# লুকোচুড়ি ভালোবাসা 💖
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্বঃ- ৩১
রেহেনা বেগম বাসায় এসেছে তিন দিন হলো। বাসায় এসেই মারিয়ার বাবার সাথে কথা বলেছে বিয়ের ব্যাপারে। রাজের আববু ছেলের পছন্দের কথা শুনে আর অমত করে নি। আর মারিয়ার আববুর নাম শুনে ও চিনে গেছে একসাথে বিজনেস করেছে তারা। তাই রাজের আববু অমত করে নি কারণ লোকটা অনেক শত ও ভালো মানুষ। এনগেজমেন্টের এথ কথা ও তারাতারি ই ডেট ফিক্স করেছে। ডেট ফিক্সড করার পরই রাজের আম্মু রাজকে সব বলতে চেয়েছিল কিন্তু মারিয়া মাঝে এসে ব্যাঘাত ঘটায়।
–আন্টি আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।
–হুম বলো।
–আন্টি রাজকে এই সব কিছু বলেন না।
–মানে কি বলছো এমনিতেই ওকে না জানিয়ে এতো কিছু করলাম। এখন সব জানাতে হবে না হলে রাগ করবে আমার ছেলে ওকে আমি খুব ভালো করে জানি।
–প্লিজ আন্টি আমি রাজকে সারপ্রাইজ দিতে চাই। আপনি যদি এখনই সব বলে দেন তাহলে তো আর সারপ্রাইজ হবে না একটু বুঝার চেষ্টা করেন।
মানতে চাইনি কিন্তু মারিয়া ও ছারার পাএী না সে মানিয়েই ছারছে। অবশেষে না পেরে রাজি হয়ে যায়। যতই ভালোবাসুক এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত না বলে করে ফেললাম ভাবতেই ভ য় করছে আবার নিজেকে শান্ত করছে এই ভেবে ওর ভালোবাসার মানুষের সাথেই তো।
নানা কথা ভেবে চলেছিল সোফায় বসে হঠাৎ কানের কাছে কথার আওয়াজ আসতেই ধ্যান ভাঙলো তাকিয়ে দেখে রাজের আববু।
–এভাবে বসে কি ভাবছো? তুমি কি চিন্তিত রাজকে নিয়ে। এতো চিন্তা করছো কেন ছেলের কথা ভেবেই তো আমার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওর ভালোবাসার মানুষের সাথেই বিয়ে দিচ্ছি। এতো ভেবো না অসুস্থ হয়ে পরবে।
বলেই পাশে বসলো।
–হুম তবুও মনটা ভালো নেই কেন জানি। মিষ্টি টাও নেই রাজ ওকে নিয়ে কখন ফিরবে কে জানে। কতো আশা ছিলো ওই হবে আমার রাজের বউ কিন্তু ছেলের সুখের থেকে তো আর আমার ইচ্ছে টা বড় না। মেয়েটা বাড়িতে গেছে মাএ তিন দিন হলো আজকেই আবার আনতে পাঠালাম রাজকে। বাড়িতে থাকতে ও পারলো না কিন্তু কিন্তু কি করবো বলো এতো বড় কাজ ওকে ছাড়া করবো নাকি ও বাসায় নেই কি ফাকা লাগছে তাই সকালেই পাঠিয়ে দিয়েছি রাজকে।
পুরো বাসায় সাজানো হচ্ছে কাল রাজের এনগেজমেন্ট এটাই ফাইনাল হয়েছে তাই। একমাএ ছেলের এনগেজমেন্ট বলে কথা যেই সেই আয়োজন করলে হবে নাকি বড় করে আয়োজনের ব্যবস্থা করছে। ডেকোরশনের লোক এসে লাইটিং ফুল নানা জিনিস দিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে সময় লাগবে তাই আগেই সব করা।
.
.
মিষ্টি ঘুমিয়ে আছে মনটাএকটু ও ভালো না। সকাল নয়টার উপলে বাজে একবার ফজরের সময় উঠে নামাজ পরে ঘর ঝাড়ু দিয়ে আবার শুয়ে পরেছে আর উঠে নি মা ও আর ডাকে নি। মিনা স্কুলে চলে গেছে। খুব মিস করছি রাজ কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
কাছে থাকলে বুঝতে পারি না এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। মাএ তিনদিন হলো কিন্তু মনে হচ্ছে কতো দিন ধরে দেখী না। চোখ বন্ধ করেই রাজের সাথে সময় কাটানো মুহূর্তে গুলো মনে পরছে।
— মিষ্টি ওই মিষ্টি দেখ কে এসেছে রাজ এসেছে তারাতারি উঠে আয়।
আম্মুর ডাক কানে আসতেই উঠে বসলাম কতো বেলা হয়েছে। কিন্তু সাথে সাথে রাজ এসেছে শুনে অবাক ও হলাম ৪৪০ ভোল্টেজের শক খেলাম সাথে সাথে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম কোন রকম ওরনা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। দরজার কাছে এসেই বারান্দায় চোখ গেল রাজ দাড়িয়ে আছে নীল শার্ট কালো ফান্ট, শার্ট ইন করা হাতে ঘরি, সানগ্লাস ও আছে হাতে মনে হয় চোখে ছিলো খুলে রেখেছে। অনেক সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে আর ও সুন্দর হয়ে গেছে। মার সাথে কিছু কথা বলছে বলতে বলতে রুমে চলে গেল। আমি ও পেছনে পেছনে চলে গেলাম। রাজ খাটে বসে আছে সামনে মা আছে আমি একটু রাজের পাশে গিয়ে দাড়ালাম। যাতে আমাকি দেখতে পায় আমি এক ভনে রাজের দিকে তাকিয়ে আছি অথচ রাজ একবার ও ভুল করে ও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।
মার সাথে কথা বলে যাচ্ছে মা তো সেই খুশি আজই রাজ প্রথম আমাদের বাড়ি এসেছে। রাজকে জিগ্গেস করছে, কি কোন দরকার নাকি বেরাতে রাজ বলল, মামুনি নাকি আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে কেন তা বলে নি সাথে মাকে ও মিনা কে ও নাকি যেতে বলেছে। আম্মু বলল, কেন রাজ বলল, সে নাকি অত কিছু জানে না।আমি ও অবাক হ য়ে ভাবছি হঠাৎ মামুমি এমন কথা বলল কেন আমাদের যেতে কেন বলল, আমি তো আসার দিন বললাম পনেরো দিন থাকবো এখন এতো আগেই আবার মাকে ও যেতে বলছে। রাজ কি বিয়ে নিয়ে কিছু বলেছ। আমি ইশারায় কিছু জিগ্গেস করবো তার ও উপায় নাই। রাজ আমার দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না।
এতো অবহেলা তিনদিন ধরে দেখা হয় না আর সে আমাকে দেখছেই না। একটু ও কষ্টের কিছু দেখতে পাচ্ছি না খুব ভালোই আছে আমি নেই আনন্দে আছে। আর এই দিকে আমি তার বিরহে কেদে মরছি হূহ। রেগে চলে আসতে যাবো মা ডাক দিলো পেছনে থেকে। আবার পেছনে ফিরলাম না চাইতেও মার কথা না শুনলে একশ কথা শুনাবে আমাকে।
মা বলল, রাজকে শরবত করে দিতে আর হালকা নারু মুয়া দিতে। আর সে যাবে রান্না করতে।
রাজ, সে না করে যাচ্ছে কি করতে এখন ই র ওনা দিবে কিন্তু মা কিছু না শুনেই বেরিয়ে গেল।
আমি ও আর পিছনে না তাকিয়ে চলে আসতে যাবো কেউ হাত টেনে ধরলো। এটা রাজের ই কাজ জানি আমি পেছনে ফিরলাম না।
–কি হলো ওইদিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার দিকে তাকাও।
–আমি কিছু না বলে ওই ভাবেই আছি। রাজ ও আর কিছু না বলে আমার হাত ছেড়ে দিলো এতে আমার রাগ আর ও বেড়ে গেল কি অসভ্য। আর কিছু বলল না আমি যে রাগ করেছি সেটা কি বুঝতে পারছে না। পেছনে ফিরে ইচ্ছে মতো কিছু বলতে যাবো তার আগেই রাজ আমায় পেছনে থেকে জরিয়ে কাধে মাথা রাখলো। দুইহাত পেটে রেখেছে আচমকা এমন কাছে আমি ফ্রিড়িজ হয়ে গেছি। কথা বলতে পারছি না ধম বন্ধ হয়ে আসছে রাজ কাছে আসলেই এমন হয়। চখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে রাজকে ধাক্কায় দিতে লাগলাম ছারাতে তারপর আস্তে করে বললাম।
–ছারুন ন দরজা খুলা মা দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
–হোক আগে বলো এতো রাগ কেন তোমার। এতো রাগে আসো কেন রাগে লাল টকটকে হয়ে গেছ।
–তো রাগবো না একবার আমার দিকে তাকালেন না আমি তো একধ্যানে তাকিয়ে আপনাকে দেখছি আর আপনি মার সাথে কথা বলছেন। আমাকে খেয়ালই করেন নি কেন?
–কি বলেছে দেখি নি আমি তো দেখেছী তোমার দিকেই তো তাকিয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি বুঝনি। তোমার দিকে তাকিয়ে তো আমার চোখ ফিরানো দায় হয়ে গেছিলো। ঘুম ঘুম মুখ করে আমার সামনে এলোমেলো চুল নিয়ে আর কখনো আসবে না তাহলে কিছু করে ফেলবো। আর আজকে কতো কষ্টে ছিলাম জানো একমাএ শাশুড়ি আম্মা আমার তার সামনে কিছু করে ফেললে কি হতো তাই তো তাকাই নি বেশি তবুও আড় চোখে বারবার দেখেছি আর তোমার রাগি চেহারা বাপরে এতো রাগ তোমার আগে তো ভ য় পেতে আমাকে আর এখন আমি ই তোমার ভয় পায়।
–ছারুন তো মা দেখবে।
–নিজের বউকে একটু ধরতে পারবো না কি পোড়া কপাল আমার।
বলেই রাজ আমকে ছেড়ে দিয়ে খাটে বসে পরলো।
–হুম পারবেন না সবাইকে জানিয়ে যেদিন বিয়ে করবেন সেইদিন সব করতে পারবেন মিস্টার। এখন না তাই কন্টোল করুন নিজেকে। আর মামুনি আজ কেন সবাইকে যেতে বলেছে। মা তো যাবে না মিনার পরিক্ষা।
–জানি আমি শুধু সকালে উঠতেই বলল বাবুন মিষ্টি নিয়ে আয় সাথে পরিবারের সবাইকে যদি আসে কিন্তু কি কারণে বলে নি।
–ওহ আপনি বসেন আমি আসছি।
রাজ কিছু বলার আগেই মিষ্টি চলে গেল। একটো পর মিষ্টি শরবত করে আনলো রাজকে দিলো রাজের পানি পিপাসা লেগেছিল তাই শরবত খেয়ে ফেলল দিতেই আর ও অনেক বানানো জিনিস এনেছিল খায় নি। যেমন, নাড়ু, মুড়ির মুয়া, খৈয়, মিষ্টি, সন্দেস, পিঠা ছিলো কিছু মিষ্টি এসেছে তাই ওর জন্য তৈরি করেছি সংসারের পিঠা, পাকন পিঠা, বাজা কলি। মিষ্টি ইয়া বড় একটা ট্রে তে এতো জিনিস এনেছে। রাজ তো শরবত খেয়ে হা করে তাকিয়ে আছে এতো জিনিস খাবে কে কয় জনের জন্য এসেছে এগুলো।
–শুশুর বাড়ি আসলে এতো সব দিতে হয় নাকি জামাইকে খেতে এতো খাবার খেলে আমাকে আর খুজে পাবে না তুমি সিরিয়ালি।
–আবার ইয়ারকি করছেন আপনি। খান তো আম্মু পাঠালো এত আমি বলেছিলাম আর কি জামাই বারবার বলেছেন মা শুনতে পাবে তো।
–জামাই ই তো বলো আমি কি মিথ্যে বলছি আর এতো খাবার কেন আমি একটা ও খাব না রেখে দাও আর তারাতারি রেডি হও তারাতারি যেতে বলেছে।
–মা এখন যেতে দেবে না রান্না বসাবে আপনাকে খেতে হবে তারপর।
–নো লেট হয়ে যাবে। এখান থেকে খাচ্ছি প্লিজ আর কিছু রান্না করতে না করো।
–আমি কিছু করতে পারবো না আপনি দেখেন।
–কি বউ রে আমার একটু বরকে ভালোবাসে না। একটু হেল্প করলে কি হয়।
মিষ্টি কিছু বলল না হাসলো খালি।
রাজ একটা পিঠা কামর দিচ্ছে আর ভাবছে ওমনি মিষ্টির আম্মু এলো আর শুরু হলো জরাজরি। রাজ কে জোর করে পিঠা খাওয়াতে রাগলো একটি ও রাখবে না একেরপর একটা হাতে দিচ্ছে আর খেতে বলছে কয়েকটা খাওয়া র পর আর যখন পারছে না মিষ্টির মা মুখে তুরে দিচ্ছে। সে রাজকে প্রচণ্ড ভালো বাসে আশা আছে একেই মেয়ের জামাই করবে তাই তো এতো খাতির করা প্রথম এসেছে বাসার লজ্জা করে খাচ্ছে না ভেবে খাওয়াচ্ছেই আর রাজ পরেছে জামেলায়। না পারছে সইতে না পারছে কিছু বলতে। মিষ্টি তো মজা নিচ্ছে তার মা এমন আপন ভাবে যাদের তাদের সাথেই করে খাইয়ে তার অবস্থা খারাপ করে দেয়।
রাজ খাওয়ার পর ঠাস করে খাটে শুয়ে পরলো পেট ফেটে যাওয়ার অবস্থা। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে একটু ভালো ফিল করে উঠে বৈরিয়ে পরলো একানে থাকলে মরতে হবে খেতে খেতে জান বাচাতে চাইলে পালাতে হবে। মিষ্টির রুমে ঢুকে ওকৈ রেডি হতে বলল আর মিষ্টির মাকে রান্না ঘরে পেয়ে খুব করে বুঝালো এবং ফোনে কথা ও বলালো তারপর ছারা পেল ও বেরিয়ে পরলো দুজনে।
চলবে❤