকার করে যাচ্ছে। কলিজা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম।

অনেক্ষণ কান্না কাটি করে ফুল ঘরে চলে গেলো।গিয়ে দেখে অনু বসে আছে। ফুল রুমে ঢুকতেই ছিটকে গেলো।অনু ফুলের দিকে তাকাতেই ওর চোখ দুটো আটকে গেলো, ফুলের চোখ দুটো রক্তবর্ণ হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর কান্না করেছে।
-তোমার চোখ দুটো অমন দেখাচ্ছে কেনো?
-কিছু না, প্রচুর ঘুম আসছে। কাল রাতে ঘুম হয় নি,আজকেও তো অনেক রাত হয়েছে তাই এমন লাল হয়েছে চোখ।তুমি শুয়ে পড়ো আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।

একদমে কথা গুলো বলে ফুল ওয়াশ রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে লাগলো।

এপাশে অনু তো স্পষ্ট বুঝেছে ফুল কান্না করেছে, সাথে সাথে নিউজ অভ্রর মোবাইলে উপস্থিত।

এসএমএস টা দেখেই ফোন রেখে দিলো।খানিক টা চিন্তিতো হয়ে অভ্র আকাশকে জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে রুমে এসেই চুপচাপ আছিস কিছু বলছিস না যে,দেখে মনে হচ্ছে কান্না করে এসেছিস।আচ্ছা ফুল এ বিয়েতে রাজি হয় নি তাই না?আমাকে কি ওর অপছন্দ?

আকাশ মনমরা হয়ে অভ্রর পাশে বসে উত্তর দিলো,
-পুতুলের এ বিয়েতে অমত নেই।ভাইয়েরা যা বলবে তাই ই শুনবে ও। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পুতুল আমাদের ছাড়া কখনো এক রাতের জন্য কোথাও থাকে নি।অভ্যেস নেই ওর।জানিস ই তো আমরা ওকে কতটা ভালোবাসি আর ও কতোটা ভালোবাসে।বোনটাকে সব সময় নিজেদের সবটা দিয়ে আগলে রেখেছি।

আমাদের ছাড়া থাকতে পারবে না বলে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছিলো।আর ওর চোখের পানি সহ্য করার মতো ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দেয় নি।আমরাও তো ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।তাই আর কি একটু চোখ গড়িয়ে বেরিয়ে গেছে।

-তুই চিন্তা করিস না,তোদের পুতুলকেও চিন্তা করতে না কর।আমি দেখছি ব্যাপার টা।কাউকে ছেড়ে কোথাও যেতে হবে না
-কি করবি?
-বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবো।
-কি বলছিস কি অভ্র। মাথা ঠিক আছে তোর?এতো দূর কথা গড়িয়ে রাগের মাথায় এসব বলছিস তাই না?

চলবে…………

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here