শুভ বিবাহ পর্ব-২৭

0
769

#শুভ_বিবাহ
লেখা #AbiarMaria

২৭

আমরা দিনাজপুরে চারজন বন্ধু মিলে এসেছিলাম। তার মাঝে একজনের দূর সম্পর্কের খালার বাসা এখানে। সেখানেই উঠেছি। উনারা মানুষ হিসেবে খুব অমায়িক, ভীষণ যত্ন আর আপ্যায়ন করলো। আমরাও আনন্দে রাতটা কাটালাম। রাত পার হয়ে গেল চোখের পলকে। আড্ডা দিতে দিতে মাঝরাতের দিকে ঘুম লেগে আসলো আমার চোখে। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন সকাল নয়টার বেশি বাজে। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম। আমার কি খেয়াল নেই যে তুতুনের সাথে দেখা করার কথা? তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়তে দেখে আমার বন্ধু শাকিল চোখ ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করলো,
❝কটা বাজে রে?❞
❝নয়টা চৌদ্দ❞
❝এত সকালে কোথায় যাস?❞
❝তুতুনের সাথে দেখা করার কথা❞
❝এত সকালে কেন?❞
❝কারণ বাকি দিনে অনেক কাজ আছে❞

নাস্তা না করেই বেরিয়ে আসলাম। ইচ্ছা আছে তুতুনের সাথে নাস্তা করার। এত সকালে আশা করি ও আমাকে ভাল কোথাও খাওয়াতে পারবে। আমিও একটা অটোরিকশা ধরে ওদের কলেজে চলে আসলাম। কলেজে ঢুকতে বেশি বেগ পেতে হয়নি, কিন্তু এখন কোথায় যাবো তা বুঝতে পারছি না। এদিক ওদিক ঘুরে তুতুনকে কল দিলাম। মেয়েটা তৃতীয় বার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো। ভেবেছিলাম ঝাড়বো! কিন্তু ঝাড়া ঠিক হবে? আফটারঅল…!
তুতুন ফোন রিসিভ করে হাপাচ্ছে।
❝হাপাচ্ছো কেন? দৌড়াচ্ছো নাকি?❞

ফোনের ভেতর করা প্রশ্নের জবাব আসলো পেছন থেকে।
❝আপনি সত্যি সত্যি কলেজে চলে আসবেন এটা কিন্তু ভাবতে পারিনি!❞

আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। তুতুন একটা আকাশীরং এর থ্রিপিস পরেছে। ওড়নাটা আলতোভাবে মাথায় দেয়া। অবাধ্য এক গাছি চুল মুখের দুপাশে পড়ে আছে। কাঁধে ব্যাগ আর হাতে এপ্রোন। আমি তুতুনকে মুগ্ধ চোখে দেখি। রিমলেস চশমাটা নাকের উপর না চাপিয়ে কামিজের গলায় সেটা ঝুলিয়েছে। মুখে তেমন কোনো প্রসাধনী নেই ওর। তবুও অসাধারণ লাগছে। কেন লাগছে? তুতুন বড় হয়ে অসাধারণ হয়েছে বলে? নাকি আগে থেকেই অসাধারণ ছিল? আমিই দেখিনি? তুতুন আমার আরও কাছে এসে বুকের উপর দু’হাত বেঁধে দাঁড়ালো।
❝মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমাকে দেখে খুশি হওনি। নাকি আমার মতো নাস্তা না করে এসেছ বলে মন খারাপ?❞
❝আমি নাস্তা করে এসেছি❞
❝তাহলে মুখ অমন করে রেখেছ কেন?❞
তুতুন জবাব দিল না। আমি আবার বললাম,
❝তোমাদের ক্যানটিন কোন দিকে? চলো, আমার ক্ষুধা লেগেছে। খেতে খেতে কথা বলব❞
❝আমি খেয়ে এসেছি, কিছু খাবো না❞
❝তাহলে চা?❞
❝সেটাও খেয়ে এসেছি❞
❝তাহলে আমি নাস্তা করবো, আর তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে❞

তুতুনের সাথে কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। তুতুন ডেকে বললো,
❝ক্যানটিন ওদিকে না, এই দিকে❞
❝আহ, আগে বলবা না? আমি তো কিছুই চিনি না❞
তুতুনের সাথে হাঁটতে শুরু করলাম। মেয়েটা ধীরে ধীরে হাঁটছে, যেন তাড়া নেই। আমিও ওর সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছি। সকালের স্নিগ্ধ রোদে পরিবেশটা অসাধারণ লাগছে। গ্রাম্য পরিবেশের এই দিকটা আমার সবসময় খুব পছন্দ। হাঁটতে হাঁটতে তুতুনের দিকে তাকিয়ে আছি। ও মাথা নিচু করে এক মনে হাঁটছে।
❝কি ভাবছো?❞
মেয়েটা সাথে সাথে মাথা নাড়ালো।
❝কিছু না❞
❝ভাবছো তো কিছু একটা। আমাকে হয়ত বলবা না❞
তুতুন জবাব দিল না। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে প্রশ্ন করলো,
❝আপনি কি আসলেই আমার কলেজ ঘুরে দেখতে এসেছেন? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এসেছেন?❞
❝তুমি খুব বুদ্ধিমান। সরি, বুদ্ধিমতি। তুমিই বলো কেন এসেছি?❞
❝আমি আন্দাজ করতে পারছি, কিন্তু নিশ্চিত না। নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। তারচেয়ে আপনিই বলুন আপনার এখানে আসার কারণ❞

আমি হাঁটা থামিয়ে ওর দিকে সরাসরি তাকালাম।
❝তোমাকে দেখতে এসেছি। আর একটা কথা জানতে❞
তুতুন প্রশ্ন চোখে নিয়ে আমার চোখের দিকে চেয়ে আছে। আমি আবারও বললাম,
❝তুমি জানো কিনা জানি না। বাসায় তোমার আর আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে। অস্বীকার করবো না, আমারও তোমাকে ভালো লাগে। আমার মনে হয়, এরকম একটা সম্পর্কে আগানো যায়। কিন্তু তোমার মতামত কি? তুমি কি ভাবছো?❞

তুতুনকে একেবারে ভণিতা না করে সরাসরিই বলে বসলাম৷ তুতুনের মুখে তেমন কোনো প্রভাব নেই আমার কথার। ও একটু আগে একটা অস্বস্তি আর বিরক্তি নিয়ে যেভাবে চেয়েছিল, এখনো সেভাবেই চেয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছি না। আমার এখানে আসাকে কি তুতুন ভালভাবে দেখছে না? তুতুন জবাব দিল।
❝আপনি কি আপনাকে বিয়ে করার ব্যাপারে আমার মতামত জানতে এসেছেন? আর ইউ প্রপোজিং মি ফর ম্যারেজ?❞
❝প্রপোজ না, সরাসরি বললাম। সেদিন আম্মু তোমার কথা বলল। তোমার আব্বু আম্মুও বোধহয় ভাবছে। এজন্য… ❞
তুতুন আমাকে থামিয়ে বলল,
❝আমি আপনাকে বিয়ে করব, কিংবা রাজী হবো, কিংবা এক সেকেন্ডের জন্যও আপনাকে নিয়ে ভাববো, এরকম কেন মনে হলো?!❞
প্রশ্নটা নাড়া দিল আমায়। এদিক ওদিক চেয়ে জবাব দিলাম,
❝ভাবতেই পারো। আমি তো সবসময় তোমার ভালো চাই। তোমার আর আমার মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়া আছে❞
❝ভালো বোঝাপড়া? আপনার আর আমার মধ্যে তো কোনো বোঝাপড়াই নেই! ভালো তো দূরের কথা। আমি কেন এরকম অদ্ভুত চিন্তা আপনাকে নিয়ে করব?❞

আমি এতক্ষণ যে কনফিডেন্টে ছিলাম, তাতে ভাটা পড়ছে। কিন্তু প্রকাশ করা যাবে না।
❝কেন আমাকে নিয়ে চিন্তা করবা না? আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে কি সমস্যা?❞
❝আপনার কি এমন আছে যে চিন্তা করতে হবে? আপনার ধারণা আপনি আমার যোগ্য? আপনার সাথে আমার যায়?!❞
কথাটা তুতুন আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে বলল। চড়াৎ করে আমার মাথায় রাগ চড়ে গেল! হাঁটুর বয়সী এই মেয়ে কি বলে এইসব? বিয়ে করার কথা বললাম বলে কি মাথা কিনে নিল? রেগে বললাম,
❝কি বুঝাতে চাও তুমি, হ্যাঁ?! আমার সাথে তোমার যায় না মানে? দিনাজপুর মেডিকেলে চান্স পেয়ে এতো ভাব বেড়ে গেল যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র হয়েও তোমার যোগ্য না আমি? তোমার এত দাম বাড়লো কেন? আমি সরাসরি বিয়ের কথা বলছি, এজন্য?!❞

শেষের দিকে আমার কন্ঠ চড়ে গিয়েছে। তুতুন একটুও ঘাবড়ায়নি। অথচ ছোট থাকতে আমি যখনই ঝাড়ি মারতাম, ও ভয়ে চুপসে যেতো। এখন তুতুন বড় হয়ে গেছে। আমাকে ভয় পায় না!

আমার চোখে চোখ রেখে সেইদিনের পিচ্চি মেয়েটা হেসে ফেলল। আমার মেজাজ আরও গরম হলো। আমি কি ফাজলামো করছি? ও বলল,
❝আপনার ধারণা আমাদের ইউনিভার্সিটি নিয়ে বলছি? ইউনিভার্সিটি দিয়ে আমি যোগ্যতা মাপছি? শুনেন অশুভ ভাইয়া। আপনি একটা অশুভ মানুষ। আপনাকে আমার কখনো পছন্দ ছিল না। কণা আপুর সাথে যা করেছেন, সেটা জানার পর প্রশ্নই আসে না!❞

আমি চমকে উঠলাম! কণা মানে? এখানে কণা এলো কেন? কিভাবে?!
❝তুমি কণাকে চিনো?❞
❝না চিনলে কি আপনাকে বলতাম?❞
❝কণাকে নিয়ে আমি করেছি?❞
❝আপনিই তো সেট ভালো জানেন❞
তুতুন আমাকে ফেলে দ্রুত পায়ে আমাকে ত্যাগ করে চলে যেতে চাইলো। আমি দৌড়ে ওর পথ রোধ করলাম।
❝কণার সাথে কি হয়েছে? কি জানো তুমি আমার ব্যাপারে? ❞
তুতুন বুকের উপর হাত বেঁধে চেয়ে রইলো। আমি বলতে থাকলাম,
❝আমার সাথে ওর রিলেশন ছিল। ম্যাচ করেনি, তাই ব্রেকাপ হয়ে গেছে। পাস্টে এমন থাকতেই পারে! পারে না? তাতে কি হয়েছে,হ্যাঁ? কি আসে যায়? নিশ্চয়ই আরও অনেক কিছু শুনেছ? তোমাকে আমার নামে সত্য মিথ্যা কে বলেছে শুনি? তুমিও এসব শুনেই বিশ্বাস করে নিলা?❞
❝আমাকে যেই বলুক, সে মিথ্যা বলবে না কোনোভাবে। তাই অবিশ্বাসেরও কারণ নেই❞
❝কে বলেছে? নাম বলো। তখন আমিও বুঝব যে সে মিথ্যুক না সত্যবাদী। নাম বলো!❞
❝আমি নাম বলব না। সেটার দরকার মনে করছি না। সরি❞

আমার চেহারায় প্রকট রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, টের পাচ্ছি আমি। নাক দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললাম,
❝মিথ্যা শুনেছ তো, তাই আন্দাযে একটা ঢিল দিলা, তাই না? মানুষের নামে মিথ্যা রটনা নিয়ে তাকে আবার অপবাদ দিতে লজ্জা লাগে না?❞
তুতুনের মুখের মাংশ পেশী শক্ত হয়ে উঠলো। কাঁটা কাঁটা ভাবে বলল,
❝লজ্জা আমার লাগবে? আপনার যে এখনও লজ্জা লাগছে না, সেটা ভেবেই তো আমি রীতিমতো অবাক হচ্ছি শুভ ভাইয়া! এক মিনিট দাঁড়ান❞

তুতুন ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কি যেন দেখছে। আমি কোনো মতে রাগ সামলানোর চেষ্টা করছি। তুতুন দুই মিনিটের মাথায় একটা ছবি বের করে আমার দিকে স্ক্রিন দেখালো। ছবি দেখে আমার হাত পা হিম হয়ে এলো। এতক্ষণে হম্বিতম্বি সব থেমে গেল। কারণ ছবিতে কণা সেদিনের শাড়ি পরা আর আমি ওর পাশে বসে আছি। কণা বেশ উপর থেকে সেদিন এই সেলফিটা তুলেছিল। যখন ওর বারান্দা থেকে ওর বিছানায় গিয়েছিলাম, তখন কণা বলেছিল,
❝একটা ছবি তুলে আজকের দিনের একটা স্মৃতি রাখতে চাই!❞
আমি বাঁধা দেইনি। আমি অপেক্ষায় ছিলাম ছবি তোলার। ছবি কয়েকটা ক্লিক করার পরই ওকে বুকে টেনে নিয়েছিলাম! এই ছবি দেখে আমার এখন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠারই কথা! আমি থমথমে কন্ঠে প্রশ্ন করলাম,
❝এই ছবি কোথায় পেয়েছ?❞
তুতুন দ্রুত ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে বলল,
❝যেখান থেকে পাওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে❞
ওর মুখে বিজয়ের হাসি।
❝কণা দিয়েছে? কণা তোমাকে কোথায় পেলো? কণা কি তোমার আত্মীয়? না, এটা তো সম্ভব না! তাহলে? ও কেন তোমার সাথে যোগাযোগ করবে? কিভাবে এসব হলো?!❞

আমার অস্থিরতাকে তুতুন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিল।
❝এত প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব না। এইটুকু জেনে রাখেন৷ আপনি যে কণা আপুর সাথে রুম ডেট করেছেন, আপনি যে চরিত্রহীন মানুষ, আপনি যে আপুর সাথে ইন্টারকোর্স করেছেন, সেটা আমি জানি!❞

আমার মাথায় তুতুনের কথাগুলোর অর্থ বের হতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। যখন বুঝলাম, তখন মাথার ভেতর বিস্ফোরণ ঘটলো! আমি লাফিয়ে উঠলাম!
❝কণার সাথে এসব কিচ্ছু হয়নি আমার! সত্যি বলতেছি! ওর রুমে গিয়েছিলাম, কিস করেছি, এর বেশি কিছু না! ঠিক ওই সময়ই আম্মুর কল আসে আর আমি জানতে পারি তোমার এক্সিডেন্ট হইছে! আমি কণাকে ফেলে পাগলের মত তোমার কাছে ছুটে এসছি! কণার সাথে আমার এমন কিছুই হয়নি! কণা… কণা একটা মিথ্যুক! ও কেন তোমাকে মিথ্যা বলছে আমি জানি না। কিন্তু এগুলা মিথ্যা! কণা নিজেও জানে ওর সাথে আমার ওরকম কিছু হয়নাই!❞
❝একটা মেয়ে নিজের ইজ্জত নিয়ে মিথ্যা বলবে? কিছু না হলেও সে বলবে যে সব হয়েছে? আপনাদের মাঝে হাজবেন্ড ওয়াইফের মত সম্পর্ক ছিল?!❞
আমি দুই হাতে চুল মুঠি করে ধরে চেঁচালাম,
❝হ্যাঁ, ও মিথ্যা বলসে! এই মেয়ের সাথে ব্রেকাপ করছি বলে এই মেয়ে আমার বদনাম করতে চায়!❞
❝তো এসব কণাকে আমাকে কেন বলবে?❞

একটু ভেবে বললাম,
❝ওকে ফেলে আমি তোমার কাছে গেছিলাম সেদিন।তারপর থেকেই ওর সাথে ঝগড়া, এরপর ব্রেকাপ। ব্রেকাপ কেন করলাম, এইজন্য প্রতিশোধ নিতে ও তোমাকে এসব বলতেছে! ওর ধারণা ছিল, আমার তোমার সাথে রিলেশান!❞
তুতুন হাত ডলছে। আমার ধারণা ও আমার কথা শুনে আমাকে কিছুটা হলেও বিশ্বাস করবে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে ও আমাকে ভুল প্রমাণিত করলো।
❝সরি। আমি আপনার কথা মানতে পারছি না। আমি জানি কণা আপু আমাকে মিথ্যা বলেনি। সবটাই সত্য। তাছাড়া আপনি শুধু কণা আপু না, আরও অনেক মেয়ের সাথে রিলেশানে ছিলেন, ফ্লার্ট করেছেন। আপনাকে আমি কিভাবে বিশ্বাস করব? এমন লুজ ক্যারেক্টরের কোনো মানুষ আমার যোগ্য না, আমার সাথে যায়ও না!❞

এবার সত্যি সত্যি তুতুন চলে গেল। আমি ওকে আর বাঁধা দিলাম না। দিয়ে লাভ হবে না। এই মেয়ে আমাকে বিশ্বাস করবে না। রাগে আমার মাথার তালু ফেটে যাচ্ছে যার এক মাত্র কারণ কণা! সেদিন সত্যিই আমাদের মাঝে তেমন কিছুই হয়নি। ঐদিন আমি যখন ওকে চুমু খাচ্ছিলাম, কণা আমার শার্টের বোতাম খুলছিল। ঠিক তখনই কলটা আসে! আমি বা কণা খুব গভীরে যাই নি! অথচ কণা কিনা আমার নামে মিথ্যা বলল তুতুনের কাছে? আমার মাথায়ই ঢুকছে না কি করে ও তুতুনের খোঁজ পেলো! প্রায় চার বছর চলে গেছে ওর সাথে আমার ব্রেকাপের। আমি তো ভাবতেই পারছি না কবে, কিভাবে কণা ওকে হাত করেছে?! ফোন বের করে তৎক্ষণাৎ কণার ফেসবুক আইডি বের করলাম। ব্রেকাপের পর আমি ওকে ডিলেট করে দিয়েছিলাম ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে। কিন্তু ব্লক করিনি। মাঝে মাঝে ওর আইডি দেখি। আজকে তাই ওকে সরাসরি টেক্সট করলাম। কখনো ওকে গালি দেইনি। আজ ইচ্ছামতো গালিগালাজ করলাম। যা মুখে আসে তাইই লিখলাম! কণার মত লাইফলেস মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি! চার বছর পর সে ব্রেকাপের প্রতিশোধ নিতে আসে?! কি করে?! এখন দেশে থাকলে ওর খবর করে ছাড়তাম আমি!

…………….

ভার্সিটিতে আজ খুব চাপ ছিল। কাজ শেষ করে রাইড খুঁজতে খুঁজতে সায়মনের দেখা পেলাম। ও গাড়ি নিয়ে এখান থেকে যাচ্ছিল। আমাকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামালো। সাইড উইন্ডো নামিয়ে মুখ বাড়ালো।
❝হেডিং টুওয়ার্ডস হোম?❞
❝ইয়াহ। তুইও যাচ্ছিস নাক?❞
❝হ্যাঁ। চলে আসো❞

গাড়িতে উঠে সিটে গা এলিয়ে দিলাম। ঘাড় বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলাম।
❝আজ এত দ্রুত বাসায় যাচ্ছিস যে?❞
❝তুমি বোধহয় খেয়াল করোনি। আজ আমি দ্রুত যাচ্ছি না, বরং তোমার দেরী হয়েছে❞
ঘড়ির দিকে তাকালাম। সত্যিই তাই! আজকাল আমার সময় জ্ঞান যেভাবে লোপ পাচ্ছে, উফ! স্মিত হেসে বললাম,
❝কাজে ডুবে থাকলে মাথায়ই আসে না কোন দিক থেকে সময় যাচ্ছে!❞

সায়মন ড্রাইভ করছে আর আমি চুপচাপ চোখ বন্ধ করে সিটে শরীর এলিয়ে রেখেছি। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে ফোন হাতে তুলে নিলাম। চেক করতে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেল। শুভ আমাকে মেসেজ দিয়েছে?! শুভ?! এত বছর পর?! তাও আবার এতগুলো! হুট করে আবার কি হলো?! ফোন সাইলেন্ট না থাকলে এতক্ষণে মেসেঞ্জারের টুংটুং এর জ্বালায় কান ঝালাপালা হয়ে যেত! আমি ক্লিক করতেই দেখলাম এক গাদা গালাগালি! শুভর যা মুখে এসেছে তাই লিখেছে! ক্লান্তিতে এলিয়ে পড়া আমার শরীরে ভয়াবহ রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো! এই অসভ্যতার মানে কি? ভালো করে মেসেজ পড়ার চেষ্টা করলাম। কয়েক মিনিট পর হা হা করে হাসতে শুরু করলাম গলা ফাটিয়ে!

সায়মন চমকে ওঠে আমার দিকে ফিরলো।
❝কি হইছে তোমার?! আর ইউ অলরাইট?! এমন ক্রেইজি লেডির মত হাসতেছ কেন?!❞

আমি গলা ফাটিয়ে হাসতে হাসতে বললাম,
❝আজকে আমার মুড খুবই ভালো! খুব্বি ভালো! এত বছরের রিভেঞ্জ নেয়ার সাধ পূর্ণ হয়েছে! আমি এতদিনের অপেক্ষায় সাকসেসফুল! আজকে চল তোর কি খেতে মন চায়, কোথায় খেতে মন চায়? ডিনার ইজ অন মি!❞

সায়মনের মুখে একান ওকান হাসি ছড়িয়ে পড়লো। আমার ভাই বেশ ভোজন রসিক। সবসময় মেন্টেইন করলেও ওকেশনালি সে খুব খায়। গাড়ি ঘুরিয়ে ওর পছন্দের রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা দিল। আর আমি হাসতে হাসতে শুভকে টেক্সট করলাম,
❝ তুই আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে বলছিস আমাদের মাঝে সব হয়ে গেছে! তুই কি কখনো মিথ্যা বলতে পারিস? তোর মুখের কথা কি কখনো মিথ্যা হবে? তাই আমিও তুতুনকে তোর মুখের কথা, মানে সত্য বলে দিলাম!
কেন রে? খারাপ লাগছে?
কেন লাগছে?
রিজেক্ট করেছে বলে?
অপমান করেছে বলে?
এরচেয়ে দশ গুণ বেশি অপমান তুই আমাকে করছিস! মনে আছে?
সব সুদে আসলে ফেরৎ পাবি। মাত্র তো শুরু!❞

টেক্সট পাঠিয়েই হাসতে হাসতে আইডি ব্লক লিস্টে ফেলে দিলাম। ওর জবাব শুনতে চাই না, মনের শান্তি নষ্ট করতে চাই না। ওর জন্য এক সেকেন্ড সময় ক্ষেপণ করাও আমার জন্য পাপ!

চলবে…

(সরি এত লেইট এ আপডেট করার জন্য। গত দুই সপ্তাহ ধরে আমি লিখতে পারছি না। সামনেও পারব কিনা জানি না। নেক্সট পর্ব আসতেও দেরি হতে পারে। দুয়া করবেন, যেন এই রাইটার্স ব্লক কেটে যায়!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here