হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-৩২

0
1632

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩২

-ধুর আমার সারপ্রাইজ টাই দেয়া হলো না! আমি চেয়েছিলাম যখন একদম নয় মাস পূরণ হবে তখন আপনাকে বড় করে সারপ্রাইজ দেবো।বাড়ির প্রত্যেককে বলেছিলাম আপনাকে যেন না বলা হয়। পেট পাতলা গুলো বলে দিয়েছে আপনাকে! আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিয়ে দিলো!যাই হোক আপনি নিশ্চয় অনেক খুশি হয়েছেন তাই না?তাই এভাবে ছুটে এসেছেন আমাকে দেখতে আচ্ছা বাড়ির সবাই খুশি হয়েছে?বাবা, মা, অনু, বউমণি, জিয়াদ ভাইয়া,আর নিয়ানা ও তো ভীষণ খুশি খবরটা শুনে তাই না?দেখুন ছেলে হোক বা মেয়ে নাম কিন্তু আমি রাখবো ঠিক আছে?আর একটা কথা আমি ঠিক করেছি বাচ্চা হওয়ার পর আমি আর বাপের বাড়ি থাকবো না আপনার কাছে চলে যাবো,ঢাকাতে থাকবো সবার সাথে।

অভ্র শান্ত স্বরে বললো,
-তুমি প্রেগন্যান্ট হলে কি করে হুর?
-কি বলছেন আপনি? ডাক্তারি পড়া পড়ে জিজ্ঞেস করছেন প্রেগন্যান্ট কিভাবে হলাম?মানুষ প্রেগন্যান্ট হয় কিভাবে?
-প্রেগন্যান্ট হওয়ার মতো কোনো কাজ ই তো আমি করি নি,তাহলে পেটে বাচ্চা আসলো কোথা থেকে?
-আপনি এটা কি বলছেন রাজপুত্র! সিলেট যাওয়ার পর যেদিন আপনি আমাদের রুমে ঘুমালেন তারপরের দিন সকাল বেলা অনু রুমে ছিলো না, সেই সুযোগে আপনি আমার সাথে…!
-আমি তোমার সাথে কি?
ফুল লাজুক হাসি দিয়ে অভ্রর বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,
-আমি বলতে পারবো না আমার লজ্জা লাগে।

অভ্রর ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।ওর স্পষ্ট মনে আছে ও ফুলের সাথে এরকম কিছুই করে নি। তাহলে বাচ্চা এলো কোথা থেকে!

অভ্র আলতো হাতে ফুলের দুই গালে দুই হাত রেখে মৃদু স্বরে বললো,
-হুর সত্যি করে বলো,বাচ্চাটা কার? সত্যি করে বলো প্লিজ! এটা কার বাচ্চা?আমি প্রমিস করছি এই বাচ্চা যার ই হোক না কেনো আমি ওকে নিজের সন্তান বলে একসেপ্ট করবো। তুমি সত্যিটা বলো প্লিজ!
-আরে আচ্ছা রকম জ্বালা তো এটা আপনার বাচ্চা কেনো বুঝতে পারছেন না? আমার সাথে আপনার মিলন হওয়ার সময় তো কোনো প্রটেকশন নেয়া হয় নি বাচ্চা তো হবেই।আপনি কি এই বাচ্চা নিয়ে খুশি নন?না হলেন খুশি আমার বাচ্চা আমি একাই আদর করবো।
-আচ্ছা তুমি এটা বলো, তোমার সাথে ওসব করার সময় কি আমি সুস্থ ছিলাম? নাকি নেশা টেশা করেছিলাম?কিন্তু আমি তো নেশা করি না,ওসব কোনোদিন খাই ও নি।

ফুল কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
-আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?
আপনি এভাবে আমাকে অপবাদ দিয়ে আমাদের সন্তানকে অস্বীকার করতে পারেন না বেশ তবে আমি ডিএন এ টেস্ট করাবো,ডিএনএ রিপোর্ট দেখলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

অভ্র উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
-না না সেরকম কিছু করতে হবে না, আমার মনে পড়েছে এই বাচ্চা আমার ই। আমাদের দুজনের বাচ্চা এটা । তুমি চাইলে আমি তোমাকে আজই ঢাকা নিয়ে যেতে পারি।

ফুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অভ্র।

-ইয়া আল্লাহ! এই লোকটা এত্ত বোকা কি করে! (মনে মনে)

এমন সময় ফুলের রুমে কবিতার প্রবেশ,রুমে অভ্র আছে জেনে সরাসরি ভেতরে প্রবেশ না করে নক করলো,
অভ্র ফুলকে ছেড়ে দিলো,কবিতা ভেতরে এসে অভ্রর হাতে চায়ের কাপ দিলো,আর সামনে কিছু স্ন্যাকস দিলো।
অভ্র চায়ের কাপটা মুখের সামনে নিবে এমন সময় অভ্রকে কবিতা কিছু একটা বলতে যাবে তখন ফুলের দিকে নজর গেলো।
-একি পরী তোমার পেট এতো উঁচু হলো কি করে?গ্যাস হয়েছে পেটে?ওষুধ খেয়েছো?নাকি আনবো?

শুনেই ফুলের চোখ ছোটো ছোটো হয়ে গেলো, আর অভ্রর ভেতরে হার্টবিট থেমে গেলো।অভ্র ফুলের দিকে বাঁকা নজরে তাকালো,
-ইয়ে না মা মা মানে ব বউ দি দি তেমন কি কিছু না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ফুল কবিতার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিচ্ছে, কিন্তু কবিতা বুঝতে পারছে না ফুল কি বুঝাতে চাইছে,অভ্রর ভেতরে সন্দেহ জাগলো চা খেতে খেতে অভ্র বলে উঠলো,
-বাই দি ওয়ে হুর এটা বললে না তো কয়মাস চলছে তোমার?
কবিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,
-কিসের কয় মাস অভ্র?
– ও যে প্রেগন্যান্ট হয়েছে সেটার কথা জিজ্ঞেস করলাম ।
– কি বলছো অভ্র তুমি? কে প্রেগন্যান্ট পরী?আমরা বাড়িতে থেকে কিছু জানলাম না আর তুমি ঢাকা থেকে!ওর মধ্যে তো কোনো লক্ষণ ও দেখলাম না।
-আপনি কি বলছেন বউদিদি প্রেগন্যান্ট না হলে পেট বড় হয় কি করে?
হুর বউদিদি কি বলছে এসব?

ফুল কি বলবে ভাষা নেই,পরিস্থিতি জটিল রূপ ধারণ করেছে। কবিতা কড়া স্বরে বললো,
-পরী এটা কি ধরনের মশকরা? তোমার জামার ভেতরে কি আছে বের করো!

অভ্র কবিতাকে উত্তর দিলো,
-কি থাকবে আবার আমাদের বাচ্চা।
-অভ্র তুমি কি পাগল,ওর প্রেগন্যান্ট হলে তো বাচ্চা থাকবে।পরী বের করো কি রেখেছো।

ফুল জামার ভেতর থেকে একটা ইমোজি কুশন বের করলো,সেটা দেখে কবিতা হাসতে হাসতে শেষ। অভ্র ফুলের হাত থেকে কুশন টা হাতে নিয়ে বললো,
-বাহ সাকসেস ফুললি ডেলিভার্ড!কিন্তু আমাদের বাচ্চা টা কান্না করছে না কেনো?আচ্ছা এটার নাক কান নেই কেনো?আর হাত পা কোথায়?শুধু মাথাটাই আছে, এ কেমন বাচ্চা জন্ম দিলাম আমরা?

কবিতা হাসতে হাসতে বললো,
-আহারে বোন তোমার বাচ্চা জন্ম দেয়ার খুব শখ? কি গো নন্দাই বাসর ঘর সাজাবো নাকি?

অভ্র হেসে হেসে বললো,
-বাসর ঘর অব্ধি মনে হয়ে অপেক্ষা করা সম্ভব না।ইমারজেন্সি ব্যবস্থা করতে হবে

কবিতা হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

অভ্রর হাতের কুশন ফুলের বরাবর ঢিল ছুড়লো একদম ওর মুখে গিয়ে লাগলো।
-কি গো বাচ্চার মুখ দেখে তুমি খুশি হও নি?

ফুল রাগ দেখিয়ে বললো,
-বউদিদি এসে পুরো মজাটাই নষ্ট করে দিলো ধেত!

অভ্র হাসতে হাসতে ফুলকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে নিলো,
-থাক যা হয়েছে হয়েছেই, তুমি মজা নিচ্ছিলে আর আমি তো হার্ট এট্যাকের কাছাকাছি চলে যাচ্ছিলাম।
-আপনি এতো ভালো কেনো?
-আমি কি ভালো করলাম?
-এই যে আপনি জানেন আপনি আমার সাথে কিছু করেন নি তারপরেও বাচ্চার বাবা হতে রাজি হয়ে গেলেন!
-কি করবো বলো ভালোবাসি তো তোমাকে! তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব মেনে নিতে পারি।

এক ঘন্টা আগের ঘটনা,

ফজরের নামাজ পড়ে ফুল বারান্দার গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিলো,বাইরে নীল আবছা আলো ফুটেছে। পানি দেয়ার সময় ফুলের চোখ বাইরের দিকে গেলো আর কিছু একটা দেখতে পেলো, পানির জারটা সাইডে রেখে সাথে সাথে বারান্দার গ্রিলের সাথে কপাল ঠেকিয়ে নিচের দিকে দেখতে নিলো,আর যা দেখলো তাতে চোখে ফুসকা পড়ার উপক্রম!

-বিনা মেঘে বৃষ্টি,ওহ থুক্কু মেঘ না চাইতেই জল!
তুই আমার সাথে করলি এতো বড় ছল!
অন্তত দিতে পারতি একটা কল,
কেনো এমন করলি বল?

বাই দ্যি ওয়ে কল তো উনিই দিয়েছিলোই আর স্বীকার না করলেও পরক্ষণেই তো বললো টাংগাইলের পথে।তার মানে উনি রাতে এসেছেন!বাড়ির কেউ আমায় জানালো না! তবে কি সারপ্রাইজ! ঠিক আছে বাছা ধন কে কাকে কতবড় ঝটকা দেয় জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!

মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ফিরছিলো অভ্র।আকাশদের ফ্ল্যাটের দিকে যাচ্ছিলো আর ফুল উপর থেকে দেখে ফেলে।

সবাইকে বারণ করেছে অভ্র, ও যে এসেছে সেটা যেনো ফুলকে না জানানো হয়,তাই কেউ কিছু জানায় নি।ফুল সারপ্রাইজ হবে, যখন ফুল ঘুম থেকে উঠে দেখবে পাশে অভ্র বসে আছে আর তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারবে না ওর রিয়্যাকশন গুলো দেখার মতো হবে এসব ভেবেই এখনো দেখা দেয় নি।

কিন্তু অভ্রর প্ল্যান ফ্লপ হলো,ফুল তো আগেই দেখে ফেলেছে। বেচারা নিজেই সারপ্রাইজড!

ফজরের নামাজ পড়ে গাছে পানি দিয়ে ফুল কখনো পড়তে বসে আবার ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ে।আজ পড়া ঘুম কোনোটাই হয় নি, কারণ অভ্রর জন্য!

ফুল কান পেতে ছিলো কখন অভ্র ওর রুমে আসবে।অপেক্ষার কিছুক্ষণ পর ফুলের রুমের দিকে কারো আসার পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।সাথে সাথে ফুল একটা পাতলা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।

রুমের দরজা টা চাপানো ছিলো,অভ্র আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে ভেতরে প্রবেশ করে, আর এসেই ফুলের পাশে বসে পড়ে।

এই ছিলো ভেতরের কাহিনী!

-একটা গল্প বলবো শুনবে?
অভ্রর কোলে শুয়ে উত্তর দিলো,
-বলুন শুনি।
-একটা দেশে ছিলো একটা রাখাল প্রচুর মিথ্যে বলতো, সেই রাখালটা একদিন মাঠে গরু চরানোর সময় হঠাৎ মজা করার জন্য বাঘ আসছে আসছে বলে চেঁচাচ্ছিলো।
-আর বলতে হবে না শুনেছি এই গল্প।
-তাহলে বলো এই গল্প দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?
– মিথ্যে কখনো ভালো পরিণাম এনে দেয় না।
-আরেক টা জিনিস বুঝানো হয়েছে।
-কি?
-এমন কোনো বিষয়ে মিথ্যে বলো না,যেটা কোনো একদিন সত্যি হবে। বুঝেছো কি কথা পুরোটা?কি বুঝিয়েছি।
-বুঝেছি,সরি আর করবো না এরকম মজা।
– গুড গার্ল!
ফুল উঠে বসে অভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো করে বললো,
-আচ্ছা আমি কবে থেকে আপনার সাথে থাকবো?
-আমার সাথে থাকতে হলে আমার সাথে যেতে হবে ঢাকা, যাবে?
-যাবো,যেখানে যেতে বলবেন যাবো।
-তোমার বাড়ির লোকদের ছাড়া থাকবে কিভাবে?পারবে থাকতে?
-না পারলেও অভ্যেস হয়ে যাবো।তবুও আমি আপনার সাথে থাকবো।
-বিয়ের সার্টিফিকেট যেদিন পাবো সেদিন নিয়ে যাবো।
-মানে আমার আঠারো বছর বয়স অব্ধি অপেক্ষা করতে হবে?
-মিনিমাম।
-আর ম্যাক্সিমাম?
-আমার পড়াশুনা শেষ হওয়া অব্ধি অপেক্ষা করতে হবে।
-পড়াশুনা করতে হবে না এতো।
-তাহলে ডক্টর হবো কিভাবে?
– ওপস আপনাকে কে বলেছিলো ডাক্তারি পড়তে?ডক্টরদের জীবন ওটা জীবন নাকি সারাদিন রোগীর পেছনে ছুটে চলো শুধু।
-এটা যদি সৎ ভাবে করতে পারি তাহলে অনেক পুণ্য অর্জন করতে পারবো।
-আচ্ছা আপনি একা এসেছেন অনু আসে নি?
-নাহ, আমি তো বাড়িতে জানিয়ে আসি নি, মাঝপথে এসে জানিয়েছি আমি টাংগাইল যাচ্ছি।
-কেনো এরকম করেছেন?
-জানি না হঠাৎ করেই তোমার কথা মনে পড়লো খুব, মনে হচ্ছিলো তোমাকে দেখতে না পারলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো,কয় মাস চলে গেছে গণনা করে দেখেছো?ভিডিও কলে কি বাস্তবের মতো ফিল করা যায়? মনে হয় রোবটের সাথে প্রেম করছি।
-আমারও তাই মনে হয় জানেন। সেই জন্যই আপনার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে।অনেক বেশি মিস করি আপনার দুষ্টুমি গুলোকে,
-শুধু দুষ্টুমি আর কিছু না?
-আর কি?
-আমি কেনো এসেছি জানো?
-কেনো আবার আমাকে দেখতে।
-একদম ই না।
-তাহলে?
কোনো উত্তর না দিয়ে বাঁকা হাসি দিলো অভ্র , ফুলের ঠোঁটে টিপ দিয়ে একদম নিজের ঠোঁটের কাছে আনলো,ফুল চোখ বন্ধ করে কলার চেপে ধরতেই বুঝা গেলো সম্মতি আছে,অভ্র নিজে থেকে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে দিলো।

শ্বশুর বাড়ি এসে আদর কদরের শেষ নেই,একমাত্র আদরের মেয়ের জামাই বলে কথা, কে কি খাওয়াবে সেটা নিয়ে বাড়ির গিন্নিদের মধ্যে হচ্ছে কম্পিটিশন। এদিকে খেতে খেতে অভ্রর অবস্থা হয়ে যাচ্ছে হালুয়া টাইড।

-আচ্ছা আমি তোদের বাড়িতে গেলে আমাকেও কি এভাবে আদর যত্ন করে খাওয়াবে তোদের বাড়ির লোক?
-জানিনা সঠিক তবে মনে হয় না,
-কেনো?
-কারণ আমাদের বাড়িতে তোদের বাড়ির মতো এতো মানুষ নেই। মা, বউমণি থাকে ব্যস্ত। আমাদের বাড়িতে পরিবারের লোকের থেকে কাজের লোকের সংখ্যাই বেশি,তবে চিন্তা করিস না তারাও আমাদের পরিবারের লোকের মতোই আপন।যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন করবে।
-তাই বলে তোদের বাড়ির লোক মেয়ের জামাইকে একটু সময় দেবে না?
-দেবে, দেবে না কেনো!তোর বোন আছে তোকে ননদের জামাই হিসেবে আদর আপ্যায়ন করবে।
-তাই বলে এরকম টা হবে!
-শ্বশুর বাড়ি কম কম যাস দেখবি আদর কদর বেশি হচ্ছে,এই যেমন ধর আমি এসেছি, বিয়ের সময় পার হয়েছে প্রায় বছরের কাছাকাছি কিন্তু এসেছি কয় বার?
-একবার।
-হুম।মাথায় রাখবি ব্যাপারটা।
আকাশ আর অভ্রর কথার মধ্যে কাব্য হেসে দিয়ে বললো,
-একটা জিনিস ভেবে দেখেছিস? তোরা দুজন দুজনের বোন জামাই। আই মিন দুজনের সম্পর্ক, একে অপরের ছোট বোন জামাই হতে যাচ্ছিস, আবার সমুন্দিও ।ওদিকে অনু পুতুলের ননদের জামাই হোস,বড় ভাইও হোস।আবার তুই আর আকাশ বন্ধু,ফুল আর অনু বান্ধুবী,
ইন্টারেস্টিং না?
অভ্র উত্তর দিলো,
-মহা ইন্টারেস্টিং এটাকে বলা যায় ইন্টারেস্টিং টু দি পাওয়ার ফোর।ভালোই হয়েছে ফর্মালিটি পালন করে কাউকে ভাই বা দুলাভাই বলে ডাকতে হবে না, যেমন আছি তেমনই থাকবো।
আকাশ হেসে উত্তর দিলো,
-এটা কিন্তু ঠিক বলেছিস রে।

বাড়ির বড়দের ওদের দিকে আসতে দেখে অভ্র গলায় কাশি দিয়ে টপিক চেঞ্জ করলো,
– কাজের কথায় আসি এখন বল তো তোদের ইন্টার্নি কেমন চলছে?
-ভালোই শুধু সমস্যা হচ্ছে একটা একটু ভুল করলে সিনিয়র ডক্টরদের প্রচুর ঝাঁকুনি খেতে হয়।
-খেতে তো হবেই। না হলে তো শুধরানোর স্পীড আসবে না।
-ভাই এই ইন্টার্নি করতে গিয়ে পড়াশুনা টা ঠিক মতো হ্যান্ডেল করতে পারছি না। রেজাল্ট খারাপ হলে একদম ভেসে যেতে হবে, এতো বছরের পরিশ্রমের কোনো মূল্যই থাকবে না।
-শুকরিয়া কর, আমাদের ভাগ্য কতোটা ভালো যে ইন্টার্নি মাত্র এক বছর করতে হচ্ছে।আগে তো দুই বছর ছিলো ওদের কি অবস্থা হতো ভাব একটা বার শুধু।
-আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে রে।

একদিন থেকে পরের দিন চলে গেলো অভ্র,তবে এবার আর ফুলের মন খারাপ খুব একটা হচ্ছে না, কারণ সামনের সপ্তাহ থেকে ফুলের ইয়ারচেঞ্জ পরিক্ষা।আর পরিক্ষা শেষ হলে ফুল পরিবার সহ শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যাবে।

মাস দুয়েক আগে অভ্ররা MBBS কোর্স শেষে করে ইন্টার্নশীপে যোগ দিয়েছে।

ইন্টার্নশীপে ভালো রেজাল্ট করলেই ভালো ক্যারিয়ার পাবে । সেই জন্য অভ্রর পড়াশুনার পেছনে গতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময় এখন মেডিকেল হাসপাতালেই কাটে আবার বাড়ি ফিরে পড়াশুনা, ওদিকে ফুলকেও ঠিক মতো সময় দিতে হয়,না হলে অভিমান করে বসে থাকে।

অভ্রর ইচ্ছে করে যদি এক নিশ্বাসে এই বছরটা শেষ করা যেতো তাহলেই শান্তি পেতো। ইন্টার্নি করতে গিয়েই বেশির ভাগ স্টুডেন্ট ঝরে পড়ে,যাকে বলে তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা।

ফুলের ইয়ারচেঞ্জ পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়, এখন তো আগের মতো ফাঁকিবাজ নেই,নিজে পড়াশুনা করে পরিক্ষা দেয়।
পড়তে বসে হঠাৎ আনমোনা হয়ে গেলো ফুল,
-পুরানো সেই দিনের কথা ভুলি কি করে হায়!
কত সুন্দর জীবন ছিলো! মাঝখানে বিয়ে টা হয়েই জীবনটা দিলো লাত্থি মেরে বদলে।এই বরের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু আমার বই খাতার ভেতরে ঢুকে যেতে হচ্ছে স্ব ইচ্ছায় লেখাপড়া করছি নাকি!আমি একটা ব্যাপার বুঝি না, বিয়ে তো হয়েই গেছে পড়ালেখার প্রয়োজন টা কি! ও আল্লাহ মানুষের মাথায় একটু জ্ঞান দাও, আল্লাহ এরা যেনো বুঝে
বিবাহিত নারী
পড়ালেখায় দাও দাড়ি!

ভালো লাগে না এ জীবন!সব উল্টো হচ্ছে আমার সাথে, বিয়ের পর জামাই পাইলাম না, কিন্তু এই বই খাতা চেপে বসেছে!

জামাই আমার ডক্টর হয়ে বের হবে কয়দিন পর আমি কেনো পড়ালেখা করতে যাবো?জামাইয়ের টাকা গুণেই তো শেষ করতে পারবো না! এই সহজ ব্যাপারটা আমি এতো ছোটো হয়ে বুঝি, কিন্তু এই ডিগ্রীপ্রাপ্ত গাধা গুলো কেনো বুঝে না!

জীবনডা পিতলা পিতলা হইয়া গেছে!

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here