কাউকে চাই না পর্ব_৬

0
3211

#কাউকে_চাই_না
#মাশরাফি_আল_মেহেদী
#পর্ব_৬

রাত 11 টা পার হয়ে গেছে। আমি আর নিধি রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। আর একটু সামনে গিয়েই মেন রোডে উঠবে। সেইখান থেকে নিধি রিক্সায় করে চলে যাবে। আর আমি ভাবছি যে সেখানে গেলে তো ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে। তাই ভাবছি যে কাউকে ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলবো। অথবা আমি অন্য রিক্সায় করে চলে যাবো। কারণ আমার আর নিধির গন্তব্য আলাদা। ভালো করে দেখলাম নিধি মনে হচ্ছে এখনও অনেক টাই ভয় পেয়ে আছে।

1 ঘণ্টা আগে,

আমি নিধির কাছে আসার আগেই দেখলাম যে সে দৌড়ে আসছে। আর অন্ধকারে হয়তো আমাকে অতটা ভালো করে খেয়াল করে নি। আর আরেকটু কাছে আসতে দেখলাম যে তার পিছনে আরো কিছু ছেলে দৌড়াচ্ছে। আমার আর ঘটনা বুঝতে বাকি থাকলো না। তাই আমি পাশে পরে থাকা একটা মোটা গাছের ডাল হাতে তুলে নিলাম। তারপরে কাছে গিয়ে একেকটার হাতে পায়ে মারা শুরু করলাম। ইচ্ছা করেই ওদের মাথায় মারি নি। কারণ যদি মরে যায় তাহলে আবার আমারই সমস্যা হতে পারে। মার খেয়ে সব গুলো দৌড়ে পালালো। আর নিধি দাড়িয়ে এখনও কাদঁছে।😔😭

আর আমি আলাদা ভাবে কিছু বললাম না। আমি প্রথমে থামতে বললাম কিন্তু থামলো না। পরে যখন ধমক দিলাম তখন আবার থামলো।

আমি, কি হয়েছে। এইখানে অত কান্না কাটির কি আছে?

নিধি, ওরা যদি আমার কিছু করে বসত?

আমি, এটার জন্যে তোমারও কিছু দোষ আছে।

নিধি আমার কথায় অবাক হয়ে গেল।

নিধি, আমার দোষ?

আমি, হ্যাঁ। বিপদ থেকে পালিয়ে বাচা যায়? তোমার আসে পাশে ভালো করে খেয়াল করে দেখলেই ত পারতে। দেখো এইখানে ওদের মারার জন্যে কত সুন্দর অস্ত্র আছে। (রাস্তায় পড়ে থাকা মোটা গাছের ডাল গুলোকে দেখিয়ে)। আর তাদের দেখলেই বুঝা যাচ্ছিলো যে তারা সবকটা মাতাল। তাই তাদের ব্যাথা দেওয়ার মত করে মারলেই তারা থাকতো না। আর তুমি পালালে তারা তোমায় আরো দুর্বল ভাববে। তাতে ওদের মত মানুষগুলো আরো আশকারা পেয়ে যায়।

#বর্তমান

এইসব ভাবতে ভাবতে রাস্তায় চলে আসলাম। এসে কিছুক্ষন পড়ে নিধিকে একটা রিক্সায় তুলে দিলাম। তার কিছুক্ষন আমিও একটা রিক্সায় করে চলে আসলাম।

(গতকালের পার্টটা তে রাতের ওই সিনটা দেওয়ার কারণে সিংহভাগ মানুষ আমাকে কমেন্ট বক্সে ধুয়ে দিছে😥😔… আসলে আমি মাঝে ওই কথাগুলো ঢুকানোর জন্য ঐরকম ঘটনা দিছি। কিন্তু ভাবিনি যে আপনাদের ঐটা পছন্দ হবে না। সরি।
আর এখন যেহেতু লিখেই ফেলছি। তাই আর পাল্টানো যাবে না। তাই অ্যাডজাস্ট করে নেন😏😏)

পরের দিন আর অফিসে যাই নি। কারণ কাল রাতে বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় 12 টা বেজে গেছিলো। তারপরে খেয়ে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়েছে। তাই ভাবলাম আজ আর যাবো না। সকালেই ম্যানেজারকে কল করে বলে দিলাম। তাই ভাবলাম যে বিকালে একটু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবো। অনেক দিন ধরে বলছিলো যে দেখা করবে। সবাই সময় করে উঠলেও আমার হচ্ছিল না। তাই কল করে বললাম সময় আছে নাকি? তারা বলল আসরের নামাজের পরে পার্কে দেখা করবে।

যথা সময়ে আমি চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সবাই চলে এসেছে। খালি আমিই ছিলাম না। তাই আমি গিয়েই মাফ চেয়ে নিলাম,

সিয়াম, আরেহ এইটা তোর আগের স্বভাব। কোথাও আসতে বললে নিজেই সবার পরে আসবে।

সিয়ামের কথা শুনে সবাই হাসলো। আসলেই এইটা আমার অভ্যাস। সত্যি বলতে আমি ইচ্ছা করেই লেট করে যাই।

রহিম, কিরে অন্যান্য দিন তোকে ডেকে পাওয়া যায় না। আর আজকে নিজে থেকে ডেকে পাঠালো? বিয়ের দাওয়াত দিবি নাকি?😏

আমি, চুপ কর। অনেক দিন ধরে তোদের সাথে দেখা হয় না তাই ডাকলাম। আর তোরা পরে আছিস আমার বিয়ে নিয়ে?

নিলয়, কিরে তুই কি চিরো কুমার থেকে যাবি? আমাদের সবার সুখের সংসার আছে। আর সিয়াম তো কিছু দিন পরই বাবা হবে। আর তুই? দেখ নিজেকে দেখ ভালো করে। দারিও পেকে গেছে কয়েকটা।

আমি, আরেহ বাদ দে না। আমি ব্যাচেলর আছি। সুখে আছি। এখন বল তোদের কি খবর?😊

সিয়াম, আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি। তোর কি খবর?

আমি, আমি আলওয়েজ ভালো থাকি😷।

নিলয়, তোর ব্যাবসা কেমন চলছে?

আমি, সেই রকম ভাবে চলছে😅

রহিম, কিরে তুই যে লন নিছিলি সেটা শোধ হইছে।

আমি, সেটা তো গত মাসেই হয়ে গেছে!..

(আপনারা হয়তো জানেন না এই ব্যাপারে। আপনাদের মনে নিশ্চয় প্রশ্ন এসেছে যে আমি তো বাবার কাছে থেকে টাকা নেই নাই ব্যাবসা শুরু করার জন্যে তাহলে মূলধন কই পেলাম।l?
আসলে আমি অনেক আগে থেকেই জমা করতাম। প্রায় 3 বছর আগে থেকেই। তখন ভাবী নি যে এইটা কাজে লাগবে। কিন্তু সেটা দিয়েও যখন হচ্ছিল না তখন আমি রহিমের পরামর্শে ব্যাংক থেকে ঋণ নেই। আর সে যেহেতু ব্যাংকার তাই নিয়মকানুন শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর সেইটা কিছু দিন আগেই শোধ করে দিয়েছি। যদিও সময় আরো ছিল। তাও আগে ভাগে দিয়ে দিছি। নাহলে মনের খুঁতখুতানি যেত না।)

তারপরে অনেকক্ষণ ধরে আড্ডা দেওয়ার পড়ে আমি চলে আসলাম বাড়ীতে। বাড়িতে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। ব্যাচেলর লাইফ আর কি?😔

ফোনের কলের শব্দে ঘুম ভেংগে গেল। দেখলাম যে আব্বুর কল,

আমি, হেলো। আসসালামুয়ালইকুম আব্বু। কেমন আছো?

আব্বু, ভালো। বাবা তোমার আম্মুর অবস্থা ভালো না। আজকে স্ট্রোক করেছে। তাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। এখন বললো যে তোমার সাথে দেখা করবে

আমি, দেখো রাজশাহী আর চট্টগ্রাম এই পারা ওই পারা না। যে এখন চাইলাম আর চলে গেলাম।

আব্বু, তোমার ভাইয়া চলে এসেছে কানাডা থেকে। আর তুমি রাজশাহী চট্টগ্রাম বুঝাচ্ছ? কাল পরশুর ভিতর চলে এসো।

আব্বুর সাথে কথা বলে মনে হলো আমার হয়তো প্রয়োজন আগে পড়ে নি তাই কল করে নি। কারণ ভাইয়া নাকি কানাডা থেকে চলে এসেছে। অর্থাৎ ঘটনা মিনিমাম 5-6 দিন আগের। আর আমাকে বলছে আজকে। হয়তো আম্মু দেখা করতে না চাইলে আজকেও বলত না।

প্রথমে রাগ হলেও পরে ভাবলাম এইবার যাই। পরের বার থেকে আর যাবো না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার দোষ কি?

#চলবে
#কাউকে_চাই_না
#পর্ব_৭
#মাশরাফি_আল_মেহেদী

আমি শেষ মেশ সিদ্ধান্ত নিলাম যে যাই হোক না কেনো তারা আমার বাবা মা। তারা না থাকলে আমি এই দুনিয়াতেই আসতাম না। আর সেইখানে তারা যাই করুক না কেনো তাদের উপর অভিমান করাটা ঠিক হবে না। তাই আমি পরের দিন সকালেই রওয়ানা দিলাম। ম্যানেজারকে বলে দিয়েছি যে আজকেও আমি অফিসে যাবো না। হয়তো আগামী 2-3 দিনও যাওয়া হবে না।

বিকালের দিকে রাজশাহী পৌছালাম। গিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি আম্মু ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। আর কাজের লোক আমাকে দরজা খুলে দিয়েছিল। আর আব্বু মনে হয় বাসায় নেই। ভাইয়া ভাবীরাও এসেছেন। ভাবী রান্না করছেন। আর ভাইয়া মনে হয়
অহনা(ভাইয়ার মেয়ে) এর সাথে রুমে আছে। আমি যে এসেছি আম্মু একবার চোখ দিয়ে তাকালো।

আমি, আসসালামুয়ালাইকুম আম্মু।

আম্মু, ওয়ালাইকুসসালাম।

আমি, কেমন আছেন এখন?

আম্মু, এইতো ভালই আছি।

আমি, তো কি কারণে ডাকলেন??🙄

আম্মু, সেইটা তোমার আব্বু আসলে একসাথে বলবো। এখন আপাতত রেস্ট নাও। তারপরে সন্ধায় তোমাকে এক জায়গায় যেতে হবে।

আমি, আচ্ছা।

আমি জানতাম যে আমার এই বাড়িতে খাওয়ার খোঁজ কেউ খুব একটা করবে না। তাই রাজশাহীতে পৌঁছানোর পরই হোটেল থেকে খেয়ে নিয়েছি। এখন রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নেই। তারপরে সন্ধায় নাকি আবার কোথায় জানি যাওয়া লাগবে। রুমে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলাম। সন্ধায় ঘুম ভাঙলো। নিচে নামতেই দেখি আব্বু সোফায় বসে আছে। আমি তাকে সালাম দিলাম

আব্বু, কি অবস্থা।

আমি, এইতো ভালই। সন্ধায় কোথায় যেনো যাওয়ার কথা বলেছিল। আসলে কারণটা যদি জানতাম??😔

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আম্মু কোথায় থেকে যেনো উড়ে এসে বললো, তোমার এইটা এখন না জানলেও চলবে। যখন যাবে তখনই জানতে পারবে। আর এমনি এমনি তো আর তোমাকে এইখানে ডাকা হয় নি?. কারণ আছে বলেই ডেকেছি। নাহলে তো তুমি এইখানে এসে আমাদের খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা ফোনও করো না।

(লেঃ…😒😒 নিজেরাই আমাকে কল দেয় না। আর আমাকে দোষ দিচ্ছে। আমি অফিস থেকে এসে কবে ফ্রেস হয়ে রাতে ডিনার করেছি আমার নিজেরও মনে নেই। আর আম্মু আমাকে বলছে কল দিয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা😅😅😂)

তারপরে আমরা 6 জন গাড়িতে করে একটা বাসায় গেলাম। বাসায় গিয়ে তো আমি অবাক। এইখানে শাওন ভাইয়াও আছেন। আর তার কলে একটা বাচ্চাকে দেখতে পাচ্ছি সম্ভবত তাদের মেয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে উনি এইখানে?

আমি আর মাথা ঘামালাম না। আমাকে এক জায়গায় বসিয়ে থয়া হলো। আমার মাথায় কিছুই ঢুকিচ্ছে না। কেনো এইখানে নিয়ে আশা হলো?😔
শেষে ভাবলাম ব্রেনে অত চাপ দিয়ে লাভ নেই। তার চেয়ে ভালো চা নাস্তা দিয়েছে। আমি সেইগুলো খাই। এমনিতেও বাড়িতে ঢুকার পর থেকে কিছুই গলা দিয়ে নামে নি।

হঠাৎ আমি দেখলাম বিথি শাওন ভাইয়ার সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। আর শাওন ভাইয়ার কলে তাদের মেয়ে। দেখে মনে সুখী ফ্যামিলি। আমিও তো তাইই চেয়েছিলাম। কিন্তু কি হলো?😔
যাই হোক যে গেছে সে গেছেই।

আব্বু, তো ভাইজান অনেক দেরি হয়ে গেল এখন মেয়েকে নিয়ে আসুন?? (একটা লোককে উদ্দেশ্য করে। সম্ভবত এই বাড়ির কর্তা)

আমি তো পুরাই টাস্কি খেয়ে গেলাম। এইখানে কি মেয়ে দেখতে আসছে? কার জন্যে?.. আব্বুর জন্যে?🤔🤔.. ধুর কিসব ভাবতেছি। আব্বুর জন্যে হলে আম্মু তাকে আস্ত রাখতো না.😝
তাহলে কি ভাইয়ার জন্যে??🙄🙄 হতে পারে। তাই আশার পর থেকে ভাবির একটু মন খারাপ লাগছে। এইখানে এসেও মনে হচ্ছে যে ভাবির মন খারাপ?😔😔
আহারে ভাবির জন্যে খারাপ লাগছে। এখন হয়তো মেয়ের জন্যে ডিভোর্স দিতে দ্বিধা বোধ করছে। তাই হয়তো সতীনের সাথে ঘর বাঁধার চিন্তায় আছে। আর ভাইয়াটা আবার এইসব করতে গেছে কেনো?🙄😒😒
আর আব্বু আম্মুও কিছু বলছে না!😡😡

যখন মেয়ে আসলো তখন তো পুরাই অবাক!!!!!!!😳😳

কারণ মেয়েটা আর কেউ না আমার অফিসের PA নিধি?😳…

কিন্তু সে এইখানে কই থেকে আসলো?🙄🤔🤔

এইবার বুঝলাম আমার কেনো প্রথম দিন থেকে নিধিকে চিনা চিনা লাগছিল। বিথি আর নিধিকে পাশপাশি করে আসতে দেখে বুঝতে পারলাম। এই দুই জনের চিহরাটা অনেক মিল। শুধু বিথি একটু শ্যামলা। আর নিধির একটু উজ্জ্বল চেহারা। আর নিধিকে হয়তো আগে রাজশাহীতে থাকার সময় দেখেছিলাম বিথির সাথে তাই চিনা চিনা লাগছিলো।
যাইহোক সে এখন আমার দ্বিতীয় ভাবী হবে🤔

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here