প্রজাপতি উৎসব পর্ব-২৫

0
431

প্রজাপতি উৎসব
#প্রেমের_গল্প #প্রজাপতি_উৎসব
পর্ব ২৫

আজ আমাদের বাসর রাত। আকাশে ভুবন ভাসানো চাঁদ উঠেছে। ঘরের ভেতর বেলি ফুলের মদির ঘ্রাণ। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। মোহন পাশে এসে আমার কাঁধে হাত রাখলো। আমি আবেগে কম্পিত কণ্ঠে বললাম,
-দ্যাখো, আমাদের বিয়ের দিনে কী সুন্দর চাঁদের আলো। এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো।
মনে হচ্ছে মোহন কোন একটা রোমান্টিক কথা বলবে। কিন্তু মোহন বললো,
-এই জানালার কাছে মোবাইল নেটওয়ার্ক একদম খারাপ। এ জন্য এখানে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে না।

কিছু বোঝার আগেই মোহন টান মেরে পর্দাটা আটকে দিলো। আমি ওর দিকে তাকাতেই বললো,
-রাস্তা থেকে ধুলো আসছে। হাঁপানি হয়ে যাবে।

বুঝলাম জোছনা নিয়ে ওর খুব একটা আগ্রহ নেই। আমার তলপেটে ক্রাম্প হচ্ছে। কিন্তু আজ বাসর রাত। এই দিনটাকে আবেগ ভালোবাসায় স্মরণীয় করে রাখতে হবে। আমি মোহনকে বললাম,
-মোহন, একটা কবিতা শুনবে?

মোহন হেসে বললো,
-কবিতা? কি বলছো এসব?

-কেন?

-কবিতা শোনার জন্য কি বাসর রাত?

আমি বুঝতে না পেরে বললাম,
-কেন, বাসর রাতে কবিতা শোনা যায় না?

-মনে আছে তুমি ইউনিভার্সিটির কবিতা উৎসবে নিয়ে গিয়েছিলে?

-হ্যাঁ।

-উহ, দাঁতে দাঁত চেপে ওদের আবোল তাবোল বকবকানি হজম করেছিলাম। কারণ আমি জানতাম কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে, ওসব করে করে একদিন তোমাকে কাছে পাবো। এখন কাছে পেয়ে যদি আবার কবিতাই শুনতে হয় তাহলে কিন্তু মেজাজ পুরো খিচড়ে যাবে। আমি আর সংযম রাখতে পারছি না, প্লিজ বিছানায় চলে এসো।

-কেন?

মোহন হেসে বললো,
-উফ, রূপা, ছ্যাবলামো করো না। একটা ছেলে একটা মেয়ে বিয়ের রাতে বিছানায় কেন যায় বুঝো না? তুমি শিশু নাকি?

আসলেই আমি বুঝিনি মোহন এত তাড়াতাড়ি এমন করবে। একটু আগে আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছে। আমি তৈরি ছিলাম না। বাথরুমে গিয়ে কোন রকমে একটা কাপড় দিয়ে শরীর সামলে রেখেছি। আমি মন খারাপ করে বললাম,
-মোহন, আমার পিরিয়ড হচ্ছে।

মোহন বিরক্ত কন্ঠে বললো,
-কী? সত্যি নাকি বানিয়ে বলছো?

-বানিয়ে বলবো কেন, নানা চাপে আমার সাইকেল চেঞ্জ হয়ে গেছে ।

-এতদিন ধরে নিজেকে সামলালাম, এখন তো এসব সাইকেল চেঞ্জের কথা বললে হবে না রূপামণি।
মোহন ভদ্রলোকের মত ঠান্ডা গলায় কথাটা বললো। ও সহজে রেগে যায়না, সবেচেয়ে খারাপ কথাটাও মিষ্টি করে বলতে পারে আমি বললাম,
-তাহলে এখন কি চাইছো আমার কাছে?

মোহন কোন উত্তর না দিয়ে আমার শাড়ি টেনে খোলা আরম্ভ করলো। আমি অস্ফুট স্বরে বললাম,
-মোহন, প্লিজ, আজ এই অবস্থায় না। আমার মাথা ব্যথা করছে, আমি ঘুমিয়ে যেতে চাই।

মোহন আমাকে বিছানায় টেনে নিতে নিতে বললো,
-বিয়ের আগে কি তোমাকে কখনও জোর করেছি? করিনি। কারণ আমি একজন ভদ্রলোক। কিন্তু আজ তো আমার প্রাপ্য আমাকে বুঝে নিতে হবে রূপা।

-আজ না প্লিজ। শরীর খুব খারাপ লাগছে।

-রূপা, আই অ্যাম ইওর হাজবেন্ড। আই নিড ইট নাও। খামোখা নাটক করো না প্লিজ। এটা তোমাদের জাহাঙ্গীরনগরের মুক্ত মঞ্চ না। এটা আমাদের পুষ্পশয্যা।

মোহন এবার আমার ব্লাউজ টেনে খুলে ফেললো। মোহন আমার স্বামী। ওর দায়িত্ব আমাকে সব রকম অস্বস্তি আর বিপদ থেকে রক্ষা করা। অথচ মোহনই আমার উপর জুলুম করছে। আমার এখন মোহনকে ভয় করছে।

তারপরের আধঘণ্টা তাণ্ডবলীলা বয়ে গেলো। আমাকে বেআব্রু করে মোহন ওর দাবী দাওয়া কড়ায়গন্ডায় বুঝে নিলো। যা সহজ, সুন্দর, আনন্দঘন হবার কথা ছিল তা কেমন বিশ্রী আর তিতা হয়ে গেলো। আমার সারা গায়ে ওর দাঁতের দাগ বসে গেছে। ওর অত্যাচারে আমার ব্লিডিং বেড়ে গেছে। আমি কোন রকমে কাপড় চেপে অসাড়ের মত বিছানার এক কোণে পড়ে রইলাম। মোহন ওর কাজ সেরে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটু পরই ওর নাক ডাকার বিকট শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো। আমি অন্ধকার সিলিং-এর দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলাম। জানি না আমি কী করবো। আমার বাবাকে এসব বলে বিরক্ত করতে চাই না, দিলশাদ আর অতন্দ্রিলা শুনলেও খুব কষ্ট পাবে। আমার দু চোখ বেঁয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

ভোরবেলা মিনুকে আমার পিরিয়ডের কথা বললাম, মিনু তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করে ফেললো। গোছল সেরে নিজেকে গুছিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখলাম বুয়া পরোটা।, ডিম আর আলুভাজি সাজিয়ে রেখেছে। আমি শাশুড়ি মার পাশে গিয়ে বসতেই উনি বললেন,
-বসো মা, তোমার শ্বশুর সাহেব তো উঠতে পারেন না, খাবার দিয়ে আসতে হয়। উনি আরও আধঘন্টা পড়ে নাস্তা করবেন।

আমি বললাম,
-আজ বাবাকে আমি নাস্তা দিয়ে আসবো মা।

শাশুড়ি মা খুশী হয়ে বললেন,
-তুমি দেবে? তাহলে তো উনি খুব খুশী হবেন।

মোহন এইমাত্র ফর্মাল জামাকাপড় পরে পরিপাটি হয়ে টেবিলে বসেছে। আমি পরোটা আর ডিম উঠিয়ে মোহনের পাতে দিলাম। মোহন মুখে হাল্কা হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
-থ্যাঙ্ক ইউ, রূপা।

মোহনকে দেখে মনে হচ্ছে একজন ভদ্র মার্জিত এবং রুচিবান পুরুষ। কেউ বিশ্বাস করবে না কাল রাতে লোকটা পাগলা কুকুরের মত আচরণ করেছে। খাবার শেষে মোহন বললো,
-মা, বুয়াকে বলো আমাদেরকে ঘরে চা পাঠিয়ে দিতে।

মিনু ঠাট্টা করে বললো।
-কেন, ভাবীকে নিয়ে একান্ত সময় কাটাতে চাও?

মিনুর কথায় পাত্তা না দিয়ে মোহন আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-রূপা, তুমি একটু ঘরে এসো, কথা আছে।

আমি একটু পর ঘরে যেতেই দেখলাম মোহন মোবাইলে কাউকে টেক্সট করছে। আমাকে দেখে মোবাইল পকেটে রেখে বললো,
-কাল রাতের তোমার সঙ্গে একটু জোর করেছি। আশা করি রাগ করোনি।

আমি কোন জবাব দিলাম না। মোহনের রুচি এবং মানসিকতার উপর এক রাতেই আমার আস্থা উঠে গেছে। খামোখা কথা বলে ওর ভেতরের নোংরাটা আবার বের করে আনতে ইচ্ছে করছে না। তাড়াহুড়া করে বিয়ে করে সত্যি সত্যি নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনেছি।

বুয়া এই মাত্র ট্রেতে চা এনে বেডসাইড টেবিলে রেখেছে। মোহন চায়ের কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-নাও রূপা, চা খেয়ে নাও।

আমি চুপ করে আছি দেখে মোহন বললো,
-প্লিজ সোনামণি, আর গাল ফুলিয়ে থেকো না। চা খেয়ে নাও।

-আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে না এখন।

-প্লিজ খেয়ে নাও। আমি তোমার পায়ে পড়ছি। প্লিজ খাও।

বুঝলাম না চা খাওয়ার মত সামান্য ব্যাপারে পায়ে পড়ার কি আছে। আমি চা না খেলে মোহনের সমস্যা কী? বললাম,
-আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে না মোহন।

মোহন আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে বললো,
-রূপা, বিয়ের আগে অন্য ব্যাপার ছিল, আমি যথেষ্ট ভদ্রতা দেখিয়েছি। কিন্তু এখন তুমি আমার ওয়াইফ। সামান্য চা খেতে বলছি, সেটাই শুনছো না, পরে কী করবে কে জানে। তোমার কাছে এমন ব্যবহার আশা করি না।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। মোহন আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-এই তো। গুড গার্ল। খুব কি কঠিন ছিল কাজটা করা? খামোখা আমার মাথা গরম করিয়ে দিয়েছিলে।

এর মাঝে মা এসে দরজায় টোকা দিয়ে বললেন,
-রূপা, তোমার বাবার নাস্তা রেডি হয়েছে। তুমি দেবে নাকি বুয়াকে পাঠাবো?

আমি হাঁফ ছেড়ে বেঁচে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে গেলাম। নাস্তা নিয়ে বাবার ঘরে গিয়ে দেখলাম উনি পত্রিকা পড়ছেন। আমাকে দেখে বললেন,
-তুমি কষ্ট করে নাস্তা আনলে কেন, বুয়াকে বললেই হতো।

-না, বাবা, ঠিক আছে, এই সুযোগে আপনার সঙ্গে একটু গল্প করা যাবে।

বাবা ডান হাত নাড়াতে পারেন। বাবাকে অল্প উঠিয়ে বিছনার পেছনে হেলান দিয়ে বসালাম। একটা বেডটপ টেবিলে খাবার প্লেট রাখলাম। বাবা খেতে খেতে বললেন,
-আমি তো অথর্ব হয়ে গেছি মা। আমার মতামতের জন্য এই বাড়ির কোন কিছু থেমে থাকে না। খুব ভয়ে ছিলাম মোহন কেমন মেয়ে ঘরে তোলে। কিন্তু তোমাকে দেখে তো আমি অবাক।

-কেন বাবা, অবাক কেন?

বাবা আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
-আমার এই ছেলের রুচি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে এই প্রথম সে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুঝলাম মোহনকে নিয়ে বাবার ইম্প্রেশন খুব একটা সুবিধার না। কে জানে মোহনের আর কী কী সমস্যা আছে।

পর্ব ২৪ https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1371016080080082/
পর্ব ২৬ https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1373296693185354/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here