#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২৪
আফনান লারা
.
-‘মানেহ?কি বলে গেলো ও?’
বাবা অর্ণবের কথার কোনো মানে মতলব বুঝতে পারলেননা।ওসব বাদ দিয়ে কুসুমের দিকে ফিরে বললেন,’কি গো মা তুমি এখানে?এই বেশে?আমার তো কিছু ঠিক লাগছেনা’
কুসুম অর্ণবের শেষে বলা কথাটা শুনে ঝটকা খেয়ে চুপ করে আছে।মা পিছু হটে অর্ণবের কাছে গেলেন।সে ফোনে চার্জ দিয়ে টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসে পানি খাচ্ছে শুধু।মা কাছে এসে বললেন,’কিরে?কিছু তো বলবি।আমরা তো কিছুই বুঝতেছিনা’
-“কুসুমের বাবা মাকে আসতে বলো।বললাম না বিয়ের আয়োজন করতে?’
বাবা ভেতরে এসে বললেন,’বিয়ের আয়োজন মানে?তোর শরীর ঠিক আছে তো?এসব কি বলছিস?আমাদের খোলসা করে কিছু না বলেই শুধু বিয়ে বিয়ে করছিস।বিয়ে তো পালিয়ে যাচ্ছেনা।আগে বল কুসুম এখানে কেন?আর তোর আসতে এত দেরি বা হলো কেন?’
অর্ণব কুসুমের দিকে তাকালো।কুসুম ও ওর দিকে তাকিয়ে আছে।এখনও ঘরে ঢোকেনি।অর্ণব গ্লাস রেখে বললো,’হ্যাঁ বিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।কাল ঈদ।তাই আমি আজ বিয়ে করবো।বন্দবস্ত করো।কাহিনী শুনতে পাঁচ মিনিট ও লাগবেনা’
বাবা অর্ণবের এমন বদলে যাওয়া দেখে যতটা না অবাক হলেন তার চেয়ে বেশি খুশি হলেন কুসুমকে বিয়ের ব্যাপারে ওর এত তড়িগড়ি করা দেখে।মাকে ইশারা করে তিনি বেরিয়ে গেলেন মসজিদের দিকে।তার পাশেই কাজীর বাসা।কাজী আর ইমাম দুই ভাই।তাদের সঙ্গে করে আনবেন।অর্ণবের মা কুসুমের হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বললেন,’কিরে মা?আমাকে তো বল কি হয়েছে?চিন্তা তো আর মাথায় আঁটছেনা।তোর না ভারতে চলে যাবার কথা ছিল?তবে তুই এখানে কি করে এলি?পথ হারিয়ে ফেলেছিস?তাহলে বিয়ের বেশে কেন তুই?’
অর্ণব চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।মিশু ভাবী বাড়ির ফোন থেকে কুসুমের বাবা মাকে ফোন করে বললেন তারা যেন জলদি এখানে চলে আসে।কুসুম এখানে।
তারা অনেক চিন্তায় ছিলেন।পুলিশের কাছেও গিয়েছিলেন।এখন কুসুমের খবর পেয়ে হাঁপ ছেড়ে রওনা হলেন অর্ণবদের বাসার উদ্দেশ্যে।কুসুম আস্তে করে বললো,’আমি আসলে জানিনা ওরা কারা।সকালের দিকে কূর্নি নামের একটা মেয়ে আমাকে জঙ্গলের গ্রাম দেখাবে বলে নিয়ে যাচ্ছিলো।বাবা মা বাধা দিয়ে আর যেতে দেয়নি আমায়।এরপর রাতে কতগুলো লোকের দল আমাদের ঘরে জোরজবরদস্তি ঢুকে বাবা মাকে তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে আমাকে নিয়ে আসে অনেক দূর।
আমি জায়গাটা চিনি নাই।কখনও দেখিনি।এরপর আমাকে কতগুলো মহিলা মিলে জোর করে বধূ সাজিয়ে দিয়েছিল রাখাল নামের একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবে বলে ঠিক তখনই উনি আসেন। জানিনা কি করে এসেছেন ওখানে।এরপর উনি আমাকে বাঁচিয়ে এখানে নিয়ে আসলেন’
মা মুখে হাত দিয়ে আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলেন।মিশু ভাবী কুসুমের পাশে বসে বললো,’তা না হয় বুঝলাম।কিন্তু অর্ণব তুমি হঠাৎ ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কেন নিলে?তুমি তো এই বিয়েতে রাজি ছিলেনা’
অর্ণব উঠে চলে গেলো তার ঘরে।প্রশ্নটার উত্তর দিতেও তার রাগ হচ্ছে প্রচুর।
মা কুসুমের মুখটা তুলে ধরে বললেন,’তুই জানিস ও কি কারণে বিয়ে করতে রাজি হলো??’
-“জানিনা।তবে আমার জানা উচিত’
শালটা খুলে কুসুম ছুটে গেলো অর্ণবের রুমের দিকে।বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে অর্ণব দাঁড়িয়ে ছিল।কুসুম ওর থেকে একটু দূরত্বে দাঁড়িয়ে বললো,’আমি জানতে চাই আপনি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন যেখানে আপনি আমায় কখনও বিয়ে করতে চাননি? ‘
অর্ণব বললো,’চলো যাও এখন।আমার মেজাজ ঠিক নেই ‘
-‘আমি জানতে চাই।আমার অধিকার আছে এটা জানার’
অর্ণব পেছনে ঘুরে তাকালো এবার।কুসুম ওর চাহনি দেখে ভয়ে নড়ে উঠেছে।অর্ণব এগিয়ে এসে বললো,’জানতে চাইতেছো কেন বিয়ে করতে চাচ্ছি?
বলো… বিয়ে তো হয়ে গেছে তাও আবার কেন বিয়ে করছি?
পরিবারের মানুষ যাতে এই বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন না তুলে সে কারণে’
কুসুম থতমত খেয়ে বললো,’কিসের বিয়ে?’
-“কিসের বিয়ে?কুসুম তুমি সবটা জানো।তখন আমাদের বিয়ে পড়ানোর সময় আমি কবুল বলার পর তুমি বলার সেসময়ে ঐ দস্যু তোমায় থামিয়ে দিয়েছিল ঠিক,তবে তুমি কি ভেবেছো?উনার মানা করার পরেও তুমি যে তিনটি বার কবুল বলেছিলে তা আমি শুনতে পাইনি??শুধু আমি কেন!!পাশে বসে থাকা হুজুর ও শুনতে পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তৎক্ষনাৎ।’
অর্ণব আরও এগিয়ে গিয়ে কুসুমকে ঝাপটে ধরে বললো,’কেন কুসুম?কেন তুমি কবুল বললে তখন?কেন তুমি এমনটা করলে??’
কুসুমের চোখে পানি দেখে ওর হাত মূহুর্তেই ছেড়ে দিলো অর্ণব।রেগে আবার বারান্দায় গিয়ে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।কুসুম কান্না থামিয়ে বললো,’আমি আপনার স্ত্রী হয়ে ভারতে চিরজীবনের জন্য চলে যেতে চেয়েছিলাম।আমি কখনও আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসতাম না।শুধু এই ভেবে বাকি জীবন পার করতাম যে আমাদের বিয়েটা হয়েছে।আমি বিবাহিতা।’
-‘বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়।যাও তুমি রুম থেকে।আমাকে একা থাকতে দাও’
কুসুম রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ভেবেছিল বিয়েতে কবুল বলার কথা হয়ত সে ছাড়া আর দ্বিতীয় কেউ জানেনা অথচ যার জানলে আগুন বাঁধবে সে জেনে বসে আছে।
এতটাই রেগে আছেন যে আপনি বলা ছেড়ে তুমিতে চলে আসলেন তাঁর সেদিকে খেয়াল নেই।অথচ উনি কাউকে তুমি করে বলেননা।’
-‘কিরে কাঁদছিস কেন?অর্ণব কি বলেছে তোকে?’
-“কিছুনা’
হুজুর আর ইমাম হাসানকে আসতে দেখে মা কুসুমের হাত ধরে তার রুমে নিয়ে আসলেন।অর্ণব তাদের সাড়া পেয়ে চলে আসলো সোফার রুমে।কুসুমের বাবা মায়ের আসতে দেরি হবে। তাই অপেক্ষা করতে লাগলেন তারা।কুসুম খাটে বসে এক দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ছিল।
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।আচ্ছা কারোর স্ত্রী হয়ে থাকা কি অপরাধ?
আমি কি স্বার্থপরায়ণ?কিন্তু এই বিয়েটাকে আমি আমার নিজের জীবনের জন্য স্বীকৃতি দিয়েছিলাম।তিনি জানুক তা ভেবে আমি কবুল বলিনি।আমি চাইনি তিনি জেনে যাক তখন আমাদের বিয়ে হয়েছে।আমি তো….’
মিশু পাউডার আর লিপস্টিক নিয়ে বসে কুসুমকে সাজাতে লাগলো।একটা ছোটবোনের অনেক শখ তার।আছেও।তবে সেই ছোটবোনটা অনেকদূরে থাকে।কুসুমকে দেখলে ছোটবোনটার কথা মনে পড়ে যায়।
বিয়ের কথা শুনে আশেপাশের দশ বিশজন পাড়া প্রতিবেশী এসে হাজির হয়েছে।
বিয়ের মহল মনে হচ্ছে এখন।অর্ণব মাথার যন্ত্রনায় একবার এক পাশ করে বসছে।সবাই অপেক্ষা করছেন কুসুমের বাবা আসার।কুসুম সেজেগুজে বসেছিল এতক্ষণ ।
তার চোখে ঘুম নেমে এসেছে আবারও।অর্ণবের মায়ের রুমের বিছানার এক কেণায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ঘুমাচ্ছে সে।
ওর বাবা মা আসতেই হুজুর দোয়া শুরু করলেন।
কুসুমের বাবা কিছুই বুঝলেননা।শেষে অর্ণবের বাবা মায়ের থেকে সবটা শুনে বুঝতে পারলেন পরিষ্কার।কুসুমকে জাগাতে আসলো কলি।কলি ওকে দেখে কি খুশি যে হলো।চুমু তে ভরিয়ে দিলো বোনকে।কুসুম হাসতে চেয়েও পারছেনা।অপরাধ বোধের চোটে তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেছে।
অর্ণবের মা এসে কুসুমের গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিয়ে ঘোমটা বড় করে টেনে দিলেন।
অল্প সময়ের ব্যবধানে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলো।কুসুম ভয়ে অর্ণবের মায়ের রুম থেকে নড়ছেনা।শেষে মিশু ভাবী জোরাজুরি করে ওকে অর্ণবের সাথে সাথে রুমে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।অর্ণব সবেমাত্র ঢুকেছিল।কুসুম ধাক্কা খেয়ে সোজা ওর পিঠের সাথে লেগে পড়লো।অর্ণব পেছনে তাকাতেই ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো আবার।মিশু ভাবী দরজা টানতে টানতে বললেন,’ভাই দরজা লাগাও’
কুসুম ঘোমটা টেনে বালিশ একটা নিয়ে এসে বললো,’আমি ঐ যে মেহমানের ঘর আছেনা?ওখানে যাই।আপনি ঘুমান’
-‘দাঁড়াও।!আমি তোমায় বলছি যেতে?বাবাকে দিয়ে আমায় ঝাড়ি দেওয়াতে চাও?তোমাকে বলছিনা আমার মেজাজ খারাপ এখন??চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ো।’
চলবে♥
মেঘ বলেছে বৃষ্টি নামবে অর্ডার লিংক
https://www.facebook.com/Bookshelfsc/