অগত্যা তুলকালাম।’পর্ব-৩২

0
603

#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত

পর্ব ৩২

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। সচরাচর সকাল ছয়টা বা সাতটার দিকে ইশরাক পড়েই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। নয়টায় উঠে তারপর দৈনন্দিন কাজ শুরু করি। রাত তিনটায় উঠে একনাগাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ইবাদত করার পর একটু ঘুমিয়ে না নিলে সারাদিন শরীরটা ঝিমঝিম করে। একটা কাজেও ঠিকমতো মন বসে না এমনকি ইবাদতেও না। বারবার মনোযোগ ছুটে যায় অন্যদিকে। হাই তুলতে তুলতে দিন পার হয় আর একগাদা কাজ মাথায় নিয়ে কম্পিউটার টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতে বাধ্য হই। কিন্তু রাফিনের ডায়েরিটা পাওয়ার পর থেকে মাথায় শুধু সেসব চিন্তাই ঘুরপাক খেতে থাকে সারাদিন। ঘুমাতে গেলেও ঘুম আসে না। ঘুরেফিরে সেসব দেখি শুধু।

আজ “পুনরায় পথচলা” লেখাটা পড়ার পর অনেক চেষ্টার পর হালকা ঘুমিয়েছিলাম। তখন অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম ওকে নিয়ে। রাফিনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কার সাথে যেন। ওখানে বউ সেজে বসে আছি আমি। রাফিনকে ওর বন্ধুরা বারবার বলছে, আমাকে বিয়ে করতে। কিন্তু ও গোঁ ধরে আছে। কিছুতেই নাকি এতদিনকার ভাঙ্গা সম্পর্ক ও জোড়া লাগাতে পারবে না। স্বপ্নটা দেখে সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করতে লাগলো আমার। ঘুম ভেঙে গেল সাথে সাথেই। এরপর না কাজে মন দিতে পেরেছি আর না পেরেছি ঘুমাতে।

ঘুম থেকে উঠে শান্তি কুঠিরের সবার জন্য রান্না করলাম। দাদুর হঠাৎ করলা ভাজি খেতে ইচ্ছে করছে। কুলসুমকে সাথে নিয়ে ক্ষেত থেকে করলা তুলতে গেলাম। শান্তি কুঠিরের চারপাশে বাচ্চাদেরকে নিয়ে বিশাল ক্ষেত গড়ে তুলেছে দাদু। এহেন কোনো শাকসবজি নেই যা দাদুর ক্ষেতে নেই। মাহফুজ ও আবির সারা দুনিয়া খুঁজে খুঁজে দাদুকে চারা এনে দেয় আর কুলসুম ঝিলিদের নিয়ে দাদু ক্ষেতে চারা লাগান। আর সেসব রান্নার দায়িত্ব এসে পড়ে আমার কাঁধে। দাদুর হুটহাট এটা-ওটা খেতে ইচ্ছে করে। দাদুর ইচ্ছে করে বললেই হলো, সবগুলো বাচ্চাকাচ্চা এসে আমাকে ধরবে রান্না করার জন্য। দাদুর ইচ্ছে বলে কথা। আমিও অগত্যা রান্না করি তাদের জন্য।

ক্ষেতে গিয়ে দেখলাম রায়হান, আবির ও ফাহিম তিনজনই ক্ষেতে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। একজন গাছে পানি দিচ্ছে, একজন গাছে স্প্রে করে পোকা সরাচ্ছে। অন্যজন বৃষ্টির পানিতে যে গাছগুলোর মাটি সরে গিয়েছিল সেগুলোতে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিচ্ছে। আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
”বাহ! খুব মনোযোগী কর্মী। ভালো।”

ওরা একসাথে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। আমিও স্মিত হেসে ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
“আপনাদের বাগান থেকে তরকারি নিতে এলাম। দাম দিয়ে নিতে হবে না ফ্রীতে পাবো?”

“আপনার জন্য দিল দিতেও রাজি ম্যাডাম। বলুন কি চাই?” বুকে হাত দিয়ে বললো রায়হান।
ওর বলার ধরণে আমি হেসে ফেললাম।
“দিল দিতে হবে না। আপাতত করলা দিলেই চলবে।”
আবির ও ফাহিমের একসাথে চক্ষু চড়কগাছে উঠে গেল। দুজনই নাকমুখ বিকৃতি করে বললো,
“আজকের রেসিপি করলা? ইয়াক!”
“ইয়াক করার কিছু হয়নি। এমনভাবে রাঁধবো যেন একটুও তেঁতো না হয়। হুহুম!”

“আজকে দাদু করলা খেতে চেয়েছে?”
”হুম।” আমিও হতাশ হওয়ার ভঙ্গিতে উপর-নীচ মাথা নাড়লাম।
“অগত্যা…”
আবার হতাশ ভঙ্গিতে মাথা দুলালাম। ওদের মুখে হাসি ফোটাতে বললাম,
“তোদেরকে এই অবস্থায় দেখে আমার হঠাৎ একটা গল্প মনে পড়ে গেল।”
“কি গল্প? কি গল্প?” আবির রীতিমতো ছুটে এলো আমার কাছে। ছেলেটা গল্পের পাগল। সে আমার পুরোনো বাংলা বইয়ের গদ্য-পদ্য সব পড়ে শেষ করে ফেলেছে। এখন ধরেছে নাকীবেরগুলো।

“তোমরা হাতে কোদাল, পানির জার এগুলো নিয়ে আছো না? এজন্য একটা গল্পের কথা মনে পড়লো।”
“কি গল্প বলো না আপু? তাড়াতাড়ি!”
আবিরকে আর ধৈর্যের পরীক্ষায় না ফেলে গল্প বলতে শুরু করলাম।
“একটা বাগানে তিনজন মালী ছিল। একজনের কাজ ছিল গর্ত খোঁড়া, আরেকজনের কাজ গর্তে গাছ পুতে দেওয়া আর অন্যজনের কাজ গর্ত ভরাট করা। তো একদিন দ্বিতীয় ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ায় কাজে আসেনি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলতে যে গাছ রোপণ করতো সে আর কি। সে যেহেতু আসেনি তাই বলে কি অন্যরা তাদের কাজ বন্ধ রাখতে পারে? তারা তাদের কাজগুলো করে গেল। যেমন; একজন গর্ত খুঁড়ছে অন্যজন ভরাট করছে। মালিক এসে যখন জানতে চাইলো, আশ্চর্য! তোমরা এসব কি করছো? একজন গর্ত খুঁড়ছো অন্যজন ভরাচ্ছো! তখন তারা সরলতার সাথে বললো, “যে গাছ রোপণ করে সে আসেনি তাই বলে কি আমরা আমাদের কাজ ফেলে রাখতে পারি?”

গল্প শুনে সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো। রায়হান তো বলেই ফেললো,
“এটা কিছু হলো? কাজের কাজ তো কিছুই হলো না।”
“হুম কিন্তু এটা থেকে আমাদের কিছু শেখারও আছে। সবসময় শুধু দায়িত্ব পালন করে গেলেই হয় না৷ আশেপাশেও নজর রাখতে হয়। দায়িত্বের মাধ্যমে কারও উপকার বা অপকার হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হয় বুঝলে?”

সবাই উপর-নীচ মাথা দোলালো। আমি তড়িঘড়ি এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললাম,
“দেখি, করলা গাছ কই? তাড়াতাড়ি করলা দাও তো।”

কুলসুম আমার সামনে করলার ঝুড়ি রাখতে রাখতে বললো,
“তোমরা কথা বলার ফাঁকে আমার করলা তোলা শেষ। চলো এবার রান্না বসাই।”
আমি কুলসুমের কাঁধে হাত চাপড়ে বললাম,
“বাহ! খুবই কর্মঠ। গুড জব!”

কুলসুম আমার রান্নায় সাহায্য করছে। করলা ভাজি প্রায় হয়েই এসেছে। এরমধ্যেই আমার আলুভর্তা করা শেষ। কুলসুম করছে শুকনো মরিচের সাথে শুটকির ভর্তা। খুবই সাধারণ কিছু খাবার। এগুলোই আমরা তৃপ্তি নিয়ে খাই। মনে হয় এরকম মজার খাবার যেন সারা জীবনেও খাইনি। অথচ বাসায় যখন ডাইনিংয়ে বসে পা দোলাতে দোলাতে চিকেন, বিফসহ হাজাররকমের আইটেম খেতাম তখনও খাবারে এত স্বাদ পেতাম না। শান্তি কুঠির আসলেই পরম শান্তির আবাস। এখানে মাটিতে চাটাই পেতে সবাই একসাথে শুকনো মরিচ ভর্তা, আলুভর্তা, ডাল এমনকি করলা ভাজি খেতেও পরম স্বাদ লাগে। আমাদের প্রায় দিনই কাটে ক্ষেত থেকে আনা শাকসবজি খেয়ে। মাছ-গোশত খাই না বললেই চলে। আর সবাই এতেই ভীষণ খুশি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বলেছেন, আল্লাহর নাম নিয়ে একসাথে খাবার খেতে। তাহলে খাবারে বরকত হয়। [১]

দাদু গুটিগুটি পায়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকলেন। চুলার কাছে এসে ঘ্রাণ নিয়ে বললেন,
“আহ! কি মিষ্টি ঘ্রাণ। কতদিন পর করলা ভাজি, আহা!”
“পরশু দিনও তো করলা ভাজি করেছিলাম দাদু। কতদিন পর বলছেন কেন?”
“ওহ! পরশু দিন? মনে হচ্ছে কত যুগ যেন কেটে গেছে।

আমি ও কুলসুম মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসলাম। আমাদের কাজ যখন একেবারে শেষের দিকে তখন নাকীব ও মাহফুজ এলো বাইরে থেকে। সবার জন্য খাবার দিয়ে নিজেরাও বসে পড়লাম খেতে।

অবশেষে দুপুর হতেই ডায়েরি নিয়ে বসে পড়লাম। ডায়েরিটা শেষ না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না। এক পৃষ্ঠা পড়লেই মনে হয় আরেক পৃষ্ঠায় যাই। মনে মনে এটা ভেবেও ভয় হচ্ছে যে, না জানি শেষ পাতায় কি লেখা আছে! সেটা পড়ে আবার নতুন কৌতুহল জাগবে না তো মনে? এরপর তো আর কিছুই লেখা থাকবে না। রাফিন তো ডায়েরি লিখে মনের খোরাক জোগায়। আর আমি ওর ডায়েরি পড়ে। শেষ হয়ে গেলে তখন কি পড়ে আমি আমার মনের খোরাক জোগাবো? কাজে মন দিতে পারবো তো ঠিকঠাক? উফ! এতকিছু ভাবা যাবে না। এখন ডায়েরিটা পড়বো, এটাই মিশন। ব্যস!

এবারের শিরোনাম “চলছে প্রেমালাপ, বন্ধ হোক।” ঠোঁট উল্টে খানিকক্ষণ শিরোনামের দিকেই তাকিয়ে রইলাম। এটা কেমন শিরোনাম হলো? চলছে প্রেমালাপ, বন্ধ হোক। এটা কেমন কথা? যাইহোক, গল্পে ফিরি।

“প্রেয়সীর সাথে রোজই ফোনালাপ চলতে থাকলো। আর রোজ বিকেলে দেখা তো হচ্ছেই। মধুর দিন কাটতে লাগলো আমাদের। সে কল করে, আমি কল কেটে ব্যাক করি। তার কল কেটে ব্যাক করতে অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে আমার মনে। আর আমিও যখন ইচ্ছে কল করি। এভাবে চলতে চলতে একটা পর্যায়ে আমার মনে হলো, এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না। আমরা ব্যাপারটায় রীতিমতো অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি। একদিন সে কোনো কারণে আমার ফোন ধরতে পারেনি। আমি তো রেগেমেগে অস্থির। কি এমন কাজে ব্যস্ত সে যে ফোন ধরতে পারবে না? এমনকি সেদিন সারাদিনেও সে আর কলব্যাক করেনি। আমি রেগে অস্থির হয়ে গভীর রাত অব্দি পায়চারি করছি। হঠাৎ মনে হলো, একবার ফোন না ধরায় আমি নিজের সব কাজ বিসর্জন দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে পড়ে আছি? আমার সারাটা দিন তো মাটি হলোই। রাতে ঘুম না হওয়ায় পরের দিনটাও প্রায় মাটি হতে চলেছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। গভীর প্রেমালাপ এবার বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে যাতে সে বুঝতে না পারে আজকের ব্যাপারটার জন্যই আমার এই পরিবর্তন। তাহলে সে নিজেকে দোষারোপ করতে করতেই মরে যাবে। এরপর আস্তে আস্তে তার সাথে কথা বলা কমাতে থাকলাম। আস্তে আস্তে কমালেও ব্যাপারটা ও নিতে পারছিলো না। আমার নিজেরও কষ্ট হতে লাগলো ওর সাথে যখন ইচ্ছে তখন কথা বলতে না পারায়৷ কিন্তু নিজের কষ্ট বিসর্জন দিয়ে আমি ওকে ইগনোর করতে লাগলাম। নাহলে যে পরে পস্তাতে হবে। কখনো যদি কোনো কারণে একটা দিনও দূরে থাকতে হয় তাহলে যে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো। তাই আগেভাগে অভ্যাস করে নেওয়া।”

পৃষ্ঠা শেষ হলো। পরের পৃষ্ঠায় পাঁচ-ছয়টা স্ক্রিনশটের প্রিন্ট আটকানো। কতদিন পর পর কতবার করে, কত মিনিট, কত সেকেন্ড কলে কথা হয়েছে তার চাক্ষুষ দলিল।

উহ! পাপ তো করেছেই আবার সেটা প্রিন্ট করে সযত্নে ডায়েরিতে লাগিয়েও রেখেছে।

কিছুক্ষণ ছবিগুলো দেখে পরের পৃষ্ঠা উল্টালাম।

“এরপর থেকে সে ফোন করতো আমি কেটে দিতাম কিন্তু ব্যাক করতাম না। কখনো করতাম, কখনো করতাম না। তবে মাঝেমধ্যে আমি নিজেই কল করতাম। তখন ও লুফে নিতো সেই সুযোগ। কখনো দু’বার রিং বাজতো না একবার রিং হতেই তার উত্তেজিত কাঁপা কন্ঠে, “হ্যালো” উচ্চারিত হতো। এরপর ধীরে ধীরে সে নিজেই আমাকে ফোন করা বন্ধ করে দেয়। ব্যাপারটা তখন আমার খুব খারাপ লাগতো। ফোন ধরি বা না ধরি সকালে একবার, রাতে একবার সে ফোন দিবেই। আর আমিও সেই টাইমে ফোনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতাম তার কলের জন্য। একদিন সকালে ফোন আসলো না। আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম, ফোন আসলো না। কিন্তু রাতে ঠিকই ফোন এলো। আমিও সকালে ফোন না আসার কারণে টেনশনে কল কেটে ব্যাক করে বসলাম। কিছুক্ষণ কথা হলো, কল না আসার কারণটা আর জানতে চাইলাম না। পরদিন সকালেও আর কল এলো না। ভাবলাম, হয়তো রাতে কথা হয়েছে তাই আর কল করেনি। তবুও আমি অপেক্ষায় ছিলাম কাঙ্খিত টিউনটি শোনার। অপেক্ষার ফল বৃথা গেল। তারপর থেকে আর কখনোই সকালের সেই নির্ধারিত সময়ে কল আসেনি। এমনকি একটা পর্যায়ে রাতে কল আসাটাও বন্ধ হয়ে গেল। তারপর বুঝতে পারলাম, কি হারালাম। কতটা যন্ত্রণা বুকে বয়ে বেড়িয়েছি প্রায় সপ্তাহখানেক সেটা শুধু আমিই জানি৷ ওর ফোন আসা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। কাঙ্ক্ষিত রিংটি আর কখনোই শোনা হতো না আমার। ও যে এভাবে থেমে যাবে কখনো ভাবিইনি। খুব দরকার হলে টেক্সটে বলতো, জানতে চাইতো কথা বলা যাবে কিনা। শুরুর দিকে টেক্সট করলেই কল করতাম। পরে সেটাও কমিয়ে দিলাম।

একরাতে সে আমাকে টেক্সট করে। তাকে বারণ করা আছে যেন রাতেবিরেতে অনলাইনে না আসে। তবে আমি কিন্তু ঠিকই অনলাইনে থাকি। আমি দেখতে চেয়েছি সে আমার কথা শোনে কিনা বা আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করে কিনা। “তুমি থাকো আমি কেন থাকবো না?” এরকম কিছু। কিন্তু সে সেরকম কিছুই বললো না। বিনাবাক্যে আমার কথা মেনে নিয়ে রাতে অনলাইনে আসা বন্ধ করে দিলো। সারাদিনেও আমি তার সাথে কথা বলতাম না। টেক্সট করলেও এড়িয়ে যেতাম। ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে রিপ্লাই দিতাম। কিন্তু সেদিন সে নিয়মের ব্যতিক্রম করে রাত তিনটার সময় আমাকে টেক্সট করলো। আমি তখন অনলাইনেই ছিলাম। কিন্তু ওর টেক্সটেকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে নিজের মতো কাজ শেষ করে অফলাইনে চলে গেলাম। সারাদিন আর অনলাইনেই আসলাম না। এরমাঝে ও অনেকগুলো টেক্সট করেছে।

দুপুর হতেই ও কল করার জন্য টেক্সট করলো। অনলাইনে গিয়ে মেসেজগুলো পড়ে ওকে কল করলাম। মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেছে আমার। সে উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখে আমাকে টেক্সট করেছে। আমিও একগাদা কথা শুনিয়ে দিলাম। সাফ জানিয়ে দিলাম, বাবা-মাকে রাজি করিয়ে তারপর আমার সামনে আসতে। সে খুব কাঁদলো। ওর কান্না শুনে মেজাজ আরও খারাপ হলো আমার। ওকে বললাম, রিলেশন ব্রেক করে দিতে। এরকম ফালতু রিলেশনের আমার কোনো দরকার নেই। একথা শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ও। আমি আরও কড়া কিছু কথা শুনিয়ে ফোন রেখে দিলাম। মূলত সেদিন থেকেই ও আমাকে ফোন করা একেবারে বন্ধ করে দিলো। এরপর থেকে ও আর কোনোদিন আমাকে নিজ থেকে ফোন করেনি। টেক্সটও করেছে খুব কম। কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে ও। আজকাল কাশবনে আসাও কমিয়ে দিয়েছে। ও জানে যে, আমি প্রতিদিন কাশবনে থাকি, তবুও ও আসে না। ব্যাপারটা আমার খুব খারাপ লাগতো৷ ওকে আগের মতো হাসিখুশি আর পাইনি আমি। হয়তো সেদিন খুব বেশিই খারাপ লেগেছিলো ওর।

তাই অনেকদিন পর হঠাৎ করে ওকে চমকে দিবো বলে ওর বাসার নিচে গিয়ে ফোন দিয়ে ডেকে আনলাম। বাইকে চড়িয়ে সোজা গহীন কাশবনে নিয়ে এলাম। এতদিন যা করিনি আজ তাই করলাম। ওর প্রশংসা করলাম খুব, ও চমকালো। চমকে কাঁপা হাতে আমার কপাল ছুঁয়ে দিলো। আমি নিজেও কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলাম। বুঝতে পারছি আমার আচরণ দেখে শরীর ঠিক আছে কিনা চেক করছে সে।

ইদানিং সে না আসায় কাশবনে বসে গেইমস খেলি আমি। ও যখন আসতো তখনও আমি গেইমস খেলার ভান করে লুকিয়ে ওকে দেখতাম। কিন্তু এখন আসলেই গেইমস খেলি। ওকে কাশবনের গহীনে রেললাইনে নিয়ে গেলাম। পাশে বসিয়ে গান শোনালাম। গানের মাধ্যমে মনের অব্যক্ত সব কথা ওকে জানিয়ে দিলাম। বুঝলো কিনা কে জানে? তবে অনেকদিন পর ওর মুখে আমি হাসি দেখতে পেলাম। উচ্ছ্বাস নিয়ে ও পুরোটা সময় উপভোগ করেছে। আমার মাঝেমাঝে খুব খারাপ লাগে। কত হাসিখুশি মেয়েটা আমার জন্য কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে।

সন্ধ্যায় ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে আসছিলাম। কিন্তু ও বাইকের কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো। জানতে চাইলাম কিছু বলবে কিনা। সে মাথা নেড়ে বললো, কাছে আসতে হবে। আমি তাকেই কাছে টেনে এনে বললাম, “বলো।”
বললো, ভালোবাসি। শুনে হৃদয়ে নাড়া দিলো খুব। অনেকদিন পর ওর মুখে কথাটা শুনেছি। আগে প্রায়ই বলতো। তবে আমার হৃদয় নাড়া দেওয়ার ব্যাপারটা আমি ওকে দেখালাম না। ধ্যাৎ! বলে বাইক নিয়ে চলে এলাম। কিছুদূর এসে আবার ফিরে গেলাম। আমার মন বলছে, সে কাঁদছে। খুব মন খারাপ করেছে। গিয়ে দেখি, ঠিকই সে কাঁদছে। কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, “আমিও ভালোবাসি তো।”
এটুকু একটা কথায় সে কতটা খুশি হয়েছে সেটা হয়তো আমার ধারণারও বাইরে। সে চমকে তাকালো আমার দিকে। আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, বাসায় যাও। সে চলে গেল।”

এটা পড়ে ঠোঁট গোল করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। কিছুক্ষণ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ কচলে পরের অধ্যায়ে চলে গেলাম। বলা বাহুল্য, আল্লাহর অশেষ রহমতে এই দু’বছরে ওর স্মৃতি অনেকখানি ভুলতে বসেছি আমি৷ ডায়েরিটা পড়ে সেগুলো ধীরে ধীরে আবার চাঙ্গা হচ্ছে বটে। তবে এবার আমার নিজের উপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে। আমি নিজেকে যথেষ্ট সামলাতে পারি এখন।

পরের কাহিনীর নাম “তুলকালাম (সম্পর্কে ও ব্যবসায়)। ব্যাপারটা বুঝলাম না৷ সম্পর্কে ও ব্যবসায় তুলকালাম মানে? যাইহোক পড়ে দেখি।

#Be_continued_In_Sha_Allah ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here