#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৫
আফনান লারা
.
আরও একবার বোকা বনে যাবার কারণে অর্ণবের মুখ দিয়ে আর টু শব্দটাও বের হয়নি।হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরে এসেছে তারা।বাসায় ঢোকার সময় মৃদুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওকে ডাকছিল আসার জন্য।তাই কুসুমকে যেতে বলে সে গেলো মৃদুলের কাছে।বিছানায় এসে বসতেই জাহান দিয়ে গেলো মিল্কশেক।এসব দেখে অর্ণব জানতে চাইলো এটাতে কালোজিরা,তুলসি মেশানো আছে কিনা।
‘আরে ভাই এটা আমি বানাতে বলেছি,বাবা জানেনা।জানলে হয়ত ওসব মিক্স করে দিতো।ঠাণ্ডা মাথায় মিল্কশেকটা সাবাড় কর,একেবারে নিশ্চিন্তে’
‘ তা কি কারণে ডাক দিলি?’
‘আগে মেসে রাত জেগে আমরা আড্ডা দিতাম আর এখন কি জন্য ডাকলাম তার কৈফিয়ত চাচ্ছিস?’
‘বাদ দে এবার ভাই।ভুল হয়েছে আমার।’
‘হুম।অনেক বড় ভুল।আচ্ছা শুন,তোর থেকে পরামর্শ চাইতে ডেকে আনলাম।সেটা হলো,আমি যদি জুথিকে নিজের করে পেতে চাই,মানে তাকে প্রপোজটা করে ফেলি তোর কি মত?সে কি ফিরিয়ে দেবে?’
অর্ণব বালিশ বুকে ধরে নড়েচড়ে বসে বললো,’দেখ!জুথি আমার উপর প্রচণ্ড রেগে আছে।তোকে ভালবাসে কিনা জানিনা।তবে আমার উপর তার যে রাগ জমে আছে তার কারণেই সে তোকে মেনে নিতে পারছেনা।কারণ তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড।এটাই যত দোষের
‘তাহলে এখন কি করবো?আমি যদি জুথিকে নিজের করতে না পারি তবে আমার বাবাকে তো চেনোস।ঠিক তোর বাবার মতন।ধরে কম বয়সী বোকা একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে’
অর্ণব গালে হাত রেখে বললো,’ঐ ভাল।তারা সহজসরল হওয়ায় একটা সময়ে বেশ ভাল লাগে সবকিছু।তখন ভয় জাগে এইই সুখের দিন শেষ না হয়ে যায়।সারাক্ষণ মাথায় এই চিন্তা লেগে থাকবে’
‘আমি বুঝি আসলে।কার লাইফে কে আছে এটা তো আগে থেকেই ঠিক করা।তোর ভাগ্যে কুসুম থাকার কথা ছিল।আর আমার ভাগ্যে অনামিকা ছিলনা।ছিল ওরই মতন অন্য একজন।তবে সে জুথি কিনা জানিনা এখনও।
কিন্তু আমি তারে চাই।মন থেকে চাই।তাকে খুব ভালবেসে ফেলেছি
পাগলামো করি বলে হয়ত সে ইগনর করছে অনেক।কি করবো!তাকে দেখলো পাগলামো বেড়ে যায়।দমিয়ে রাখতে পারিনা।দেখছিস তো!তোর সামনে আমি নরমাল।অথচ ও সামনে থাকলে পাগলামোর পরিমাণ বেড়ে যায়।তার তো তোর মত নম্র ভদ্র ছেলে পছন্দ।আমি তো সেটা না।আমি ঠিক তার উল্টো। হাসিখুশি থাকি সর্বদা।ভদ্রতা আছে তবে কেবল গুরুজনদের সামনে।’
‘তুই যেমন তোকে তেমন করে একজন পছন্দ করবে।তবে সেটা যদি জুথি হয় তবে আমি খুশি হবো।কারণ সে খুব ভাল একটা মেয়ে।তোর লাইফটাকে আগেরমতন সুন্দর করে তুলবে ‘
‘তুই খুশি তো?’
‘অবশ্যই!তোর কি মনে হয়?ঘরে বউ রেখে অতীতের মেয়েটাকে নিয়ে মনে ফিলিংস ধরে রেখেছি?’
‘তবে বল কুসুমের প্রতি ফিলিংসটা কিরকম আজকাল?দেখি তো সব।কত আদর তোর ওর প্রতি।বাপরে বাপ!”
অর্ণব মুচকি হেসে মিল্কশেকটা মুখে দিয়ে সব আবার ফেলে দিলো।মৃদুল মাথা বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
‘তোর বাপে,দ্যা গ্রেট সুলতান শাহ!মিল্কশেকে চুপিসারে কালোজিরা বাটা ঢুকিয়ে দিছে।আর কত অত্যাচার করবি?’
‘জাহানকে একশোবার করে বলে দিয়েছিলাম রান্নাঘরে যেন বাবাকে ঢুকতে না দেয়।তবে কালোজিরা আসলো কই থেকে?এই জাহান!!জাহানননন??’
‘জ্বী ভাই’
‘বাবা এসেছিল রান্নাঘরে?’
‘নানির কসম আমি রান্নাঘরে তারে আসতে দেইনি।আপনার কথা হারে হারে পালন করছি’
‘তবে কালোজিরা বাটা আসলো কই থেকে?আমি তো ভাবলাম চকলেট গুড়া এগুলো তাই কালো দেখায়’
‘আমি গ্লাস টেবিলে রেখে বাহিরে গেছি চেয়ার আনতে।আপনার আব্বা চেয়ার আনতে বলেছিলেন তাই।তখন কিছু ঘটলো না তো?’
‘ওটাই তো ভুল করেছো।শেয়ালের কাছে মুরগী বন্দক দিয়ে গেছো’
—–
কুসুমের হাতে একটা হালকা রঙের,একেবারে হালকা রঙের হলুদ শাড়ী একটা মা দিয়ে বললেন,’একটু গোসল করে এটা পরে আয়।চেহারার এমন হাল করে জামাইর সামনে থাকিস তুই?এমন করলে কখনও জামাই ভালবাসবে?’
‘উনি তো এমনিতেই কত যত্ন করেন’
‘যত্ন একদিকে আর ভালবাসা একদিকে।চুপ করে যেটা বললাম কর।যাঃ’
—
মৃদুলের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে বাসায় ফিরে আসলো সে।রুমে গিয়ে শুনতে পেলো কুসুমের ডাক।বাথরুমে বসে হাত বের করে মাকে ডাকছে মগ দেওয়ার জন্য।
হাতে সাবানের ফ্যানা সব।
অর্ণব একটা মগ এনে ওর হাতে দিলো।সাথে সাথে ও মাথা বের করলো মাকে মুচকি হাসি দেখিয়ে ধন্যবাদ জানাবে বলে।এ সময়ে অর্ণবকে ওখানে দেখে হাত থেকে মগটাই ফেলে দিয়েছে সে।ঠাস করে দরজা লাগিয়ে ফেললো দেরি না করে।
অর্ণব মগটা তুলে বললো,’মগ লাগবেনা?’
‘আপনি নিচে রেখে যান’
অর্ণব ফ্লোরে মগটা রেখে বারান্দার দিকে চলে গেছে।মিনিট বিশেক পর ভেজা পা ফ্লোরে রেখেছে কুসুম।কোঁকড়া চুল গুলো দলা পেকে আছে।গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল সে।দরজার ওপারে যাওয়ার আগে এক ধাক্কা খেলো হঠাৎ,তাও অর্ণবের সঙ্গে।সে ভেবেছিল ও হয়ত বারান্দায়।কিন্তু অর্ণব গিয়েছিল পানি খেতে ডাইনিংয়ের কাছে।
কুসুম চায়নি নতুন শাড়ীতে এত জলদি অর্ণব ওকে দেখুক।নতুন একটা লজ্জা তাকে হানা করেছিল এতক্ষণ।ধাক্কা খেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে এখন।
অর্ণব ওকে ভাল করে দেখছে।দেখা শেষ করে বললো,’শাড়ী পরা তো হয়নি’
‘মায়ের কাছেই যাচ্ছিলাম,ঠিক করবো বলে’
‘তোমার মা নামাজ পড়তেছেন মনে হয়।দাও আমি ঠিক করে দিই’
কুসুম না বলে ছুটে চলে গেল কলির কাছে।দ্বিতীয়বার আর পেছনে তাকায়নি।
অনেকক্ষণ কেটে যাবার পরেও কুসুম ঘুমাতে আসছেনা বলে অর্ণব রুম থেকে বের হলো ওর খোঁজ করতে।জবা ফুল গাছের সাইডের বারান্দায় বসে সে আলতা লাগাচ্ছিল।এতক্ষণ কলিও সাহায্য করছিল কিন্তু তার ঘুমের নেশা ধরায় উঠে চলে গেছে।তাই এখন কুসুমই একা একা বসে আলতা লাগায়।
অর্ণব ওর পাশে এসে নিচে বসেছে।এরপর ওর হাত থেকে আলতা নিয়ে বললো,’অন্ধকারে যে আলতা লাগাচ্ছো, দেখতে পাও?’
‘অনেকবার লাগিয়েছি এমন অন্ধকারে।অভ্যাস আছে’
‘দাও বাকিটা আমি লাগিয়ে দেই’
কুসুম পা সরিয়ে ফেলে আলতাটাও কেড়ে নিয়ে বললো,’নাহ।বাকিটুকু আমি পারবো।আপনি ঘুমান গিয়ে’
‘রাতে কার জন্য এত সাজা হচ্ছে?বর তো আমি’
অর্ণবের কথায় কুসুমের অনেক লজ্জা লাগলো।এত লজ্জা যে সে উঠে চলে গেছে।
অনেক অনেক আগে একবার সে অর্ণবকে বলেছিল জুথি তার কি বা হতে পারে।বউ তো সে নিজে।এর জের ধরে আজ পর্যন্ত অর্ণব ওকে খোঁচায়’
বিছানায় উঠে পা বাহিরে রেখে কুসুম লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে।আলতা শুকালে পা টেনে নেবে।
হঠাৎ পায়ে সুড়সুড়ি লাগায় লাফিয়ে বসে দেখলো অর্ণব হাঁটু গেড়ে বসে আলতা লাগিয়ে দিচ্ছে বাকিটুকু।
কুসুম পা সরাতে যেতেই ও হাত দিয়ে ধরে আটকে বললো,’ ‘আহা নড়ছো কেন!কাজটা ভালভাবে করতে দাও আমায়।’
অর্ণব যতক্ষণ ধরে আলতা লাগাচ্ছিল কুসুম ততক্ষণ কি সব ভাবছিল।পর কাজটা যখন শেষ হবার পথে ঠিক সেসময়ে কুসুম বললো,’আমার অসুখ হয়েছে বলে আমার প্রতি আপনার এত টান বুঝি?’
‘কিসের টানের কথা বলছো?এগুলো তো দায়িত্ব ‘
‘ওহহ!এর বেশি না?’
‘যদি বেশি বলি তবে তুমি আবার বলবে অসুখ তো তাই।মাথা থেকে যেদিন ঝেড়ে ফেলবে এই কথাটা সেদিন আমি তোমায় বলবো আমি এসব কেন করি।তার আগে না।এবার ঘুমাও’
কুসুম হেলান দিয়ে বসলো।মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো তাকে কেমন লাগছে।
অর্ণব বললো,’ভারী সুন্দর’
‘এর বেশি কিছুনা?’
‘এর চেয়ে বেশি আর কি হবে?ওহহহ।লীলাবালি?’
‘হুম।আপনার কাছ থেকে পাওয়া আমার কাছে সব চাইতে বড় প্রশংসা ‘
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://facebook.com/groups/676436250036874/