হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-৩৪

0
1688

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩৪
রাতের দিকে অয়ন অয়নী ওর বাবার সাথে অভ্রদের বাড়িতে আসে, ওদের বাবাও একজন ডক্টর যিনি একজন নিউরোলজিস্ট।

লাস্ট কবে অভ্রদের বাড়িতে এতো মানুষ জন হয়েছিলো মনে নেই কারো।এতো বড় বাড়িতে সব আছে শুধু মানুষ নেই, আজ পুরো উৎসব লেগেছে।

রাতে সবাই গল্প করছে এমন সময় ফুল নিশাতের গলা জড়িয়ে বললো,
-ও বউমণি তুমি না বলেছিলে যেদিন এবাড়িতে আসবো আমি সেদিন তোমার লাভস্টোরি বলবে?
-আমার আবার কিসের লাভ স্টোরি? আমার তো এরেঞ্জ ম্যারিজ।
-না না মিথ্যে বলছো কেনো,বলো। তুমি ফোনে কতোবার বলেছো তোমার লাভ ম্যারিজ আর তোমার লাভ স্টোরি জানতে চাইলে বলেছো সামনা সামনি বলবে যেদিন এবাড়িতে আসবো।বলো না আজকে।
-বোন রে এটা লাভ স্টোরির কোনো কাতারেই পড়ে না , অভ্র ঠিক যতোটা রোম্যান্টিক, জিয়াদ ঠিক ততোটাই আনরোম্যান্টিক, রস কষ বিহীন ব্যক্তি।
-তাও তো প্রেম করেছে।
-না না প্রেম করি নি তো।
-বিয়ের আগে না করলো বিয়ের পর তো করেছে।এখন বলো ভাইয়ার সাথে তোমার কিভাবে পরিচয়, কিভাবে তোমাদের বিয়ে হলো।

নিশাত বলতে যাবে এমন সময় জিহাদ হাল্কা গলায় কাশি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– আমার একটা ইম্পোরট্যান্ট কল এসেছে।আসছি তোমরা গল্প করো।

বলেই শুঁড় শুঁড় করে চলে গেলো আসর ছেড়ে।কেনো চলে গেলো সেটা ফুলের ভাবীরা বুঝতে পেরে হেসে দিলো।
নিশাত বললো,
-দেখলে কি অবস্থা?শুনেই পালিয়ে গেলো। যখন রুমে যাবো তখন জিজ্ঞেস করবে “ওদের তখন কি কি বললে?”
-আচ্ছা ভাইয়ার ব্যাপারটা পরে বুঝা যাবে এখন বলো তো।
নিশাত হেসে উত্তরে বললো,
-বলছি বলছি,শুনো তাহলে,আমারো বলতে ভালোই লাগে।শুধু বলার মানুষ পাই না,দিন শেষে শুধু একমাত্র অভ্র আর অনুই।আর বাকিদের সাথে দেখায় হয় ছয় মাসে একবার।

নিশাত বলা শুরু করলো ওর লাভ স্টোরি,

“চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলো, একজন পেশেন্ট বেরিয়ে যেতেই নেক্সট বেল বাজাতেই নিশাতের চেম্বারে প্রবেশ করে জিয়াদ। দেখে মুখটা শুকনো লাগছে,মনে হচ্ছে খুব চিন্তিতো। নিশাত প্রথমে জিয়াদের দিকে ভালো মতো তাকায় নি।একটা পেপারে কিছু একটা লিখতে লিখতে বললো,
-বসুন স্যার!
গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বরে জিয়াদ বললো,
-জ্বী ধন্যবাদ।
জিয়াদ চেয়ার টেনে বসে মাথা নিচু করে রইলো,
-জিয়াদ খান?
জিয়াদ খানিকটা বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
নিশাত মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
-আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া ছিলো আপনার।
– ওহ হ্যাঁ, সরি খেয়াল করি নি।
হাতের কলম টা রেখে জিয়াদের দিকে মমনোযোগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-ইট’স ওকে।এখন বলুন কিভাবে আপনার সহযোগিতা করতে পারি?আপনি নির্দ্বিধায় আপনার সমস্যাটা বলতে পারেন।
-এক্সাক্ট সমস্যা টা কি আমি নিজেও জানি না।আমি কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে খুবই বিব্রত, বিরক্ত।

-ঠিক আছে বলুন শুনি,
-জানেন আমার কোনো কিছুর অভাব নেই, টাকা- পয়সা, ধন- সম্পদ,বিজনেসে সাফল্য, সব আছে।আমার বাড়িতেও কোনো অশান্তি নেই। তারপরেও আমার কেনো জানি কোনো কিছুই ভালো লাগে না, দম বন্ধ হয়ে আসে সব সময়।নিজের কাছের মানুষ গুলোও বিরক্ত লাগে, বিনা কারণে ভালো কথা শুনেও রাগ উঠে ।কোনো প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। চাইলেও মন খুলে কারো সাথে কথা বলতে পারিনা। আমি হাসতে চাই তবুও হাসতে পারি না।আমার ভেতরের একটা আমি আমাকে বাঁধা দেয় সারাক্ষণ ,জিয়াদ এটা করিস না ওটা করিস না, জিয়াদ হাসিস না, ওর সাথে কথা বলিস না,কি প্রয়োজন,কেনো?।এরকম হাজারটা বাঁধা। শুধু এখানেই শেষ না আমি যখন নামাজ পড়ি আমার মন তখন কি যেনো ক্যালকুলেট করতে বসে, হাজার চাইলেও নামাজে মন রাখতে পারি না।যতদিন যাচ্ছে এগুলো ততোই প্রখর হচ্ছে।আমি নিস্তার চাই এর থেকে।

কথা গুলো বলতে বলতে জিয়াদ উত্তেজিত হয়ে যায়।নিশাত ওর সামনে থাকা পানির গ্লাসটা জিয়াদের দিকে এগিয়ে দেয়,
-পানিটা খান।
জিয়াদ গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে নিলো,
-কফি খাবেন?
-নো থ্যাংকস!

-বিয়ে করেছেছেন?
-ব্যাচেলর।
-প্রেম আছে?
-নাহ।
-প্রেমে ব্যর্থতা?
– প্রেম করবো তো দূরে থাক মেয়েদের দিকে ওরকম দৃষ্টিতে কখনো তাকায়ও নি,সেখানে ব্যর্থতার কোনো প্রশ্নই আসে না।
-কোন ভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছেন?
-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েশন প্লাস এমএসসি কমপ্লিট করে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি কমপ্লিট করেছি।
-বাবা মা কি করে?
-বাবা আমার সাথেই বিজনেস করে,মা গাইনোকলোজিস্ট ডক্টর , বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী হসপিটালে।
-ভাই বোন?
-ছোটো ভাই বোন আছে দুটো,ভাই কলজে পড়ে বোন স্কুলে।
-বিয়ের বয়স তো হয়েছেই করছেন না কেনো?
-আমি যখন স্টুডেন্ট তখন থেকে আমাকে খুব চাপ দেয়া হয় বিয়ের জন্য,যার কারণে বিয়ে শব্দটার প্রতি বিরক্তি ধরে গেছে।
-তারমানে বিয়ে করবেন না?
-ইচ্ছে নেই,তবে আল্লাহ যদি ভাগ্যে লিখে রাখেন কি আর করার।
-এখন বিয়ের প্রেশার দেয় না?
-দেয়,আগের থেকে বেশি দেয় কিন্তু আমি কানে নেই না।

-হুম বুঝলাম সব। মিস্টার জিয়াদ খান আপনার এটা কোনো সমস্যাই না।আপনার এরকম হওয়ার কারণ গুলো বলছি।
-কারণ জানার দরকার নেই,আমাকে নিরাময় বলুন,কিভাবে নিস্তার পাবো?
-কারণের মধ্যেই নিরাময় আছে জিয়াদ খান ধৈর্য্য ধরুন।
জিয়াদ শান্ত হয়ে রইলো,
-মিলিয়ে দেখুন আপনি একা থাকতে ভালোবাসেন বলে আপনার ধারণা,কিন্তু আপনি একাকীত্বের প্রতি বিরক্ত ।সব সময় একা থাকতে থাকতে এটা আপনার অভ্যেস হয়ে গেছে,তাই এরকমটা মনে হয় আপনার।আর সব সময় একা থাকতে থাকতে মস্তিষ্কের পরিসর চেপে আসে, যার কারণে সব কিছুতে বিরক্তি লাগে,কারো সাথে মিশতে বা অপ্রয়োজনে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।
বছরের পর বছর আপনার জীবনটা এক নিয়মে চলছে, ঘুম থেকে উঠে একই মানুষের মুখ দেখতে হচ্ছে,রকই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে ,একই জায়গায় যাওয়া হচ্ছে একই কাজ করা হচ্ছে।সব থেকে বড় কথা হলো আপনি প্রচুর টেনশন করেন শুধু একটা ব্যাপার নিয়ে,আপনার ব্যাবসাতে সফলতা থাকলেও আপনি আরো চিন্তা করেন কি করে আরো বেশি সাফলতা পাওয়া যাবে, কিভাবে কি কাজ করলে আরো এগিয়ে যাবো, এই রকম চিন্তা।

কিছু টিপস দেবো হরফে অক্ষরে পালন করবেন।এতে মেজাজ খিটখিটে, একঘেয়েমি স্বভাব, অবসাদ,একটুতেই কোনোকিছুতে বিরক্ত হওয়া এগুলো বিদায় নেবে।
-ওকে

-প্রথমে ভুলে যান আপনি একজন বিজনেস ম্যান,নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ মনে করুন,দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ থেকে ছুটি নিন।
পারবেন তো?

জিয়াদ মাথা নাড়ালো হ্যাঁ সূচক।
-আপনার রুমের কালার টা চেঞ্জ করবেন, নীল, সবুজ, গোলাপী এই টাইপের দৃষ্টি আকর্ষণ করা নিজের পছন্দের কালার করাবেন বিভিন্ন ডিজাইন করে।একটা কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ লিখে দিচ্ছি জাস্ট একটা খাবেন একটানা ১৮ ঘন্টা+ ঘুমিয়ে উঠবেন, ঘুম থেকে উঠার পর সব কিছু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগবে, গোসল দিয়ে নিজের পছন্দের খাবার টা খাবেন, এরপর একটা বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হবেন, প্রকৃতির আনাগোনা পূর্ণ জায়গায় লং ড্রাইভে যাবেন ছন্ন ছাড়ার মতো যেদিকে দুচোখ যায় যেতে থাকবেন, জীবনের রুটিন শুধু ঘুরা ফেরা আর খাওয়া হবে ।এভাবে কয়েকদিন কাটাবেন,তারপর দূরে কোথাও ছোটো ভাই বোনদের নিয়ে ঘুরতে যাবেন দেশের বাইরে হলে ভালো হয়। দার্জিলিং টাইপের জায়গাতে, সাগর-সমুদ্র এই সব দেখতে যাবেন না, অনেকে এটা দেখে বিষণ্ণতা ফিল করে, সো পাহাড় গাছ পালা এই টাইপের জায়গায় ঘুরবেন ।

একটা মাস এভাবেই কাটান, সামনের মাসে ঠিক এই ডেটেই আমার সাথে দেখা করতে আসবেন, ইম্প্রুভ হলেও, না হলেও।
-আচ্ছা রাগটাও কমবে তো?
-মিস্টার জিয়াদ খান একটু ভেবে দেখুন আপনার রাগ টা ছোটো বেলা থেকে,এটা আপনার ডিএনএ গত স্বভাব, এটা বদলাবে না। তবে কন্ট্রোলে রাখতে পারবেন,আগে ছোটো সমস্যা গুলো সমাধান করুন, তারপর বড় গুলো।
-ওকে, থ্যাংক ইউ
নিশাতের সাথে আরো কিছু টুকিটাকি কথা হলো।পরামর্শ শেষে জিয়াদ প্রেসক্রিপশন টা হাতে নিয়ে উঠে চলে গেলো।

নিশাত ঠিক যা যা করতে বলে জিয়াদ কাটায় কাটায় ঠিক তাই তাই ই করে নিয়মের বাইরে একটুও হের ফের হয় না।
এক মাসে নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখতে পায়,আগের মতো ভেতরে কোনো টেনশন, একঘেয়েমি, বিরক্তিভাব কাজ করে না। মাইন্ড নিজের কন্ট্রোলে এসে যায় আস্তে আস্তে।

একমাস শেষ হতেই জিয়াদ নিজের কাজে জয়েন করে, ওর মনেই থাকে না নিশাতের কাছে যাওয়ার কথা ছিলো।

একটা ক্যাফেতে জিয়াদ বিজনেস ডিলের জন্য দুজন ক্লাইন্টের সাথে মিট করতে যায়। মিটিং শেষ করে উঠে যেতে নিবে তখনি দেখতে পেলো নিশাত ভেতরের দিকে আসছে, ক্লাইন্টদের বিদায় দিয়ে জিয়াদ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। নিশাত জিয়াদকে ক্রস করে যেতে নিবে তখনি জিয়াদ পেছন থেকে বলে উঠলো,
-এক্সকিউজমি!

নিশাত পেছনে ফিরে তাকালো,ঠোঁটে হাল্কা হাসি নিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে নিশাত বলে উঠলো,
-জিয়াদ খান রাইট?
-কনফিউজড?
-কাম অন,দিনে কতগুলো রোগী দেখি হিসেব নেই, তারমধ্যে আপনার সাথে কতদিন আগে দেখা হয়েছিলো,এতোজনের মাঝে মনে রাখাটা খুব টাফ!
-তাহলে তো আমাকে একদম ই মনে না থাকার কথা,সেই একমাস আগে দেখা হয়েছিলো, এই একমাসে গড়ে আপনি না হলেও এক হাজার রোগী দেখেছেন,সেই এক হাজার রোগীর মধ্যে আমার নামটা অব্ধি মনে আছে! এটা কি মিরাকল?
নিশাত হেসে উত্তর দিলো,
-আই ডোন্ট নো,বাট আপনার মধ্যে অন্য রকম একটা ব্যাপার আছে।
-যদি কিছু মনে না করেন,দুজনে বসে দুই কাপ কফি খেতে পারি?
-শিউর!বাট দুই কাপ কেনো?
জিয়াদ হেসে উত্তর দিলো,
-এক কাপ আপনার এক কাপ আমার, এক কাপ দুই জনে খাবো নাকি?

নিশাত বোকা হাসি দিয়ে জিয়াদের সামনের চেয়ারে বসলো,
-সরি গতকাল আপনার কাছে আমার যাওয়ার কথা ছিলো, আমার খেয়াল ছিলো না।
-ইট’স ওকে।এখন বলুন তো কেমন ফিল করছেন?
খুব চঞ্চলতার সাথে জিয়াদ উত্তর দিলো।
-আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো ,আপনার চিকিৎসা একশো একশো কার্যকরি হয়েছে।
-তাহলে তো হলোই,

নিশাতের সাথে জিয়াদ টুকিটাকি অনেক্ষণ গল্প করলো।কথায় কথায় বেশ হাসাহাসি করলো।জিয়াদ ফিল করলো, অনেক দিন পর ও মন খুলে হাসছে নিশাতের সাথে কথা বলে আর কত্ত সহজেই নিশাতের সাথে ফ্রি হয়ে যাচ্ছে। এর কারণে নিশাতকে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করলো।কথায় কথায় বিদায়ের সময় নিশাতের ফোন নাম্বারটাও রেখে দিলো।
বাড়ি ফিরে সারারাত ভরে জিয়াদ চিন্তা করলো,নিশাতের প্রতি ওর অনুভুতি গুলো কি বুঝাতে চাইছে?

পরের দিন ই জিয়াদ নিশাতের চেম্বারে গেলো,মুখ গম্ভীর করে আছে।চেহারার অবস্থা ঠিক সেদিনের মতো শুকনো লাগছে যেদিন প্রথম দেখেছিলো,জিয়াদকে দেখে বিষ্মিত হয়ে নিশাত বললো,
-আরে মিস্টার জিয়াদ খান!বসুন
জিয়াদ বসে পড়লো,
-মন মরা কেনো এতো?

ইতস্তত ভাবে জিয়াদ উত্তর দিলো,
-নতুন আরেকটা সমস্যাই ফেঁসে গেছি।কিভাবে মুক্তি পাবো বলে দিন।
-কি সমস্যা বলুন,
-একটা মেয়েকে দেখলে কেমন যেনো ফিল হয় ভেতরে,খুব ভালো লাগে মেয়েটাকে।মেয়েটা কাছে থাকলে মনে হয় সব সময় যদি এই মেয়েটা আমার সাথে থাকে তাহলে হয়তো জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকবে না,মেয়েটার সাথে কথা বলে খুব হাসি খুশি থাকি, আমি খুব সহজের মেয়েটার সাথে মিশে যেতে পারি।এখন কি করা উচিৎ আমার?
-আই থিংক মেয়েটা যদি আনম্যারিড হয় তাহলে মেয়েটাকে আপনার বিয়ে করে নেয়া উচিৎ। তাহলেই সমস্যার সমাধান।
-করবেন আমাকে বিয়ে?
মুখের উপর জিয়াদের এই প্রশ্ন শুনে নিশাত থেমে গেলো,হা করে তাকিয়ে রইলো জিয়াদের দিকে।জিয়াদ আবার বলা শুরু করলো,
-আমি আমার ফ্যামিলিতে জানিয়ে দিয়েছি,তারা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এতোক্ষণে হয়তো আপনার বাড়িতে চলেও গেছে। আমার মনে হলো আপনাকেও জানানো উচিৎ এই ব্যাপারে, আপনারও নিজস্ব মতামত আছে।হ্যাঁ হলে ভালো আর না হলে আমাকে বলবেন না প্লিজ, তাহলে মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে যাবে।আপনি বাড়ি ফিরে না করে দিয়েন।

কথা গুলো একদমে বলেই জিয়াদ উঠে চলে গেলো,নিশাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো।জিয়াদ বেরিয়ে যাওয়ার পর নিশাত হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ফার্স্ট টাইম তার কোনো ছেলেকে মনে ধরেছে,জিয়াদ এমন একটা ছেলে যেমন সুদর্শন আর একটা হাই পারসোনালিটিস বিশিষ্ট জিয়াদকে প্রথম দেখায় ক্রাশ খেয়ে গিয়েছিলো নিশাত। যার কারণে নামটা মনে ছিলো।আর আজ এসে বলা নেই কওয়া নেই ডিরেক্ট বিয়ের প্রপোজাল দিয়ে গেলো।
মুচকি হেসে নিশাত আস্তে করে বললো,
-বাহ ভালো তো ভালো না?ক্রাশের দামে জামাই পেতে যাচ্ছি!

অবশেষে কোনো বাঁধার সম্মুখীন না হয়েই জিয়াদ আর নিশাতের বিয়ে হয়ে গেলো,আর বেশ মিউচুয়ালিটির মাধ্যমে সুখে শান্তিতে ঘর করছে”

সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো নিশাতের গল্প। বলা শেষ হতেই ফুল বলে উঠলো,
-একটা বাপার মিলিয়ে দেখেছো বউমণি,এরা দুই ভাই একটা জায়গায় একরকম।পছন্দ হওয়ার পর, প্রেমের প্রস্তাব না দিয়ে ডিরেক্ট বিয়ের প্রপোজাল দিয়ে বসেছে।
-এই নিয়ম মনে হয় ওদের রক্তেই গো!

পেছন থেকে অভ্র এসে বলে উঠলো,
-শুনো হে রমনী প্রেম হারাম আর বিয়ে হালাল। আমরা হারাম কাজ না করে,ফরজ কাজ করেছি।

এটা শুনে অনুর মন খারাপ হয়ে গেলো, ফুল অভ্রকে চোখ দিয়ে ইশারা করে থামালো।পলাশের বিয়েটা হয়ে গেলেই অনু আকাশের রাস্তা ক্লিয়ার, এই পলাশকেই বা কে বুঝায় ব্যাপারটা।

অভ্রদের বাড়িতে ফুলরা বেশ কয়েকদিন রইলো,আর একয়দিন অভ্র ওদের ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যায়।

বেশ কয়েকদিন থাকার পর ফুলদের ব্যাক করতে হলো নিজেদের বাসস্থানে,এবার ফুলের মন খারাপ করছে দ্বিগুণ হারে,একদিকে অভ্রর জন্য মন খারাপ আরেক দিকে বাড়ির বাকি মানুষ গুলোর জন্য।

বাড়িতে ফিরে আসার পরও ফুলের মন কয়দিন খারাপ ই রইলো।
সেই আগের নিয়মেই চলতে লাগলো যার যার জীবন।

সময় কেটে যাচ্ছে, অভ্রর ইন্টার্ন লাইফ ও যাচ্ছে।

ফুল অভ্রর বিয়ের পর আরো একটা বছর কেটে গেলো , মোট দু বছর।সময় গুলো অভ্র ফুলের বেশ বুঝাপড়ার মধ্যেই কাটছিলো সুন্দর সম্পর্কটা।এতো ব্যস্ততার মধ্যেও দূর থেকে অভ্রর কেয়ারিংয়ের কমতি ছিলো না।

পরের এক বছরে ঈদের ছুটিতে অভ্র ওর ফ্যামিলি সহ আর একবার যায় ফুলদের বাড়িতে। এর মধ্যে আর যাওয়া হয় নি।দেখা হয় নি,শুধু ফোনে ফোনেই প্রেম।

সামনে ফুলের ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা,এদিকে অভ্র চলে যাচ্ছে কানাডা। অভ্ররা চার কাজিন মিলে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার জন্য কানাডা যাচ্ছে।ফ্রেন্ড সার্কেলের বাকিরা দেশেই থাকে শুধু সমুদ্র চলে যায় লন্ডনে।

এয়ারপোর্টে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ঢলে পড়ছে ফুল।অভ্রর ভেতরে দ্বিগুণ হারে কষ্ট হচ্ছে বাড়ির সবাইকে ছেড়ে,কাছের মানুষ গুলোকে ছেড়ে ভীনদেশে চলে যেতে হচ্ছে।ফুলের কান্না দেখে আরো জ্বলছে ভেতরে।
-ছোট্ট একটা ব্যাপার কেনো বুঝো না হুর? নিয়ানা কত ছোটো ও বুঝে আর তুমি বুঝছো না!আল্লাহ যেদিন আমাদের ভাগ্যে লিখে রেখেছে সেদিন আমরা আবার এক হবো।
অভ্রর বুকে মুখ ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফুল বললো
-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!
-আচ্ছা আমি তো সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি না। আবার ফিরে আসবো তো।
-আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আপনি আর ফিরে আসবেন না। আজই আমাদের শেষ দেখা।ওখানে গিয়ে আমায় ভুলে যাবেন না তো?
-আরে কি পাগল রে এটা!তুমি আমার বিয়ে করা বউ!এটা মাথায় রেখো,ঘুড়ি যেদিকেই উড়ুক লাটাই তোমার হাতেই।আমি রাতেই উড়ি আর দিনেই সব শেষে আমি তোমার কাছে আমার হুরের কাছে ফিরে আসবো।আমি একবার বলেছি না,একমাত্র মৃত্যু তোমার থেকে আমায় আলাদা করতে পারবে। আল্লাহ যেখানে আমাদের ভাগ্যের জুটি একসাথে জুড়ে দিয়েছেন সেখানে কিসের এতো শঙ্কা?নামাজ পড়ে দোয়া করো যেভাবে তোমার কান্না দেখে বিদায় নিতে হচ্ছে ঠিক তেমনি ফিরে এসে যেনো এতোটাই হাসি তোমার ঠোঁটে ফুটাতে পারি।
এবার আর বলবো না অপেক্ষা করো না আমার জন্য,এবার বলছি আমার ফেরার অপেক্ষা করো আর ধৈর্য্য ধারণ করো।অপেক্ষা আর ধৈর্য্যের ফল সুমিষ্ট হয়।
এবার লক্ষ্মী বউয়ের মতো আমায় হাসি মুখে বিদায় দাও,নাহলে আমার তৃষ্ণার্ত হৃদয় নিয়ে তোমায় ছেড়ে চলে যেতে হবে।
ফুল অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আই লাভ ইউ রাজপুত্র।
-আই লাভ ইউ টু হুর বউ!
-আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার।
-আমিও অপেক্ষায় থাকবো আমার হুরের সাথে আবার কবে দেখা হবে সেই তৃষ্ণা নিয়ে।

বুকে পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে অভ্রকে বিদায় দিতে হলো। কেনো জানি ফুলের ভেতর টা খুব অশান্ত লাগছে , অভ্রর চলে যাওয়াটাকে মন মস্তিষ্ক কোনো ভাবেই স্বায় দিচ্ছে না। না চাইতেও বার বার মনে হচ্ছে এই দেখায় শেষ দেখা এই স্পর্শই শেষ স্পর্শ!
কোনো নতুনত্বের যোজন নাকি, অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়োজন কি অপেক্ষা করছে দুজনের ভাগ্য রেখাতে!

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here