সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-১৪

0
1728

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_14
#writer_srabon

আমি বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজালাম। ভিতর থেকে ভাবি এসে দরজা খুলে দিল। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করেই একটু অবাক হলাম।

কারন বাসার ভিতরে সকলে এক জায়গায় বসে আছে। হয়তো সকলে আমার জন্যই অপেক্ষা করতেছিল।
কিন্তু এর থেকে একটু বেশি হলাম খালা আর খালুকে দেখে।
তারা কখন এসেছি আমি জানি না। তবে খালুকে দেখে আমার মাথাটা একটু গরম হয়ে গেল।
আমি কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম তখনই ভাইয়া আমাকে ডাক দিল…

— শ্রাবন…(ভাইয়া)

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

— হুম…..(আমি)

— তোর সাথে আমাদের সকলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। (ভাইয়া)

— হুম বলতে থাকো…!

— তুই এখানে এসে বস আগে..এরপর বলতেছি। (ভাইয়া)

আমি শুধু শুধু ঝামেলা করতে চাই না। তাই ভাইয়ার কথা মতো সোফায় গিয়ে বসে পরলাম।

— শ্রাবন কেমন আছিস আব্বু..?(খালা)

— হুম ভালো। (আমি)

— জিজ্ঞেস করবি না আমরা কেমন আছি..?(খালা)

— দেখতেই তো পাচ্ছি ভালো,,এখনে জিজ্ঞেস করার কি আছে.?(আমি)

— আপা,,এগুলো বাদ দাও…! আসল কথাটা ওকে বলো…(আম্মু)

— হুম…!.

— বউমা শিমলাকে ডেকে নিয়ে এসো…(আম্মু)

— আচ্ছা আম্মু..(ভাবি)

এরপর ভাবি শিমলাকে আনতে চলে গেল। আমি চুপচাপ বসে আছি। আমার আর বুঝতে বাকি নেই যে, এখানে শিমলা আর আমার বিষয়ে আলোচনা হতে চলেছে।।

— শ্রাবন তুমি এতদিন বাসায় আসো নি কেন..?(খালু)

— এখনো আসার কোন ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু জানি না কিভাবে আবার দেখা হয়ে গেল..(আমি)

— কিন্তু কেন..?

— নিজের ইনকামের টাকায়, নিজের ইচ্ছায় চলার মতো
তৃপ্তি আর কোথাও নেই..!(আমি)

খালু আরো কিছু বলতে যাবে তখনই শিমলাকে নিয়ে ভাবি চলে এলো।
আমি একবার তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকালাম। তখনই স্পর্শির দিকে চোখ পরতেই দেখলাম, আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে চোখ মেরে দিল।
আনার ভিষণ রাগ হচ্ছিলো। কিন্তু কিছু না বলে শুধু চুপচাপ বসে আছে।।

— তোমার কি বলবা তাড়াতাড়ি বলো..? আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে যাব। (আমি)

— দেখ ভাই,,এখন আমি যে কথা গুলো বলব সবগুলো কথা মন দিয়ে ঠান্ডা মাথায় শুনবি। (ভাইয়া)

— হুম,,,

— তোর আর শিমলার মাঝে কি হয়েছে সেটা আমারা কেউ ভালো জানি না। তবে এইটুকু জানি যে, সেইদিন শিমলা হয়তো তোকে খারাপ কিছু কথা বলেছে। আর তার উপরে আব্বুও তোকে কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছিল।
আর তুই কি করলি.? রাগ করে বাসা ছেড়ে চলে গেলি। এখানে আমাদেরও কিছু দোষ ছিল,,আমরা চাইলে তোকে আটকাতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা করি নাই।(ভাইয়া)

আমি চুপচাপ করে বড় ভাইয়ার কথা শুনতেছি। ভাইয়া কিছু সময় চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করল,,

— আমি জানি তুই অনেক কষ্ট করে এই কয়টা বছর কাটিয়েছিস। কিন্তু এখানে আমাদের দোষটা কোথায় একটু বলবি..? এই সামান্য কিছু ভুলের জন্য তুই আমাদেরকে এতটা কষ্ট দিতে পারলি..? আমাদের কথা বাদই দিলাম। তুই অন্তত আম্মুর কথাটা একবার ভাবতি.? এখন তুই যদি বলিস তার তো দুই সন্তান কাছে আছেই। কিন্তু আমি এখানে বলব ভাই এটা তোর বোঝার ভুল। মায়ের কাছে তার সকল সন্তানই সমান। হোক সেটা বড় বা ছোট সন্তান।।(ভাইয়া)

এরপর মেজ ভাইয়া বলতে শুরু করল,,,

— প্রায় চার বছর তোর কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না। এদিকে আম্মু তো প্রায় তোকে দেখতে না পেয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পরে। আমাদের কিছু মাথায় আসতেছিল না যে কি করব.? তখনই ভাবলাম যে আমি যদি এখন বিয়েটা করে ফেলি তাহলে হয়তো আম্মু কিছুটা সুস্থ হবে। তাই সব কিছু ঠিকঠাক করে স্পর্শিদের বাসায় যাই। কিন্তু ওখানে গিয়ে আমরা অনেক অবাক হই। কারন, স্পর্শির একটা ছবিতে আমরা তোকে দেখতে পাই।
সবাই অনেক উত্তেজিত হয়ে যায়। আম্মু তো প্রায় পাগল।
এরপর আমি স্পর্শিকে সবটা জিজ্ঞেস করি। স্পর্শি বলে তুই ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমি সবটা ওকে খুলে বলি।
স্পর্শিও ব্যাপারটা আগে জানত। তুই হয়তো বলেছিস। কিন্তু জানত না যে, আমরাই তোর পরিবার।

স্পর্শি জানত যে তুই খুব রেগে আছিস আমাদের উপরে। কোন মতেই আসতে রাজি হবি না। তাই ও প্লান করে সব কিছু করে।
বিয়ের দিন তো আম্মু কান্নাই করে দিয়েছিল। আম্মু ভেবেছিল যে, সে তোকে আবার হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তোর লাস্ট মোমেন্ট এ এট্রি দেখে আমরা সবাই হেসে দেই। (মেজ ভাইয়া)

সবাই চুপ করে আছে। আমি একটু ঘোরের মাঝে আছি। এত কিছু হয়ে গেল আর আমি কিছুই জানতাম না।।
তখনই আবার বড় ভাইয়া বলতে শুরু করল,,

এখন যদি তুই বলিস শিমলা তোকে ঠকিয়েছে তাহলে আমি বলব এটা তোর ভুল ধারণা।
কারন,,যেই দিন শিমলা তোকে কথা শুনিয়েছিল সেই দিন থেকেই শিমলা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কারো সাথে কোন কথা বলত না। শরীরের অবস্থা একদম খারাপ করে ফেলেছিল।
এটা দেখে সবাই চিন্তিত হয়ে পরে। আর এর একমাত্র কারন যে তুই সেটা আমরা সবাই জানতাম। তাই ওকে কেউ কিছু বলে সান্ত্বনা দিতে পারছিলাম না।
এক পর্যায়ে আম্মু খালার বাসায় গিয়ে শিমলাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে। এরপর আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু তোর শূন্যতা রয়েই যায়।

আর একটা বড় বিষয় হচ্ছে শিমলা এখনো খালুর সাথে কথা বলে না। (ভাইয়া)

এটা শুনে একটু অবাক হলাম। শিমলা আবার খালুর সাথে কথা বলে না কেন.? তখনই ভাইয়া বলল,,

— অবাক হচ্ছিস তাই না..? আসলে সেই দিন খালু নাকি তোর সাথে খারাপ আচরণ করেছিল। আর এই কারনেই নাকি তুই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এটা শিমলার ধারণা। তাই খালুর সাথে আজ পর্যন্ত ও একটা কথাও বলে নাই।। (ভাইয়া)

বিষয়টি শুনে একটু খারাপ লাগল। শিমলার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে পানি।
আমি ওই চোখের দিকে আর তাকাতে পারলাম না।

— এগুলো আমাকে বলে এখন কি লাভ..? কি বলতে চাইতেছ খুলে বলো…!(আমি)

— আমরা বলতে চাচ্ছি যে,, তুই শিমলাকে বিয়ে করে নে। সব কিছু আবার নতুন করে শুরু কর। (ভাইয়া)

— দেখ ভাই,,আমরা সব খোঁজ খবর নিয়েছি। তুই এই চার বছরে কোন মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ তো দূরের কথা তাকিয়েও দেখিস নাই। আমি জানি তুই এখন মনে মনে শিমলাকেই চাস। প্লিজ ভাই মেনে নে। এতে সকলের ভালো হবে। (ভাইয়া)

আমি ভাইয়ার কথা শুনে হেসে উঠলাম,,, এটা দেখে সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।

— তোমাদের কি মনে হয়..? আমি এই মেয়েকে আর বিয়ে করব..?(আমি)

আমার এমন কথা শুনে শিমলা আমার দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইল। স্পর্শি আমার কাছে এসে আস্তে করে বলল,,,

— তুই এগুলো কি বলতেছিস..? আমি জানি তুই এখনো ওকেই ভালোবাসিস। প্লিজ না করিস না। (স্পর্শি)

— দেখ বাবা,,আমি না হয় একটা ভুল করে ফেলেছি। আমার তোমাকে বোঝা উচিৎ ছিল। কিন্তু সমাজ কি বলবে এইটা ভেবে আমি তখন ওই কথা গুলো বলেছি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি। আমার কাছে প্রথমে আমার মেয়ের সুখ। পরে বাকি সব। বাবা তুমি না করো না প্লিজ। (খালু আমার হাত ধরে বলল)

আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম,,,,

— আমাকে এখন আর এগুলো বলে কোন লাভ নেই। আমি জানি আপনি আমাকে এখন এগুলো কেন বলতেছেন। (আমি)

— কেন.??(খালু)

— আমার এখন একটা চাকরি আছে। মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাই। আপনার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিলে বাকি জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারবেন। আর তাছাড়াও আপনার তো কোন ছেলেও নেই। তাই আমাকেই…… (আমি)

— শ্রাবন…..চুপ একদম চুপ থাক। তুই অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিস। বড়দের সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে.? তাছাড়া ওনি আমাদের খালু হয়। (ভাইয়া)

— আমি এগুলো বলতে চাই নি। তোমরাই বাধ্য করেছ। (আমি)

খালা-খালুর চোখে পানি। আমার কথা গুলোয় হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু এখানে আমার আর কিছুই বলার ছিল না।

— তাহলে তোমার শেষ কথাটা কি..??(আব্বু)

— আমার পক্ষে এই মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব না। তোমরা অন্য কারো সাথে তার বিয়ে ঠিক করো।(আমি)

আমার এই কথাটা শুনেই শিমলা কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে গেল। তার পিছে ভাবি এবং স্পর্শিও।
আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে এলাম।

এতক্ষণ আমি কার সাথে কিভাবে আচরণ করেছি জানি না। সবকিছুই আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে।
এতদিন যখন শিমলাকে ছাড়া থাকতে পেরেছি তাহলে বাকি দিন গুলোও কাটিয়ে দিতে পারব।

বিছানায় বসে এগুলো ভাবতেছি। আর মাথাটা ভিষণ ব্যাথাও করতেছে।
কি করব কিছুই বুঝতেছি না। এখন একটা ঘুমের ওষুধ দরকার। ছোটবেলা থেকেই আমার এই রোগটা ছিল। যখনই বেশি চিন্তা করি তখনই ভিষণ মাথা ব্যাথা করে। ঘুম না পরলে ঠিক হওয়ার নাম নেই। কিন্তু এত সহজে ঘুমানো সম্ভব না। তাই ঘুমের ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।।

কোন উপায় না পেয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে ছিলাম।
তখনই কারো কাশির শব্দ পেলাম।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শিমলা। হাতে একটা পানির গ্লাস। আর একটা ওষুধ। শিমলার চোখ দুটো একদম লাল হয়ে আছে। আমি ওর চোখ থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলাম।
পারলে ওষুধটাও খেতাম না। কিন্তু প্রচুর ব্যাথা হচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি করে ওষুধটা খেয়ে নিলাম।

শিমলা একটা কথাও না বলে চলে গেল।
খালার বাসায় বসে অনেকবার এমন হয়েছিল।
আর প্রত্যেকবারই শিমলা এমন করে ওষুধ এনে দিত।
এখন মনে আছে মেয়েটার। কিন্তু ও কি করে বুঝল আমার এখন মাথা ব্যাথা হবে.? মেয়েটা পারেও। এত অপমান করলাম তারপরেও…

এগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।।।

————————————

এদিকে শ্রাবন তার রুমে চলে যাওয়ার পরে,,,

— আপা তুই কান্না করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। (আম্মু)

— কি করে ঠিক হবে.?? শ্রাবন তো পুরোই উল্টো বুঝল।(খালু)

— খালু চিন্তা করার কোন কারন নেই। আমি আছি না। সব সামলে নিব। (ভাইয়া)

— হুম খালু,,,চিন্তা করতে হবে না তোমার। এখন চলো ঘুমাতে যাবে। (মেজ ভাইয়া)

— না বাবা,,,আজকে থাকতে পারব না। বাসায় যেতে হবে। শ্রাবনকে দেখতে এসেছিলাম। দেখা তো হয়ে গেল। এখন আসি। (খালু)

— খালা-খালু তোমরা আমাকে বিশ্বাস করো তো নাকি তাই বলো আগে..?(ভাইয়া)

— হুম বাবা,,তোকে বিশ্বাস করবো না তো আর কাকে করব.?(খালা)

— তাহলে আমার উপরে ভরসা রাখো। (ভাইয়া)

— আচ্ছা,,বাবা একটু নিশ্চিন্ত হলাম। আর আমার মেয়েটাকে একটু দেখে রেখো। উল্টাপাল্টা কিছু না করে ফেলে। আমার খুব আদরের মেয়ে (খালু)

— আমরা আছি তো নাকি..?(মেজ ভাইয়া)

— হুম..!

— খালু,,এখনই বাসায় চলে যাবে.?(ভাইয়া)

— হুম…কাল একটু কাজ আছে অফিসে (খালু)

— আচ্ছা চলো। আমি গাড়িতে করে তোমাদের এগিয়ে দিয়ে আসি। (ভাইয়া)

— আচ্ছা,,চলো….!!!

এরপর বড় ভাইয়া খালা আর খালুকে এগিয়ে দিয়ে আসতে চলে গেল। আর যাওয়ার পথে কিছু কথা বলল।[সিক্রেট]🙃

সকালবেলা আরামে ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু তখনই…….

.
.
.
.
.
#চলবে…..???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here