সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-১৯

0
1877

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_19
#writer_srabon

কিন্তু এই মেয়ের মুখে এখনো মাস্ক লাগানো। আমি বুঝতেছি না এই মেয়ের সমস্যা কি.? এখনো মুখে মাস্ক দিয়ে আছে কেন।

কিন্তু মেয়েটা যখনই তার মুখ থেকে মাস্ক খুলে ফেলল তখনই আমার মুখ দিয়ে শুধু একটাই কথা বের হলো..

— নাদিয়া তুই…??? এখানে..?(আমি অবাক হয়ে)

— হুম,,আমি…! তোকে এখানেও জ্বালাতে চলে এলাম। (নাদিয়ে হেসে দিয়ে বলল)

— আমি তো এখনো বিশ্বাস করতে পারতেছি না যে তুই এখন আমার সামনে দাড়িয়ে আছিস। oh my god..! ৫ বছর পরে তোর সাথে দেখা। আমি তো কল্পনাই করতে পারতেছি না যে এটা তুই। (আমি)

— তোর থেকে আমি অনেক বেশি অবাক হয়েছি। (নাদিয়া)

— কেন? (আমি)

— আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম তুই আমাকে চিনতেই পারবি না। কিন্তু এখন তো দেখতেছি এক সেকেন্ডই আমাকে চিনে ফেলেছিস তুই। (নাদিয়া)

— আব্বে,,,,স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে কলেজ লাইফ পর্যন্ত ৭ বছর পর্যন্ত তুই আমার একমাত্র বেষ্টফ্রেন্ড ছিলি। আর তোকে কি করে ভুলে যাই বল..?(আমি)

— হুম সেটা তো বটেই..! (নাদিয়া)

— তোকে মনে রাখার on of the best কারন কি জানিস..?(আমি)

— কি কারন..?(নাদিয়া)

— তোর কারনে কলেজ থাকা-কালিন একটা মেয়েও আমার ধারে কাছে আসতে পারত না। তুই একটা ডায়নি ছিলি। জানি না স্পব মেয়ে গুলোকে কি বলে ভাগিয়ে দিতিস। (আমি)

— হাহাহাহাহাহাহা..! তোর দেখি সব কিছু মনে আছে। (নাদিয়া)

— হুম..! (আমি)

— আচ্ছা এখন বাদ দে..! সব কথা পরে বলা যাবে। তুই আপাতত আমাকে কাজগুলো বুঝিয়ে দে। (নাদিয়ে)

— হুম.! এদিকে আয়। আমি সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছি। (আমি)

এরপর আমি নাদিয়াকে ওর কাজগুলো বুঝিয়ে দিতে লাগলাম।

————————————

আসুন এর মাঝে আপনাদেরকে আমি নাদিয়ার পরিচয়টা দিয়ে দেই।
নাদিয়ার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় স্কুল লাইফের প্রথম ক্লাসে। আমার মতো নাদিয়ারও ওইদিন প্রথম ক্লাস ছিল। আমরা এক বেঞ্চে বসেছিলাম সেইদিন। আমি এর আগে কখনো মেয়েদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা চোখ তুলেই তাকাতাম না। একটা জরতা কাজ করতো।
নাদিয়া সেই বিষয়টি বুঝতে পেরে আমার সাথে আগ বারিয়ে কথা বলা শুরু করেছিল। আমি শুধু হ্যাঁ না বলে কাটিয়ে যেতাম।

এরপর আস্তে আস্তে আমি ওর সাথে একদম ফ্রি হয়ে যাই। যে আমি কিনা মেয়েদের দেখলেই ভয় পেতাম। সেই আমি কি করে যেন, নাদিয়ার সাথে একদিন কথা বলতে না পারলে অস্থির হয়ে যেতাম।
এইভাবে আস্তে আস্তে আমরা ফ্রেন্ড থেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাই। এটার ক্রেডিট সম্পূর্ণ নাদিয়ার।

আমার মতো নাদিয়ার বাসাও খুলনা সিটিতে ছিল। তবে ওর বাসাটা আমার বাসা থেকে অনেকটা দূরে ছিল। তাই আমিও আর ওর বাসার ঠিকানা জানতে চাই নি।

এইভাবে দেখতে দেখতে ৭ টা বছর কেটে যায়। এর মাঝে সব কিছুর পরিবর্তন ঘটলেও আমার আর নাদিয়ার সম্পর্কের একটুও পরিবর্তন ঘটে নাই।

তখন আমার লাইফে একটা সিক্রেট কথা ছিল।
যেটা আমি আমার কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করি নাই।
এমনকি নাদিয়ার সাথেও না।
নাদিয়া যেহেতু আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল। তাই আমি ওকে সেই সিক্রেট কথাটা বলার জন্য একটা দিন বেছে নেই।
আর সেই দিনটা ছিল আমাদের HSC পরিক্ষার শেষ দিন। মানে যেদিন আমাদের ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়েছিল।

আমি যথারীতি নাদিয়াকে ওর পছন্দের পার্কে নিয়ে যাই।
আমি নাদিয়াকে যেই সিক্রেট কথাটা বলতে চলেছিলাম সেই সিক্রেটটা ছিল শিমলা। আমি নাদিয়াকে এটাই বলতে এসেছিলাম যে, আমি আমার সিনিয়র খালাতো বোনকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি। এখন কিভাবে তাকে বলব সেটা যেন ও বলে দেয়। কারন নাদিয়াও একটা মেয়ে।।

— কিরে..? আজকে এত তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে এলি কেন.??(নাদিয়া)

— তোকে একটা সিক্রেট কথা বলার আছে..!(আমি)

— ও বাবা,,,তাই নাকি.? আমারও তোকে একটা সিক্রেট কথা বলার আছে। অনেক দিন বলব বলব করে বলা হয় নি। কিন্তু আজকে আমি তোকে বলে তারপর বাসায় যাব। (নাদিয়া)

— ওকে,,বল তাহলে। (আমি)

— না আগে তুই বল..! এরপর আমি বলব। (নাদিয়া)

— আচ্ছা শোন তাহলে। আমি একটা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসি..!(আমি)

আমার কথা শুনে নাদিয়া অনেক এক্সাইটেড হিয়ে যায়।

— হুম বল..! কে।সেই মেয়েটা.?(নাদিয়া)

— আমার খালাতো বোন। ‘শিমলা’ (আমি)

আমার কথা শুনে নাদিয়ার ফেসটা একদম কালো হয়ে যায়। এটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যেই নাদিয়া একটা হাসি দিয়ে বলে,,,

— থ্যাংকস,, কথাটা আমাকে এখন বলার জন্য। নাহলে কি যে হতে চলেছিল। (নাদিয়া)

— কি হতে চলেছিল..?(আমি)

— না না কিছু না..!(নাদিয়া)

— আচ্ছা,,,শোন তোকে কিন্তু বলতে হবে আমি কিভাবে শিমলা আপুকে আমার মনের কথা বলব। আর কি করলে অতি সহজেই আপু আমাকে মেনে নিবে। মানে সব কিছুতেই তোকে আমাকে হেল্প করতে হবে। কি করবি তো..?(আমি)

— হুম……..!!!(নাদিয়া)

— আচ্ছা,,এইবার তোর সিক্রেট কথাটা বল..?(আমি)

— পরে কোন একদিন বলব..! এখন বাসায় যাই। ভালো থাকিস।।।(নাদিয়া)

নাদিয়া একটা হাসি দিয়েই সেইদিন চলে যায়। সেই হাসিটা এখনো আমার মনে আছে। আমি আজ পর্যন্ত ওই হাসিটার মানে বুঝতে পারি নাই। কিছু তো একটা ছিল ওই হাসির মধ্যে। আর ওই দিনই শিমলার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল। আমি অনেক খুজেছি ওকে। কিন্তু কোথাও পাই নি। ওর আব্বু একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিল। বদলির কারনে হয়তো অন্য কোন শহরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু নাদিয়া চাইলেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারত। কিন্তু ও হয়তো ইচ্ছে করেই করে নাই।

যাই হোক এখন যখন ওকে পেয়ে গেছি,, তাহলে নিশ্চয়ই সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব। আর সেই সিক্রেট কথাটাও জানতে পারব।

————————————

নাদিয়াকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আমি আমার কাজে মন দিলাম। অনেক দিন অফিসে না থাকার কারণে অনেক কাজ জমে আছে। তাই সেগুলো মন দিয়ে করতেছিলাম।
তখনই আমার কেবিনে নাদিয়ার আগমন…

— স্যার অনেক কাজ করেছেন। ঘড়ির দিকে খেয়াল করেছেন.? দুপুর হয়ে গেছে। লাঞ্চ করার টাইম হয়ে গেছে। (নাদিয়া)

— এখন আর টাইম দেখে কি হবে.? তুই এসে গেছিস না। এখন থেকে তুই সব খেয়াল করিয়ে দিবি। (আমি)

— ইস,,,ঢং কত… খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আমার। (নাদিয়া)

— ওই দিকটায় চল..! ক্যান্টিন ওই দিকে (আমি)

— হুম…!

এরপর আমি আর নাদিয়া ক্যান্টিনে গিয়ে খাবার খেতে লাগলাম। তখন আমাদের মাঝে অনেক কথা হতে লাগল।

— তোর বাসার সবাই কেমন আছে..?(আমি)

— হুম সকলেই ভালো আছে। তোর বাসার সবাই কেমন আছে..?(নাদিয়া)

— এটা আস্তে আস্তে জানতে পেরে যাবি। তা হটাৎ করেই ঢাকা আসতে হলো কেন..?(আমি)

— বাসায় একা একা থাকতে ভালো লাগে না। তাই চাকরিতে জয়েন হলাম। (নাদিয়া)

— একা মানে.?? আংকেল আন্টি তাছাড়া তোর ছোট ভাই আছে না..?(আমি অবাক হয়ে)

— আসলে,,,,শ্রাবন আমার বিয়ে হয়েছে দুই বছর…! (নাদিয়া)

— Oh my god….really…? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। দেখো মুখটা লজ্জায় কেমন লাল হয়ে আছে….আল্লাহ,, এই মেয়ে আমাকেই ওর বিয়েতে দাওয়াত দেয় নি। (আমি)

— আমি ইচ্ছে করেই তোকে দাওয়াত দেই নি। (নাদিয়া)

— কেন কেন..?(আমি)

— পরে একদিন বলব। (নাদিয়া)

— ওকে নো প্রব্লেম..! কিন্তু তোর জামাই কি করে..?(আমি)

— নিজের একটা ব্যবসায় আছে। আর ব্যবসার কাজে প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়। আর আমারও একা একা লাগে। তাই ভাবলাম একটা যব জয়েন করি। একাকিত্মও দূর হবে। সাথে মনটাও ফ্রেশ থাকবে। (নাদিয়া)

— ওয়াও…! কি বুদ্ধিরে তোর। তোকে তো নোবেল দেওয়া উচিৎ।।

কথার মাঝে হটাৎ করেই আমি নাদিয়াকে প্রশ্ন করলাম….

— এতদিন কই ছিলি..? আর আমাকে সেই দিন কিছু না বলেই চলে গেলি কেন..? একটা বারও কি আমার কথা মনে পরে নাই..? তুই তো ইচ্ছে করলেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারতি। তাহলে কেন.?? কেন আমার সাথে কোন যোগাযোগ করিস নি…?(আমি)

নাদিয়া চুপ করে রইল…..

— আর তোর সেই সিক্রেট কথাটা কিন্তু এখনো বলিস নি আমাকে…(আমি)

— সত্যিটা বলব নাকি অন্য কিছু বানিয়ে বলে দিব??(নাদিয়া)

— তোর কি মনে হয়.? আমি কোনটা শুনতে চাই.? (আমি)

— শোন তাহলে……

এরপর নাদিয়া বলতে শুরু করল…….

” আমি যেদিন তোকে প্রথম দেখেছিলাম তখন আমি মাত্র পিএসসি পাশ করেছি। আমার মতো তুইও তোর আব্বুর সাথে রেজাল্ট জানতে স্কুলে এসেছিলি।

এরপর আমি আমার এক বন্ধুর সাহায্যে জানতে পারি তুই *** স্কুলে ভর্তি হয়েছিস। আর আমিও তোর স্কুলে ভর্তি হয়ে যাই।
কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তুই আগে আমার সাথে কথা বলবি। সেখানে উল্টে আমিই প্রথম তোর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেই। এরপর আস্তে আস্তে তোর পাগলামি, বোকাসোকা ভাব আমাকে আরো পাগল করে ফেলে।
আমি বাসায় গিয়ে শুধু ভাবতাম কখন স্কুলে যাব আর কখন তোর সাথে কথা বলব।

এইভাবে হাইস্কুল লাইফ পার করে দেই। আমি যে তোকে কতটা ভালোবাসি সেটা তোকে বলে বুঝানোর ক্ষমতা আমার তখন ছিল না।
একবার ভাবি আমার মনের কথা বলে দেই। কিন্তু বন্ধুত্বের ভয়ে বলতে পারি নাই। এই ভেবে থেমে গেছি যে, যদি আমাকে তুই ফিরিয়ে দিস তাহলে আমার কি হবে.?

তোর সাথে আমি যতটা সময় কাটিয়েছি তার প্রত্যেকটা মিনিট আমার কাছে এতটা আনন্দের ছিল যে আমি সেগুলো কোন দিন ভুলতে পারব না।
তো এইভাবে আরো দুইটা বছর কেটে যায়।

আমি জানি তোর এখনো সেইদিনের কথা মনে আছে।
আমি অনেক সাহস নিয়ে সেদিন পার্কে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ওইদিন তোকে বলেই দিব। কিন্তু তুই উল্টে আমাকে তোর ভালোবাসার মানুষের কথা বলে দিস।
আমার ওই দিন ভিষণ কষ্ট হয়েছিল। ইচ্ছে করতেছিল তোকে জরিয়ে ধরে বলি,,তুই শুধু আমার। আর কারো না। তোর সাথে বাকি জীবনটা এমন ভাবে থাকতে চাই। কিন্তু তোর খুশির কথা ভেবে আর বলা হয় নি।

তোর প্রশ্ন এটাই যে, আমি কেন তোর সাথে কোন যোগাযোগ রাখি নাই তাই না.??
আমি কি করে দেখতাম আমার পছন্দের মানুষ অন্য কারো সাথে আমার সামনে দিয়েই ঘুরে বেরাচ্ছে..? তাই আমি এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক দূরে সরে যাই তোর থেকে।
আশা করি তুই তোর উত্তর পেয়ে গিয়েছিস।”

নাদিয়া কান্না করতে করতে ওর মাথাটা নিচু করে রাখল।।

আমি তো পুরাই অবাক হয়ে আছি। আমি অনেক আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে এমন কিছু একটাই হবে।
কিন্তু নাদিয়া তো আমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার সাথে এত দিন থাকতে থাকতে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু না,, এই মেয়ে তো প্রাইমারি থেকেই। আল্লাহ…!!!

আমি এখনো চুপ করে আছি। এখন আমার নাদিয়াকে কি বলা উচিৎ আমি বুঝতে পারতেছি না। তখনই আবার নাদিয়া বলে উঠল,,,,,

— আমি তো একবার ভেবেছিলাম জীবনে যদি তোকে কোন দিন আপন করে না পাই, তাহলে বিয়েই করব না কোম দিন। কিন্তু অনেক ভেবে দেখলাম এটা অন্যায়। আমার নিজের সাথে অন্যায় করা হবে। আর আমার সব থেকে শুভাকাঙ্ক্ষী আব্বু আম্মুর সাথে অন্যায় করা হবে। তাই আমি সব কিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি।
আর তোকে পুরোটা ভুলতে না পারলেও অনেকটা ভুলে গিয়েছিলাম। তাই আব্বুর পছন্দের ছেলের সাথে বিয়েটা করে ফেলি।
আর তুই প্রশ্ন করেছিলি না যে, আমি কেন তোকে আমার বিয়েতে ইনভাইট করি নাই কেন..? আমি কি করতাম বল.? নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাশে রেখে অন্য কাউকে কি করে বিয়ে করতাম? তাই তোকে আর ইনভাইট করি নাই। চুপিচুপি স্বার্থপরের মতো বিয়েটা করে ফেলি।।।(নাদিয়া)

নাদিয়া কথা গুলো বলে বেঞ্চ থেকে উঠে ক্যান্টিনের বাইরে চলে যেতে লাগল। আমি তখনই………..

.
.
.
.
.
.
.
#চলবে……???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here