আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব:৩২

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব:৩২

আশ্চর্য!! আমার তো এখন ঐ সবুজে মোড়ানো স্নিগ্ধ রমনীটাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখার কথা। কিন্তু এই বেহায়া চোখ কেনো বার বার ঐ শুভ্র রঙে আবৃত মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে? কই আগে তো কখনো এমন হয় নি। আজ কেনো তার সব কিছুই আমাকে এতো টানছে। তার কথা বলার সময় হাত নাড়ানো, চোখ বড় বড় করে তাকানো, মুখে হাত দিয়ে হাসা সব কিছুই আমাকে তার প্রতি আকর্ষিত করছে। কি হচ্ছে এসব।
~ এই অভ্র! কি ভাবছিস? কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি। ( অভ্রকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে )
~ না কিছু না। কেনো ডাকছিলি বল।

রেহান সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
~ কি এভাবে দেখিস কেন ? বল কেনো ডাকছিলি?
~ স্টেজের কাছে যা । প্রিন্সিপাল বক্তব্য দিবেন তখন ফুল ছিটাতে হবে ওনার ওপর।
~ কিহ! আমি এসব কেনো করবো?
~ তো কে করবে শুনি? সবাইতো কিছু না কিছু করছে। তো তুই বাদ যাবি কেনো? চুপ চাপ যা ।
অভ্র আর কিছু না বলে চলে গেলো।
রেহান আর নাহিদ লাস্ট বারের মতো কে কোনটায় পার্টিসিপেট করছে তা কনফার্ম করতে গেছে। রেহান সবারটা জেনে এবার আরশিরা যেখানে বসে আছে সেখানে গেলো।
~ আরশি তুমি নাচ আর গান করছো তো?
~ হ্যাঁ ভাইয়া কিন্তু আমি আর মিহি ডুয়েট নাচ করবো।
~ ঠিক আছে।
এবার রেহান মিহির দিকে তাকালো। মিহি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। মূলত রেহানের দিকে তাকাবে না তাই এমন করছে। কারণ আজ ও না চাইতেও এই ধলা বান্দর টাকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছে। নিজের প্রতি অনেক রাগ হচ্ছে মিহির। এই বাঁদরটাকে দেখে ক্রাশ খাওয়ার কি আছে? কিন্তু কি করবে? আজ ব্ল্যাক পাঞ্জাবিটায় যে রেহান কে মারাত্মক লাগছে। ও তো প্রায় অনেকক্ষণ
ভ্যাবলার মত তাকিয়ে ছিল। রেহান সেটা বেশ কয়েক বার খেয়াল করেছে। তাই এখন ও ঠিক করেছে যথা সম্ভব রেহান কে এড়িয়ে যাবে। একদম তাকাবে না।

~ তুমি যেনো কি কি করবে আজকে?

মিহি হঠাৎ কথা বলায় একটু ঘাবড়ে গেছে। আড় চোখে রেহানের দিকে তাকালো। তারপর দ্রুত চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,,,
~ কবিতা আবৃত্তি আর ডুয়েট নাচ।
~ ওদিকে কাকে বলছো আমিতো এদিকে।
আরশি, সুজানা, নিধি , রোজ আর ন্যান্সি কান পেতে রেখেছে ওরা কি বলে শোনার জন্য।
মিহি রেহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো ,,
~ যে প্রশ্নটা করেছে উত্তরটা তাকেই দিয়েছি।
~প্রশ্ন দাতা এদিকে দাঁড়িয়ে ওদিকে নয় তো জবাবটা এদিকে তাকিয়ে দাও।।
~ কেন আমার তাকাতে হবে কেন? আমি দেখব না। আমার উত্তর দেওয়ার সেটা দিয়ে দিয়েছি এবার আপনি যান।
~ আচ্ছা এখন দেখা লাগবে না পরে আমার অগোচরে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখো আমি কিন্তু মাইন্ড করবো না। ( বাকিরা রেহানের কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো)
মিহি দাতে দাত চেপে রেখেছে। এই লোক আচ্ছা বজ্জাত কথা শোনানোর সুযোগ পেলে ছাড়তে চায় না। মিহি রাগি লুক নিয়ে রেহানের দিকে তাকালো। রেহান বাকা হাসি দিয়ে চলে গেলো।
~ হাড়ে বজ্জাত একটা।( মিহি বির বির করে বললো )

সকলের বক্তব্য শেষে এখন নাচ গান শুরু করা হবে। আরশির ভীষণ টেনশন হচ্ছে ও শাড়ি পড়ে নাচতে পারবে তো? বাকিরা ওকে ভরসা দিচ্ছে যে ও ঠিক পারবে।
মিহির নাম আ্যনাউন্স করা হলো। মিহি উঠে গেলো কবিতা আবৃত্তি করতে। সকলকে সালাম জানিয়ে, কবি ও কবিতার নাম বলে শুরু করলো ওর আবৃত্তি।

“আসলে কেউ বড়ো হয় না, বড়োর মতো দেখায়,
নকলে আর আসলে তাকে বড়োর মতো দেখায়
গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে কতো ছোট,
সোনার তাল তাংরে ধরে পেয়েছো ধুলি মুঠো।”
( বাকিটা শুনে নিবেন )

রেহান বেশ অবাক হয়ে মিহি কে দেখছে। মেয়েটা এতো চঞ্চল হলে কি হবে গুন আছে ওর মধ্যে। আজকে যে শুধু মিহিই রেহানকে লুকিয়ে দেখছিলো তা কিন্তু নয়। রেহান ও আজকে মিহি কে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো। আজ মিহি কে ফুটন্ত গোলাপের ন্যায় লাগছে। চোখ সরানো যে মুশকিল হয়ে পড়েছে।

মিহির আবৃত্তির শেষে করতালির রোল পড়ে গেলো। আরশি এদিক ওদিক তাকিয়ে সূর্যকে খুঁজছে। এখানে আসার পর আর দেখতে পায় নি তাকে। আরেকটু পড়েই ওর নাম ডাকা হবে। কোথায় সূর্য? এদিকে ব্যাক স্টেজ থেকে আরশি কে দেখছে সূর্য। ওর সামনে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি নিজেকে সামলাতে না পারে। আজকে যে ওর ছোট্ট ডলকে একজন পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে ওর। ওকে দেখতে আজ নতুন বউদের মতো লাগছে। আরশির নাম অ্যানাউন্স করা হলো। আরশি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে স্টেজে উঠে এলো। গান শুরু করার আগে একবার অন্তত কাঙ্ক্ষিত মুখটি দেখতে চায় ও। সূর্য আরশির হাবভাব সবই খেয়াল করছে। ও এটাও বুঝতে পারছে আরশি ঠিক কাকে খুঁজছে। মুচকি হেসে আরেকটু ভিতরে ঢুকে গেলো ও। আরশি এক রাশ হতাশা নিয়ে চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করলো,,,

“প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে,, ও… তোমাকে।..
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও… তোমাকে।
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে
রোজ দুই ফোঁটা যেনো আরো ভালো লাগে
গানে, অভিসারে, চাই শুধু বারেবারে
তোমাকে, ও…. তোমাকে।
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে ।
পথ চেয়ে রই, দেরি কোরনা যতই
আর ভোলা যাবেনা জীবনে কখনোই,
তোমাকে, ও…. তোমাকে।
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকে আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।
হ্যাঁ প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে, ও…. তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই
আর দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও…… তোমাকে।”💞
পুরোটা গান আরশি চোখ বন্ধ করে সূর্যকে মনে করে গেয়েছে। গানের প্রতিটা লাইন সূর্যের জন্য ছিলো। কিন্তু যার জন্য গাওয়া সেই তো নেই। করতালির আওয়াজে আরশি নিজের চোখ খুললো। চোখ খুলতেই অবাক হয়ে গেলো। সূর্য সামনের সারিতে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে এক চিলতে হাসি। এই হাসিটা যেন আরশিকে বলে দিচ্ছে,, তুমি যে গানটা আমাকে উদ্দেশ্য করে গেয়েছো সেটা আমি খুব ভাল করে জানি।।। সূর্যের হাসি দেখে আরশি ও মুচকি হাসলো। আরশি ওর সিটে আসতেই মিহি আর সুজানা ওকে জড়িয়ে ধরলো।
~ অসাধারণ হয়েছে। তুই যে এতো ভালো গান গাইতে পারিস আগে জানতাম না তো। ( সুজানা )
~ কি বলো আপু,, আমি নিজেই জানতাম না। আমি তো শুধু ওকে গুনগুন করতে শুনতাম। তাইতো নাম দিয়েছিলাম গানে । কিন্তু কে জানতো ম্যাডাম যে এতো ভালো গান পারে।। ( মিহি )
রিক, সুজানা, ন্যান্সি আর নিধি ও আরশির অনেক প্রশংসা করলো। সুজানা একটু গলা খাকারি দিয়ে বললো,,
~ গানটা কি আমার ভাইকে ডেডিকেট করে গাইলি নাকি??
~ আমারও না তাই মনে হচ্ছে সুজানা আপু।। ( মিহি )
আরশি লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে ফেললো। বাকিরা হেসে দিলো। কিন্তু নিধি এবার সিওর হয়ে গেলো যে আরশি আর সূর্যের মধ্যে কিছু একটা আছে। তাহলে অভ্রর কি হবে? ও তো আরশি কে পছন্দ করে। নাহ ওকে অভ্রকে ব্যাপারটা জানাতে হবে, না হলে ও পরে জানতে পারলে কষ্ট পাবে। নিধি সবাইকে আসছি বলে উঠে চলে এলো। চারপাশে তাকিয়ে অভ্রকে খুঁজছে। অভ্র আর বাকি ছেলেরা সামনের সারিতে বসে আছে।
রেহান ও তো ওখানে আছে কি করে কথা বলবো?
নিধি কিছুক্ষণ ভেবে অভ্র কে মেসেজ করে গেটের কাছে আসতে বললো।। অভ্র বাকিদের সাথে কথা বলছিল ম্যাসেজের শব্দ পেয়ে মোবাইল ওপেন করতেই দেখল নিধি মেসেজ করেছে।
~নিধি আমাকে গেটের কাছে কেনো ডাকছে? ও কিছু একটা ভেবে লিখলো,, আসছি। এরপর সবাইকে একটু কাজ আছে বলে গেটের কাছে চলে এলো। নিধিকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছে।
~ কি হয়েছে নিধি ? এনি প্রবলেম? তোমাকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেনো?
~ আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।
~ হ্যাঁ বলো।
~ আপনি আরশির কাজিন মানে সূর্য ভাইয়াকে তো চেনেন তাই না?
~ হ্যাঁ, চিনি।
নিধি জিহ্বা দিয়ে ঠোটটাকে ভিজিয়ে নিলো। অভ্র কে কিভাবে বলবে আর ব্যাপারটা অভ্র কিভাবে নেবে কিছু বুঝতে পারছে না । বেচারা নিশ্চয়ই হার্ট হবে অনেক।
~ কি হলো বলো কি বলতে চাও। হঠাৎ সূর্য ভাইয়ার কথা বললে কেনো?
নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভ্র নিধির পিছনে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বললো,,, ভাইয়া আপনি? নিধি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। একজন সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। চকলেট কালার পাঞ্জাবি, সাদা প্যান্ট, পায়ে কালো জুতা , হাতে সিলভারের ঘড়ি। কালো চুল গুলো উপরের দিকে সেট করা তাও কিছু অবাধ্য চুল ছেলেটার কপালে এসে পড়ছে। অভ্র নিধির দিকে তাকিয়ে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো। ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,
~ কেমন আছেন মাহির ভাই??
মাহির নামটা শুনে নিধি চমকে উঠলো। এ কোন মাহির?? অভ্রর পরিচিত, তার মানে ইনিই মাহির রহমান।
মাহির অভ্র কে ছেড়ে বললো,,,
~এইতো ভালো তোমার কি খবর বলো?
অভ্র আড়চোখে নিধির দিকে তাকালো।নিধি চোখ বড় বড় করে মাহির কে দেখছে। নিধিকে মাহিরের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্রর ভ্রূ আপনাআপনি কুঁচকে গেলো। মাহিরের দিকে তাকিয়ে মুখে জোরপূর্বক হাসি এনে বললো,,
~ এইতো ভালো ভাইয়া। আপনাকে তো ইনভাইট করা হয়েছিলো। আমরা তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না যেই বিজি পারসন আপনি!!! তা এতো দেরি করলেন যে?
~ আসলে একটু কাজে আটকে গেছিলাম। তোমার পাশে ও কে?
অভ্র_নিধি দুজনেই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো মানে কি মাহির নিধিকে চেনে না??? অভ্র নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,,,
~ ও হচ্ছে নিধি। আমাদের রেহান আছে না? ওর বোন। এই ভার্সিটির অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে।
মাহির মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে বললো,,,
~ হাই, আমি মাহির রহমান । এই ভার্সিটির এক্স স্টুডেন্ট। নিধি অবাক হয়েই মাহিরের সাথে হাত মেলালো।
~ আমি নীহারিকা নিধি। মাহির হাত ছাড়াতে নিলো কিন্তু নিধি এখনো ধরে রেখেছে। আসলে নিধি এতোটাই অবাক হয়েছে,,, ও যে মাহিরের হাতটা এখোনো ধরে আছে সেটা ওর খেয়ালই নেই। মাহির হালকা হাসলো। এদিকে অভ্রর রাগ উঠছে নিধির এভাবে মাহিরের হাত ধরে রাখায়। ও নিধি আর মাহিরের হাতের উপর হাত দিয়ে ওদের হাত ছুটিয়ে নিলো। মাহিরের অগোচরে নিধির হাতের তালুতে বেশ জোরেই একটা চিমটি কাটলো। নিধি কেপে উঠে অভ্রর দিকে তাকালো। অভ্র মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,
~ আব ভাইয়া আপনি ভেতরে যান আমরা আসছি।
মাহির মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। নিধি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। অভ্রর এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এই মেয়ে সেই তখন থেকে শুধু মাহিরকেই দেখে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
~ দেখা শেষ হয়নি তোমার চলে গেছেন উনি?
~ হ্যাঁ? ( নিধি অভ্রর দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে )
~ ওভাবে হা করে তাকিয়ে কি দেখছিলে তুমি?
~ আমি ভাবছি ওনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক! অথচ উনি উনার হবু বউ কেই চেনেন না???
~ আচ্ছা?? চিনলে বেশ খুশি হতে মনে হচ্ছে। এতোদিন তো বিয়ে করবেনা বলছিলে। আজ হঠাৎ ওনাকে দেখে নিজেকে ওনার হবু বউ বলে দাবি করছো?? বাহ্! অসাধারন।।
~ কি বলছেন টা কি?
~ আমি আর কিছু বলতে চাই না ভিতরে এসো।
নিধি ওর দিকে কিছু না বুঝে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মনে পড়ল অভ্র কে এখানে কি বলতে ডেকেছিলো।
~ আরে কিন্তু আমার আপনাকে কিছু কথা বলার ছিলো। অভ্র!!!
অভ্র কিছু না শুনে হনহন করে ভিতরে ঢুকে গেলো। নিধি আর কি করবে । ও, ও চলে এলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here