হৃদয় নিবাসে তুই পর্ব-৪

0
3301

#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_০৪
লেখনীতেঃ ভূমি

অদ্রিজার চোখে পানি।চোখ মুখ একমুহুর্তেই অন্য রূপ ধারণ করেছে যেন।রক্তিমের কথাটাকে চরম রূপে অবিশ্বাস করতে চেয়েও অবিশ্বাস করতে পারছে নাহ সে।রক্তিমের হাতে, কপালেও বেশখানিকটা ছিলে আছে। সেসব ক্ষত গুলো স্পষ্ট বলছে রক্তিমের বলা কথাটা সত্যি।অদ্রিজা শূণ্য চাহনি নিয়ে রক্তিমের দিকে তাকিয়েই ধপাস করে বসে পড়ল মাঠে।হাত পা কাঁপছে তার।শীতের কনকনে ঠান্ডায় ও ঘেমে উঠেছে তার মুখচোখ।রক্তিমের দিকে তাকিয়েই অস্পষ্ট স্বরে বলল,

‘ আ্ আপনি দিহানকে নিয়ে মজা করছেন রক্তিম!’

রক্তিম কপালের ক্ষত থেকে বয়ে আসা রক্তটা ডান হাতের তালুতে মুঁছে নিয়েই পরনের ব্লেইজারটা খুলে নিল।সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ফুটে উঠল রক্তাক্ত শার্টটা।সাদা শার্টের বাম পাশটা পুরোপুরি রক্তে লাল হয়ে আছে।অদ্রিজা আৎকে উঠল।কাঁপা হাতে রক্তিমের শার্টের দিকে ইশারা করেই বলে উঠল,

‘ আ্ আপনার শার্টে রক্ত?কি্ কিভাবে?’

রক্তিম এই পরিস্থিতিতেও বাঁকা হাসল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ ভেবে নিন লাল রং লাগিয়ে নিয়েছি।’

অদ্রিজা মাথা চেপে ধরল।রক্তিমের শার্টের রক্তগুলো স্পষ্ট জানান দিচ্ছে দিহানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।রক্তগুলো যে আসল তাও বোঝা যাচ্ছে।তবুও মন মানতে চাইল নাহ। কিছুতেই বিশ্বাস করতে মন চাইল না দিহানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।তবুও মেনে নিল।চোখের পানিগুলো মুঁছে নিয়েই উঠে দাঁড়াল এক মুহুর্তে। বলে উঠল,

‘ কোথায়?দিহান কোথায় এখন মিঃ রক্তিম?বলুন।আমি যাব।’

রক্তিম হাসল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলল,

‘ গুড গার্ল!চলুন।’

অদ্রিজা পা বাড়াল রক্তিমের পিঁছুপিঁছু। শরীরটা কেমন ভারী হয়ে উঠল যেন। পা গুলো চলতে চাইল না সেই ভারী শরীর নিয়ে।তবুও চলল সে।

.

হসপিটালের করিডরে নেহা সহ দিহানের পরিবারের লোকেরা হাঁটাচলা করছিল।অদ্রিজা হঠাৎ গিয়েই থমকে দাঁড়াল সেখানে।পা বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই নেহা এসে ঝাপটে ধরল তাকে।কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠল সে,

‘ দ্রিজা? দিহান ঠিক হয়ে যাবে তো দ্রিজা?প্লিজ ওকে ভালো করে দে না দ্রিজা।আমি ওকে ভালোবাসি।ওকে ছাড়া বাঁচব নাহ আমি দ্রিজা।ও ভালো হয়ে যাবে তো?’

অদ্রিজা থমথমে চোখমুখে নেহার দিকে তাকাল।কাঁদতে কাঁদতে চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে গেছে মেয়েটার।চুলগুলো এলেমেলো হয়ে মুখে লেপ্টে পড়েছে।পরনের গোলাপি রংয়ের জামাটায় রক্তের মাখামাখি করছে।সেই ছোটবেলা থেকে নেহাকে দেখে এসেছে অদ্রিজা।চঞ্চল, প্রাণবন্ত মেয়েটিই দিহানের সামনে আসলে জড়সড় হয়ে পড়ত।দিহানের সামনে তার কোন পাগলামি বোধ হয় চোখেই পড়েনি অদ্রিজার।খুবই দরকারে কথা বলত তারা।সেই দিহানকেই নেহা ভালোবাসে।হঠাৎ কথাটা শুনেই কিছুটা থমকে গেলেও পরমুহুর্তেই নেহার দুর্বল, ক্লান্ত মুখের দিকে তাকাল অদ্রিজা।শরীরটা যেন ঢলে পড়বে আরেকটু হলেই।হয়তো দাঁড়ানোরও শক্তি নেই মেয়েটির।তবুও দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি অপারেশন কেবিনের দরজার দিকে তাকিয়ে।মুখটা ফ্যাকাশে, রক্তশূণ্য। বিধ্বস্ত চেহারার মেয়েটিকে দেখেই হাহাকার করে উঠল অদ্রিজার মনটা।সত্যিই ঠিক হয়ে যাবে তো দিহান?আবার কথা হবে তো?বলা হবে তো,” দিহান, আমি তোমায় ঠকিয়েছি।ঠকিয়েছি।ক্ষমা করবে তো আমায়?”জানা নেই অদ্রিজার।নেহাকে দুই হাতে আগলে নিয়েই বলে উঠল সে,

‘ কি করে হলো এসব নেহা?তোরা তো আজ ভার্সিটিতে আসলি না।আর রক্তিম?উনি কিভাবে জানলেন?তোর আর উনার শরীরে রক্ত কেন?’

নেহা এত প্রশ্ন সামলাতে পারল নাহ।উত্তরও দিতে পারল না।তার আগেই শরীরটা ঢলে এলিয়ে গেল অদ্রিজার উপর ভর করে।চোখজোড়া বুঝে নিতে নিতেই ঝাপসা চোখে অদ্রিজার শুকনো মুখটা দেখল সে।প্রশ্নগুলো কানে গেলেও উত্তর দেওয়ার মতো শক্তি পেল নাহ নেহা।অদ্রিজা বুঝতে পারল। নেহাকে দুই হাতে শক্ত করে ধরেই পাশে বসিয়ে দিল।পাশ ফিরে রক্তিমকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রক্তিম পানির বোতলটা এগিয়ে দিল।ইশারায় নেহাকে পানি খাওয়াতে বলেই দু পা পিঁছিয়ে দাঁড়াল।তারপরই বলল,

‘ নেহা একবার অলরেডি জ্ঞান হারিয়েছিল অদ্রিজা।ওর চোখমুখের অবস্থা দেখে ওর দুর্বলতাটা বোঝা উচিত ছিল আপনার। এতগুলো প্রশ্ন ও কে করা উচিত হয়নি আপনার।’

অদ্রিজা সরু চাহনিতে তাকাল।নিজেকে মুহুর্তেই চরম অপরাধী মনে হলো।সবার জীবনের সাথেই সে নির্দ্বিধায় অন্যায় করে বসছে।নেহার এই অবস্থায় এভাবে প্রশ্নগুলো করাও তার অন্যায় হয়েছে।দিহানের অনুভূতির মূল্য দিতে না পারাটা তার অন্যায় হয়েছে।রক্তিমের টাকার লোভে বিয়েটা করে নেওয়াটাও অন্যায় হয়েছে।নিজেকে মুহুর্তেই দিশেহারা লাগল অদ্রিজার।চোখজোড়া টলমলে হয়ে উঠলেও কাঁদল নাহ সে।জোরে জোরে শ্বাস ফেলে রক্তিমের দিকে অসহায় চোখে তাকাতেই রক্তিম বলে উঠল,

‘ হসপিটালে বাইরে গাড়ি আছে অদ্রিজা।আপনি নেহাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসুন।ও অনেকটাই দুর্বল।আসার পর আমি আপনাকে সবটা বিস্তারিত বলব।অপরাধী তার অপরাধ স্বীকার করবে আপনার কাছে।’

অদ্রিজা শেষের কথাটার মানে বুঝে উঠল না।টলমলে চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দিহানের আম্মুকে চোখে পড়ল।দিহানের আব্বুর কাঁধে মাথা রেখে কেঁদেই চলেছেন তিনি।দিহানের আব্বুও বিধ্বস্ত হয়ে বসে রইলেন।অদ্রিজা সেদিকে তাকিয়ে থাকতেই রক্তিম আবারও বলল,

‘ আপনাকে যেতে বলেছি আমি অদ্রিজা।নেহাকে ওর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসুন।ড্রাইভার আবার আপনাকে নিয়ে আসবে।গো ফার্স্ট।’

অদ্রিজা মৃদু কন্ঠেই বলল,

‘ একবার দিহানকে দেখেই যাই?ওর সাথে আমি অন্যায় করেছি মিঃ রক্তিম।ঠকিয়েছি আমি ওকে।ওর কিছু হতে পারে না রক্তিম।কিছু হতে পারে নাহ।আমি ওর কিছুই হতে দিব নাহ।’

রক্তিম হাসল।কপালের আঘাতটা থেকে এখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার।মাথার পেঁছনটায়ও আঘাত পেয়েছে সে।প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে। মাথার পেঁছনটা হাত দিয়ে বুলিয়ে নিয়েই হেসে বলল,

‘ অপারেশন থিয়েটরে এমনিতেও আপনি ডুকতে পারবেন নাহ অদ্রিজা।দিহানকে এই মুহুর্তে দেখাও সম্ভব নয়।আপনি নেহাকে দিয়ে আসুস।তারপর এসে দিহানকে দেখবেন।প্রমিজ করছি, দিহানের কিছু হবে না।’

অদ্রিজা রক্তিমের কথার উত্তর দিল নাহ।কান্না পাচ্ছে তার।হাত পা কাঁপছে।দিহানকে দেখতে চাইলেও হৃদয় থেকে দিহানকে দেখার সাহস যোগাতে পারল নাহ সে।কি অবস্থায় দেখবে দিহানকে?নেহাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতেই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জল। দিহান তাকে কতটুকু ভালোবেসেছিল, অথচ সে তো কোনদিন এটুকুও ভালোবাসেনি দিহানকে।আজ যখন দিহান নিজের জ্ঞানে নেই তখনই কেন নিজের ভেতর এমন অদ্ভুত বোধ হচ্ছে তার।নিজেকে বারবার অপরাধী মনে হচ্ছে কেন তার।নেহার চোখ বুজে রাখার চেহারায় তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল অদ্রিজা।সে ভালোবাসেনি, অথচ এই মেয়েটা দিহানকে কতটুকু ভালোবাসে। দিহানের এই অবস্থায় এই মেয়েটা কতটুকু কেঁদেছে ঠিক নেই তবে তার মুখচাহনি বলে দিচ্ছে সে দিহানকে কতটুকু ভালোবাসে।

.

তখন বিকাল।হাসপাতালের কেবিনে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়েই অদ্রিজা দিহানকে দেখল।দিহানের চোখ এখনও বন্ধ।জ্ঞান ফিরেনি।মাথায় সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ।অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।দিহানের জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত সে হসপিটালেই থাকবে।দিহানের সাথে কথা বলে তারপরই বাসায় ফিরবে।কিন্তু তার আগে রক্তিমের থেকে সবটা জানতে হবে তাকে।হসপিটালে পৌঁছে রক্তিমকে আর দেখতে পায়নি সে।কয়েকবার কল দিয়েও রক্তিমকে পায়নি সে।দিহানের ঘুমন্ত মুখটা একনজর দেখে নিয়েই হসপিটালের করিডোরে হাঁটতে লাগল সে।আনমনে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই সামনের কোন ব্যাক্তির শক্তপোক্ত শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়েই মাথা তুলে চাইল অদ্রিজা।রক্তিমকে দেখেই চোখ মুখ কুঁচকে তাকাল সে।পরনের রক্তাক্ত শার্ট পাল্টে এসেছে সে।ভেজা চুল দেখে বোঝা যাচ্ছে শাওয়ার নিয়ে এসেছে সে।তবে কপালের ক্ষতটা শাওয়ার নেওয়াতে আরো সতেজ হয়ে উঠল। যার দরুণ অদ্রিজার চোখে এতক্ষণ ক্ষতটা চোখে না পড়লেও এবার পড়ল।ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রক্তিম বলে উঠল,

‘ চলুন, আপনাকে সবটা বলছি।আমাকে আবার মিটিং এটেন্ড করতে হবে।আসুন।’

অদ্রিজা হতবিহ্বল চাহনিতে তাকাল রক্তিমের দিকে।মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ আপনার কপালের ক্ষতটা গভীর!রক্ত গড়াচ্ছে রক্তিম।হসপিটালে ব্যান্ডেজ করে নিবে….’

অদ্রিজা বাকিটা বলতে পারল না।তার আগেই রক্তিম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

‘ এসব সেমপ্যাথি আমার সাথে একদমই দেখাবেন নাহ অদ্রিজা।চলুন।’

অদ্রিজা কপাল কুঁচকে নিল।সেমপ্যাথি?এটাকে সেমপ্যাথি বলে?জানা নেই তার।রক্তিমের সাথে পা বাড়াল।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে রক্তিম দাঁড়িয়ে পড়তেই সেও দাঁড়িয়ে পড়ল।তারপর রক্তিমের মুখোমুখি দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করে উঠল,

‘ বলুন রক্তিম,আপনার শার্টে রক্ত?নেহার জামায় রক্ত?দিহানের এক্সিডেন্ট?আপনি দিহান, নেহা ওদের কিভাবে চেনেন?দিহানের এক্সিডেন্টের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?সবটা বলুন।’

দিহান হেসে উঠল।অদ্রিজা কঠিন গলায় বলল,

‘ হাসছেন?এই অবস্থায় হাসি পাচ্ছে আপনার রক্তিম?দিহানের কি অবস্থা জানেন আপনি?মৃত্যুর সাথে লড়তে লড়তে ফিরেছে ও।হসপিটালে এমন একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আপনি হাসতে পারছেন?মানছি, মেয়েদের আপনি পণ্য হিসেবে দেখেন, তাদের দুঃখ কষ্ট আপনার কাছে কিছু নয় কিন্তু একজন মানুষ?একজন মানুষের মরমর অবস্থায়ও আপনি নির্দয়ের মতো হেসে চলেছে রক্তিম।ছিহ!’

অদ্রিজার এতগুলো কথায় তেমন একটা বোধ হলো না রক্তিমের।যে হাসির জন্য এতগুলো কথা বলল অদ্রিজা সেই হাসিতেও এই কথাগুলোর বিশেষ একটা প্রভাব পড়ল না।রক্তিম নিজের মতোই হাসল।কয়েক সেকেন্ড পর হাসিটা থামতেই বলে উঠল,

‘ উফফস!আপনি আমার সম্পর্কে নিজের মনে ভালো ধারণা পুষে রেখেছেন কেন অদ্রিজা?আমার মধ্যে কোন ভালো নেই অদ্রিজা।আপনি চাইলেও কোন ভালো খুঁজে পাবেন নাহ আমার মধ্যে।তাই প্লিজ, ফিউচারে আমায় নিয়ে যে কোন বিষয়ে এতটুকুও ভালো ধারণা রাখবেন নাহ।যেমন, এই যে ভেবে নিলেন একজন মরমর অবস্থায় পড়ে আছে তাই বলে আমি বিরহে শোকাহত থাকব।ভুল ধারণা আপনার।’

অদ্রিজা ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকাল।তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে উঠল,

‘ আপনার মতো মানুষকে ভালো ভাবাটাই অপরাধ মিঃ রক্তিম।আপনি নিকৃষ্ট!পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্ট মানুষ আপনি রক্তিম!ঘৃণা করি আপনাকে আমি।’

রক্তিম বাঁকা হাসল।মাথার চুলগুলো বামহাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়েই অদ্রিজার দিকে ফিরে চাইল।পাশ দিয়ে যাওয়া একটা যুবতী নার্সকে দেখেই দু পা এগোলো সে। চমৎকার হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে নিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করল নার্সটিকে।অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও রক্তিমের মতো সুদর্শন পুরুষের ইশারা পেয়েই হয়তো নার্সটি দ্রুত এগিয়ে আসল।মুখে রূপময় হাসি ফুটিয়ে বলে উঠল,

‘ বলুন স্যার, কোন প্রবলেম?’

রক্তিম হাসল।সে হাসিতেই হয়তো কমবয়সী যুবতী নার্সটি গলে গেল। আরো উৎসাহ নিয়ে রক্তিমের কথার অপেক্ষা করতেই রক্তিম বলে উঠল,

‘ সেকেন্ড ফ্লোরে ২০৫ নং রুমে যে এডমিট হয়েছে?দিহান শেখ?তার জ্ঞান ফিরেছে?আপনি সেকেন্ড ফ্লোর থেকেই নেমেছেন তাই জিজ্ঞেস করছি।’

সুদর্শন পুরুষটির কথা বলার ভঙ্গি,হাসি, ব্যাক্তিত্ব দেখেই নার্সটি গলে গেল।ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দ্রুত বলে উঠল,

‘ জ্বী স্যার একটু সময় দিন।আমি এক্ষুনি জেনে আসছি।’

রক্তিম সৌজন্যতার হাসি হেসেই বলল,

‘ ওকে।’

নার্সটি অসহায় ভাবে তাকাল।যেন পুরুষটির প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারাটা তার এই মুহুর্তে সব থেকে বড় অক্ষমতা।অপরাধী গলায় বলল,

‘ জ্বী স্যার।এক্চুয়েলি খেয়াল করা হয়নি ঐ রুমের রোগীর জ্ঞান ফিরেছে কিনা।এক্স্ট্রেমলি স্যরি। ‘

রক্তিম হাসল।আবারও বলল,

‘ নো প্রবলেম।আপনি জেনে আসুন।আমি এখানে অপেক্ষা করছি।আর সুন্দরী মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করতে পুরুষদের কষ্ট উপলব্ধি হয় না।’

নার্সটি অচেনা সুদর্শন পুরুষটার মুখে সুন্দরী ক্ষেতাব পেয়েই খুশিতে নেচে উঠতে পারল নাহ কেবল।চোখমুখে চকচক করল উপছে পড়া খুশিতে।সামনের পুরুষটির কাঙ্খিত উত্তর দিতেই পা বাড়াল পেছন ফিরে।দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল উপর তলায়।রক্তিম সেইদিক পানেই তাকিয়ে ছিল।হঠাৎ মনে পড়ল অদ্রিজা আছে তার সাথে।পেছন ফিরে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলল সে।তারপর বলে উঠল,

‘ দিহান আর নেহাকে আমি কিভাবে তা ওদের কাছ থেকেই জেনে নেবেন প্লিজ।আর দিহানের এক্সিডেন্ট?এক্চুয়েলি দিহান আর নেহা একসাথেই ছিল।আর আমার গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েই দিহানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।তারপর নেহা আর আমি….’

রক্তিমকে বাকিটা বলতে দিল না অদ্রিজা।ঝাপটে পড়ল রক্তিমের উপর।রক্তিমের কলারটা নিজের দুইহাতে শক্ত করে ধরেই ক্ষ্রিপ্ত চাহনি ফেলল রক্তিমের মুখে।হিংস্র বাঘিনীর মতো রক্তিমের কলার ঝাকড়াতে ঝাকড়াতেই বলে উঠল,

‘ আপনি?আপনিই দিহানের সাথে এমনটা করেছেন রক্তিম?ছিঃ!কাল যখন দিহান কল করেছিল আপনি একদম সরল ব্যবহার করেছিলেন।আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছিল ব্যবহারটা।কিন্তু তাই বলে আপনি দিহানের সাথে এমন কিছু করবেন রক্তিম?ওয়ান মিনিট,ড্রিংক?ড্রিংক করেছেন আপনি?ড্রিংক করে গাড়ি চালিয়েছেন?যার ফলস্বরূপ দিহান এখন হসপিটালের কেবিনে জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ে আছে।ছি!আপনার জন্য আজ একটা মানুষ হসপিটালের কেবিনে মরমর অবস্থায় পড়ে আছে রক্তিম!আই হেইট ইউ রক্তিম।হেইট ইউ!’

অদ্রিজার এভাবে আক্রমনে রক্তিম অবাক হলো না।সে সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।মুখে হাসি।অদ্রিজার বুক ধাক্কানো, কলার ঝাকড়ানো রক্তিমকে একবিন্দুও নাড়াতে পারল না।সে সেভাবেই দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসল।ঠিক তখনই নার্সটি আসল।মুখে হাসি রেখেই বলে উঠল,

‘ স্যার?দিহান শেখের জ্ঞান ফিরেছে।আপনি চাইলে দেখা করে আসতে পারেন।’

অদ্রিজা মাথা তুলে চাইল নার্সটির দিকে।সঙ্গে সঙ্গে কলার ছেড়ে দিল রক্তিমের।মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।একহাতে চুলগুলো খোঁপা করতে করতেই সে সিঁড়ি বেয়ে দৌড় লাগাল সেকেন্ড ফ্লোরে।রক্তিম সেদিক পানে তাকিয়ে হাসতেই পেছন থেকে নার্সটি বলল,

‘ কে উনি?’

রক্তিম নির্বিকার ভাবে বলল,

‘ যে ছেলেটি এডমিট হয়েছে?দিহান শেখ?তার হবু স্ত্রী।’

নার্সটি মৃদু হাসল।তারপরই বলল,

‘ আর আপনার কে হয়?’

‘ কেউই নয়। শুধু পরিচিত।’

রক্তিম কথাটা বলেই পা বাড়াল হসপিটালের বাইরে।বুকটা ভারভার লাগছে তার।নিজের সব দুঃখগুলো কোথাও ঢেলে দিতে পারলে ভালো হতো।সত্যিই কি দুঃখগুলো ঢেলে দেওয়া যায় কোথাও?

#চলবে…..

{ ভুলত্রুটি মার্জনীয়।কেমন হয়েছে জানাবেন।ভালোবাসা সবার জন্য।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here