জ্বিনের ভালোবাসা পর্ব-৩

0
5518

জ্বিনের ভালোবাসা
#পর্ব_৩
লেখিকাঃ Mahiya Akter Priya
Story Credit : Mahiya Akter Priya

এভাবে তারা সব ঠিক করে নিলো। প্রিয়ার খুব খারাপ লাগছে এভাবে অপরিচিত একজনকে জড়িয়ে ধরল। ওর ভাইয়া আসলে খাবারের প্যাকেট টা ওর হাতে দিলো আর বলল, কি হয়েছে আমার বোন টার? খুশি মনে হচ্ছে না তো। প্রিয়া বলল, কিছু না। হঠাৎই সে শুনতে পেল একটা আওয়াজ। ওই ছেলেটার রুমের দিক থেকে আসছে। তারা সবাই যেতেই দেখল, ছেলেটা রান্না করতে যাচ্ছিলো কিন্তু সব পড়ে গেছে। কিছুই হচ্ছে না। তখন প্রিয়ার মা বলল, আরে তুমি এসব কি করছ? ছেলেটি বলল, রান্না করতে চাইছিলাম। আমি রান্না জানি না। তাই এমন হয়ে গেলো। প্রিয়ার মা তখন বলল, তোমাকে না বলেছি আমাদের সাথে খাবার খেতে? কি দরকার এগুলো করার? তখন ছেলেটি বলল, সরি আন্টি। আর হবে না। তখন সবাই চলে এলো আর কাজের লোকটাকে বলল, এগুলো পরিষ্কার করে দিতে।

রাতের বেলা প্রিয়া রুমে যাওয়ার সময় দেখে ছেলেটা কোথাও যাচ্ছে। প্রিয়া বলে, এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন? ছেলেটা বলল, এইত ছাদে যাচ্ছি। আপনি যাবেন? তখনই প্রিয়া বলল, না না ছাদে যাবেন না। ছেলেটা বলল, কেন? মেয়েটি বলল, এত রাতে ছাদে যাওয়ার কি দরকার? ছেলেটি বলল, কেন? আপনি কি ভয় পান নাকি? প্রিয়া বলল, ভয় কেন পাব? ছেলেটি বলল, তাহলে চলুন। প্রিয়া ভাবল, যদি দুজন যায় তাহলে হয়ত জ্বিন আসবে না। আর অনেকদিন ছাদে যায় না। তাই রাজি হয়ে গেলো। ছাদে যাওয়ার পর ছেলেটি বলল, আমি কি আপনার নাম জানতে পারি? প্রিয়া বলল, আমার নাম প্রিয়া। আপনার নাম? ছেলেটি বলল, আবির।

প্রিয়াঃ কি করেন আপনি?

আবিরঃ আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বাংলা ভিভাগে পড়ি। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার। আপনি কি করেন?

প্রিয়াঃ আমি ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

আবিরঃ তাহলে তো তুমি আমার অনেক ছোট। তুমি করে বললে কি সমস্যা আছে?

প্রিয়াঃ না। আপনার ডিটেইলসে কিছু বলুন

আবিরঃ ছোট বেলায় মা মারা যায়। বাবার সাথে থাকতাম। লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় আসি। একদিন শুনি বাবা আর নেই। তাকে কবর দিয়ে আবার ঢাকায় চলে আসি। এমনি বাড়ি রাজশাহী। ভাই বোন নেই। এককথায় আমি এতিম।

এভাবে তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হল তখন আবির বলল, তোমার সাথে কথা বলতে বলতে পিপাসা লেগে গেছে। পানি খেয়ে আসছি। এটা শুনে প্রিয়া বলল, আমিও যাব। আবির বলল, আমি এখনই চলে আসব। তোমার কি ভয় করছে নাকি? ভিতুর ডিম। বলেই হাসতে শুরু করল। প্রিয়া বলল, নিজের বাড়িতে ভয় কিসের? আমি ভয় পাই না। একা থাকব তাই বলছিলাম। আবির বলল, আমি এখনই চলে আসব।

আবির যাওয়ার পরেই সেই গন্ধ টা আবার পায় প্রিয়া। ভয় পেয়ে যখনই চলে যাবে তখনই সে কন্ঠ টা বলে, প্লিস যাবেন না। আমার একটা কথা শুনুন। প্রিয়া বলে, কি বলতে চান? আর আপনি আমার কাছে কি চান? তখন সেই কন্ঠ টা বলল, দেখুন আমি আপনার ক্ষতি চাই না। আমি তো শুধু বন্ধুত্ব চাই। এতক্ষন ওই ছেলেটা আপনার সাথে ছিলো তাই কিছু বলতে পারি নি। প্রিয়া বলল, কি বলতে চান আপনি? সে বলল, আপনি কি আমার বন্ধু হবেন? মেয়েটি বলল, আপনাকে চিনি না জানি না। বন্ধু কেন হব? আগে আপনার পরিচয় দিন। যদি মনে হয় আপনি আমার জন্য ক্ষতিকর না তবে আপনাকে আমার বন্ধু বানাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। সে বলল, সময় এলে সব জানতে পারবেন। প্রিয়া বলল, তাহলে সেই সময় আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আসবেন।

এই বলে যখন প্রিয়া চলে যাচ্ছিল তখন সে আবার বলল, ঠিক আছে। আমি আমার পরিচয় দিব। প্রিয়া বলল, বলুন। তখন সে বলতে শুরু করল, আমি একটি জ্বিন। আমার নাম আদিল। এখানে আসে পাসেই থাকি। প্রিয়া বলল, আকাশে থাকেন? তখন আদিল বলল, না। আল্লাহ মানুষ আর জ্বিন কে সৃৃষ্টি করেছে তার ইবাদতের জন্য। জ্বিন রা মানুষের মতই হয়ে থাকে তবে রূপ পাল্টানোর একটা বিশেষ ক্ষমতা তারা রাখে। মানুষ যেভাবে কঠর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে, জ্বিনেরাও মানুষের রূপে তা করে। শুধু তাদের জগত টা ভিন্ন। প্রিয়া আগে এসব বিষয়ে কিছুই জানত না। আদিল বলল, এখন কি আমার সাথে বন্ধুত্ব করা যায়? প্রিয়া বলল, ভেবে দেখছি।

এমন সময় হঠাৎই আবির চলে আসল আর বলল, কার সাথে কথা বলো? প্রিয়া বলল, নিজের সাথে। আসলে আমি নিজের সাথে কথা বলতে ভালোবাসি। আবির বলল, ওহ। আমি তো ভাবলাম তুমি বুঝি তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলে। প্রিয়া বলল, এত রাতে কিভাবে কথা বলব? তখন আবির বলল, ফোনে। প্রিয়া বলল, আমার কাছে এখন ফোন নেই। ঘরে আছে। আবির কিছু বলল না। একটু মুচকি হাসল। প্রিয়া জিগ্যেস করল, হাসছেন কেন? আবির বলল, মুচকি হাসি দেওয়া সুন্নত। এভাবে তারা অনেকক্ষণ কথা বলল।

রাতে ঘুমানোর সময় সে তার রুমে আবার সেই গন্ধ টা পায়। আদিল বলে, কি হলো? কিছু ভাবলে? প্রিয়া বলল, হ্যাঁ। তখনই বলল, কি? প্রিয়া বলল, আমি তোমার বন্ধু হতে পারি তবে এক শর্তে। আদিল বলল, কি? প্রিয়া বলল, আমাকে কোনো কিছুতে জোড়াজুড়ি দেওয়া যাবে না। যেমন আজকে ছাদে যাও। বা ছাদ থেকে নেমে যাও। বা অনান্য যেকোনো বিষয়ে। আদিল বলল, ঠিক আছে। এভাবে চলতে থাকে তাদের বন্ধুত্ব।৩ মাস পার হয়ে যায় এভাবে আবিরের সাথেও এর মধ্যে অনেক ক্লোস হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় একসাথে ঘুরতে যায়। রাতে ছাদে বসে গল্প করে। সেটা আদিলের একদম পছন্দ না। সে বলে, কি দরকার রাতে ওকে ছাদে আনার? শুধু শুধু ওর জন্য আমি থাকতে পারি না।প্রিয়া বলে তোমার মতো ও তো আমার ফ্রেন্ড।

এমনি একদিন আবিরের সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছে প্রিয়া। যদি একবার প্রিয়া কারোর সাথে বাইরে যায়, যার সাথে যাবে সে শেষ। অনেক জায়গায় ঘুরবে। খাবে। মনে হয় পুরো পৃৃথিবী টা ওর হয়ে গেছে। তেমনি ঘোরা শেষে বাসায় এসে দেখে কেউ বাসায় নেই। মা আর ভাবি হাসপাতালে। ভাবির শরীর তেমন ভালো না।আর ভাইয়া আর আব্বু কাজে। তারা দুজন সোফার রুমে বসে টিভি দেখছে এমন সময়,

আবিরঃ You know what তোমার সাথে কোথাও যেতে আমি মাঝে মাঝে ভয় পাই।

প্রিয়াঃ কেন?

আবিরঃ তুমি যে পরিমাণ ঘোরো আমার পা ব্যাথা হয়ে যায়।

প্রিয়াঃ ভালোই তো।🤣😂🤣

আবিরঃ হাসো হাসো বেশি করে হাসো। দেখবে দাত সব খুলে পড়ে যাবে একদিন।

প্রিয়াঃ খারাপ দোয়া দিবেন না তো😠😠😠

আবিরঃ🤣😂🤣 আচ্ছা সরি।

দুজনেই হাসতে লাগল, এমন সময় একটা কল আসল। প্রিয়া কল ধরতে দেখে তার মা ফোন করেছে

প্রিয়াঃ হ্যালো মা। বলো

মাঃ খুশির খবর আছে। তুই আজ বাসা থেকে কোথাও যাস না।

প্রিয়াঃ কি হয়েছে মা?

মাঃ তোর ভাবি মা হতে চলেছে। আমরা মিষ্টি নিয়ে আসছি।

প্রিয়াঃ ওকে মা। তাড়াতাড়ি আসো।😋😋😋

ফোন রাখতেই আবির জিগ্যেস করল কি হয়েছে? ও আবির কে ধরে বলল, আমাদের পরিবারে নতুন মেহমান আসছে। আবির বলল, কে? প্রিয়া বলল, ভাইয়ার আর ভাবির মেয়ে। আবির ওকে ছাড়িয়ে বলল, তুমি কিভাবে জানলে মেয়ে হবে? তখনই প্রিয়া বলল, আমার তো মেয়ে ভালো লাগে। আর আমার ভালো লাগার সব জিনিস আমার ভাইয়া আমাকে দেয়। তাছাড়া যে পরিবারে প্রথম সন্তান মেয়ে সে পরিবারে আল্লাহর বরকত থাকে। আবির বলল, ঠিক। আমারো মেয়ে পছন্দ। আমি চাই আমারও প্রথম মেয়ে হোক।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বাসায় চলে এলো। খুব আনন্দ মজা করল। আবির ও ওদের সাথেই ছিলো। সবাই খুব মজা করছিল। রাতে রুমে গিয়ে দেখে একটা ছায়া তার ঘরের মধ্যে। তার বুঝতে বাকি রইল না এটা আদিল। সে লাইট না জ্বালিয়ে খাটে এসে বসল আর বলল, জানো আজকে কি হয়েছে? সে বলল, হুম জানি। তোমার ভাবি মা হতে চলেছে। প্রিয়া বলল, হুম। কিন্তু তোমাকে এত আপসেট লাগছে কেন? তুমি কি এতে খুশি না? সে বলল, হুম তবে? প্রিয়া বলল, তবে কি? আদিল বলল, তুমি ওই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরেছো আমি দেখেছি। প্রিয়া বলল, তাতে কি হয়েছে? সে বলল, আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে? প্রিয়া বলল, কী? সে বলল, তুমি কি ওই ছেলেটাকে ভালোবাসো? প্রিয়া বলল, কি সব আবোল তাবোল বকছো? আমি ওকে কেন ভালোবাসব? আদিল বলল, না, তুমি ওকে ভালোবাস। প্রিয়া রেগে গিয়ে বলল, হ্যাঁ যদি ভালোবাসি তবে তোমার কি? যাও এখান থেকে ভালো লাগছে না আমার।

( বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আর শুধু নেক্সট না বলে বলুন কেমন হয়েছে গল্পটা আমি তো পালিয়ে যাব না গল্প না দিয়ে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here