কাউকে চাই না পর্ব_১

0
2866

ফুফাতো ভাইয়ের বিয়েতে যেয়ে সবচেয়ে অবাক হলাম যখন দেখলাম কনে আর কেউ না আমার ভালবাশার মানুষ বিথি। আর আরো অবাক হলাম এইটা দেখে যে বিথি অনেক সাভাবিক ভাবেই আছে। তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে তার কোনো দুঃখ আছে। বরং তাকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে। একবার আমার দিকে তাকিয়ে ও না চিনার ভাং করলো। আমাকে আমার ফুফাতো ভাই শাওন দেখে ডাক দিলেন

শাওন, “আরে এইদিকে আয় এই হলো বিথি তোর ভাবী। আর জানিস এরা তোদের রাজশাহী শহরেই থাকে”

আমি, “ওহ আচ্ছা”

শাওন, “কিরে মুখ এইরকম করে রাখছিস কেনো?”

আমি, “আরে তেমন কিছু না। কালকেই চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী আসলাম। তাই একটু ক্লান্ত লাগছে। তোমরা থাকো আমি বরং যাই”

এই বলে চলে আসলাম। আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। এইখান থেকে পুরা বিয়ের মন্ডব দেখা যাচ্ছে। আমার অন্যান্য কাজিনরা কত খুশি। তাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা ছিল। কারণ ছোট থেকেই আমি শাওন ভাইয়াকে বলতাম আমি তার বিয়েতে এই করবো সেই করবো। কিন্তু কে জানত শাওন ভাইয়ার বিয়েতে এত কিছু হবে। অথচ কেউ জানেও না।

এমন সময় পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেলাম। বুঝতে পারলাম এইটা আম্মু। আম্মু আমার চোখে পানি দেখে হয়তো সব কিছুই আন্দাজ করেছেন। আর আমার আর বিথির যে প্রায় 5 বছরের রিলেশন সেটাও আম্মু আব্বু দুই জনেই জানেন।

আম্মু, “এখন কান্না কাটি করে কি হবে। যা হওয়ার সেটা হয়েই গেছে। তোমার আর শাওনের মধ্যে পার্থক্যটা দেখ। সরকারি চাকরি করে। মাসে প্রায় 50হাজারের উপর বেতন পায়। আর তুমি? গ্র্যাজুয়েশনের শেষ করেও প্রায় এক বছর হয়ে গেল। তাও বাবার টাকায় চলো।”

আমি, “তোমরা চাইলেই সব করতে পারতে। আচ্ছা আমি না হয় চাকরি বাকরি কিছু করি না। তার মানে তো এইনা যে আমি কোনো আয় করি না। আজ থেকে 5 মাস আগেই আমি বলেছিলাম তোমাদের যে আমি আর বিথি একে অপরকে ভালোবাসি। আর বিয়ে করতে চাই। কিন্তু তোমরা তা দিলে কই?”

তারপরে আম্মু কিছু বলার আগেই সেই বিয়ে বাড়ি থেকে চলে আশলাম। ওয়েট। আগে পরিচয় টা দিয়ে দেই। আমি অভ্র। বাবা মার ছোট ছেলে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। আর মা গৃহিণী। আমরা রাজশাহীতে থাকি। তবে আমি পড়াশুনার জন্য চট্টগ্রাম যাই। সেইখানে গ্র্যাজুয়েশনের কমপ্লিট করি। আমার সাথের সবাই বর্তমানে চাকরি করছে। আর প্রায় সবাইই বিয়ে করে সংসার করছে। আর আমি!🤒🤒 তবে আমি চাকরির জন্যে ট্রাইও করি নি। কারণ আমি সব সময় বেতিক্রম কিছু করতে চেয়েছি। তাই সেইখানে রিয়ালেস্ট এর ব্যাবসা শুরু করেছি। যদিও বর্তমানে সেটা একেবারেই ক্ষুদ্র পরিসরে। আর আব্বু আম্মু তো ভাবেন আমি এখনও বেকার। যদিও তারা জানেন আমি একটা ব্যাবসা শুরু করেছি। কিন্তু কিসের ব্যাবসা সেটা জানতেও চায় নি। শুধু বলেছে যে যেইদিন আমি চাকরি করবো সেই দিন যেনো তাদের সাথে কথা বলি।
আর আছে আরেকজন মানুষ সে হলো বিথি। যদিও গত 2 মাস ধরে তার সাথে যোগাযোগ হয় নি। ভেবেছিলাম রাগ করে আছে। তাই ঠিক করছিলাম শাওন ভাইয়া র বিয়েতে তো রাজশাহী যাবোই। তখনই বিথিকে সারপ্রাইজ দিবো। কিন্তু কে জানত যে আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যাবো।

বাড়িতে এসে কিছুই ভালো লাগছে না। প্রায় 1 ঘণ্টার লম্বা শাওয়ার নিলাম। তাও যেনো মাথা ঠান্ডা হচ্ছে না। শুধু একটাই কথা ভাবছি,

ছেড়ে যখন যাবেই তখন বলে গেলেই তো হতো।

প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আমি বিড়ি সিগারেট ধরবো তা না। কারণ অন্য কারো জন্যে নিজের কেন ক্ষতি করবো। আমার আজকের এত সবের জন্যে আমার বাড়ির লোকেরাও কিছুটা দাই। কারণ কয়েক মাস আগে আমি আব্বু আম্মু কে বিথির কথা বলেছিলাম কিন্তু তারা রাজি হয় নাই। তারা বলেছিল যে যেদিন আমি চাকরি করবো সেইদিন নাকি তারা রাজি হবে। আর বিথির পরিবারও বলেছিল যে তারা নাকি কোনো বেকার ছেলের সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে দিবে না। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে যেইভাবে হোক আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে না। আমাকে আমার ১৪ গুষ্টির চেয়েও বড়ো হতে হবে। তাই গত 2 মাস ধরে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কি হলো?😒

এইসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমে গেছি খেয়ালও নেই। সকালে ফোনের আলার্মে ঘুম ভাঙলো। তখনও ফজরের ওয়াক্ত ছিল। তাই ফ্রেস হয়ে নামাজ পরে নিলাম। অনেক ভেবে ঠিক করলাম যে আমি আর রাজশাহীতে থাকবো না। কাল চট্টগ্রাম চলে যাবো। একটু ফেইসবুকে ঢুকলাম। গিয়েই আমার পুরো নিউজ ফিড যেনো শাওন ভাইয়ার বিয়ের ছবিতে ভর্তি। আর এইটা দেখে আবার মাথা গরম হয়ে গেলো। তাই আমি আমার বংশের সবাইকেই ব্লক করে দিলাম। শুধু আমার ভাইয়ার একাউন্ট বাদে। কারণ আমার ভাইয়া আরশ ভাবীকে নিয়ে কানাডার টরন্টোতে থাকেন। তিনি শাওন ভাইয়ার চেয়ে ১ বছরের ছোট। শাওন ভাইয়া তাকে অনেকবার আসতে বলেছে তার বিয়েতে। কিন্তু ভাবী বর্তমানে 7 মাসের প্রেগনেন্ট। আর এই অবস্থায় আশাটা ঠিক হবে না। তাই তিনি বিয়েতে আসে নাই। তাই ভাইয়ার কোনো পোস্ট নেই। তাই তাকে ব্লক করি নি।

নিচে নেমে দেখি আব্বু আম্মু বসে আছে। আমি তাদের দেখে কোনো কথা না বলেই খাওয়া শুরু করে দিলাম। তারাও আমার সাথে কোনো কথা বলছে না। খাওয়া শেষ করে আব্বু হুট করে বললেন,

“আর কত দিন এইভাবে বাবার হোটেলে খাবে?”

“আর বেশি না। শুধু দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ো। কারণ কালকে সকালেই চট্টগ্রাম চলে যাবো”

তারপরে আব্বুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে আসলাম। এইখানে আসার জন্যে লাগেজ গুলি এখনও খোলা হয় নি। তাই আর কিছু প্যাকেজ করতে হবে না। সকালে গিয়ে কালকের বাসের টিকিট কেটে নিয়ে আসলাম।

দুপুরে একসাথে খেয়ে নিলাম। তখন আবার আব্বু আম্মু আমাকে আমার বেকারত্ব নিয়ে খোটা দিচ্ছিলেন। আমি তখনও কিছু বলি নি। শুধু মুখ বন্ধ করে হজম করে নিলাম। রাতে আর খেলাম না। সকালে রেডি হয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। আর প্রতিজ্ঞা করলাম কোনোদিনও এই শহরে আর ফিরে আসবো না। আমি যে চলে এসেছি সেটা হয়তো আব্বু আম্মু জানেও না। কারণ আমি 6 টায় চলে এসেছি।

সঠিক ভাবেই চট্টগ্রামে চলে আসলাম। এইখানে আমি একটা ফ্ল্যাট কিনেছি কয়েক মাস আগে।
,
,
,
,
,,
,
,
#চলবে

#কাউকে_চাই_না
#পর্ব_১
#মাশরাফি_আল_মেহেদী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here