#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৪
আফনান লারা
.
অর্ণবের ইচ্ছের বিরোধিতা কুসুম কখনওই করেনি।আজও করলোনা। ওর কথামতন ওকে একা থাকতে দিয়েছে।উঠে চলে গেছে কলির কাছে
সে ওখানে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বাদাম ভাজা খাচ্ছিল,মা আসার সময় এক ব্যাগ ভর্তি করে বাদাম নিয়ে এসেছেন।ওগুলো ভেজেছেন অর্ণবের জন্য।তার নাকি ভাজা বাদাম বীট লবণের সাথে খাওয়া খুব পছন্দের।
অর্ণব তার রুমে ঘুমাতে গেছে।দুটো দিন ধরে তার চোখ থেকে ঘুমই উঠে, চলে গিয়েছিল বহুদূর।এখন বাড়ির সবাইকে একসাথে দেখে মনে একটু সাহস লাগছে,চোখ বন্ধ হয়ে আসছে রাজ্যের ঘুমে।কুসুমও কলির সাথে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বাদাম খাচ্ছিল আর মুখস্থ বলছিল স্বরবর্ণ।
অর্ণব শুতে এসে ওর পড়া শুনছিল।অল্প কদিনের পড়াতে ঠিকঠাক বলতে পারছে দেখে তার বেশ ভাল লাগলো।কুসুম যদি সঠিক সময়ে পড়াশুনা করত তবে এতদিনে তার অনেক সুনাম অর্জিত করা হয়ে যেতো।বড় অফিসার হতে পারতো সে।নাহলে এত অল্প সময়ে কেউ বর্ণ শিখে ফেলতে পারে?যে আগে এই বর্ণের সাথে পরিচিত ছিলই না।
জানিনা হাতে কত সময় আছে।তবে ওকে আমি সব শেখাবো।তারপর বুলি শুনে প্রাণ জুড়াবো আমার।’
‘বুবু,আমার মনে হয় দুলাভাই এসেছে।মায়ে বলেছে দুলাভাই থাকলে যেন তোমার সাথে না থাকি আমি, আসি বুবু’
কুসুমের উত্তরের আশা না করেই কলি ছুটে চলে গেছে বারান্দা থেকে বেরিয়ে রুম পেরিয়ে সোজা মায়ের কাছে।অর্ণব এসেছে শুনে কুসুম বারান্দার দরজায় হাত রেখে মাথা বাঁকিয়ে ওকে দেখছিল আনমনে।অর্ণবের চোখ বন্ধ করা।
কুসুম ওখানে দাঁড়িয়ে আছে তা কেমন করে যেন সে বুঝে গেলো।চোখদুটি বন্ধ রেখেই বললো,’তোমার ঘুমাতে ইচ্ছা করেনা?’
কুসুম জবাবে বললো,’নাহ।সারাক্ষণ যে শুয়ে থাকে তার চোখে ঘুমের ঠাঁই মেলে না’
‘তবে কি চাও করতে?’
‘কিছুইনা।আপনি ঘুমান,আমি দেখি’
অর্ণব আর কিছু বলেনি।ক্লান্তির শরীর নিয়ে গভীর ঘুমে চলে গেছে সে।কুসুম বেশ কিছুক্ষণ ওকে দেখে তারপর চলে গেছে মায়ের কাছে।মা বাবা ওর অসুখ নিয়ে কথা বলছিলেন।মাকে কাঁদতে দেখে রুমের ভেতর পা রাখেনি সে।
দূর থেকে তার কান্না দেখে নিলো।এরপর গিয়েছিল অর্ণবের বাবা মায়ের রুমে।তাদের রুমের চিত্র ছিল একটু ভিন্নতর। তারা আলাপ করছিলেন বিদেশী চিকিৎসার খরচের টাকা কি করে প্রস্তুত করবেন সেটা নিয়ে।জমি নাকি একটাতে হবেনা, দুটো বিক্রি করতে হবে।
মন খারাপ করে চলে এসেছে কুসুম ওখান থেকে।তার কারণে এতগুলো টাকার জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে।
—
রাতে বাবা অর্ণবকে ডেকে বললেন কুসুমকে নিয়ে বাহিরে থেকে ঘুরে আসতে,হয়ত ওর মনটা একটু হলেও ভাল হয়ে যেতে পারে।বাবার কথা মতন অর্ণব ওকে নিয়ে বেরিয়েছে ঠিক, তবে কোথায় যাবে তা দুজনের একজনেও ঠিক করে রাখেনি।
শেষে কুসুম বললো সেই দিঘির কাছে গিয়ে বসবে।অর্ণব তাই করলো। ওকে দিঘির ঘাটে নিয়ে গেলো।সেখানে দুজন বসে আছে।
রাতের অন্ধকারকে চাঁদের আলো ধমকায়।
ছড়িয়ে দেয় তার যত আলো আছে সবটা।ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে গাছের পাতা ভেদ করে নামে তোহ!তাই ওমন ছড়ানো মনে হয়।চাঁদ কিন্তু মোটেও স্বার্থপর না।
সে ঠিকঠাক ভাবেই আলো পাঠায়।তার আলোর ঘনত্ব জানতে আপনাকে খোলা মাঠের মাঝে দাঁড়াতে হবে বুঝলেন!
চাঁদের দিকে চেয়ে থেকে কুসুম বললো,’জানেন আমার মতে চাঁদে পাহাড় আছে।যেগুলো দূর থেকে দেখে দাগের মতন লাগে’
‘হুম আছেই তো’
‘চাঁদের পাহাড়গুলো কি সবুজ?’
‘জানিনা’
‘জানেন, আমি চাঁদ বানান পারি।চ আকার চা,উপরে চন্দ্রবিন্দু ঁ তারপর র’
‘কে শিখিয়েছে এটা?’
‘কলি’
‘কলির কাছেই তো এতদিনে সব শিখে নিতে পারতে।তাহলে শিখোনি কেন?’
‘আপনার মতন করে সে বোঝাতে পারেনা।আপনার বোঝানোই আমি লেখাপড়া শিখে যাব আগামী কয়েকটা দিনেই।মিলিয়ে নিয়েন’
‘কি খাবে বলো’
অর্ণবের কথা শুনে কুসুম আঁচলে গিট্টু দেওয়া কাগজের খোসা বের করলো।তাতে এক মুঠ বাদাম।ওগুলো নিয়ে ওকে দেখিয়ে খেতে বললো।
সে তো লবণ ছাড়া খাবেনা।তাই কুসুম নিজেই খাচ্ছে। একটা সময়ে অর্ণব ওর খাওয়া দেখে নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে লবণ ছাড়াই বাদাম খাওয়া শুরু করেছে।কিন্তু স্বাদ না পেয়ে কুসুমকেই বাদাম ছিলে দেওয়ার দায়িত্বটা নিলো।
—
‘তোর বাবাকে খুব মিস করছি,ভাবছি দেশে যাব সামনে।তোর কি মত?’
জুথি ফোন চার্জে দিতে দিতে বললো,’তো যাও।ফরহাদ তোমায় অনেক মিস করে।গেলে ভালই হবে’
‘মানেহ?তুই যাবিনা?’
‘আমি কেন যাব?আমি তো সবে আসলাম।’
‘তোকে ছাড়া গেলে পরিবার তো সম্পূর্ণ হবেনা’
‘বিদেশী বউ,দেশী জামাইর পরিবার এত সম্পূর্ন হওয়া লাগেনা।যাও তুমি,চিল করো।আমাকে টানিওনা।আমি প্যারা নিয়ে এসেছি।প্যারাটা গেলে নিজেই যাব ঘুরতে’
—-
‘আমার রক্তে তোমার সোহাগ
হৃদয় আমার ছেদা
গোলাপ গুলো নেতিয়ে গেছে
তাই এনেছি গাঁদা
এটা বলে প্রপোজ করে ফেল ভাই!ট্রেন্ডিং ডায়ালগ’
মমর কথা শুনে ওর গালে হালকার উপর ঝাপসা চড় একটা মেরে মৃদুল সোফায় বসে পড়েছে।পা দুলাতে দুলাতে বললো,’জুথির হাতে চড় খাওয়াতে চাস আমায়?’
‘আরেহহ আনকমন একটা ডায়ালগ!’
সুলতান শাহ লাঠি হাতে দন্ডায়মান হলেন তখন।মমর দিকে চেয়ে বললেন,’কারে প্রস্তাব দিতে বলিস?এই গরুটা আবার কোন মেয়েকে পছন্দ করেছে?’
‘বাবা জানো!!”
‘চুপ!না বাবা, ও মজা করছে।আমি ক্যান কাউকে প্রস্তাব দিতে যাব?’
‘ঠিক!তুই কেন প্রস্তাব দিতে যাবি।জনমে যে ধরা খেয়েছিলি একদা প্রেম করে। হাহাহা!!! ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম… দেয়ার ওয়াজ অ্যা গরু,এন্ড ঐ গরু এখনও গরু আছে।।হাহাহাহা’
মৃদুল রাগে কটমট করতে করতে রুমের দিকে চলে গেছে।মম খিলখিল করে হাসছে বাবার কথা শুনে।
—
শুধু বাদাম খাইয়ে কুসুমকে বাসায় নিয়ে গেলে বাবা খুব বকবে।তাই অর্ণব ওকে ঝালমুড়িও কিনে দিলো।
আজ হাঁটবার সময় অর্ণব একবার হাত ধরেছিল কুসুমের।কুসুম প্রথমে খেয়াল করেনি।ঝালমুড়ি চিবোতে চিবোতে হাঁটছিল।যখন খেয়াল করলো তখন হাঁটা বন্ধ করে দিয়ে বোকার মতন দু মিনিট তাকিয়ে ছিল।অর্ণব ওর চাহনি দেখে চমকায়নি।বরং হাঁটা চালু রাখায় কুসুম ও হেঁটে চললো ওর সাথে সাথে।
‘জানো?? না খেয়ে তোমার হাত অনেক চিকন হয়ে গেছে।আগে আরও মোটা ছিলে’
‘আপনি জানলেন কি করে?আগে ধরে ছিলেন বুঝি?’
‘হ্যাঁ,রাতে যখন ঘুমোতে তখন….’
অর্ণব চোখ বন্ধ করে জিভে কামড় দিয়ে ফেললো।কুসুম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’আচ্ছা তাই?রাতে আমি ঘুমোলে আমার হাত ধরতেন?আর কি করতেন?প্রতিদিন সকালে উঠে আঁচল দিয়ে আমার পেট ঢাকা দেখি।তাহলে কি রাতে আপনি আমার পেট ঢেকে দিতেন আঁচল দিয়ে?ঐ কাজটা আপনার তাহলে?’
‘একদম না।মিথ্যে কথা এটা’
‘তাহলে তো প্রমাণ হলো, রাতে ঘটা সব কিছুতে আপনার হাত আছে।’
‘আমি শুধু হাত ধরতাম আর পেট ঢেকে দিতাম আঁচল দিয়ে কারণ ঐ দৃশ্য আমার ভাল্লাগেনা,ঘুম আসতে দেয়না।এর বাহিরে কিছু করিনা আমি।বিশ্বাস করো’
‘হুমম আর কিছু করেননা সেটা জানি।মুখ থেকে কথা বের করতে বললাম এতকিছু।’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://facebook.com/groups/676436250036874/