লীলাবালি🌺 পর্ব-৭৬

0
1257

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৬
আফনান লারা
.
বাবার ঘর থেকে কোরআন শরীফ পাঠের সুমধুর ধ্বনি ভেসে চলেছে সম্পূর্ণ বাড়ি জুড়ে।নিচ তলা থেকে সুলতান শাহের ও কোরআন শরীফ পড়ার সুর ভেসে আসছিল।
মনটাকে শুদ্ধ করতে এই একটা সুরই যথেষ্ট। ফ্লোরে বসে ছিল অর্ণব।দুপাশ থেকে বিভিন্ন আয়াতের মিষ্টি সুর শুনছে চোখ বন্ধ করে।
বিছানায় ঘুমাচ্ছে কুসুম।
সেবার কথা হয়েছিল প্রতি ভোর বেলায় নামাজ শেষ করে বই পড়তে বসা হবে।অ,আ,১,২ শেখা হবে।
আর এখন তারে আমি ভোরবেলায় একটু শান্তিতে ঘুমোতে দেখি,সারাটারাত আমি তারে অসুস্থতার সাথে যুদ্ধ করতে দেখি।ভোরের দিকে এসে সে ঘুমায়।তার চোখ জিরোয়।কি করে তাকে বই পড়ার জন্য ডেকে তুলতাম?

ভাবতে ভাবতে উঠে এসে ওর গায়ে কাঁথা টেনে দিলো সে।পায়ের আলাতাটা উজ্জ্বল হয়ে আছে ওর।হলুদ শাড়ীর সাথে লাল আলতা ভীষণ মানিয়েছে।
——
সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই রান্নাঘরে দুজন বেয়ানের রান্নার ঢল পড়ায় আওয়াজে হইহুল্লড় জমে গেলো।
কুসুম আর শুয়ে থাকতে পারলোনা।চট করে উঠে বসে গেছে।উঠে বসাতে কান থেকে একটা জবা ফুল খুলে হাতের কাছে গিয়ে পড়লো।এটা এখানে কে রেখে গেলো ভাবতেই দোটানায় পড়ে যেতে হয়েছে।ও ভেবেছিল হয় অর্ণব নয়ত কলি।অর্ণব হঠাৎ এমন কেন করবে তাই ভেবে সে ধরে নিল এটা বুঝি কলির কাজ।মুখ ধুয়ে ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করার পর সে জানলো এটা কলির কাজ ও নয়।তবে কি সত্যি অর্ণব করেছে?
ফুলটাকে খোঁপা করে কুসুম তাতে বেঁধে রাখলো।
সকালের নাস্তায় আজ একটা দারুণ খাবার তৈরি করেছেন দুই বেয়াইন মিলে।আর তা হলো শাহী সিমুই।
ঘ্রাণে চারিদিক মৌ মৌ করায় বাগানে সুলতান শাহকে এই নিয়ে দশবার পায়চারি করতে দেখা গেছে।কুসুম বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরে ওনাকে দাওয়াত করলো সকালের নাস্তার জন্য।পরে মা এসে বললেন শুধু তাকে কেন।বাকিদের ও আসতে বলুক।
এবার বাকিরাও এসে হাজির।বাসায় আর জায়গা নেই।জায়গার অভাবে কুসুম আর কলি বারান্দায় বসে সিমুই খাচ্ছিল।
মম ও ওদের পাশে এসে বসেছে।

‘তোমার খোঁপার জবা ফুলটা এই গাছের বুঝি?’

‘হ্যাঁ’

‘জানো এই গাছটা আমার যখন ১৫বছর বয়স,জন্মদিনে বাবা এটা বাগানে লাগিয়েছিল।যদিও জবা আমার পছন্দের নাহ তবে দেখতে সুন্দর আর এই গাছটা লতা টাইপের বলে বাবা এনেছিল।দেখোইনা দোতলা বাড়ির সৌন্দর্য্য কেমন করে তুলে ধরেছে??তোমার বুঝি এই ফুল অনেক প্রিয়?’

‘হুমমম অনেক।আমাদের গ্রামের বাড়িতে অনেক গুলো গাছ আছে,গোলাপি আর সাদা জবা’

‘আর কয়বার তাকাবি?যা তোর বউয়ের পাশে গিয়ে বোস।দূর থেকে আর কত দেখবি?তোরই তো বউ’

অর্ণব মাথা চুলকে সরে দাঁড়িয়েছে।মৃদুল খেয়াল করলো তার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে।ফোন নিয়ে দেখলো জুথির কল।একেবারে আকাশ থেকে পড়ার মতন অবস্থা।এটা কি সত্যি জুথির কাজ?
বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।তাও বিশ্বাস অবিশ্বাসের বালাই ছেড়ে রিসিভ করলো সে।জুথি জানতে চাইলো ও কেমন আছে।

‘ভাল।আচ্ছা তোমার কি শরীর খারাপ?তুমি তো জীবনেও আমায় ফোন করোনা।তবে আজ কেন?কোনো সমস্যা হয়েছে কি?’

‘কিসের সমস্যা হবে?আমি আপনাকে কল করতে পারিনা?”

‘হাজার বার পারো।কিন্তু এমন তো করোনা।এই প্রথম করলে।তাই জানতে চাইলাম সব ঠিক আছে কিনা’

‘একদম ঠিক।মানুষের মন এতবার তো খারাপ হয়না তাই না?আমি বেশ ভাল আছি।’

‘ভাল আছো যখন তখন চলে এসো এখানে’

‘নাহ।এখন না।মন একেবারে ভাল হোক তারপর দেখা যাবে আর এটা সিঙ্গাপুর। ঢাকা বরিশাল না যে বললেই রওনা হয়ে যাব’

‘তবে কি মনে করে মৃদুলকে মনে নিলেন?কোনো বিশেষ কারণ?’

‘আজকে আমি বাংলা বই নিয়ে পড়তে বসেছিলাম।একটা কবিতার ব্যাখা বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।আপনি তো সিনিয়র ভাইয়া।বুঝিয়ে দেবেন?’

‘ধুর!ভাবলাম রোমান্টিক মুডে আছো। তোমার থেকে আসলে এসব আশা করাটাই বোকামি।কল কাটলাম।মাথা ঠাণ্ডা হলে আমি নিজেই ফোন দেবো’

মৃদুল কল কেটে গাল ফুলিয়ে চলে আসলো অর্ণবের কাছে।
অর্ণব ওর দিকে চেয়ে বললো,’ননির পুতুলের সাথে ভেজাল করে এসেছিস?তোর তো সাহস কম না’

অর্ণবের কথা শুনে মৃদুল ঢোক গিললো।ফোনটা পকেট থেকে আবার বের করে জুথিকে কলব্যাক করেছে।কিন্তু সে ধরেনি।কপালে হাত দিয়ে মৃদুল বললো,’ভুলে গেছি জুথি একটা ঘাঁড়ত্যাড়া মেয়ে।আসলে ওর সাথে কল কাটার মতন ব্যবহার এর আগে করিনি আমি।
জানিনা আর কোনোদিন কল ধরবে কিনা।এই প্রথমবার সে কল দিলো আর আমি কিনা কেটে দিলাম।ধুর!সবসময় সব মনে থাকে??’

‘আরে টেনশন নিস না।আস্তে আস্তে মানিয়ে নেবে।তাড়াহুড়োর কিছু নেই।জুথি বুঝাতে চাইছে সে রেগে আছে’

তখনই জুথির কল দেখে মৃদুল লাফিয়ে উঠলো।রিসিভ করে চুপ করে আছে ভয়ে।

জুথি বললো,’সরি ভাইয়া,আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।কল দিয়েছিলেন?রাগ শেষ আপনার?’

মৃদুল ফোন সরিয়ে ফিসফিস করে অর্ণবকে বললো,’এরে রাগ করার কথা কার ছিল?আমার নাকি জুথির?’

‘জুথির’

‘তবে সে ক্যান বলতেছে রেগে আছি আমি,মানে মৃদুল’

‘এ্যাহ!কি বলিস!’

‘হ্যালো ভাইয়া?শুনতে পাচ্ছেন?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ।শুনছি।না না আমি একটুও রেগে নেই।তুমি বলো কি বলবে’

‘পড়াটা বুঝিয়ে দেবেন?ভিডিও কল দেবো?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ,পিজিক্স,কেমিস্ট্রি, বায়োলজি।কি পড়তে চাও বলো আজই পড়িয়ে দেবো’

‘আমি বাংলা ডিপার্টমেন্টের।বাংলা পড়ালেই চলবে’
—–
আজ অর্ণব তার কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারটা দেখতে গেছে।কুসুমের এর চেয়ে খারাপ আর কোনোদিন লাগেনি।ও চলে গেছে এক ঘন্টাও হয়ত হয়নি।অথচ এরই মধ্যে কতবার যে কুসুম দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে এসেছে এই চিন্তায় যে অর্ণব কখন আসবে।
অর্ণবেরও ভাল লাগছেনা অফিসে এসে।এতদিন কাজে গ্যাপ দেওয়ায় এখন সে জোর করেও মন বসাতে পারছেনা কিছুতে।মন চায় কুসুমকে একবার দেখতে।কি করছে কে জানে।
—-
এতদিন কুসুম তার ফোনটাকে আলমারিতে তুলে রেখেছিল।দরকার নেই বলে এই কাজটা সে করেছে।
কিন্তু আজ এই ফোনের বড়ই দরকার হয়ে দাঁড়ানোয় সে ফোন আলমারি থেকে বের করে হাতে নিয়েছে।
কল করবে নাকি করবেনা তাই ভাবছিল।কলি লাফিয়ে এসে ওর পাশে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো,’বুবু তোমার ফোন দাও।গেমস খেলবো’

কুসুম ওর দিকে ফিরে বললো,’আচ্ছা তুই জানিস ছবি সমেত কল কি ভাবে করা যায়?’

‘ইন্টারনেট লাগে।তোমার ফোনে সেটা আছে?’

‘জানিনা তো’

‘তাহলে নাই।যে জানেই না তার ফোনে ইন্টারনেট আছে কিনা তার ফোনে এমবি থাকার কথানা।তা কি জন্য জানতে চাইলা?’

”না এমনি।’

‘দুলাভাইরে ফেন দিবে?’

‘না না’

‘চাচাজান দেখছিলাম দুলাভাইর বড় ভাইয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতেছে,তার ফোনে মনে হয় নেট আছে।তুমি তার ফোন দিয়ে দুলাভাইর সাথে কথা কইবা?’

‘আরে না থাক।কি ভাববেন উনি।আর তোর দুলাভাই তো জলদি চলে আসবেন।এত কিছুর দরকার নেই।তুই চল কাগজকলম নে।আমায় চিঠি লেখা শিখিয়ে দে।’
—-
কুসুমের ফোন বাজছে।এই নিয়ে পাঁচবার।সে গেছিল বাগানে।কলির ডাক শুনে ছুটে এসেছিল দোতলায়।হাঁপাতে হাঁপাতে কল রিসিভ করলো অবশেষে।

‘কই ছিলে তুমি?শরীর ভাল আছে?’

‘হ্যাঁ আমি ঠিক আছি’

‘তবে এত দেরি কেন?

‘বাগানে ছিলাম।দুপুরের খাবার খেতে আসবেন না?’

‘নাহ।আমার এখানে অনেক কাজ।তুমি খেয়ে নাও’

কুসুম মুখটা ফ্যাকাসে করে জিজ্ঞেস করলো তবে কখন আসবে।

‘সন্ধ্যা হতে পারে।’

‘ওহ।আমি ভাবলাম এখন আসবেন’

‘অনেক কাজ জমা হয়ে আছে।আমি না থাকায় কর্মচারী গুলা দোকানের অবস্থা খারাপ করে রেখেছে।সব সামলাচ্ছি।এক গ্লাস পানি খাবারও সময় পাইলাম না’

‘পানি খেয়ে নিন।’

‘তুমি বাসায় থাকো।বের হইওনা।বাগানেও যাওয়ার দটকার নেই।আমি বিকালে আবার কল দিব কেমন?’

—–
বিকাল শুরু হয় হয়ত ৩টা,৪টা থেকে।কুসুম সেই ৪টা থেকে অপেক্ষা করছিল অর্ণবের কল আসার।কোনো কল আসছেনা দেখে সে নিজেই নিল ফোন দেবে বলে।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তার ফোনে একটা টাকাও নেই।
বাবার কাছে গিয়ে বলতে লজ্জা করছে বলে যেতেও পারছেনা।
উনার সাথে কথা বলা খুব দরকার, কিন্তু লজ্জার সাথে পেরে উঠতে না পেরে গালটা ফুলিয়ে বসে রইলো বিছানায়।
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here