তোর অপেক্ষায় পর্ব-১৯

0
420

#তোর_অপেক্ষায়
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_১৯

সন্ধ্যায় সুহানা আপুর রুমে বসে গল্প করছি আর মুঠোয় মুঠোয় ভর্তি করে চানাচুর খাচ্ছি। সাধারণত আমাদের গল্পের বিষয়বস্তু থাকে ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া নানা গুরুত্বপূর্ণ অথবা হাস্যকর ঘটনা।এছাড়াও এলাকায় কোন কোন ছেলেমেয়ে গুলো প্রেমে পড়ছে,কারা ছ্যাঁকা খাচ্ছে এসব নিয়েও মাঝেমধ্যে গবেষণা করি।দুবোন একসাথে থাকলে যা হয় আরকি।
গল্পের একপর্যায়ে আমার ফোন বেজে উঠল।ফোনটা সুহানা আপুর টেবিলে জ্বলজ্বল করছে।কল রিসিভ করব কি করব না কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম।যদি দুর্জয় ভাইয়া হয় তাহলে আপুর সামনে কিভাবে কথা বলব।দুর্জয় ভাইয়াকে নিয়ে সবসময় তটস্থ থাকতে হয় আমায়।কখন কি বলে বসেন ঠিক নেই।
সুহানা আপু আমাকে তাড়া দিয়ে বলল,
‘ কিরে ফোনটা বেজে চলেছে কখন থেকে দেখ কে কল দিচ্ছে।’

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গেলাম টেবিলের কাছে।ফোন হাতে নিতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দুর্জয় ভাইয়া নয় কল করেছে আমার ক্লাসমেট হিমু।

‘ হ্যালো হিমু!’

ফোনের অপর পাশ থেকে চটপটে গলার উত্তর আসলো,
‘ ডিয়ার পূর্ণী তুই এবং তোর মাথা কেমন আছে এখন?হসপিটাল থেকে কখন আসলি?’

‘ সকালে এসেছি।এক মিনিট! তুই এবং তোর মাথা এটা আবার কেমন কথা?’

‘ ভুল বলেছি কিছু?তোর মাথা তোকে ত্রিশ দিনের মধ্যে পনেরো দিনও ভালো থাকতে দেয় না।গতকাল তো তোকে হসপিটাল পর্যন্ত নিয়ে গেছে।মাথার চক্করে তুই খামচে আমার হাতের অর্ধেক মাংস তুলে ফেলেছিস।ভালো মানুষ বলে আমি চুপ করে ছিলাম।শোন কেটে ফেলে দে এই জঞ্জাল মাথা।দেখবি আর কোনো ব্যথা নেই।না থাকবে বাঁশ,না বাজবে বাঁশরি। ‘

এইসব কথা শুনে হু হা করে হাসতে ইচ্ছে করছে আমার।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে ছটফটে মেয়ে হিসেবে বিখ্যাত হিমু।ফোনে হউক,সরাসরি হউক বকবক করতে করতে হাড়মজ্জা জ্বালিয়ে ফেলে।তবে ওকে ছাড়া কোনোকিছুই জমে না এটা সবাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।আর হিমুও এই বিষয়টার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় আমাদের অদ্ভুদ অদ্ভুদ ব্ল্যাকমেইল করে বসে।

‘ এই আমার মাথা নিয়ে আমাকে ভাবতে দে।এখন বল এই অসময়ে ফোন দিয়েছিস কেনো?’

হিমু অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
‘ বলিস কি?এটা অসময় নাকি?এখন তো দেখি তোকে ফোন করার সময় আমাকে গ্রহ-নক্ষত্র হিসাব করে রাখতে হবে?যাই হোক কাজের কথায় আসি।আজ তো তুই ক্লাসে আসিসনি তাই আইটেম বোম্বের মত খবরটাও জানিস না।’

‘ সেটা কি?’

‘ আসছে শুক্রবার সেকেন্ড ইয়ার স্টুডেন্টদের নিয়ে ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান পাকাপাকি ভাবে রেডি।আজ ক্লাসে এনাউন্সমেন্ট হয়েছে।পিকনিক স্পট পতেঙ্গা সী বিচ।আমরা কিন্তু এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছি।টেনশন হচ্ছে তোকে নিয়ে।আশা করি তোর মাথা এই কয়েকদিনের ভেতর আর কোনো সমস্যা করবে না।’

পিকনিকের নাম শুনে ক্ষণিকের জন্য খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলেও সাথে সাথেই নিভে গেলাম।অযথা খুশি হয়ে কি লাভ আমাকে কি বাসা থেকে পারমিশন দেবে?পিকনিকে যাওয়ার নাম শুনে মায়ের রিয়্যাকশন কেমন হবে সেটা কল্পনা করতেই কষ্টে হৃদয় আমার খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে।
আমতাআমতা করে নিজের বক্তব্য পেশ করলাম,
‘ ইয়ে..আমি কি যেতে পারব মানে বুঝতেই পারছিস বাসা থেকে যেতে দেবে কি না সেটা নিয়ে…’

আমাকে থামিয়ে হিমু প্রতিবাদ করে উঠল।
‘ আরে ওই স্মৃতিশক্তি হারানো মহিলা ভুলে গেছিস দুদিন আগেও তো আমরা পিকনিক নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করে রেখেছিলাম।এখন যদি এই কথা বলিস তাহলে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।এত ভয় পাচ্ছিস কেনো তুই?অসুস্থতার ভয় নিয়ে এভাবে কতদিন বসে থাকবি ঘরে?’

‘ তুই বুঝতে পারছিস না..’

‘ পারছি।তোর বাড়ির লোক তোকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করে এটাই তো!শোন আমরা দূরে কোথাও যাচ্ছি না।শহরের ভেতরেই।আমরা সবাই থাকব তোর সাথে।এটাই আন্টি আঙ্কেলকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলবি।দেখ্ রোগ-বালাই তো সব মানুষেরই থাকে তাই না! এজন্য কি নিজেকে এভাবে চারদেয়ালে আটকে রাখবি?প্লিজ ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করে ফেল অন্তত আমাদের জন্য।’

‘ ঠিক আছে ঠিক আছে।আমি রাজি করাবো।’

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কল কাটলাম।একদিক দিয়ে হিমুর কথাগুলো সত্যি বলে মনে হচ্ছে। অসুস্থতার জন্য এভাবে আনন্দ নষ্ট করার মানে হয় না।আর এখন তো আমি অসুস্থ নই। খাওয়াদাওয়া, হাঁটাচলা সবই ঠিকঠাক।

‘ এই পূর্ণী তোর মুখ শুকনো লাগছে কেনো?কে ফোন দিয়েছে আর কোথায় যাওয়ার কথা বলছিস?’

সুহানা আপুর ডাকে হুঁশ ফিরল।আপু উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।এই দুঃখের সময়ে আপু কিছুটা ভরসা।দুজন একসাথে বাড়ির সবাইকে রাজি করানোর লক্ষ্যে নামতে হবে।
আপুকে সব খুলে বলতে আমাকে আশ্বস্ত করে বলল,
‘ টেনশন নিস না। সবাই রাজি হবে।’

‘ কিন্তু কিভাবে?বাড়িতে তো একজন দুজন মানুষ নয়।দেখা গেল একজন রাজি হবে তো আরেকজন বেঁকে বসে থাকবে।শেষ পর্যন্ত আমার যাওয়াই হবে না।’

‘ চিল সিস্টার।আমার কাছে অসাধারণ একটা প্ল্যান আছে।কিন্তু…আরিয়ান খান দুর্জয় কি যেতে দেবে তোমায়?’

হঠাৎ আপুর মুখে দুর্জয় ভাইয়ার নাম শুনে স্থির হয়ে গেলাম।আপু মিটিমিটি হাসছে আমাকে দেখে।এই যাহ্ আপু বুঝি সব জেনে গেল!
অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
‘ এখানে আবার দুর্জয় ভাইয়া কিভাবে..কোত্থেকে আসলো?’

‘ যেখানে দুর্জয় ভাইয়ার প্রিয়তমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে দুর্জয় ভাইয়া না এসে পারে?’

এবার লজ্জার মহাসমুদ্রে ডুবে গেলাম।অসহায় মুখে ডানেবামে তাকাতে লাগলাম।ছুটে পালিয়েও যেতে পারছি না।
আপু আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বলল,
‘ হয়েছে এত অস্থির হবার কিছু নেই।আমি আর অহনা আপু সবকিছুই টের পেয়ে গেছি।তোর প্রতি দুর্জয় ভাইয়ার রাগ,ধমক,যত্ন এসব স্পষ্ট জানান দেয় ভাইয়া কতটা সিরিয়াস তোকে নিয়ে।কিন্তু ভাইয়ার প্রতি তোর অনুভূতি কি?’

মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে হাসলাম আমি।
‘ জানি নাহ্।এখনো কিছুই বলিনি উনাকে।’

‘ ওলে বাবা!তুমি না বললেও তোমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে একটা ছোট বাচ্চাও বুঝে যাবে তুমি দুর্জয় ভাইয়াকে কতটা..’

‘ আহ্ আপু বাদ দাও না।এখন তোমার প্ল্যান টা বলো।পিকনিকে যাওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে দাও।’

‘ আচ্ছা আচ্ছা আর লজ্জায় ফেলব না তোকে।কাছে আয় বলছি।’

________________________

দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে আছি হাত-পা গুটিয়ে।বাইরে থেকে মায়ের ক্ষুব্ধ কন্ঠের আওয়াজ ভেসে আসছে।কিছুক্ষণ পরপর দরজায় করাঘাত হচ্ছে দুমদুম করে।তবুও নড়ছি না আমি।গত দুইদিন থেকে মায়ের সাথে কথাবার্তা টোটালি বন্ধ আর সকাল দুপুর খাওয়ার সময় দরজা আটকে সবাইকে প্রচুর যন্ত্রণা দিয়ে আসছি।সুহানা আপুর অসাধারণ বুদ্ধি এটাই ছিল।যদিও আমার পছন্দ হয়নি কিন্তু অন্য কোনো উপায় না পেয়ে এই রাস্তাই বেছে নিয়েছি।
মাকে যখন প্রথম পিকনিকে যাওয়ার কথা বলেছি সাথে সাথেই উত্তর এসেছে ‘না’।আমি একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে অনবরত চিল্লিয়ে গেছি,কান্নাকাটি করার অভিনয়ও করেছি খুব।এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি উল্টো আমার গলার তেরোটা বেজে গেছে।তবে দরজা আটকে রুমে বসে থেকেও আশার আলো তেমন দেখতে পাচ্ছি না। সুহানা আপু আমাকে মেসেঞ্জারে বলে যাচ্ছে চালিয়ে যা দেখবি কাজ হয়ে গেছে।অগত্যা তাই করছি।

বাইরে থেকে মা রাগত স্বরে বলল,
‘ তুই কি দরজা খুলবি পূর্ণী?প্রত্যেক বেলায় বেলায় এসব কি নাটক?আমি তো একবার বলেছি তোকে আমি যেতে দেব না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে এখনো মেয়ের পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি।দেখ্ পূর্ণী আমাকে রাগাস না!এক মিনিটের মধ্যে দরজা না খুললে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।’

আমি তাড়াতাড়ি মোবাইলে সময় দেখলাম।একমিনিটের মধ্যে দরজা না খুললে কি হতে পারে সেটা দেখার খুব ইচ্ছে আমার।
এক মিনিটের জায়গায় দু’মিনিট শেষ হয়ে গেল।দরজার ওপাশ এখন চুপচাপ।আমি তো ভাবলাম বোম মেরে দরজা বোধ হয় উড়িয়ে দেওয়া হবে।সেরকম তো কিছুই হলো না।
কিছুক্ষণ পায়চারি করে সুহানা আপুকে কল দিলাম।দুবার রিং হওয়ার পর তিনবারে রিসিভ করল আপু।

‘ হ্যাঁ পূর্ণী বল্!’

আপুর ঘুমঘুম কন্ঠস্বর শুনে হতাশ হয়ে গেলাম।আমি টানটান উত্তেজনার মধ্যে সময় পার করছি আর আপু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে!
হতাশা ঝেড়ে ফেলে বললাম,
‘ ব্যাপার কি আপু! মা এতক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করল কিন্তু এখন সব চুপচাপ। দেখো তো গিয়ে কাহিনি কি!’

‘ আচ্ছা আচ্ছা অপেক্ষা কর।আমি দৌড়ে যাব দৌড়ে আসব।’

‘ অপেক্ষা করতে করতে আমার বেহাল দশা হয়ে যাচ্ছে। যা করার তাড়াতাড়ি করো।’

ফোন কেটে আবারো পায়চারি শুরু করলাম।শেষ পর্যন্ত কি আমার ট্যুরে যাওয়া হবে?
দশমিনিটের মাথায় বাইরে থেকে দুর্জয় ভাইয়ার গলা শুনে থমকে গেলাম।আমি কি ভুল শুনলাম?উনি এই সময় বাসায় কেনো আসবেন?মস্ত একটা ঢোক গিলে দরজায় কান পেতে রইলাম।এই তো স্পষ্ট দুর্জয় ভাইয়ার আওয়াজ।সাথে মায়ের কথাও শুনতে পাচ্ছি কিন্তু ওরা কি বলছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।বোধহয় দরজা থেকে বেশখানিকটা দূরে।
উৎকন্ঠা নিয়ে কতক্ষণ দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলাম।এই বুঝি দুর্জয় ভাইয়া এসে দরজা খোলার জন্য ধমক দেওয়া শুরু করবে।কিন্তু না এমন কিছুই হলো না।এখন তো বাইরে থেকে কারোরই আওয়াজ পাচ্ছি না।কি ব্যাপার সবাই আমাকে বেকুব বানিয়ে কোথায় সটকে পড়ল?ঝামেলার দেখি শেষ নেই।উনি আবার কোন ঝামেলার সূত্রপাত ঘটাতে হাজির হয়েছেন কে জানে!

এবার অনেকটা কৌতূহল বশত আস্তে করে দরজা খুলে উঁকি মারলাম।কেউ নেই।দরজা থেকে সিড়ি পর্যন্ত শুনশান নীরবতা।পা টিপে টিপে একটু আগাতেই কোথা থেকে সুহানা আপু এসে হাজির।তাড়া দিয়ে বলল,
‘ চল আমার রুমে।কথা আছে।’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আপু একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেল।আপুর রুমে যেতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। আপুর বেডে আয়েশ করে বসে আছেন দুর্জয় ভাইয়া।উনার পূর্ণ স্থির দৃষ্টি এখন আমার দিকে।উনি বেড থেকে উঠে বসতেই সুহানা আপু সুড়সুড় করে বেরিয়ে গেল।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
‘ আপনি এখানে কেনো?’

দুর্জয় ভাইয়া দুহাত পকেটে রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।ঘরের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
‘ তোর তারিফ করতে এসেছি।’

আমি কথার মানে বুঝতে না পেরে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম।উনি বললেন,
‘ দরজা বন্ধ করে খাওয়াদাওয়া না করে বাড়ির সবাইকে পটিয়ে ফেলবি পিকনিকে যাওয়ার জন্য! জবরদস্ত প্ল্যান তোর।’

আমি এবার ভাব নিয়ে বললাম,
‘ ও এই ব্যাপার।তবে ঠিকই বলেছেন আপনি।দেখবেন আমার প্ল্যান অবশ্যই কাজ করবে।হাতে মাত্র তিনদিন সময়। এই তিনদিনে কাজের কাজ হয়ে যাবে।’

‘ বাহ্ বাড়ির লোককে পটানোর জন্য কত আগ্রহ কত আকাঙ্ক্ষা।আর আমি?আমার থেকে পারমিশন নিয়েছিস?’

এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলাম।আমার কি উচিত ছিল উনাকে জিজ্ঞেস করা?
গলা পরিষ্কার করে বললাম,
‘ আচ্ছা ধরুন আমি পারমিশন চাইলাম।আপনি কি পারমিশন দেবেন?’

‘ না।’

দুর্জয় ভাইয়ার উত্তর শুনে রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠল আমার।এভাবে মুখের উপর না করে দিল।আমিও কি বলদ উনার কাছে গেছি পারমিশন চাইতে।উনার পারমিশনের তোয়াক্কা করি না আমি।
চোখমুখ শক্ত করে বললাম,
‘ না করবেন জানি এজন্যই আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি।শুনুন আমি বাড়ির সবাইকে রাজি করিয়ে ছাড়ব এবং পিকনিকেও যাব।’

‘ সবাইকে রাজি করালেই হয়ে গেল?আমি না চাইলে তুই এক পাও বাড়ির বাইরে রাখতে পারবি না।গতকাল হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরলি।দুদিন যেতে না যেতেই নাচানাচি করছিস পিকনিকে যাওয়ার জন্য? যেতে ইচ্ছে করলে আমি নিয়ে যাব তোকে।কোথায় যেতে চাস বল একবার।’

দুর্জয় ভাইয়ার কথা শুনে রাগে আমার শরীর কাঁপতে লাগল।উনাকে কিছু বলি না তাই বলে আমার লাইফে এসে সবকিছু নিয়ে জোর খাটাতে শুরু করবে?আমি কি উনার বিয়ে করা বউ যে যখন যা বলবে সেটাই মাথা পেতে মেনে নেব?বিয়ে করা বউ হলেও তো এভাবে মানব না কখনো।আমার কি নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা বলে কিছু নেই!
দুর্জয় ভাইয়ার সামনে আঙুল উঁচিয়ে বলে উঠলাম,

‘ আপনি যখন তখন আমার উপর যেকোনো অর্ডার চাপিয়ে দেবেন এটা আমি সহ্য করব না।দয়া করে এই কথাটা মাথায় রাখবেন।আর আমি আপনার সাথে যেতে চাই না।আমি আমার বন্ধুদের সাথে যেতে চাই।আপনি না বলেছেন আপনি আমাকে হাসিখুশি দেখতে চান সবসময়! আমি আপনার সাথে না গিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে পিকনিকে গেলে বেশি হাসিখুশি থাকব। তাহলে কেনো বাঁধা দিচ্ছেন আমায়?আরেকটা কথা।আমি দরজা বন্ধ করে বসে আছি এই কথা মা আপনাকে বলেছে?মা আপনাকে কল করে আসতে বলেছে তাই না?আসতে বলেছে বলে চলে আসবেন?এসেই নিজের মনমতো আমার উপর জোর খাটাতে শুরু করে দিলেন!কিন্তু স্যরি আমি এই মুহূর্তে আপনার জোর খাটানো মেনে নিতে পারছি না।’

একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলাম।দুর্জয় ভাইয়া শীতন চাহনি দিয়ে তাকিয়ে রইলেন।উনার চোখে রাগ বা বিস্ময় কোনটা খেলা করছে বুঝতে পারছি না।আমি জোরে জোরে শ্বাস ফেলছি।রাগ এখনো কমেনি আমার।
কয়েক মিনিট নীরবতার পর দুর্জয় ভাইয়া শান্ত কন্ঠে বললেন,

‘ তুই যেটাতে খুশি থাকিস সেটাই হবে।আর দরজা আটকে বসে থাকতে হবে না।আমি নিজে খালামণিকে বলব পিকনিকে যাওয়ার ব্যাপারে।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি খালামণিকে রাজি করিয়ে দেব।হ্যাপি?’

দুর্জয় ভাইয়া ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে রাখলেন।আমি অবাক হয়ে দেখছি উনাকে।মনের সমস্ত রাগ হঠাৎ কোথায় উবে গেল।এতক্ষণ রাগের বশে উনাকে কতগুলো জঘন্য শুনিয়েছি তার বদলে এত শান্ত থাকছেন কিভাবে?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here