আমি তোমাকে ভালোবাসি পর্ব-৮

0
671

#আমি_তোমাকে_ভালোবাসি
#লেখনীতে_সুরঞ্জীতা_সুর
#অষ্টম_পর্ব
১৩.
রাশেদ ফুরফুরে মনে ঘরে ডুকলো। এতো সুন্দর সকাল তার জীবনে বিয়ের পর আসে নি। আজকের সকালটা এতো সুন্দর কেন? সারারাত ঝিরিঝিরি বৃষ্টির পর চারপাশ আরো সতেজ হয়ে গেছে। ঝকমক করছে বারান্দার গাছের পাতাগুলো। গাছের টবে শুধু পাতাবাহার গাছ লাগানো। এগুলো সব রাশেদ এনে দিয়েছে চন্দ্রাকে। চন্দ্রা খুবই যত্ন করে তাদের। রাশেদকে বারান্দায় দেখে চন্দ্রা চা নিয়ে এলো।

আলতো স্বরে বললো, আপনার চা।

রাশেদ হাসিমুখে চা নিলো। হাসিমুখে তাকিয়ে আছে চন্দ্রার দিকে। আজ চন্দ্রা চা দিয়ে চলে যায়নি ওর পাশে দাঁড়িয়ে গাছের পাতায় হাত বোলাচ্ছে। হাতের নড়াচড়ায় সোনার চুরিগুলো টুংটাং করে ধ্বনি তুলছে। হালকা গোলাপি রংয়ের শাড়ি তার কোমড়ে গোঁজা। চমৎকার লাগছে চন্দ্রাকে। রাশেদের কেন জানি মনে হচ্ছে আজ থেকে সব পাল্টে যাবে। সম্পূর্ণভাবে ওর জীবন পাল্টে যাবে। এমন মনে হবার কারনটা খুব তুচ্ছ। কারনটা হচ্ছে বিয়ের পর প্রথম চন্দ্রা রাশেদের সাথে এতোটা কথা বলেছে। হয়তো কালকে না বলে যাওয়ার অপরাধবোধ থেকে। তারপরও বলেছে তো। রাশেদ এতোটুকুতেই খুশি। সে চায়ের কাপ চন্দ্রার হাতে দিয়ে গোসলে গেল।

এতো সকাল নয়টা নাগাদ হাসিমুখে টুকু এসে উপস্থিত। এসেই রাশেদ আর চন্দ্রার পা ধরে কদমবুসি করলো। তখন রাশেদ আর চন্দ্রা খেতে বসবে। রাশেদ মনে মনে ঠিক করলো টুকুকে কিছু কঠিন কথা বলবে। তাকে বলবে সে মানা করার পরও চর্তুথবার পালানোর মানে কী? তবে তা অবশ্যই খাওয়ার পর। ছোট মানুষ এতেটা পথ এসেছে। ক্ষিধে পেয়েছে বোধহয়। রাশেদের মাঝে মাঝে মনে হয় তাকে এতোটা মাথায় তোলা ঠিক হচ্ছে কিনা। কিন্তু ছেলেটার দিকে তাকালে এতে মায়া লাগে। মনে হয় সৃষ্টিকর্তা ভুল ঘরে তাকে দিয়েছেন। রাজপুত্রর মতো চেহারা। শহরের আবহাওয়া, খাওয়াদাওয়ায় তার চেহারা পাল্টে গেছে। গায়ের রং ফুটে উঠেছে। আগের চাপা পড়ে যাওয়া রং ফিরে এসেছে। চন্দ্রা যখন রান্না করে তখন টুকু তার ভাষ্যমতে তার আপার সাথে গফ করে। আর রান্নার জিনিস এগিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে ছোট কাপড় নিয়ে ঘরের ফার্নিচার মুছে। ঘর ঝাড়ু দিতেও দেখা যায়। ঘর খুব আগ্রহ নিয়ে মুছে মপ দিয়ে। সে নাকি এই কাজে খুবই আনন্দ পায়। তার সবই নিজের ইচ্ছায় করে। রাশেদ আপন মনে হাসলো। করে না করে না করেও অনেক কাজ করে সে। ছেলেটাকে খুবই স্নেহ করে চন্দ্রা। তবে আজকে সে ছাড় পাচ্ছে না। তাকে জবাবদিহি করতে হবে।

খাওয়া শেষে রাশেদ টুকুকে গম্ভীর গলায় ডাকলো। টুকু কাঁচুমাচু মুখে সামনে দাঁড়ালো।

টুকু কোথায় ছিলি এতোদিন?

ভাইজান বাড়িত গেছলাম।

কেন?

ছোট ভইনরে লইয়া খুবই খারাপ খোয়াব দেকলাম।

শোন মিথ্যে বলে লাভ নেই। দেড়মাসের মধ্যে তুই চারবার একই কথা বলেছিস পালিয়ে ফিরে আসার পর। সত্যি করে বল।

সত্য কইতাছি ভাইজান।

না তুই সত্যই বলছিস না। কী সমস্যা তোর বল? এখানে ভালো না লাগলে বল আমি একেবারে বাড়ি পাঠিয়ে দিব। কেউ কিচ্ছু বলবে না। তোকে কী জোর করে পাঠিয়েছে তোর বাবা?

না ভাইজান। আমি নিজেই আসছি।

তাহলে? সত্যি কথা বল।

না বললে কী থাকতে দিবেন না এনে?

এসব কোন ধরনের কথা টুকু? তোকে নিয়ে সমস্যা হলে আগেই বলতাম। কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে সমস্যা তোর।

আসলে ভাইজান?

কী আসলে?

আমি প্রতিবার পলানির লাইগা বাইর হই একদিন বাইরে থাইকা বাড়িতে যাই মনে করি সেইখানতে আবার পলামো কিন্তু তার আগেই আপার চেহারা মনে পইড়া খারাপ লাগা শুরু করে পরে চইলা আসি। মাফ কইরা দেন ভাইজান আর করুম না।

রাশেদ আর চন্দ্রা একে অপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এই ছোট্ট ছেলেটার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে চন্দ্রাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। অথচ আমরা ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি। ভাবতাম ছোট মানুষ ও হয়তো এমনই।

রাশেদ কিছু বলার আগে চন্দ্রা বললো, রাশেদ আর কিছু বলার দরকার নেই। ছোট মানুষ থাক। পরে দেখা যাবে এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে আপনার।

রাশেদ উঠে দাঁড়ালো তারপর টুকুর মাথয় হাত বুলিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষন পর চন্দ্রা ঘরে এলো।

রাশেদ বললো, চন্দ্রা রেডি হয়ে নাও একসাথে বের হবে৷ আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাব। নাম কী হাসপাতালের?

চন্দ্রার মুখে হাসপাতালের নাম শুনে রাশেদ আকাশ থেকে পড়লো। সে কাল রাশেদের হাসপাতালে ছিল। কিন্তু একবার তাকে চোখে পড়েনি রাশেদের।

রাশেদ চন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কতক্ষণ থাকবে?

বলতে পারছি না। বেশি সময়ও লাগতে পারে আবার কম সময়ও।

আচ্ছা। তৈরি হয়ে নাও।

রাশেদ, চন্দ্রা তৈরি হয়ে হাসপাতালে চলে গেল। চন্দ্রা গেছে বারসাতের মা আমেনা বেগমের কাছে আর রাশেদ গেছে তার কেবিনে।

যাওয়ার আগে রাশেদ বললো, ভেবেছিলাম উনাকে দেখতে যাব। কিন্তু অলরেডি অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তুমি যাও আমি একটু পর আসছি আর কোন দরকার হলে কেবিনে চলে যেও আর কেবিনে না পেলে মনে করবে রাউন্ডে আছি তখন কল করে দিও।

আচ্ছা।

নম্বর আছে তোমার কাছে যে কল করবে।

চন্দ্রা জিবে কামড় দিল।

রাশেদ হেসে বললো, ব্যাপার না। কার্ডটা রাখো। এখানে নম্বর আছে।

চন্দ্রা হাত বাড়িয়ে নিল। রাশেদ সেখান থেকে চলে গেল। চন্দ্রা ভেতরে পা বাড়ালো। হাসপাতাল জায়গাটায় তার আসতেই ইচ্ছে হয় না। কেমন একটা অসুস্থ অসুস্থ গন্ধ নাকে লাগে। বমি চলে আসে। তারপর বারবার আসতে হয়। চন্দ্রা ভেতরে গিয়ে দেখলো কেবিনের বাইরে বারসাতের দুইজন ক্লোজ বন্ধু আরিফ আর সোহান। ওরাই উনাদের সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

চন্দ্রা ওদের দিকে এগিয়ে বললো, আন্টির অবস্থা কী আরিফ?

ভালো না।

কালকেও তো এমনই ছিল।

না আজ ভোররাত থেকে অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।

সে কী? ডাক্তার দেখে যাননি?

ডাক্তার যা বলার বলে দিয়েছে চন্দ্রা। এখন সব আশা শেষ। ভেতরে গিয়ে দেখে আসো তুমি।

চন্দ্রা নিঃশব্দে ভেতরে গেল। হালকা নীল রংয়ের বিছানার চাদর তার উপর একজন মহিলা শুয়ে আছে। তার চোখ, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে। তার মাথার বাম ও ডান পাশে তার স্বামী এবং মেয়ে বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে হয়তো। শক্ত হয়ে বসে আছে তারা। একফোঁটা নড়ছে না।

বারসাতের মায়ের যে ক্যান্সার হয়েছে তা হচ্ছে একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএমএল। যা খুব দ্রুত ছড়ায় বলে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু উনারা বুঝতে পারেন নি। যখন বুঝতে পারলেন অনেকটা দেরি হয়ে গেল। কেমোথেরাপি দেওয়ার পরও সুস্থ না হওয়ায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উনার সাথে কোন ডোনারের এইচএলএ টাইপিং ১০০ ভাগ ম্যাচ হয়নি। সেজন্য এখন আর কিছুই করাই নেই।

চন্দ্রা নিঃশব্দে বাইরে বেরিয়ে এলো। বেশ কিছুক্ষণ পর রাশেদ এলো। চন্দ্রা চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। রাশেদ পাশে এসে বসলো। কারো উপস্থিতিতে সে চোখ খুললো। পাশে রাশেদকে দেখে একটু হাসার চেষ্টা করলো করলো। তবে কতটুকু সফল হলো বুঝতে পারলো না। তারপর বললো,

আপনার কাজ শেষ?

না এখন একটু ফ্রি। ভেতরে গিয়েছিলে? কী অবস্থা উনার?

ভালো না।

আচ্ছা উনারা বোনম্যারো করছেন না কেন? উনার ভাই, বোন কেউ নেই?

আছে কিন্তু কারো সাথে এইচএলএ টাইপিং মিলে নি।

রাশেদের মন খুব খারাপ হলো। ডাক্তার হতে হলে সবার আগে আবেগ বির্সজন দিতে হয় যা এতো দিনেও রাশেদ আয়ত্তে আনতে পারে নি।

সে চন্দ্রাকে বললো, চন্দ্রা আমাকে কী ভেতরে যেতে দিবে উনারা?

উনারা এখন এতোকিছু খেয়াল করেন না। আসুন আমার সাথে।

চন্দ্রা আর রাশেদ কেবিনে ঢুকলো। রাশেদ মহিলাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। নিস্তেজভাবে পড়ে আছে বিছানায়। কিছুক্ষনের মধ্যে উনার মধ্যে নড়াচড়া দেখা গেল। তিনি চোখ পিটপিট করে তাকালেন। প্রথমেই চোখ পড়লো উনার দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাশেদের উপর।

তিনি বারসাতের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, দেখো বারসাতের বাবা, আমার ছেলে এসেছে।

তিনি চমকে পেছনে তাকালেন। দেখলেন চন্দ্রার পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে। গায়ের অ্যাপ্রোন দেখে বুঝলেন সে এখানকার ডাক্তার। তিনি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে উনার স্ত্রী আমেনা বেগমের দিকে তাকালেন তারপর বললেন,

আমেনা উনি ডাক্তার। তোমার ছেলে নয়।

তিনি জেদ ধরে বললেন, না সে আমার ছেলে।

না সে তোমার ছেলে নয়। তোমার ছেলে চলে গেছে।

না যায়নি। ওইযে ওখানে দাঁড়িয়ে।

গিয়েছে। এখন চুপ করে ঘুমাও।

তুমি এমন করছো কেন? সে আমার ছেলে। কোথাও যায়নি সে।

বলেই কাঁদতে লাগলেন। বারসাতের বাবা চন্দ্রা আর রাশেদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো, তোমরা বাইরে যাও আমি উনাকে সামলে নিচ্ছি। কিছু মনে করো না।

চন্দ্র আর রাশেদ নিঃশব্দে বাইরে বেরিয়ে এলো। রাশেদ দরজার বাইরে থেকে ভেতরে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার নার্স ছুটে এলো। আমেনা বেগম বেডে শুয়ে বিড়বিড় করছে। খুব সম্ভবত ছেলেকে খুঁজছে। রাশেদ এগিয়ে কেবিনে ঢুকলো।

আমেনা বেগমের পাশে বসে উনার হাত ধরে বললো, মা তোমার ভয় নেই। এই যে আমি।

আমেনা বেগম বললেন দূর্বল গলায় বললেন, কোথায় ছিলি তুই? তোর আব্বা আমার সাথে ঝগড়া করেছে বলেছে তুই নেই।

আব্বার কথা ধরো না তো। আমি এখানে আছি। তোমার পাশে। এই যে তোমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি। কোন ভয় নেই তোমার।

তিনি দুর্বল হাতে রাশেদের হাত ধরে আঁকড়ে ধরলেন। রাশেদের দুই চোখ থেকে পানি পড়ছে। পাশে থাকা ডাক্তার অবাক চোখে রাশেদকে দেখছে। তার জানা মতে এই মহিলা রাশেদের মা না। তবু কতটা স্নেহে রাশেদ উনার হাত ধরে আছে। খুব বড়জোর পাঁচমিনিটের মাথায় তার হাত রাশেদের হাতে নিথর হয়ে গেল। আশেপাশের সবাই কাঁদতে লাগলো। সবাই বলতে বারসাতের বাবা আর বোন। রোগী মারা গেলে খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে পড়ে। কারণ একটা বেড খালি হলে সেখানে আরেকটা রোগী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসে বড়জোর একঘন্টা এর মধ্যেই সব ফর্মালিটি শেষ করে উনারা বাড়ির উদ্দ্যেশে বেরিয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে বারসাতের বাবা রাশেদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললো, বাবা তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমেনা অসুস্থ হবার পর থেকে এমন করতো। ওর ছেলের বয়সী কাউকে দেখলেই এমন করতো। তোমাকেই আমি একমাত্র দেখলাম আমার স্ত্রী কাছে এসে ছেলে মতো পাশে ছিলে। তার শেষ সময়ে তার ছেলের মতোই তার হাত ধরে বসে ছিলে। ও এতটুকু শান্তি পেয়েছে এটাই অনেক। তুমি ভালো থেকো।

রাশেদ কিছু বলতে পারলো না। সে তাদের এম্বুলেন্সে তুলে দিলো। তাদের সাথে গেল বারসাতের দুই বন্ধু। দাফন হবে বারসাতের গ্রামের বাড়িতে। উনারা রওনা হবার পর রাশেদ সেখান থেকে তার কেবিনে চলে এলো। তার চোখ জ্বলছে। কান্না পাচ্ছে। সে তার কেবিনের বাথরুমে চলে গেল। চন্দ্রা তার কেবিনের চেয়ারে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর রাশেদ চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এলো। চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো, চন্দ্রা আজ আর হাসপাতালে থাকবো না বাসায় চলে যাব। ভালো লাগছে না। তুমি একটু বসো আমি জানিয়ে আসি।

চন্দ্রা মাথা নাড়লো। সে নিঃশব্দে চোখের জল ফেললো। মিনিট দশেক পর রাশেদ এসে চন্দ্রাকে নিয়ে সিএনজিতে বসলো। চন্দ্রা একমনে রাশেদের দিকে তাকিয়ে আছে।

একটু পর রাশেদ চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললো, কী দেখছো তখন থেকে?

চন্দ্রা চমকে বললো, কই কিছু না তো।

ভাবছো হঠাৎ করে আমি বারসাতের মায়ের কাছে গিয়ে এই কান্ডটা করলাম কেন?

হ্যাঁ।

চন্দ্রা উনি অসুস্থ মানুষ ছিলেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে যখন উনি মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তখন উনার মনে হলো আমি উনার মৃত ছেলে। কিছুক্ষণের জন্য উনার মনে হলো বারসাত ফিরে এসেছে। আমাকে যখন ডাকছিলেন তখনই যেতাম কিন্তু বারসাতের বাবা আটকে দিল। কিন্তু যখন অবস্থা খুব খারাপ হলো নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। উনি যদি আমাকে নিজের ছেলে মনে করে কিছুক্ষন স্বস্তি পেতে চান তবে তাই হোক। কিছুক্ষণের জন্য বারসাত হয়ে গেলাম। চন্দ্রা আমি কোন দিন অভিনয় করিনি। আজকের অভিনয়টা আমার জীবনের প্রথম অভিনয়। তোমার মনে হয় না এরজন্য আমার অস্কার পাওয়া উচিত।

এটা অভিনয় ছিল?

হ্যাঁ।

চন্দ্রার চোখে জল চলে এলো কিন্তু তা সে রাশেদকে দেখাতে চাইলো না বলে সিএনজির বাইরে তাকালো। সে জানে রাশেদ অভিনয় করেনি। যা করেছে মন থেকে করেছে। আমেনা বেগমের মধ্যে সে অন্য কাউকে খুঁজে পেয়েছিল তাই গিয়েছিল। কাকে খুঁজছিল তা চন্দ্রার জানা নেই কিন্তু কাউকে খুঁজছিলো সেটা সে জানে।

চারদিকে ভাপসা গরম। আকাশ অন্ধকার। ছাই রঙ্গের মেঘে আকাশ ছেয়ে আছে। এখন বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। চারদিক অন্ধকার রাস্তা ফাঁকা কিন্তু সময় মাত্র বিকেল তিনটা। তার মধ্যে সিএনজিতে পাশাপাশি বসে আছে দুই কপোত-কপোতী। এক পশলা বৃষ্টি নেমে আসুক তাদের জীবনেও যাতে এই বৃষ্টি তাদের জীবনে সমস্ত গ্লানি দূর করে দিয়ে একটি ভালবাসাময় জীবন উপহার দেয়।

মেঘ আমার জীবনে ভেসে ভেসে আসে কিন্তু অন্ধকার নিয়ে না; বরং আমার জীবনের সূর্যাস্তে এক নতুন রঙ যোগ করতে।

— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here