#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২৩
আফনান লারা
.
রাখালের গায়ে পরপর কয়েকবার মার পড়ায় আমির তিয়াজির লোকেরা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে অর্ণবের উপর আক্রমণ করলো।কুসুম তাদের সবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে বাধা দিয়ে।ভয়ে কিছু বলছেনা।আমির তিয়াজি কাছে এসে বললেন,’তোমার সঙ্গে এই ছেলের বিয়ে হয়েছে?শেষবার জিজ্ঞেস করছি’
কুসুম অর্ণবের ভয়ে বললো,’হুম”
আমির তিয়াজি পেছনে তাকালেন সবার দিকে।তারপর সোজা গিয়ে স্টেজে বসলেন।মুন্নি ছুটে এসে বললো,’ তাহলে আমাদের কানে এতদিন এই খবর কেন আসলোনা?’
ভেতর থেকে একজন বললো,’হয়ত বিয়ে পড়িয়ে রেখেছে যাতে আমরা তুলে আনলেও বিয়ে না করাতে পারি’
সবাই বললো, ঠিক ঠিক।
আবার কিছু মানুষ বলা ধরলো,’আমাদের বংশের কেউ বিবাহিত মেয়ে বিয়ে করেনা।’
অর্ণব হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।কুুসুমকে নিজের কাছে এনে দাঁড় করিয়ে বললো,’তাহলে এই বিয়ের কোনো মানে হয়না।আমরা আসি।ভালো থাকবেন’
আমির তিয়াজি ওদের দাঁড়াতে বললেন।এরপর অর্ণবের দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে থেকে বললেন,’তোমার আর ওর বিয়ে হয়েছে তার কি প্রমাণ? হতে পারে তুমি কুসুমকে বাঁচাতে মিথ্যে বলছো।আর বিয়ে হলে তো আমরা কারোর না কারো মুখে নিশ্চয় শুনতাম।বিয়ে তো চাপা থাকার মতন বিষয় না’
অর্ণব কুুসমের কানে ফিসফিস করে বললো,’তোমার পিঠে কোনো তিল আছে?’
কুসুম আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলো।পিঠের তিল দিয়ে এ সময়ে অর্ণবের কি কাজ তা ভাবতে গিয়ে সে অবাক হয়ে গেছে।অর্ণব ওকে খোঁচা দিয়ে বললো,’যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও!’
-‘ননননননেই’
রাখাল তার হাতিয়ারটা অর্ণবের দিকে তাক করে বললো,’আমি জানি ওরা বিবাহিত না।কেউ বিশ্বাস করবানা ওদের কথা’
অর্ণব এগিয়ে গিয়ে আমির তিয়াজির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’আমার বউয়ের পিঠে একটা তিল ও নেই।আমি নিশ্চিত।এই আন্টিকে দিয়ে চেক করিয়ে নিতে পারেন’
আমির তিয়াজি রেগে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।কুসুম বুঝে গেছে অর্ণব কানে কানে ঠিক কি বলেছে তাকে।ভয় বাদ দিয়ে লজ্জায় লাক টুকটুকে হয়ে গেলো সে।
ভেতর থেকে আবার কজনের আওয়াজ শোনা গেলো।আমির তিয়াজি স্পষ্ট শুনার জন্য ভেতরে চলে গেলেন।রাখাল কুসুমকে ভাল করে দেখছে ঘুরে ঘুরে।অর্ণব সেটা দেখে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
—–
-‘কি বলো তোমরা?কি করতাম এখন?যদি সত্যি বিবাহিত হয় তো এই বিয়ে তো হবেনা’
আমির তিয়াজির কথা শুনে তার আম্মা বললেন,’এটাও হইতে পারে তারা মিথ্যা কইতাছে।এক কাজ করো।ঐ হুজুররে কও ওদের বিয়া পড়ানোর কথা তুলতে।যদি ওরা বিয়েটা করে নেয় তাহলে আমরা বুঝবো ওদের আগেও বিয়ে হয়ছে।আর যদি আমতা আমতা করে তাহলে তো ধরেই নিবা যে বিয়ে হয়নাই।এতক্ষণ সব মিছা কইছিল!’
-‘আম্মা একদম ঠিক কইছেন’
আমির তিয়াজি বাহিরে এসে বললেন,’শোনো, তোমরা তো বলছো তোমাদের আগেই বিয়ে হয়েছে,তাহলে আজ আবার বিয়ে হবে তোমাদের।তৈরি হও’
অর্ণব যেন আকাশ থেকে নিচে ধপাস করে পড়লো।কুসুম
মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে।তার ধারণা ছিল এমন কিছুই হবে।রাখাল চটে গিয়ে বললো,’এটা কেমন কথা নানাজান?এরা যদি বিবাহিত না হয়ে থাকে তবে??? তবে তো সত্যিকারের বিয়ে হয়ে যাবে ‘
-‘না হবেনা।এত সাহস নাই ওদের।আমরা শুধু দেখতে চাই মিথ্যা বললো নাকি সত্যি’
কুসুম অর্ণবের অবস্থা দেখে বললো,’এখনও সময় আছে।চলে যান আপনি।এত বড় ভুল করবেন না।আমি চাইনা আপনার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার স্ত্রী হতে। চলে যান দয়া করে।আমার ভাগ্যে এটাই ছিল।দয়া করে চলে যান আপনি।
আপনার জীবনটা আমার কারণে নষ্ট করবেন না’
-‘কি রে ব্যাটা?? কথা কস না ক্যান?তার মানে কি তোর বউ না কুসুুম?এতক্ষণ আমাদের মিথ্যা কইছিলি?’
আমির তিয়াজির মায়ের কথা শুনে অর্ণব ঘোর থেকে বের হলো।জুথির ছবি ভাসছিল চোখের সামনে।
কিন্তু নাহ!
কুসুম তার দায়িত্ব। আজ যদি কুসুমকে এমন হিংস্র স্বভাবের একটা ছেলের কাছে আমি ফেলে চলে যাই নিজ স্বার্থের কথা চিন্তা করে তাহলে এটার অভিশাপে আমি কখনওই সুখী হবোনা।অমানবিকতা হবে এটা।বাবা ঠিক বলেছিলেন….
কুসুম আমার ভাগ্যে থাকলে পৃথিবীর যে কোণায় গিয়ে লুকাইনা কেন তার সাথেই আমার বিয়ে হতো।আজ সেটাই হবে, তা নাহলে আমি এখন বাসায় থাকার কথা।
না জুথি জেদ করে জঙ্গলের দিকে ছুটতো, না আমি জঙলে পথ হারাতাম, আর না আমি মেলা ভেবে এদিকে আসতাম।
না পালিয়ে যাবার সময় পাঞ্জাবি পেরেকে আটকাতো।সব ভাগ্যের লিখন।’
-“আপনি কথা বলছেননা কেন?বেশি দেরি করবেননা।চলে যান!আপনি পালালে ওরা আপনাকে ধরতে যাবেনা।যান আপনি!!’
অর্ণব মাথা উঁচু করে বললো,’হুম।আমি কুসুমকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে রাজি।আপনারা ব্যবস্থা করুন’
কুসুম চমকে ওর মুখের দিকে তাকিয়েছে।
অর্ণবের মাথায় রাখালের টুপিটা বসিয়ে দেওয়া হলো।রাখাল চোরের মতন এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।পর্দা ছাড়াই বিয়ের সব কার্যাদি শুরু হয়ে গেলো।অর্ণবের কবুল বলা শেষে যখন কুসুমের বেলা আসলো তখন আমির তিয়াজি থামিয়ে দিলেন।
কুসুম আর অর্ণব দুজনই অবাক।আমির তিয়াজি বললেন,’হয়ত সত্যি সত্যি আগে তোমাদের বিয়ে হয়েছে।আমি পরীক্ষা করবার জন্য এমনটা করেছি।বিবাহিতের জোর করে দ্বিতীয় বার বিয়ে করালে আবার কি হয় না হয় বলতে পারিনা।পাপ হতে পারে আবার মঙ্গল ও হতে পারে।কিন্তু আমি সংশয়ে থাকতে চাইনা।
তার চেয়ে বরং তুমি তোমার বউরে নিয়ে চলে যাও এখান থেকে।আমাদের যা বিশ্বাস হবার তা হয়েছে।আর বিশ্বাসের দরকার নাই।’
আমির তিয়াজি চলে গেলেন আসর ছেড়ে।কুসুম দম ফেললো।মনে মনে খুশি হলো অনেক।
কিন্তু অর্ণবের মুখে কোনো হাসি দেখলেনা সে।এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে।রাখাল রাগের কারণে কোথায় যেন চলে গেছে হনহনিয়ে।
অর্ণব উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’চলেন’
কুসুম ওর পিছু পিছু আসতে আসতে বললো,’যাক আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন।না হয় আর একটুর জন্য আমাদের সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যেতো।উফ!!বাঁচলাম।’
অর্ণব তার ব্যাগটা খুঁজে হাতে নিয়ে বললো,’এই জায়গা চেনেন আপনি?’
-‘উহু।এটা তো আমাদের গ্রাম না।উনাদের ও না মনে হয়।আমাকে তারা তুলে অনেকদূরে নিয়ে এসেছে শুনলাম’
-“ওহ’
অর্ণব আর কিছু বললোনা।কুসুমকে সাথে নিয়ে চললো।কুসুম বললো সে কাল ভারত চলে যাবে তার পা এখন কিছুটা ভালো আছে।অর্ণব তার কোনো কথারই জবাব দিচ্ছেনা।
কুসুম আবার বললো,’ভেবেছিলাম জোর করে আমাদের বিয়েটা দিয়ে দিবে।আপনি বাধ্য হবেন একটা সম্পর্কে জুড়তে।এখন সেটা হলোনা, জানেন?আমি অনেক খুশি।আচ্ছা আপনি কিছু বলছেননা কেন?আমি যে তখন মিথ্যে বললাম সে কারণে রেগে আছেন?’
অর্ণব তাও চুপ।হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে তারা মেইন রোডের সন্ধান পেলো।কুসুম শাড়ী একটু উঠিয়ে ওর সঙ্গে হাঁটছিল।একটা সিএনজি থামিয়ে উঠলো দুজন সেটাতে।
কুসুম বললো,’আমার বাড়ি যাবেননা?বাবা মা নিশ্চয় অনেক চিন্তা করছে’
অর্ণব যেন মুখে তালা মেরেছে।একটা শব্দ ও সে উচ্চারণ করছেনা।শীতে গা কাঁপছে কুসুমের।শীতে অর্ণবের ব্যাগটা ওর থেকে কেড়ে নিয়ে বললো,’এটা আমি আমার কাছে রাখি?’
অর্ণব সামনে তাকিয়ে ছিল।কুসুমের কথা শুনে বললো,’ভেতরে আমার একটা শাল আছে।ওটা বের করে পরে নেন।শীত অনেক’
কুসুম দেরি না করে শালটা বের করে গায়ে দিয়ে নিলো।এখন একটু উষ্ণ লাগছে শরীরটা।আল্লাহর কাছে কত দোয়া করেছিল যেন বাধ্য হয়ে এই বিয়েটা না হয়।এখন শান্তিতে কি যে করতে ইচ্ছে করছে।অন্তত মনটাকে বুঝাতে পারবে তার কারণে অর্ণবের জীবন নষ্ট হয়নি।’
পুরোটা সময়ে অর্ণব কুসুমকে একটামাত্র প্রশ্ন করেছিল।আর সেটা হলো,’আসলেই আমাদের বিয়ে হয়নি তখন?’
জবাবে কুসুম শুধু তাকিয়ে ছিল শালটাকে মুঠো করে ধরে।
দুই ঘন্টা লাগলো অর্ণবদের বাড়িতে আসতে।ওর ফোন অফ হয়ে গেছিলো ব্যাটারি ডাউনে।মা বাবা কতবার যে ফোন করেছিলেন।কুসুম পথে ঘুমিয়ে পড়েছিল।সিএনজি ড্রাইভার না বললে অর্ণব খেয়াল করতো না ওর হাত একটা বাহিরে বেরিয়ে ছিল।নিজেকে তখন কি করতে ইচ্ছে করছিল তার।অহেতুক চিন্তায় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে বসতো।
কুসুম ঘুম ঘুম চোখে ওর পিছু পিছু যাচ্ছে মাটির পথটা ধরে।রাত তখন নয়টা বাজে।অর্ণব তার সেই টর্চ জ্বালিয়ে চলছে।
বাড়িতে ঢোকার সময় বাইরে বাবাকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখলো সে।বাবা ওকে দেখে মুখটা ফুলিয়ে বললেন,’এত সময় লাগে?আমাাদের চিন্তা হয়না??ফোন অফ করে রেখেছিলি কেন?’
তিনি আরও কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু ওর পেছনে কুসুমকে আসতে দেখে তার কথা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলো।মা আর মিশু ভাবীও ছুটে আসলেন অর্ণবের নাম শুনে।
সবাই অবাক হয়ে কুসুমকে দেখছে এখন।বেশি অবাক হলেন বিয়ের সাজে দেখে।
অর্ণব নিজের ব্যাগটা কুসুমের হাত থেকে নিয়ে ঘরে যেতে যেতে বললো,’বিয়ের বন্দোবস্ত করো।আমি ওকে বিয়ে করবো এখন’
চলবে♥
মেঘ বলেছে বৃষ্টি নামবে অর্ডার লিংক
https://www.facebook.com/Bookshelfsc/