অগত্যা তুলকালাম।’পর্ব-৩৪

0
599

#অগত্যা_তুলকালাম
নাফীছাহ ইফফাত

পর্ব ৩৪

মাগরিবের নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে আছি। দোয়া-দরুদ পড়ছিলাম তখনই ফোনটা এলো। বাবার ফোন। রিসিভ করে কানে লাগাতেই বাবা বললেন,
“হৃদি রে, তোর মায়ের শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। তোকে খুঁজছে বারবার।”
আমি কোনো কথা না বাড়িয়ে বললাম, “আমি এখনই আসছি বাবা।”

নাকীবকে সাথে নিয়ে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পড়লাম। সকালেও তো মা ঠিক ছিল৷ এরমধ্যেই শরীর খারাপ হয়ে গেল কি করে? অবশ্য শরীর খারাপ তো আর বলে কয়ে আসে না, হুটহাট হয়ে যায়। বর্তমানে চারিদিকে যে হারে ভেজাল খাদ্যের পরিমাণ বেড়েছে তাতে অসুস্থ হওয়াটা আশ্চর্যের না, বরং না হওয়াটাই আশ্চর্যের।

বাসায় এসে দেখি বাবা মায়ের মাথা টিপে দিচ্ছে। আমাদের দেখামাত্রই মায়ের কপাল থেকে হাতটা সরিয়ে নিলেন বাবা৷ এরপর রুম থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন চলে গেলেন। আমরা দুজন মায়ের দু’পাশে বসলাম। মায়ের হাত ধরতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো মা। চোখগুলো কোঠরে ঢুকে গেছে। আশ্চর্য! এটুকু সময়ের মধ্যে কি এমন হলো মায়ের? চেহারার এমন বেহাল দশা হলো কি করে? নাকি সকালেও এমন ছিল, আমরাই খেয়াল করিনি? যে মানুষটা আমাদের সবার খেয়াল রাখে তার খেয়াল রাখতে আমাদের একটুও মনে থাকে না। আশ্চর্যের বিষয় না?

আমি মৃদু কন্ঠে বললাম, “মা, কি হয়েছে তোমার?”
“তোরা দুটোতে মিলে সারাদিন কি করিস বলতো? একটু খোঁজ-খবরও রাখিস না আমাদের।” মায়ের অভিমানী কন্ঠস্বর।
“মা, সকালেও তো এখানেই ছিলাম। তখন তো তুমি একদম ঠিক ছিলে।”
“বেশি পটরপটর করবি না হৃদি। তোরা ছাড়া বাড়িটায় ভালো লাগে? সব ফাঁকা ফাঁকা। দুটো তো রাতে ঘরেও ফিরিস না প্রায়সময়। বৃদ্ধবয়সে একজন একা হয়েছে বলে তাকে সময় দিতে গিয়ে নিজের বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রাখবি?”

আমি ও নাকীব বিস্ময়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। তারপর একসাথে বললাম, “তোমরা বৃদ্ধ?”
“তোদের জ্বালায় হচ্ছি আর কি!”

নাকীব বললো, “এখন তো আমরা পাশেই আছি তোমার। এবার উঠে বসো তো দেখি।”
“মাথার যন্ত্রণায় উঠতে পারছি না। হাত-পা সব অবশ হয়ে আসছে। তোরা কিছুতেই আর আমাদের একা রেখে যাবি না। যত কাজই থাকুক, করে আবার এখানেই ফিরে আসবি। শান্তি কুঠিরকে আসল ঠিকানা বানিয়ে বসে আছিস। নিজের বাড়িকে রেখেছিস অশান্তিতে। ক’দিন পর তো এমনিতেই চলে যাবি অন্য বাড়ি। যতদিন আছিস ততদিন তো সময় দিবি আমাদের।”

“তোমাদের সময় দিবো বলেই তো আমি ভাবছি যে খুব কাছে কোথাও বিয়ে করবো। যাতে রোজ তোমাদের সাথে দেখা হয়।”

মা কিছু বলার আগে নাকীব বললো, “ঐ যে কাশবনের ধারে নতুন শেইপের একটা বিল্ডিং উঠছে। সেটার মালিককে বিয়ে করে ফেলো। আমার খুব ইন্টারেস্ট ঐ বাড়ির প্রতি।”

মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আমি পাশ থেকে মলম নিয়ে মায়ের কপালে লাগিয়ে টিপে দিতে লাগলাম। নাকীব মায়ের পা টিপে দিচ্ছে। মায়ের কপালে ভালোই মালিশ করছি৷ মা বললেন,
“তোকে এভাবে মালিশ করা কে শিখিয়েছে রে হৃদি?”
“বাবা শিখিয়েছিলো মা।”
“হুম, তাই তো বলি মনে হচ্ছে তোর বাবা টিপে দিচ্ছে।”
“আমার ছোটবেলায় একবার তোমার খুব মাথা ব্যাথা হয়েছিল। আমাকে বলেছিলে টিপে দিতে৷ কিন্তু আমার ছোট নরম হাতে আমি ঠিকঠাক টিপতে পারছিলাম না। তখন বাবা আসে আর ভালোভাবে টিপে দেয়। ইশারায় আমায় শেখায় ‘এভাবে টিপতে হয়’। তুমি বলে উঠলে, “এই তো এখন খুব ভালো টিপছিস তো। এতক্ষণ কি করছিলি?” তখন তোমার চোখ বন্ধ ছিল। সে-ই থেকে আমি বাবার মতো টিপতে পারি।”
“তোর প্রায় স্বভাবই তোর বাবার মতো। ছোটবেলায় বাবাকে নকল করতে খুব ভালোবাসতিস তুই। বাবা মসজিদ থেকে এলেই তার টুপি নিয়ে মাথায় পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যেতি। তখন তোকে হুবহু তোর বাবার মতো লাগতো। দিশা তো তখন হেসে কুটিকুটি হতো। দুষ্টুমি করে প্রায়ই তোর বাবার লুঙ্গি, গেঞ্জি সব পরাতো তোকে৷ আর তুইও খুশিতে বাকবাকুম।”

নাকীব মুখ গোমড়া করে বললো, “ও মা! আমার কোনো গল্প নেই? শুধু আপুরগুলো বলছো কেন?”
“তোর গল্প তো কত আছে।”
“বলো না।”
“তুই ছোটবেলায় খুব কেয়ারিং ছিলি। একবার দেশের বাইরে গিয়েছিলাম তোকে নিয়ে। তোর বাবা, আমি আর দিশা। হৃদিকে নিয়ে যাইনি তখন। দিশা তো বিদেশের খাবার মুখেই তুলতে পারছিলো না। তারপর ওর জন্য ভাতের ব্যবস্থা করা হলো। মোটা চালের ভাতগুলোও ওর মুখে রোচে না। তখন তুই জোর করে সেগুলো ওকে খাইয়েছিস৷ তখন তোর বয়স দেড় কি দুই বছর। দিশাকে সেদিন ভরপেট না খাইয়ে তুই ছাড়িসনি।”
“ছোটফুফিকে আমরা ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতাম, তাই না মা?” নাকীব বললো।
“হুম। ও একেবারে অন্যধাচের একটা মানুষ। ওকে সবাই ভালোবাসে।”
“হুম।”

বাবা এলেন চার বাটি নুডলস নিয়ে। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, “বাবা, এসবের মানে কি? আমরা থাকতে তুমি কেন?”
“আমি নাকি কোনো কাজ করি না, তোর মায়ের অভিযোগ।”
“ধুর বাবা! এসব ধরতে হয়? মা তো কতকিছুই বলে।” আমি বললাম।
“তাও বানালাম৷ দেখি খেয়ে বল কেমন হয়েছে?”

আমি ও নাকীব দ্রুত নুডলস মুখে দিলাম। খেতে খেতে বললাম, “অসাধারণ হয়েছে বাবা।”
বাবা মাকে বললেন, “তুমিও খেয়ে দেখবে নাকি?”
মা ধীরে ধীরে উঠে বসলেন। বসতে বসতে বললেন,
“খেয়েই দেখি, তোমার হাতের রান্না।”

মায়ের দিকে একটা বাটি এগিয়ে দিলাম। বাবাও নিলেন একটা৷ বাটির দিকে তাকিয়ে বাবা বললেন,
“আজ প্রথম খাচ্ছো নাকি আমার রান্না? আগে কত করেছি না!”
“তা তো বটেই। অনেকদিন পর আবার খাচ্ছি। ভালোই হয়েছে। এজন্য মাঝেমধ্যে রোগে পড়া ভালো। অচেনা স্বাদের রান্না খাওয়া যায়। নিজের হাতের রান্না খেতে খেতে মুখে বিতৃষ্ণা এসে গেল।”

মায়ের কথাটা শুনে কেন যেন খুব খারাপ লাগলো। বললাম,
“মা, আজ থেকে তাহলে সব রান্না আমিই করবো।”
”রোজ তো আর করতে পারবি না। তোর তো হাজারটা কাজ।”
“শ্বশুরবাড়িতে হলে কি করতে হতো না মা? শত কাজ থাকলেও তো আগে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির খাবার তৈরি করে দিতে হবে। অন্যের বাবা-মায়ের জন্য খাটতে পারলে নিজের বাবা-মায়ের জন্য খাটবো না কেন? পেলেপুষে বড় করবে তোমরা আর খাটবো অন্যের জন্য? এ বড় অন্যায় মা। আগে তোমাদের জন্য খাটবো পরে অন্যদের জন্য।”
“তুই অনেককিছু বুঝতে শিখে গেছিস হৃদি। এতদিন ভাবতাম, তুই কোনোকালেই আমার কষ্ট বুঝবি না। তোর বুদ্ধিশুদ্ধিও কোনোকালে হবে না। ছোটকাল থেকে তুই বড্ড একচোখা ছিলি। ন্যায়-অন্যায় সবকিছুতে তুই বাবার সাপোর্টে থাকতি। আমি ঠিক না ভুল তা জানারও চেষ্টা করতি না কখনো। ইদানিং তোকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে।”
“এতবছর তো কুরআন-হাদীস ধরিনি মা। তাই মায়ের মর্মটাও বুঝিনি। এখন পড়ছি, জানছি আর তাই মানছিও। আচ্ছা আমি এখন উঠলাম। রান্না বসাই। নাকীব কি যাবি আমার সাথে?”

নাকীব তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে বললো, “চলো যাই।”
এই হলো আমার মিষ্টি ভাই। ইচ্ছে করছে গালটা একটু টেনে দিই। মনে মনে একটা চুমু খেলাম ওর গোলাকার নরম গালটায়। উম্মাহ! এই যাহ! ব্যাপারটা ধরে ফেললো কিনা কে জানে? ও তো আবার আমার মনের কথা আগেই বুঝে যায়। আমি ওর দিকে তাকাতেই দেখি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চট করে চোখ সরিয়ে নিলাম। ও বললো,
“গালটা টেনে দিলেই তো হয়৷ অশ্লীল চিন্তা করার কি আছে?”

গালে আস্তে একটা চড় মেরে বললাম,
“অশ্লীল চিন্তা কবে করলাম? যা সামনে সামনে হাঁট।”
ও ভেংচি দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।

আমি যা যা রান্না করবো তার সরঞ্জামগুলো সাজিয়ে নিচ্ছিলাম। নাকীব বললো, “আমার কাজ কি?”
“তোর কাজ হলো কাটাকুটি। তুই পেঁয়াজ, টমেটো, রসুন, মরিচ, ধনেপাতা এগুলো রেডি কর। আগে পেঁয়াজ, রসুন ছিলে ফেলবি। এরপর সব একসাথে ধুঁয়ে কাটাকুটি স্টার্ট… বুঝলি?”
“হুম বুঝলাম। বাট রান্না করবেটা কি?”
“বাবার পছন্দ হলো যেকোনো ধরণের সবজি আর ডাল। আর এখানে বাঁধাকপি দেখা যাচ্ছে। সো, বাঁধাকপির সবজি হবে। আর ভর্তা পছন্দ বাবার। ভর্তাও করা যাবে। বাট মায়ের পছন্দ কি?”
“মায়ের…? উমম! মা তো…”

আমরা অনেকক্ষণ ভেবেও মায়ের পছন্দের কোনো আইটেম পেলাম না। আশ্চর্যের ব্যাপার না! এতবছর একই ছাদের নিচে থেকে, একই সংসারে থেকে মায়ের কি পছন্দ সেটাই আমরা জানি না? বাধ্য হয়ে আমরা প্রথমে বাবার কাছে গেলাম। বাবাও জানে না মায়ের পছন্দের খাবার কি। কি আর করা? এরপর মায়ের কাছ থেকে জানতে গেলাম।
মা জানালো, “আমি সবই খাই, পছন্দ-অপছন্দ নেই আমার।”
“মা, এভাবে বললে তো হবে না। এক্সাক্ট খাবারের নাম বলতে হবে।”
“আহা! জানি না তো। বিরক্ত করিস না। তোর হাতের খাবারই আমার পছন্দের, যা।”

মন খারাপ করে চলে এলাম। মা ইচ্ছে করেই বলেনি। অভিমান করেছে আমাদের উপর। কেন আমরা তার পছন্দ জানি না এজন্য নাকি সংসারে অন্যদের পছন্দ দেখতে গিয়ে নিজের পছন্দ বিলীন হয়েছে এজন্য? নাকি আমাদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে ভাবতে ভাবতে মা নিজের পছন্দই ভুলে গেছে? যাইহোক, আমরা অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, মা ‘ডিমের ঝোল তরকারি’ খেতে পছন্দ করে। স্মৃতির পাতায় ভর করে অতীতের অহরহ ডাইনিং টেবিল থেকে ঘুরে এলাম। কোন্ খাবার দেখলে মা অতিরিক্ত ভাত খেতো, কোন্ খাবার রান্না হলে মায়ের চোখমুখ খুশিতে ভরে উঠতো? অবশেষে পেলাম একটা খাবার। সিদ্ধান্ত নিলাম সেটাই রান্না করার।

মায়েরা আমাদের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দেয় বলে আমরা ভাবি তাদের কোনো পছন্দ নেই। ছোটবেলা থেকে মুরগীর সবচেয়ে বড় পিসটা আমাদের পাতে তুলে দেন বলে ভাবি, মা ওটা খায় না। সবচেয়ে ভালো তরকারিগুলো খেতে দেন বলে ভাবি, মায়ের বাসি তরকারি পছন্দ। অথচ আমরা একবারও তাদের সেক্রিফাইজটা বোঝার চেষ্টা করি না। জীবনের এই পর্যায়ে এসে মনে হলো, আমি মাকে অনেক ভুল বুঝেছি। এতদিন যাবৎ আমি ভুলের মধ্যে ছিলাম। আমার ধারণা ছিল, মা আমার চেয়েও বেশি নাকীবকে ভালোবাসে। আসলে তো তা না। সন্তান হলো দুটো চোখের মতো। একটাকে বেশি অন্যটাকে কম ভালোবাসা সম্ভব না। আমরা দুটি চোখকেই যেমন সমান ভালোবাসি তেমনই মায়েরাও সন্তানদেরকে সেই চোখজোড়ার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। পেপার পত্রিকায় কত পড়েছি, সন্তানের জন্য কিডনি দিতেও মা পিছপা হননা। সন্তানকে ভালো রাখতে নিজের কোনো অঙ্গ কাটতে হলেও মা’রাই এগিয়ে থাকেন। তাই তো ইসলামে মায়ের সম্মান এত বেশি৷
মা-বাবার অধিকার সম্পর্কে হাদিসে বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বলেন ‘তোমার মা।’ সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার বাবা।’ [১]

আমি রান্নার সরঞ্জাম গোছাতে ব্যস্ত তখনও। নাকীব দেখি ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম,
“কিরে ছেলে হয়েও কাঁদছিস তুই? কি বোকা!”

নাকীব রাগী চোখে তাকালো আমার দিকে। শব্দ করে ছুরিটা রাখলো কাটার বোর্ডে। আমি আবার হেসে ফেললাম।
“পেঁয়াজ বাদে বাকিগুলো কেটে দে। বাঁধাকপিটা কাট আগে।”
ও ঘনঘন চোখ মুছতে মুছতে বাঁধাকপি টেনে নিলো। ওর হাত ধরে আমার দিকে ফিরিয়ে বললাম,
“বাইরে থেকে ঘুরে আয়, যা। চোখ জ্বালা কমলে তারপর আসিস।”
“আমি ঠিক আছি আপু।”

আমি ওড়না দিয়ে ওর চোখে ভাপ দিয়ে দিলাম। জ্বালা কিছুটা কমার পর ও চোখ কচলে বললো,
“আচ্ছা আপু, আমরা এত দ্রুত বড় হয়ে যাই কেন? এখন আর ইচ্ছে হলেও তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি না।”

কথাটা বলে একমুহূর্তও দাঁড়ালো না নাকীব। চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে চলে গেল। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবতে বসলাম ওর কথাটা। ছোটবেলায় যখনই দুঃখ পেয়েছে তখনই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। আমি নিজের ওড়না দিয়ে সযত্নে ওর অশ্রু মুছিয়ে ওকে শান্ত করেছি। অথচ এখন লম্বায় ও আমাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ওর চোখ মুছে দিতে হলে ওকে আমার সামনে নিচু হতে হয়। এখন বরং আমার অশ্রুগুলোই ও ভালো মুছতে পারে। আমার দুঃখও লাঘব করে এই ছেলেটাই। ছোটবেলায় যে ছেলেটা একটা বিমান উড়ে গেলে সেটা দেখতে আমার কোলে লাফিয়ে উঠতো, বিমান না দেখতে পেলে আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে বুক ভাসাতো সেই ছেলেটাকেই আজ চাইলে আর জড়িয়ে ধরতে পারি না। আসলেই তো আমরা এত তাড়াতাড়ি বড় হই কেন? কি ফায়দা আছে বড় হওয়ায়? কেবলই সম্পর্কগুলোর মাঝে দুরত্ব বেড়ে যায়। হুট করে আমারও খুব ইচ্ছে হলো ছোটবেলার মতো নাকীবকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ওর দুঃখ লাঘব করার, সাথে নিজেরও।

রেফারেন্স:
[১] সহীহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৭১

#Be_continued_In_Sha_Allah ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here