হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-২৯

0
1091

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৯
-ফুল নিশ্চয় ওয়াশরুমে গেছে, ও এসে পড়বে, দেখে ফেলবে চলে যাও।
-কেউ দেখবে না।
-দেখবে না মানে!ফুল কই? বলো না কেনো!
-নেই।
-কোথায় গিয়েছে? ক্লিয়ার করে বলো না।
-আরে এতো পেনিক নিচ্ছো কেনো? কোনো রিস্ক থাকলে কি আমি তোমার কাছে আসতাম? আমি কি এখানে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে এসেছি?পুতুল অভ্রর সাথে বাইরে গেছে ঘুরতে।
হঠাৎ তোমার কথা খুব মনে পড়লো, তাই তোমাকে এক পলক দেখবো বলে এখানে আসা।আমার ভাগ্য কতো ভালো তোমার রুমটা ভেতর থেকে লক করা ছিলো না। আর এসে দেখি তুমি বেঘোরে ঘুমাচ্ছো আমি বসে বসে দেখছিলাম। কিন্তু বোর লাগছিলো এভাবে মাঝরাতে একা একা বসে থাকতে, তাই তোমাকে জাগানোর চেষ্টা করলাম, যাতে দুজনে দুটো কথা বলতে পারি।
-এখন যদি ওরা এসে যায়?
-আসবেনা, ওরা গেলোই একটু আগে। আর আসলেই কি? আসলে আসলো।তোমার ভাই যখন আমার বোনের সাথে প্রেম করে আমি কি কিছু বলেছি?তাহলে তার বোনের সাথে আমি প্রেম করলে সমস্যা কোথায়?

-বুঝেছি, আমার ভাই বউ রুমে নেই বলে তুমি সুযোগ নিচ্ছো।
-হুমহ সুযোগ আমি নিচ্ছি না, নিচ্ছে তোমার ভাই আমার বোনের সাথে । এতো রাতে বাইরে বেরিয়ে গেছে।হাইরে রোম্যান্স!
-ও হ্যালো, ওটা শুধু তোমার বোন না, ওটা আমার ভাইয়ের বউ, বুঝেছো?
-হুম বুঝেছি, আল্লাহ ভাগ্যে লিখে রাখলে তুমিও আমার বোনের ভাই বউ হবে একদিন ।
-আচ্ছা আমরাও তো ওদের মতো বিয়ে করে রেখে দিতে পারি তাই না?
-হুম পারি কিন্তু সমস্যা হলো,আমার তো অবিবাহিত বড় ভাই আছে । পলাশ ভাইয়া বিয়ে না করলে আমি বিয়ের নাম উচ্চারণও করতে পারবো না, আর ও নাকি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে না।
আমি অনেক বুঝাই, বুঝেই না ও। আমার ভাগ্যটাই খারাপ!

-শুধু তোমার ভাগ্য না সাথে আমারও খারাপ ভাগ্য!
-ধৈর্য্য ধরো,অবশ্যই ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট হয়। তোমাকে তো বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে না।আর তোমার বাবার থেকে শুনেছি তুমি যাকে পছন্দ করবে তার কাছেই বিয়ে দিবে।আমি অবশ্যই পাত্র হিসেবে খারাপ না।
-তা তো বটেই,এই দিক দিয়ে কোনো প্রবলেম নেই।

আকাশ আর অনুর প্রেম টা নতুন না, যেদিন থেকে অভ্র আর ফুলের প্রেমের সূচনা হয় সেদিন থেকেই আকাশ অনুর প্রেমের শুরু ।প্রথম দেখায় ওরা দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে যায়।দুজনের মাঝে চোখাচোখি হতে থাকে।আশিকের বিয়ের পর অনুকে প্রপোজ করে বসে আকাশ,অনুও আকাশকে পছন্দ করতো কিন্তু দু তিন দিন আকাশকে ঘুরিয়ে একসেপ্ট করে।তারপর চলতে থাকে ওদের প্রেম, তবে ওদের লাভ স্টোরি টা শুধু কাব্য ছাড়া কেউ জানে না। বেচারা কাব্য সবার জীবনের প্রেমের সাক্ষীই রয়ে গেলো, ওর জীবনে আর প্রেম এলো না।

প্রেম ভালোবাসা ওর দ্বারা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে, ওর বক্তব্য “নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না ভাই,নিজেকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কথা চিন্তা করা, কেয়ারিং করা এসব আমার দ্বারা হবে না, যদি এসব করতে যাই তবে আমার ব্ল্যাড প্রেশার হাই ছাড়া আর কোনো পরিণাম দেখতে পারবো না।
একা আছি ভালো আছি, বিন্দাস লাইফ।ঘরের খেয়ে পরের চিন্তা করার টাইম নেই আমার।

শুরুটা ফুল করলেও সমাপ্তিটা করতে পারছে না,দম বন্ধ হয়ে আসার জন্য অভ্রর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছে না ফুল।

ফুলকে কিস করতে গিয়ে অভ্রর প্রায় অর্ধেকটা নিচের দিকে ঝুঁকে আসতে হয়েছে ফলাফল: প্রচুর ঘাড় ব্যাথা করছে।মন না চাইলেও ব্যাথার কাছে অকুলান হয়ে কিছুক্ষণ পর ফুলের কোমর ছেড়ে দিয়ে, ফুলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।

অভ্র ছেড়ে দিতেই ফুল উল্টো দিকে ঘুরে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে, অভ্রর দিকে তাকানোর শক্তি নেই ওর মাঝে। অভ্র ফুলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালের মধ্যে চুমু খেলো।

ফুল অভ্রর দিকে ঘুরে ওকে জড়িয়ে ধরলো।চুপচাপ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুক্ষণ।

-এখনো কি ভূতের ভয় করছে?
-এখন যদি ভূত সামনে এসে আমার হাতও ধরে আমি তাও ভয় পাবো না ।
-এতো সাহস কোথা থেকে এলো?
-আপনার থেকে।
-এখন যদি আমি ভূত হয়ে যাই?
-তাহলে আমি ভূতনী হয়ে যাবো।

-চলো ফিরে যাওয়া যাক,রাত হয়েছে অনেক।তোমার ভয় না করলেও আমার ভয় করছে খুব।
-কেনো আপনিই তো বললেন একটু আগে ভূত বলে কিছু নেই,
-নেই আবার আছেও, চলো চলো।

ফুলকে নিয়ে ফিরে গেলো রেসোর্টে ।
রাত কয়টা বাজে কারো হদিস নেই,
আস্তে করে রুমে ঢুকে অনুর পাশে চুপচাপ শুয়ে রইলো ।

সকাল বেলার দৃশ্য দেখার জন্য সবাই রেসোর্ট থেকে বেরিয়ে গেছে শুধু দুজন বাদ দিয়ে এরা হলো অভ্র আর ফুল।
ওরা এখন ঘুমের দেশে অবস্থান করেছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওদের ডাক দিলে ঘুমের মাঝেই উত্তর দিয়ে দেয় কোথাও যাবে না এখন,ঘুম পাচ্ছে খুব।

ফুল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে , অভ্রদের রুমে গেলো।

সিংগেল বেডটাতে ব্ল্যাংকেট নিয়ে গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে । রুমের জানালা টা খোলা তাই ঠান্ডা প্রবাহ আসছে । ফুল অভ্রর পাশে বসে অভ্রকে দেখতে লাগলো,
দুই চোখের উপর আলতো ভাবে আঙুল বুলাতে লাগলো,অভ্রর ঘুম ভেঙে যেতেই চোখ খুলে তাকালো,ফুল মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলো
-গুড মর্নিং!
-গুড মর্নিং হুর ।
-উঠুন অনেক বেলা হয়েছে।
-উঠেছিই তো।
-এটার নাম উঠা?
-আমার সাথে শুয়ে থাকো।
-নাহ,
-আরে ভয় পাচ্ছো কেনো কিছু করবো না তো, আমার বুকের উপর শুয়ে শুয়ে কথা
বলো।
-ভালো লাগে না, আপনি ঘুরে ফিরে সব কথায় একটা ব্যাপার ই মিন করেন কেনো?
-ওকে সরি সরি।
অভ্র উঠে বসতে নিলো
-ওরি আল্লাহ রে আমার ঘাড় শেষ ভাই!
-কি হলো আপনার?
-ঘাড় ব্যাথা করছে।
– ঘাড় ব্যাথা করছে কেনো?
-কাল রাত থেকেই ব্যাথা করছিলো, তখন কম ছিলো কিন্তু এখন বেশি করছে।
-হঠাৎ ঘাড় ব্যাথা করছে কেনো?
– কাল রাতে একটা মেয়েকে কিস করছিলাম তারপর থেকে।

ফুল অভ্রর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
অভ্র ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তবে যাই বলো,ঘাড় ব্যাথার কথা বাদ ই দিলাম, তুমি কালকে আমার সাথে অমন টা না করলেও পারতে হুর!আমি রাতে কান্না করেছি!
-কান্না করেছেন কেনো?
অভ্র মুখ ছাপিয়ে বললো ,
-আমার ভার্জিনিটি শেষ! এভাবে শেষ করে দিলে!

ফুল দাঁতে কিড়িমিড়ি করে কাল রাতে অনু যেভাবে অভ্রকে মারধোর করছিলো, ফুল তার থেকে চৌগুণ হারে কিল গুতা মেরে বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে চলে গেলো।
-ও হুর রাগ করছো কেনো?কোথায় যাচ্ছো আমায় ছেড়ে?আমি এখন একা একা কি করে বাঁচবো তোমায় ছাড়া!

প্রেমের সমাধি ভেঙে,
মনের শিকল ছিঁড়ে,
হুর যায় চলে যায়!

নিজে থেকে ফুলকে আর আটকালো না ফুলও ফিরে তাকালো না। অভ্র টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

ব্রেকফাস্ট শেষে সবাই বেরিয়ে পড়লো সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখার উদ্দেশ্যে।আজকের ভ্রমণের প্রথম টার্গেট
রাতারগুল জলাবন যার আরেক নাম মায়াবনও বলা যায়। আঁকাবাঁকা গাছের সারি সারি পর্যায়ক্রম বিন্যাস , আর গাছের চারপাশে সবুজ রঙের পানি।

কয়েকটা নৌকা ভাড়া করে বনের ভেতর দিয়ে ঘুরতে লাগলো। এই প্রকৃতি শুধু সুন্দর না অসাধারণের থেকেও বেশি।বাংলাদেশের সব থেকে সুন্দর জেলা হয়তো সিলেট ই হবে, প্রতিটা উপজেলাই ভিন্ন ভিন্ন রূপের অধিকারী, যার প্রতিটি রূপ অপরূপ। এখানকার প্রকৃতির মতো মানুষ গুলোর ব্যাবহারও নির্মল, আর খাবারের গুণ তো লাজবাব! আখনি বিরিয়ানি/পোলাও, সাতকড়া দিয়ে গরু মাংস, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি যেমন খেয়া ঘাটের রসগোল্লা,সিলেটের বিখ্যাতো পাঁচভাই ও পানসী হোটেলের খাবার গুলো যেমন মজাদার তেমন ই সস্তা। আর সিলেটের সব থেকে ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো বিখ্যাতো আগুন পান।
রাতারগুল থেকে সবাই এই ইন্টারেস্টিং পার্ট টা পর্যবেক্ষণ করতে যায়, প্রত্যেকেই আগুন পান খায়,ফুল আগুন দেখে ভয় পেয়ে কোনো ভাবেই পান খেতে রাজি না, সবাই বলে কয়ে জোর করে খাওয়ায়।মুখে পান ঢুকিয়ে দেয়ার পর ফুল চোখ বন্ধ করে চুপ থাকে, পরক্ষণেই খেয়াল করলো মুখে আগুন পান দেয়ার পর কোনো সাইড এফেক্ট হচ্ছে না, তারপর বাকি সবার মতো পান চিবাতে থাকলো।

রাতে ঘুরাঘুরির পর আবার রেসোর্টের উদ্দেশ্যে ফিরলো সবাই।
ডিনার শেষে এগারোটার দিকে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা হলো, সাথে অভ্রর গাওয়া গান।

তুমি কি আমার হাসিমুখের আবার কারণ হবে?
তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বারণ হবে?…………………(!!)

দেবো না জল আসতে চোখে
কোনদিনও আর
আর একটিবার দাও যদি জল মোছার অধিকার……………(!!)

তুমি কি আমার হাসিমুখের আবার কারণ হবে?
তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বারণ হবে?

আমি তোমার নতুন ভোরের সূর্য হতে চাই
আমি আবার তোমার আশার প্রদীপ হতে চাই……………………(!!)

গানটা গাওয়া শেষ হতেই ফুল অভ্রর পাশে বসে বললো,
-এই গানটা কি কাল রাতের জন্য বললেন ?

হাতের গিটার পাশে রাখতে রাখতে উত্তরে বললো,
-যেটা ভেবে খুশি আপনি ম্যাডাম।
-যদি প্রতিবার ভুল করার পর সরি না বলে এভাবে গান করেন। তাহলে আমি প্রতিবারই অপেক্ষা করবো কখন আপনি ভুল করবেন।

অভ্র হাসতে হাসতে একটা স্প্রাইটের বোতল খুলছিলো, মুখা সরাতেই ভেতর থেকে স্প্রাইট উপচে পড়ে ফুলের দিকে ।
-ওহ নো!
ফুল রেগে গিয়ে অভ্রর দিকে চোখ মুখ শক্ত করে তাকালো,
অভ্র গানের সুরে বলতে লাগলো,
-ক্ষমা করে দাওওওও…
বন্ধুওও….
ফিরিয়ে দিও না আমাকে
ক্ষমা করে দাও….

ফুল কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালো,
-আমি চেঞ্জ করে আসছি।

বলেই আসর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো,এবার অভ্র সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
-স্প্রাইটের বোতলটা তুই ঝাঁকিয়েছিস তাই না? তোর এই বদ অভ্যেস কবে যাবে?
-আরে আমি তো ওটা আমার জন্য ঝাঁকিয়েছিলাম তুই যে মরতে মরতে অই বোতলটাই নিয়েছিস সেটা কি জেনে রেখেছি আমি!
-একেতে শীত, জামাটা ভিজে গেছে তার কথা বাদ ই দিলাম,যদি শরীরে লাগে তাহলে ওর গোসল দিতে হবে এখন।

লিফট থেকে বেরিয়ে রুমের দিকে যাবে এমন সময় রাজ দৌড়াতে দৌড়াতে ফুলের সামনে এসে হাজির, মনে হচ্ছে অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলো ফুলের জন্য।
-হেই গার্ল!
ফুল ফিরে তাকালো রাজের দিকে।কোনো উত্তর না দিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো শুধু।
রাজ ফুলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একটা রিং সামনের দিকে বাড়িয়ে বললো,
-তুমি বোবা হও আর যাই হও। তুমি যেমন আমি তেমনটাই দেখে প্রেমে পড়েছি। একটা মানুষের কথা বলতে পারতেই হবে সেরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তোমার নামটা অব্ধি আমি জানি না তবুও তোমায় ভালোবেসেছি। তোমার রূপের কাছে আমি পরাজিত,
উইল ইউ বি মাই গার্লফ্রেন্ড?
-আরে ধুর মিঁয়া একদমে বলেই যাচ্ছেন,আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিন?কোন বাপের ব্যাটা বলছে আমি বোবা? আমি যদি কথা শুরু করি অপর পাশের মানুষটার কান দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়।আসছে আমি নাকি বোবা! ফালতু যত্তসব।

ফুলের মুখে কথা শুনে রাজ একটা প্রশান্তিময় হাসি দিলো এটা ভেবে যাক আর যাই হোক মেয়েটা বোবা না।

-আর আমি আপনাকে আমার নাম বলবো কেনো? কে আপনি? কাল থেকে দেখছি আমার পিছু নিচ্ছেন।কিছু বলি না বলে কি মাথায় উঠে ডিজে ডান্স করবেন?
(মুখ ভেঙিয়ে বললো)
আসছে আমার নাম না জানা ভিলেন, উইল ইউ বি মাই গার্লফ্রেন্ড!

শুনেন আমি বিবাহিত, ভুল করেও আর নেক্সট টাইম পিছু নিবেন না, না হলে আমার বরকে বলে দিবো। এসে ডিসুম ডিসুম দিয়ে যাবে একদম বাকরুদ্ধ বানিয়ে দেবে।

-বাহ তুমি তো আমার মতো বেশ এক দমে কথা বলতে পারো! প্রথমে তো বোবা ভেবেছিলাম এখন দেখছি উল্টো। যাক ভালোই হলো। কিন্তু একটা কথা মিললো না, তুমি বিবাহিত?হোয়াট এ জোক!আমার ধারণা যদি ঠিক হয় বিয়ে তো দূরে থাক তোমার কোনো ছেলের সাথে রিলেশনও নেই। ইউ আর সিংগেল।

-আরে ব্যাটা কথা বুঝেন না কেনো আমি বিবাহিত। আমার বর ও এসেছে আমার সাথে, ডাকবো ওকে?
-ওহ তাই নাকি? তাহলে তুমি সব সময় তোমার বর ছেড়ে বান্ধুবী নিয়ে থাকো কেনো?আমি সব নোটিস করেছি,তোমার সাথে তোমার বান্ধুবী থাকে সব সময়।তোমরা একই রুমে থাকো রাত দিন।
-ওটা আমার বরের ছোটো বোন।
-তাহলে তুমি তোমার বরের সাথে থাকো না কেনো?
-আপনার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে আমাকে?
-আচ্ছা বুঝেছি।এখন তোমার নাম বলো তো।

উচ্চস্বরে ভেংচি মেরে উত্তর দিলো ফুল,
-বলবো না।যান এখান থেকে ভাগেন।
-এমন করে বলছো কেনো? আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-আশ্চর্য কথা বুঝেন না? আমি আমার বরকে ভালোবাসি।
– তুমি চাইলে আমি তোমার বর হতে রাজি।
-ওরে আল্লাহ মাবুদ কোথায় তুমি?আমার সামনের লোকটারে তুইলা নাও ।
-তোমার কি হাই ব্ল্যাড প্রেশার সমস্যা আছে? সিম্পল ব্যাপারে উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?
-বাবারে আল্লার দোহায় লাগে, সামনে থেকে সরেন।আর আমার কথা বুঝেন আমি বিবাহিত নারী। আমার পক্ষে প্রেম করা সম্ভব না ওটা পরকিয়া হবে।আমার পরকিয়া করার কোনো প্রয়োজন নাই,আল্লাহ আমার জামাইরে বউ ধইরা রাখার সম্বল দিছে পর্যাপ্ত পরিমাণে।

-বাই এনি চান্স তুমি কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছো?আমার মন পরিক্ষা করার জন্য এসব কথা বলছো?
-আপনার সমস্যা টা কোন জায়গায় বলবেন একটু?
-আমার কোনো সমস্যাই নেই।
-মগজে কি কম বুঝার সমস্যা আছে?আল্লাহ বোধ শক্তি দেয় নাই?
-প্লিজ তুমি বিবাহিত এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলো না,বয়ফ্রেন্ড থাকলে থাকতে পারে কিন্তু তাতে আমার সমস্যা নেই,তুমি নির্দ্বিধায় আমার কাছে আসতে পারো। তোমার বয়সটাও কম বুঝাই যাচ্ছে,এই বয়সী মেয়েরা বয়ফ্রেন্ডকে হাজবেন্ড বলে খ্যাতি দেয় এটাই স্বাভাবিক। দেখো আমার কাছে আসার জন্য কোনো রিজন লাগবে না।আমার পরিচয় পুরোটা শুনে রাখো,আমি নর্থ সাউথ ইউনিভারসিটিতে পড়াশুনা করি,
আমার বাবার প্রচুর টাকা আছে।আমি একমাত্র ছেলে তাদের।আমার বাড়ি ধানমন্ডিতে।
-বুঝতে পেরেছি বাবার টাকার গরমেই মাথার তার ছেঁড়া আছে । আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দিক অতি শীগ্রই ।ঢাকাই ফিরে ভালো ডক্টর দেখাবেন,ডক্টর কে বলবেন “আমি সহজ কথা বুঝি না, মাথায় ঢুকে না,কেউ হাজার বুঝালেও বুঝতে পারি না। ”

ফুলের খারাপ ব্যাবহারগুলো রাজের মনে খুব লাগলো,প্রেমে পড়ে একটা ঘোর কাজ করছিলো, ফুলের কথায় আর সে ঘোর টিকলো না, বাধ্য হয়ে নিজের আসল রূপে এসে গেলো ।
-অনেক তোয়া তোয়া করলাম,কথা বুঝলে না।তোমার ধারণা নেই আমি কার ছেলে! তোমার মতো হাজারটা মেয়ে রাজের পকেটে থাকে, তোমার ভাগ্য ভালো যে আমার দৃষ্টিতে তুমি আটকা পড়েছো।কিন্তু সহজ ব্যাপারটাই জটিল রূপ দিয়ে বসলে।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here