তোর অপেক্ষায় পর্ব-২১

0
448

#তোর_অপেক্ষায়
#সামান্তা_সিমি
#পর্ব_২১

কোনো এক ঝড়ের রাতে অজানা এবং না দেখা এক আগন্তুক আমার বারান্দায় উঠে এসেছিল।লোকটি বলেছিল তাঁর পেছনে নাকি পুলিশ লেগেছে।চেহারা ঢাকা ছিল বলে ওই লোকটার মুখ দেখতে পাইনি।প্রচন্ড ভয় কাবু করে ফেলেছিল তখন।আমার সামনে এই মুহূর্তে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি দেখে সেই রাতের কথা স্মরণ হচ্ছে। পার্থক্য শুধু সেদিন বৃষ্টি ছিল আজ বৃষ্টি নেই।তবে ভয়ের কারণে বুক ঢিপঢিপ করছে অথচ মনোবল হারাচ্ছি না।কারণ আমি জানতে চাই কে এই লোক এবং আমার বারান্দা উনার কেনো এত পছন্দ যে প্রত্যেকবার এখানেই উঠে আসতে হবে?
আগে যেমন কালো কোট পরা অবস্থায় দেখেছি আজও তেমনি।খুব জানতে ইচ্ছে করছে উনার কি এই কোট ছাড়া আর কোনো জামা কাপড় নেই!অবশ্য পুলিশের নজর থেকে পালানো কোনো মানুষের জামাকাপড় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ভালো দেখায় না।এই লোকটারও বোধ হয় একই অবস্থা।

লোকটা এখনো আমার থেকে কয়েকহাত দূরে।আমার চেহারায় ভয়ের চিহ্ন না দেখে ভড়কে গেছে নিশ্চয়ই। কিছুটা ঝাঁঝের সুরে বললাম,

‘ আপনি আবার এসেছেন?এত লম্বা দেওয়াল টপকে উঠে আসেন কিভাবে বুঝি না।পুলিশের হাত থেকে পালানোর পেশায় কত বছর ধরে আছেন?’

ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।দূর থেকে ভেসে আসা কুকুরের ঘেউ ঘেউ ছাড়া চারদিকেও আর কোনো আওয়াজ নেই।
আমি আবার বলে উঠলাম,
‘ বোধ হয় আপনি কথা বলতে পারেন না।কিন্তু আমি একটাই কথা বলতে চাই, এলাকায় এত বাড়িঘর থাকতে আপনি এখানে কেনো আসেন?এটা কি গা ঢাকা দেওয়ার জায়গা হিসেবে পারফেক্ট?আমার তো তা মনে হয় না।চোর ডাকাতেরা কবে থেকে এত নির্বোধ হলো?’

এটুকু বলেই থামলাম।দুর্জয় ভাইয়ার উপর জমানো রাগ এই ব্যক্তির উপর ঝেড়ে দিয়েছি।কিন্তু এখনো আমার মন শান্ত হতে পারছে না।
আগন্তুক এবার দুপা সামনে এগিয়ে আসলো।রুম থেকে তীর্যকভাবে আসা টেবিল ল্যাম্পের আলোয় দুর্জয় ভাইয়াকে দেখে বিষম খেলাম।দু তিনবার চোখের পাতা ফেলে পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করলাম সামনের মানুষটা আমার স্বপ্ন নাকি বাস্তব।রাত-বিরেতে এমন নিখুঁত স্বপ্ন দেখার মত পাগল তো হইনি এখনো। এই ব্যক্তিটি তাহলে সত্যিই দুর্জয় ভাইয়া যিনি এখন চেহারায় হাজারো বিরক্তি ধরে রেখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
বিস্ফারিত নয়নে বললাম,

‘ আপনি এখানে?আপনি তো বলেছেন আসবেন না।এসেই যখন পড়েছেন তখন এভাবে চোরের মত…’

হঠাৎই মনে পড়ল সেদিন ঝড় বৃষ্টির রাতে কালো কোট পড়া ব্যক্তিটিও কি উনিই ছিলেন?
আমার সন্দেহজনক দৃষ্টি লক্ষ্য করে দুর্জয় ভাইয়া বলে উঠলেন,

‘ হ্যাঁ ওই রাতে আমিই এসেছিলাম তোর বারান্দায়। আজও আমিই।’

স্থির ভাবে তাকালাম উনার দিকে।মাথায় একটা সূক্ষ্ণ রাগের উৎপত্তি হচ্ছে। দাঁতে দাঁত ঘষেও রাগ কন্ট্রোলে আনার চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না।
চাপা গর্জন করে বললাম,
‘ এসব কি নাটক হ্যাঁ?প্রথম দিন আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম জানেন?আজও ভয় দেখাতে এসেছেন তাই না?প্রতিশোধ নিতে এমন করছেন তাই তো?দুপুরের কথাগুলোর জন্য এখনো রাগে ফুঁসছেন।কিছুক্ষণ আগে আপনাকে মিস করছি এটা বলার পরও আপনি ভাব দেখিয়ে ইগনোর করলেন।তাহলে আবার কেনো এসেছেন এখানে?কি চাই?’

‘ তোকে চাই।শুধুমাত্র তোকে।’

দুর্জয় ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন কথাটা।আমার নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে।উনার দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে ভস্ম করার প্রয়াস করছি কিন্তু উনি যেন এতে মজা পাচ্ছেন।মিটিমিটি হেসে আমার সামনে এসে বললেন,
‘ আমাকে সত্যিই মিস করছিলি?’

এবার আমি সম্বিত ফিরে পেলাম।রাগের মাথায় কি বলতে কি বলে ফেলেছি উনি এখন সেটা টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।আমি তো একটা কথাও বলব না আজ।এই খারাপ লোকটার ছায়াও দর্শন করব না।
যেই কথা সেই কাজ। দুহাত ভাঁজ করে অন্যদিকে তাকিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

‘ তোর ধারণা দুপুরের কথাগুলোর জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি অথবা রাগ করেছি তাইতো?ধারণাটা সত্যি কি মিথ্যে এটা জানতেই তখন ফোন দিয়েছিস তা আমি জানি।এজন্য আমিও একটু বাজিয়ে দেখলাম আমার রাগ ভাঙাতে কি কি করতে পারিস তুই।অবশেষে কিছু খুঁজে না পেয়ে চট করে বলে ফেললি মিস করছিস।এখন এই মুহূর্তেই আমাকে দেখতে চাস।’

দুর্জয় ভাইয়া মৃদুতালে হাসতে হাসতে বলছেন কথাগুলো।আমি এখনো অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে রেখেছি আর ভাবছি কতটা চতুর এই লোক।ঠিক বুঝে ফেলেছে মিস করার কথাটা আমি এমনিই বলেছি।

দুর্জয় ভাইয়া হঠাৎ আমার কোমড় চেপে উনার মুখোমুখি দাঁড় করালেন।অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আমি চোখ বড়বড় করে তাকালাম।কিছু বলার আগেই উনি হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে দুজনের মাঝখানের ফাঁকটা পূরণ করে নিলেন।এবার আমার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল।উনার এত কাছাকাছি থাকা আমার জন্য সবসময়ই বিপদজনক। মনের ভেতর টালমাটাল ঝড় বইতে থাকে শুধু।গলা শুকিয়ে পানির তেষ্টা পায় ভীষণ।কেমন যেন হাসফাস লাগে।
আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য উনার বুকে ধাক্কা দিতেই উনি চোখ রাঙালেন যা দেখে আবার নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।চোখ ছোট ছোট করে বললেন,

‘ এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রাখলে আমি কিন্তু মেরে মেরে মুখ ভেঙে দেব।খুব সাহস বেড়ে গেছে না?একটু আগে কিভাবে তেজ দেখিয়ে কথা বলছিলি ভাবতেই অবাক লাগে।আমার জায়গায় যদি সত্যিই কোনো স্ট্রেঞ্জার হত তাহলে এতক্ষণে তোকে দুচারটা ঘুষি মেরে চিঁড়াচেপটা বানিয়ে ফেলে রাখত। ‘

দুর্জয় ভাইয়ার কথায় কৌতুকের ছাপ স্পষ্ট। আমার রাগ উনার কাছে কোনো পাত্তাই পাচ্ছে না এটা দেখে কষ্টে দেয়ালে মাথা ঠুকতে মন চাইছে।উনি ইচ্ছে করেই আমাকে আরো রাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তা ভালোই বুঝতে পারছি।

‘ দেখুন আমি এই মুহূর্তে আপনার প্রতি খুবই বিরক্ত। দয়া করে দূরে গিয়ে দাঁড়ান।আপনার সংস্পর্শে আমার ফোবিয়া আছে।আচ্ছা আপনি যেহেতু আগেই বুঝতে পেরেছেন আমি মিস করার কথা এমনিই বলেছি তাহলে আসলেন কেনো?’

‘ তুই মিস করছিস না কিন্তু আমি তো মিস করছিলাম।আর তোর কাছে আসতে আমার কোনো নির্দিষ্ট কারণ লাগে না।যখন মন চাইবে তখনই আসব।ভুলে যাস কেনো তুই একান্তই আমার।’

আস্তে করে ঢোক গিললাম আমি।দুর্জয় ভাইয়ার ঘোর লাগা কন্ঠস্বর ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলছে আমায়।নিজের ভেতরের রাগটাকে ধরে রাখতে গিয়েও ব্যর্থ হচ্ছি।উনার নির্নিমেষ চোখের চাহনি বিদ্ধ করে রেখেছে আমাকে।অনিচ্ছা সত্বেও উনার থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছি না।
আমার দুগালে হাত রেখে নিচু গলায় বলে উঠলেন,

‘ তখনকার কথাগুলোর জন্য আমি একটুও কষ্ট পাইনি।তোর উপর রাগও করিনি।তুই এরচেয়েও খারাপ কিছু বললেও সেসব আমি গায়ে মাখতাম না।কারণ হিসেবে একটা কথাই বলব। যা ইচ্ছা কর আমার সাথে শুধু আমার থেকে দূরে যেতে পারবি না।এই শর্তের বাইরে গেলে তুই খুন হয়ে যাবি।আমি সব মেনে নেব কিন্তু দূরত্ব না।’

আমি মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় দুর্জয় ভাইয়ার কথা শুনে যাচ্ছি।আমার দৃষ্টি এখনো উনার উপর নিবদ্ধ। উনার দুচোখের মাতাল চাহনি জানান দিচ্ছে আমার প্রতি তাঁর ভালোবাসার গভীরতা।চুম্বকের মতো টানতে টানতে আমাকে সেই ভালোবাসার সমুদ্রে ডুবাতে চাইছে।উনার ঠোঁটের মুচকি হাসিতে ফুটে উঠছে অজস্র প্রেমের আভাস।এবারের যাত্রায় আমি বোধ হয় দুর্জয় নামের ব্যক্তিটিতে বাজেভাবে ফেঁসেই গেলাম।
মাথা নামিয়ে ফেললাম আমি।
দুর্জয় ভাইয়া কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বললেন,

‘ একবার ভালোবাসি বল না!’

আমি চমকে উঠলাম।উনার কন্ঠের আকুলতা স্পষ্ট টের পাচ্ছি। কিন্তু আমার অস্থিরতা তিনগুন বেড়ে গেছে।মনের ভেতর অনুভূতি গুলো সব জট পাকিয়ে যুদ্ধে নেমেছে।কেমন যেন অসহায় লাগছে।ভালোবাসি বলা কি এতই কঠিন?চার অক্ষরের একটা শব্দ অথচ এর গভীরতা যেন বিশাল।
দুর্জয় ভাইয়া ফিক করে হেসে ফেললেন।অবাক হয়ে তাকাতে আমার গাল টেনে বলতে লাগলেন,

‘ তুই এত সহজে ভালোবাসি বলবি না জানি আমি।আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস কিন্তু সেটা স্বীকার করতে নারাজ তাই না?ঠিক আছে আমিও অপেক্ষায় থাকি কবে তুই ধরা দিবি আমার কাছে।দেখিস বেশি দেরি করিস না কিন্তু। আমার দিকটাও একটু ভেবে দেখ।তোর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে নাস্তানাবুদ আমি!’

দুর্জয় ভাইয়ার হাসি দেখে আমিও স্বাভাবিক হয়ে আসলাম।এতক্ষণ মনে হচ্ছিল কেউ আমার গলা চেপে ধরে আছে।নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না ঠিকমতো।

ঘুমে চোখ বুজে আসছে এমন ভান ধরে বললাম,
‘ আমাকে ঘুমাতে হবে এখন।আপনি যেভাবে এসেছেন সেভাবেই আবার চলে যান।তবে সাবধান! রাস্তার পাহারাদার গুলো যেন চোর ভেবে আপনাকে ধোলাই না দেয়।যদি ধোলাই খেয়েও থাকেন তো সমস্ত দায় আপনার।’

রুমের দিকে পা বাড়াতেই দুর্জয় ভাইয়া খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন।ঘাড় ফিরিয়ে ভ্রু কুঁচকালাম আমি।
উনি ঠোঁট কামড়ে বললেন,
‘ আবারো পালাতে চাইছিস?পূর্ণতা তুই কিন্তু ভীষণ আনরোমান্টিক!ওয়েদারটা কি চমৎকার দেখ।প্রেম করার জন্য একেবারে পারফেক্ট।এই যে আমি এত কষ্ট করে আধাঘন্টার রাস্তা পনেরো মিনিটে পার হয়ে এসেছি,তোদের বাড়ির দেয়াল টপেকছি এসবের জন্য আমার পারিশ্রমিক কই?’

‘ মানে?আমি আপনাকে কি পারিশ্রমিক দেব?’

‘ দাঁড়া প্র্যাক্টিক্যালি বুঝিয়ে দিচ্ছি। ‘

দুর্জয় ভাইয়া আমার দিকে এগুতে নিলে হঠাৎ রুমের দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো।এবার আমার প্রাণপাখি উড়ে যাবার জোগাড়।ভীত সঙ্কিত হয়ে দুর্জয় ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনার কপালও কুঁচকে গেছে।

বিড়বিড় করতে করতে বললাম,
‘ আমি তো আজ খতম।নিশ্চয়ই বাড়ির কেউ আমাদের কথাবার্তা শুনে ফেলেছে।আমার এখন কি হবে দুর্জয় ভাইয়া?এতরাতে আপনাকে আমার বারান্দায় দেখলে কি হবে ভাবতে পারছেন?’

দুর্জয় ভাইয়া নিচুস্বরে ধমকে উঠে বললেন,
‘ পাগলের প্রলাপ বকছিস কেনো?যা গিয়ে দরজাটা খোল।কেউ কিছু টের পায়নি।স্বাভাবিক থাক।’

‘ টের পায়নি মানে?অন্যদিন এই সময়ে আমার রুমে কেউ আসে না।বেছে বেছে আজকেই কেনো আসবে?আপনি তাড়াতাড়ি পালান প্লিজ!’

‘ রিল্যাক্স।তুই আগে দরজা খোল যা।আমি চলে যাচ্ছি।’

আমি ঝটপট চলে এলাম রুমে।দরজা খুলতে গিয়েও আবার চলে এলাম ড্রেসিং টেবিলের সামনে।হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে চটজলদি দরজা খুলে উঁকি মারলাম।মা দাঁড়িয়ে আছে।
নিজেকে যথাসম্ভব নরমাল রেখে কৃত্রিম হাই তুলে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ মা এত রাতে? কি হয়েছে?’

মা বাইরে থেকেই কেমন যেন চিন্তিত হয়ে বলল,
‘ কিছু না।ঘুম ভেঙে গেল তাই ভাবলাম তোকে দেখে যাই।’

মায়ের অগোছালো কথাবার্তা শুনে সন্দেহ হলো।মুখটাও কেমন শুকনো লাগছে।
‘ সত্যি করে বলো তো মা কি হয়েছে?বাবার শরীর খারাপ করেছে নাকি?’

‘ তোর বাবা নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। আসলে তোর খালামণি কিছুক্ষণ আগে ফোন দিয়েছিল।বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম।ভেবেছি কোনো দুর্ঘটনা ঘটল নাকি।আপা বলল দুর্জয় নাকি বাড়িতে নেই।ফোনও ধরছে না।রাতে খেয়ে দেয়ে রুমে গেছে ঘুমাতে।এরপর অহনা নাকি কি একটা দরকারে দুর্জয়ের রুমে গিয়ে দেখে রুম ফাঁকা।সমস্ত বাড়ি খুঁজে ফেলেছে ছেলেটা কোথাও নেই।আপা তো টেনশনে অস্থির হয়ে গেছে।ফোনে কেঁদেও দিয়েছে।’

আমি কয়েক সেকেন্ডর জন্য হতভম্ব হয়ে মা’র দিকে চেয়ে রইলাম।ব্রেইন আমাকে নির্দেশ দিচ্ছে এখনই খিলখিল করে হেসে উঠ তুই পূর্ণী।বহুকষ্টে হাসি চেপে রাখলাম।কপালে চিন্তার ভাঁজ তুলে বললাম,

‘ আশ্চর্য লোক তো উনি!কাউকে না বলে কোথায় চলে গেলেন?বন্ধু বান্ধবদের সাথে যাননি তো আবার?খালামণিকে ভালো করে জিজ্ঞেস করেছো?’

‘ নারে বন্ধুদের সাথে যাবে না এতরাতে।এমন ছেলে সে নয়।যাই হোক।আমি আরেকটু পর আপাকে কল করে জিজ্ঞেস করব।তুই ঘুমিয়ে যা।ঘুম ডিস্টার্ব হলে সকালে উঠে বলবি মাথা ধরেছে।’

‘ আচ্ছা মা।’

বাধ্য মেয়ের মত মাথা নেড়ে দরজা আটকে দিলাম।মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যাচ্ছে আমার।
কোনোরকমে বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারতে দেখি দুর্জয় ভাইয়া দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন।পাশ ফিরে আমাকে এভাবে হাসতে দেখে আপাদমস্তক দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ পূর্ণতা কিরে হাসছিস কেনো?দরজায় কে নক করেছিল?’

উনার চোখেমুখে বিস্ময় যা দেখে আমার আমার হাসির বেগ আরো বেড়ে গেল।
‘ মা ছিল।আপনাকে খুঁজে না পেয়ে খালামণি বোধ হয় এতক্ষণে থানায় ডায়রী করে ফেলেছেন।তাড়াতাড়ি গিয়ে উনাদের ঠান্ডা করুন আগে।’

দুর্জয় ভাইয়া চকিতেই আমার হাসি এবং কথার অর্থ বুঝে ফেলেছে।কোট এবং জিন্সের পকেট হাতড়ে হাতড়ে বললেন,

‘ ফোনটা…শিট! ফোনটা গাড়িতে রয়ে গেছে।মা নিশ্চয়ই অনেকগুলো কল করেছে।পূর্ণতা আমি যাই এখন।কাল দেখা হবে।ক্লাস শেষে অপেক্ষা করিস।’

দুর্জয় ভাইয়া তাড়াহুড়ো করে রেলিং পেরিয়ে নিচে নেমে গেলেন।উপর থেকে মাথা ঝুকিয়ে দেখলাম উনি চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে ধীরে ধীরে মিশে গেলেন আবছা অন্ধকারে।সেদিকে তাকিয়ে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।এই লোকটা আমাকে ভালোবাসে এটা ভাবতেই মনের ভেতর দিয়ে আনন্দের স্রোত বয়ে যায়।হাজারটা ভালোলাগা ঘিরে ধরে আমাকে।একদম আলাদা একটা অনুভূতি!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here