হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে পর্ব:১৯

0
1042

উপন্যাস: হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে: চন্দ্রা।

পর্ব:১৯

*****
এমন অনেক সময় আসে যখন মানুষ মন মাঝারে সযত্নে লালন করে রাখা মানুষটিকেও চোখে হারানোর বদলে দুচোখে দেখতেও পারে না।সে সামনে আসলে অসহ্য লাগে আবার আড়ালে গেলে অধৈর্য লাগে।একটু দেখার তৃষ্ণায় মনটা খাঁ খাঁ করে।এই অসহ্য আর অধৈর্য লাগা পর্যন্ত ঠিক আছে,এর সঠিক লজিক ও হয়তো আছে কিন্তু ভুক্তভোগী ব্যক্তি যদি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয় তার আসলে- নকলে কিসের তৃষ্ণা?কি রূপে এই খাঁ খাঁ করা তৃষ্ণার নিবৃত হবে, তার আসল লজিক কে দেবে?

মেটে আলু চেনেন তো?শরৎ বাবুর পুঁই মাচার বরজ পোতার মেটে আলু।
আশেপাশের শুভাকাঙ্ক্ষী,হিতকাঙ্খী অনেকে হয়তো বোঝাবে যে তার মনের মধ্যে কে আছে কিন্তু কেউ তো আর ঐ মেটে আলুর মতো খোন্তা,কোদাল দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে চামরা, মাংস,হার পাঁজর ভেদ করে হৃদ পিণ্ডটাকে তুলে এনে,তাল শাশের মতো চোখ দুটো তুলে তাতে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবেনা হৃদয় জুড়ে আসলে কে আছে।বুক জুড়ে কিসের শুন্যতা, সমগ্র দেহ মনে কিসের এত তৃষ্ণা?
এতক্ষণ ধরে বিরূপাক্ষের কথাই বললাম।সে বিদেশ থেকে ছুটে এসেছিলো রিতিকে চিরতরে মুক্তি দিয়ে বনলতার ভালোবাসার লতায়পাতায় নিজেকে যুক্ত করে বন্দী হবে বলে। এ কদিন সেটাই বার বার ভেবেছেও তাই। অচেনা অজানা বনলতাকে দেওয়া কথা কবে পালন করতে পারবে সেই ভাবনায় বার বার নিজেকে আনমনা করেছে।একবার দেখার আশা মনে লালন করেছে কিন্তু আজ যখন সত্যিই বনলতাকে পাওয়ার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে তখন থেকেই মনের মাঝে শুধুই রিতি ঘুরছে।চোখের তারায় রিতি জ্বলছে।

রাত অনেক।দিনটা মেঘাচ্ছন্ন থাকায় রাতটা অন্যদিনের তুলনায় বেশী শীতল আজ।এই শীতেই বোধহয় শীতকালের শুরুটা হবে। মেঝেতে নিত্যরাতের মতো গুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে রিতি।ঘড়ে ঢুকেই একটা পাতলা কম্বল রিতির গায়ের উপর মেলে দিয়েছিলো বিরূপাক্ষ।তারপর পালঙ্কে পা ঝুলিয়ে বসেছে সকালে প্রাপ্ত সেই নীল খামের চিঠিখানি নিয়ে। পুরোটা পড়েছে বার দুই।হাতে ধরা চিঠি এবং খামটা, দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ যেখানে উজ্জ্বল আলোর মতো জ্বলজ্বল করছে রিতির ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখটা।

সকালে একটু দেরীতেই ঘুম ভেঙেছিলো বিরূপাক্ষের।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সামান্য প্রসাধন সামগ্রী মিশিয়ে নিচ্ছিলো গালের মসৃন ত্বকে।সুরের উচ্ছল তরঙ্গে ঘড় ভরিয়ে প্রবেশ করলো রিতি,,

রূপদা,তোমার নামে চিঠি এসেছে গো। বনলতার চিঠি।

বিরূপাক্ষের হাত থেমে যায়। বিদ্যুৎ পৃষ্ঠের মতো ঝটকা খায় দেহ।রিতির বলা কথাটা ঠিক বুঝতে পারে না।

কি হলো এতো কি ভাবছো?এই নাও তোমার বনলতা দেবীর নীল খামের পত্রখানা।

বিরূপাক্ষের ডান হাতটা টেনে চিঠিটা গুঁজে দিয়ে বলে রসিকতা করে,,চিঠিতেই এমন কাঁপা কাঁপি শুরু করলে?অন্য সময় কি করবে মান সম্মান রাখবেনা দেখছি।হি হি হি।
ঘড় ছেড়ে রিতি বেরিয়ে যেতেই হাতের দিকে নজর দেয় বিরূপাক্ষ।নীল চকচকে খামের উপর, প্রেরকের জায়গায় বনলতা নামটা স্থির হয়ে টানছে বিরূপাক্ষকে। প্রাপকের ঠিকানায় বিরূপাক্ষের এই ঠিকানাটা নামসহ।বনলতা নামটার উপর একবার নিজের আঙ্গুল ছোঁয়ায় বিরূপাক্ষ।সে এক অন্যরকম অনুভুতি।ধীরে সুস্থে খামটা খুলে দেখে নেয় লেখা গুলো, সুন্দর গোটা গোটা অক্ষরে মেয়েলী হাতের লেখা, কয়েক লাইনের লেখাগুলো ক্যামন জানি চেনা চেনা লাগে,মনের ভুল ভেবে নিজেকে আস্বস্ত করে।সম্মোধন হীন লেখা পড়তে শুরু করে শুরু থেকে,,,

কি বলে সম্বোধন করা উচিত হবে জানি না তাই বিনা সম্বোধনে শুরু করছি ক্যমন?গোবিন্দের কৃপায় সুস্থ আছেন আশা করি।
আচ্ছা আপনার কি আমার কথা মনে আছে?নাকি বিস্তৃত হয়েছেন ক্ষণকালের পরিচয়ে মারাত্মক এক অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনার কারনকে?মনে আছে কি বাদল মুখর সন্ধ্যায় অনিচ্ছায় দেওয়া কথাকে?সে কথা কি আঁধারেই বিলীন হয়েছে নাকি এখনো আমার মনের মতো আপনার মনেও দিনের আলোর মতো জ্বলজ্বল করছে?যাক সে কথা, আমি কোনো কৈফিয়ত চেয়ে ঔদ্ধত্ত্ব দেখাবো না।আমি জানি,আপনি বিদেশ থেকে উচ্চতর শিক্ষা শেষে দেশে ফিরেছেন। আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার বিন্দু বিসর্গ পর্যন্ত জানি আমি। শুধু একটিবার দেখতে চাই আপনাকে।অবশ্য যদি আপনি বিরক্ত না হন।এই টুকু অনুগ্রহ কি করবেন না?এই ক বছরে একমূহূর্তের জন্যেও আমি আপনাকে ভুলিনি।এমন কোনো বিজয়া দশমী আসেনি যেদিন আপনার চরণের উদ্দেশ্যে প্রণাম করিনি।এমন কোনো দিন,রাত আসেনি যে সিঁথিতে সিঁদুর দেইনি।এত কিছুর বিনিময়ে এইটুকু চাওয়া কি পূরণ করতে পারেন না?

অপেক্ষায় থাকবো আমি।

বিজয়া দশমীর অগ্রীম প্রণাম রইলো।ভালো থাকবেন।

প্রণামান্তে,,

বনলতা।

চিঠিটা পড়েই বিরূপাক্ষ অধীর হয়ে বার বার খামের ভেতর বাহির,চিঠির এপিঠ ওপিঠ দেখতে লাগলো কিন্তু না কোনো ঠিকানা তো দেয়নি মেয়েটা?তাহলে কি কেউ মজা করছে তার সাথে?রিতিই কি কল কাঠি নাড়ছে? চিৎকার করে ডেকে উঠলো রিতির নাম ধরে,,

কি হলো?বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন ,এভাবে ডাকলে তাঁরা ভাববে বিরূপাক্ষ ছেলেটা বিদেশে থেকে থেকে একটা বেশরম তৈরী হয়েছে।গুরুজন,ছোট জন মানেনা বৌকে ডাকে চিৎকার করে।

এই তোর বকবক বন্ধ করবি? দিন দিন সাহস বেড়েই চলেছে তাইনা?এই চিঠি তুই লিখেছিস? আমার সাথে মজা করতে চাস?

হ্যা!না মানে আমি কি তোমার প্রেমলতা?সরি বনলতা।আমি কি তোমার বনলতা যে চিঠি লিখবো?ঝাঝ মিশিয়ে বললো রিতি।
বিরূপাক্ষের ক্রোধ বাড়ে।রিতির বা হাতটা মুচড়ে পিছনে নিয়ে ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,,
চিঠিটা তোর কাছে উড়ে এলো তাইনা?নিজেই করেছিস এইসব।বল?না হলে এতদিন কোনো যোগাযোগ রাখেনি আর বাড়িতে আসতে না আসতেই সে মেয়ে চিঠি লিখলো?সব তোর বাহানা আমাকে হাতের মুঠোয় রাখার জন্য তাইনা?
হাতের ব্যাথায় চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে রিতির।

হাতটা টেনে ছাড়িয়ে নেয় কোনমতে,অশ্রু মুছে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকায় বিরূপাক্ষের হালকা রক্তিম চোখে।মুখে টেনে আনে মৃদু হাসি তারপর বিরূপাক্ষের বুকের বাপাশে নিজের ডান হাতের পাঞ্জাটা আলতো করে চেপে ধরে।হঠাৎ এমন দেখলে মনে হবে দুজনে জনম জনম ধরে এমন নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। বিরূপাক্ষ রিতির হঠাৎ পরিবর্তনের মানে বুঝতে পারে না।চোখ দুটো ছোট করে পড়তে চায় রিতির চোখের ভাষা কিন্তু সে অপারগ।
শান্ত অথচ দৃঢ় কন্ঠঝংকার শোনা যায় রিতির,,, নিজের ললাটে বা হাতের তর্জনী ঠেকিয়ে বলে,,আমার এইখানে যদি তুমি থাকো,তবে তোমার এখানটায় বিরূপাক্ষের বুকের বা পাশটা ইঙ্গিত করে,আমার আসন নিজের হাতে সযতনে তৈরী করেছেন বিধাতা। সেখানে আমিই শুধু বসবো,শুবো ,যা খুশি তাই করবো।তার জন্য কোনো ছলনার প্রয়োজন পরবেনা রিতির।

রিতির এমন দৃঢ়তায় বিরূপাক্ষ রাগ করা ভুলে অবাক হয়ে যায়।রিতি হেসে ওঠে শব্দ করে,,,
এত ভেবে চুলগুলো ফেলোনা রূপদা। তোমার বৌয়ের টেনে তোলার জন্য তো কিছু অবশিষ্ট রাখো।
হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় রিতি। বিরূপাক্ষ আরো একবার চিঠিটা মেলে ধরে দৃষ্টির সম্মুখে।
ঘুমের মধ্যে রিতি পাশ ফিরে শুতেই বিরূপাক্ষের ঘোর কাটে।রিতির গায়ের কম্বল সরে পেটের এবং পায়ের কাছে কিছু অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। বিরূপাক্ষ উঠে গিয়ে আবারো কম্বলটা ঠিক করে দিতেই রিতি উঠে বসে।চোখটা ডলে নিয়ে হাই তুলে বলে ভাবলেশহীন ভাবে,,
রূপদা এতরাত হলো এখনো ঘুমাওনি তুমি?
কি ব্যাপার বলোতো এক বৌয়ের চিঠি হাতে নিয়ে অন্য বৌয়ের শরীর দেখছো?মতলব কি তোমার?শয়তানি হাসি হেসে ভ্রু নাচায় রিতি। বিরূপাক্ষ ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।রিতির এমন লাগামহীন কথাবার্তায় অস্বস্তি বোধ করে,,

কপাল তো তোমারই রূপ দা। মানুষ একটা পায়না আর তোমার দু, দু’টো বৌ।এপাশে ফিরলে একটা ওপাশে ফিরলে একটা।দুই পাশে দুই স্ত্রী সুন্দরী,হট, আকর্ষণীয় ফিগার,আর,,,
রিতির নির্লজ্জের মতো বাক্য বানে অতি ঘৃনায় বিরূপাক্ষের মুখ দিয়ে ছিঃ কথাটা বেরিয়ে আসে।উঠে দাঁড়াতে গেলেই হ্যাচকা টানে নিজের অতি নিকটে বসিয়ে নেয়, মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে ফিসফিসিয়ে,এ্যাতো ছিঃ ছিৎকার ক্যানো করছো?দুজনে রাতের অন্ধকারে একঘড়ে কি করছি বাইরের কেউ জানে?সবাই জানে বিরূপাক্ষ রায় চৌধুরী তার বৌয়ের সাথে একঘড়ে থাকছে।কেউ কি জানে ,তার বৌয়ের পালঙ্কে ঠাঁই হয়নি? মেঝেতে ঘুমায়?
বিরূপাক্ষ হত বিহ্বল,,কি হয়েছে এই মেয়েটার।এমন ধারা কথা তো আগে শোনেনি রিতির মুখে?

এত রাগ করোনা রূপদা।ভেবে দ্যাখোতো এমন লাজ লজ্জা হীন রসিকতা তোমার সাথে কখনো করেছি? করিনি তো?স্বামী পরিত্যাক্তা তো হয়েই আছি।ডিভোর্স হয়ে গেলে তো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তখন লোকে কি বলবে জানো?
আঙুল দেখিয়ে বলবে,ঐ দ্যাখ বিরূপাক্ষ রায় চৌধুরীর প্রাক্তন স্ত্রী যায়।
আমি হবো,,,এক্স ওয়াইফ অফ বিরূপাক্ষ রায় চৌধুরী।হা হা হাহা।
স্বামীর আদর, সোহাগের ভাগ পেলাম না, কিন্তু প্রাক্তন কথাটা সম্পূর্ণ রুপে বয়ে বেড়াতে হবে।ক্যানো?ক্যানো ক্যানো ক্যানো?

কলার ঝাঁকিয়ে ছেড়ে দেয় বিরূপাক্ষকে।
কঠিন করে শাসিয়ে বলে,এত কেয়ার করতে আসবে না। মায়ায় পরে গেলে তাতে তোমারই ক্ষতি। দৌড়ে গিয়ে ওয়াশ রুমের দরজা বন্ধ করে দেয় রিতি। বিরূপাক্ষ মেঝেতে ইসলাম বসে থাকে অথর্বের মতো।বুকটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগে তার।
উঠে পা বাড়ায়।ওয়াশ রুমের দরজায় কান পাতে। সেখান থেকে ঝর্ণার জল পরার শব্দ ছাপিয়ে ভেসে আসে নারী কন্ঠের চাপা কান্নার শব্দ।বিরূপাক্ষের বুকটা টনটন করে ওঠে।ওথাল পাথাল করে ওঠে হৃদপিণ্ডটা।
হাতে থাকা চিঠি সহ খামটা মুষ্ঠির ভেতরে দুমরে মুচড়ে ছুড়ে ফেলে এক ছুটে বেরিয়ে যায় ঘড় থেকে।

******
আজ বিজয়া দশমী।সকল মেয়ে এবং মহিলারা লাল পাড় ওয়ালা সাদা শাড়ি পরেছে। এবছরের মতো মায়ের শেষ খাওয়া মর্ত্যলোকে। অঞ্জলির সময় আসন্ন।চন্ডীনগর মানে রিতিদের গ্রাম থেকে এসেছেন বেশ কয়েকজন ভোগ প্রসাদ নিয়ে।সুমি এসেছিলো গতকাল।
নিজেদের গ্রাম সম্পর্কীয় কয়েকজন বৌদি,কাকিমা,জেঠিমার সাথে কুশলাদি বিনিময় করছিলো রিতি। রাহুল, অখিলেশ, বিরূপাক্ষ এলো ধুতি পাঞ্জাবি পরে।মহিলারা মাথায় কাপড় টেনে দিলেন সসম্ভ্রমে।রিতি অবাক মুগ্ধতায় তাকিয়ে রইল বিরূপাক্ষের দিকে।চন্দন রঙের পাঞ্জাবি আর খয়েরী রঙের ধুতি পরে ব্যক্তিত্ববান পদক্ষেপে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে সে।সে এক রাজকীয় চলন ভঙ্গি। দেখলেই গর্ববোধ জাগে মনে।এই তো সুপুরুষ,হোক না গায়ের রংটা একটু চাপা।
নিয়তি বৌদি বললো গায়ে ধাক্কা দিয়ে,,এই রিতি আমরা পাঁচ সাত জন আছি ভাই অমন করে তাকিয়ে থাকিস না।

ঘোর কেটে লজ্জায় রক্তিম হয় রিতির সমস্ত অবয়ব।তখনি ফিচেল হেসে বিরূপাক্ষ ওর পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায় মন্দিরে।

চৌধুরী বাড়ির একটা রেওয়াজ আছে সেই পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে।যখন মন্দিরের এত চাকচিক্য ভাব ছিলো না স্থায়ী মন্দিরটাও ছিলো না। শুধু পূজার সময় গোলপাতার ছাপড়া তুলে পূজা হতো। চাঁদা দিতো গ্রামের সবাই এক টাকা,আট আনা এমন কি এক পোয়া চালও দিতো কেউ কেউ। এখনকার মতো ব্যান্ডপার্টি বা সাউন্ড বক্স বাজতো না,মুচি পাড়া থেকে ঢাক নিয়ে আসতো ঢাকি।সেটাই ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু রেওয়াজ ছিলো একটা, দশমীর শেষান্তে যখন সিঁদুর খেলা হতো তখন বাড়ির পুরুষেরা তাদের স্ব স্ব স্ত্রীর সিঁথি নতুন করে রাঙিয়ে দিতো সিঁদুরে।ছাপড়ার জায়গায় ইট পাথরের মন্দির উঠেছে।পূজায় এসেছে নতুন নতুন জাঁক জমক কিন্তু এখনো সেই সিঁদুর দান নিয়মটি সচলই রয়ে গেছে।

দশমীর সমাপ্তি ঘটেছে। অনেক মহিলারা চোখের জল ঝরিয়ে মায়ের পায়ে মানত নিবেদন করছেন।এ কদিনে কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিস মা,এমন কথাও বলছেন অনেকে ভাসছেন নয়ন জলে।যেনো সত্যিই মেয়ে বাপের বাড়ি থেকে শশুর বাড়িতে চলেছে।

প্রভাকর রায় চৌধুরী নিজে অন্নপূর্ণা দেবীর সামনে দাঁড়িয়ে বিরূপাক্ষ কে রিতির সামনে দাঁড়ানোর আদেশ করেন। রঘুনাথ আগে ভাগেই দাঁড়িয়ে পরেছে জয়ার সামনে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিরূপাক্ষ দাঁড়ায় রিতির সামনে।দুজনের চোখে চোখ পরে।গোপনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে দৃষ্টি নত করে রিতি। পুরোহিত মহাশয় মায়ের পায়ের প্রসাদি সিঁদুর তুলে দেন প্রভাকর চৌধুরীর হাতে।

অবশেষে বিরূপাক্ষের পালা।কৌটা হাতে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আঙুলে সিঁদুর ছোঁয়ানো তো দূর রাগে সর্বাঙ্গ জলছে তার। একবার সিঁদুর পরিয়ে যে ফ্যাসাদে জড়িয়েছে তাকে আবার?

শত শত ঔৎসুক্য দৃষ্টি তাদের দিকে কারন ওদের সিঁদুর দান শেষ হলেই সবাই মেতে উঠবে সিন্দুরে আবির নিয়ে। রাঙিয়ে দেবে সমস্ত দেহ। মন্দির প্রাঙ্গন লালে লাল মিলে মিশে মেতে উঠবে রক্তিম ছোঁয়ায়।

মাতার আকুতি,পিতার অগ্নিদৃষ্টি, বন্ধুদের উৎসাহ, উপস্থিত জনতার আগ্রহান্বিত দৃষ্টিতেও বিরূপাক্ষ টললো না।সে কিছুতেই এই মেয়ের ব্যাপারে একই ভূল দ্বিতীয় বার করবে না।অবজ্ঞার যাতনায় রিতির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,কোনোমতে মুখে বলে,,একটিবারই তো রূপদা।দাওনা পরিয়ে সিঁদুর টুকু।আসছে বছর এ সৌভাগ্য আমার নাও হতে পারে।প্লিজ।
এমন মিনতি ফেলা বিরূপাক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। কাঁপা কাঁপা হাতে তিন আঙুলে এক চিলতে সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে তোলে রিতির সিঁথি। কৃতজ্ঞতা,প্রশান্তিতে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় রিতি। কতদিনের স্বপ্ন,সাধনা তার এমন একটি বিজয়া দশমী। মায়ের কাছে আর বিশেষ কিছুই চাওয়ার নেই।সে তো প্রতিটি দশমীতে এটুকু প্রাপ্তি মানত করেই চোখের জলে মায়ের পা ধুইয়েছে।দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে।চোখ মেলে দ্যাখে আরাধ্য মানুষটি, নেই স্থান ত্যাগ করেছে ইতিমধ্যে।

বিকালে স্নান সেরে পোশাক পরিচ্ছদ পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে বিরূপাক্ষ।সারাদিনে যা ধকল গেলো!
রাতে স্কুলের মাঠে যাত্রাপালার আয়োজন করেছে পূজা কমিটির ছেলে পুলেরা।সারাদিনে মোবাইল ফোনটাকে ছোঁয়ায় সময় হয়নি।অন লাইন হতেই একটা ম্যাসেজ টোন বাজে। আননোন নাম্বারের ম্যাসেজটা ওপেন করতেই শিড়-দাড়া টনটনে হয়ে লোমকূপ গুলো খাড়া হয়ে যায় বিরূপাক্ষর,
রিতিকে যখন সিঁদুর দিচ্ছিলো তখনি তোলা ছবিটা তাও খুব কাছে থেকে।ছবির সাথে লেখা রয়েছে এমন একটি স্বপ্ন দেখি রাত দিন।

চলবে,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

ভালো থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here