সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব-৭

0
1262

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৭
,
,
,
,
নির গাড়ির কাছে এসে দেখে যে আদ্রি গাড়ির সিটে হেলান দিয়েই ঘুমায় পড়েছে। নির আদ্রির দিকে খানিকটা ঝুকে চোখের সামনে পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো।নির এর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে খানিকটা কেঁপে উঠে পুনরায় ঘুমিয়ে পরলো সে। নির, আদ্রির বাচ্চামো দেখে মনে মনে খানিকটা হাসলো।

নির ড্রাইভ করচ্ছিলো এমন সময় আদ্রির মাথা নির এর ঘাড়ে পড়তেই কেমন জানি অচেনা অনুভূতি হানা দিলো নির এর মনে। গাড়ি টা এক সাইডে পার্ক করে সিটে মাথা এলিয়ে দিল নির।

নিরঃকি শুরু করলি রে আদর পাখি। আমি যে নিজেকে আটকাতে পারচ্ছিনা তোর নেশায় ডুব দেওয়া থেকে বার বার এই মন যে তোর সান্নিধ্যে চায়। কিন্তু এটা যে অন্যায় রে। আমার জীবনের কোন ভরসা নায়। একবার আমি আমার মম ড্যাড এর প্রতিশোধ নিয়ে নিলে আমার জীবন এর অস্বস্তি শেষ এই নির এর কাহিনীও শেষ যেখানে তুই পবিত্র এক গোলাপ সেখানে আমি অপবিত্র কাটা। যার হাত শুধু মানুষ কে কষ্ট দিতে জানে।কেন ফিরে এলি আমার জীবনে খুব করে ইচ্ছা করে তোকে আগলে রাখতে কিন্তু তা যে সম্ভব না রে।

আলতো করে মাথাটা আদ্রির মাথায় ঠেকিয়ে কিছুক্ষন দম নিলো তারপর পুনরায় গাড়ি ড্রাইভ করায় মন দিলো সে।

_____

নওমি হাওয়াই মিঠাই খাইতে চেয়েছে দেখে আদ্রিয়ান সেদিকে চলে যায়। নওমি একা একা বসে থেকে পানি দেখছিলো হঠাৎ তার চোখ যায় প্রজাপতির দিকে। সেটা দেখে উৎফুল্ল হয়ে প্রজাপতি ধরার উদ্দেশ্য দৌড় দেয়।হুট করে প্রজাপতি টা যেয়ে বসে একটা টাকলা আঙ্কেল এর মাথায়। নওমি কিছু না বুঝে হাত দিয়ে থাবা দেয় প্রজাপতি ধরার উদ্দেশ্য কিন্তু প্রজাপতি টা উড়ে যায় আর থাবা টা লাগে আঙ্কেল এর মাথায়।

নওমি ভয়ে দুই হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে নেয়

আঙ্কেলঃএই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে হ্যা কখন থেকে দেখছি বাচ্চাদের মতো করছো পাগল মেয়ে। এইসব পাগল দের রাস্তায় একা ছাড়ে কে যতসব।

নওমি তো রেগে আগুন, ফার্স্ট কারো কাছে এতো কথা শুনলো রাগে গজগজ করতে করতে আঙ্কেল টার মুছ ধরে দেয় টান বেচারা ভদ্রলোক ব্যাথায় চেচিয়ে উঠে আদ্রিয়ান ও ততোক্ষনে এসে যায় ভীড় ছিলো দেখে তার আসতে সময় লাগে কিন্তু সে বুঝতে পারেনি নওমি এমন কিছু করবে আদ্রিয়ান এক হাতে হাওয়াই মিঠাই গুলো ধরে অন্যহাতে নওমির হাত দিয়ে দেয় দৌড়। আঙ্কেল টাও ওদের পিছনে দৌড় দেয় কিন্তু ওদের ধরতে পারেনা

ওই জায়গা থেকে কিছু টা দূরে এসে আদ্রিয়ান নওমির হাত ছাড়ে দিয়ে বসে পড়ে মাটিতে সেটা দেখে নওমিও বসে পড়ে দুইজনেই সমান তালে হাপাচ্ছে বেশ কিছু ক্ষন একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে দুইজনেই এক সাথে হেসে দেয় উচ্চস্বরে, আশে পাশের কয়জন লোক বাঁকা চোখে তাকাতেই আদ্রিয়ান চুপ হয়ে যায় কিন্তু নওমির কি আর এতো সেতো বুঝার বয়স হয়েছে সে তো সমান তালে হেসে ই চলেছে। আদ্রিয়ান মুগ্ধ নয়নে দেখছে মুক্তর ন্যায় স্বচ্ছ হাসিটা কতোটা না নিস্পাপ হাসি।

_____

আদ্রি বাসায় আসে অবাক হয় মেন দরজায় তালা দেওয়া আর তার পাশেই গার্ড মাথা নিচু করে দাঁড়ায় আছে

আদ্রিঃচাচ্চু দরজা লাগানো কেন
গার্ডঃসরি মামনি। স্যার এর অর্ডার যেনো আপনাকে ভিতরে যেতে না দেওয়া হয়
আদ্রিঃআমি জানতাম এমন কিছু হবে আমার লাগেজ কই চাচ্চু
গার্ডঃআপনি এক মিনিট দাড়ান আমি নিয়ে আসছি
(গার্ড যায়তেই আদ্রি হাটু গেড়ে নিচে বসে পরে
সে জানতো তার বাবার কাছে সবার আগে তার সম্মান তার পজিশন তার টাকা তার কাজ সেখানে
আদ্রির জন্য উনার এতো বড় লোস হলো আর উনি চুপচাপ হাতে হাত রেখে বসে থাকবেন)

গার্ড লাগেজ আনতেই উঠে বসে বাড়িটার দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে হাটা ধরে জানেনা কই যাবে কোথায় থাকবে কিন্তু যেতে তো হবে।

চোখের পানি মুছে নেয় সে ভেঙ্গে পড়লে তো আর হবেনা কোন না কোন জায়গা তো খুজতেই হবে থাকার জন্য

এমন সময় তার সামনে এসে দাঁড়ায় নির এর গাড়ি
হঠাৎ এই ভাবে গাড়ি ব্রেক করায় ভয় পেয়ে যায় আর চোখ বন্ধ করে দুই পা পিছিয়ে যায়।

গাড়ি থেকে নির বের হয়ে আসে। নির এর অফিসের কিছু পেন্ডিং কাজ করে বাসায় ফিরছিলো হঠাৎ সামনে আদ্রি কে দেখে গাড়িটা ব্রেক করে,

নিরঃমিস আদর আপনি এখানে তাও আবার এতো রাতে কোন সমস্যা?
আদ্রিঃনা স্যার আসলে একটু নাইট ওয়াক এর জন্য বের হয়েছিলাম এই যা (হাসার চেষ্টা করে)

নির আদ্রির দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো অফিসে পরা ড্রেস টাই তার পড়নে। এক হাতে লাগেজ ধরে আছে। নির এর যা বুঝার বুঝা হয়ে যায়।

নিরঃগেট ইন দা কার
আদ্রিঃমা মানে
নিরঃআই ডোন্ট লাইক টু রিপিট মাই ওয়ার্ড এন্ড ইউ সুড নো এবাউট দিস
আদ্রিঃসরি স্যার বাট আই কান্ট গো উইথ ইউ
নিরঃতুমি নিজ ইচ্ছাই উঠবা নাকি আমি আমার টেকনিক শুরু করবো
আদ্রিঃস্যার আমি উঠবোনা
(সামনের দিকে হাটা দেয়)

নির আদ্রির হাত টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে তাকে কোলে তুলে নেয় আদ্রি আমার জন্য হাত পা ছুড়াছুড়ি করতে লাগে কিন্তু নির এর সাথে কোন রকম ভাবে পেরে উঠে না। নির আদ্রিকে গাড়ির সিটে বসায়ে ডোর লোক করে দেয় আর লাগেজ পেছনের সিটে তুলে নেয়।

আদ্রিঃস্যার আপনি আমাকে এই ভাবে জোড় করে তুলে নিয়ে যেতে পারেন না ইটস নোট রাইট

নিরঃ—–

আদ্রিঃস্যার আমি আপনাকে কিছু বলছি প্লিজ আমাকে নামিয়ে দেন
(চিৎকার করে)
নিরঃওকে ফাইন নেমে যাও কিন্তু একটা কথা মাথায় রেখো এটা ঢাকা শহর, এখানে রাতের বেলা হাজারো পশু ঘুড়ে বেরায় একটা বার ভাবেছো যদি কিছু হয়ে যায় কি করবা তখন বলো(স্টেয়ারিং এর উপর বাড়ি দিয়ে)

আদ্রি এবার চুপ হয়ে যায়।আসলেই তো এখনকার যে সমাজ একা একটা মেয়ে মানেই মানুষ রুপি পশুদের খাওয়ার হওয়া ভাবতেই গা হাত পা শিউরে ওঠে ওর

নিরঃকি সব কথা শেষ এবার চুপচাপ বসে থাকো

আদ্রি গাড়ির গ্লাস নিচে নামায় দেয় নির আড়চোখে একবার দেখে কিন্তু কিছু বলেনা

আদ্রিঃলোকটাকে যতোটা খারাপ রাগী ভাব ওয়ালা ভেবেছিলাম ওতোটাও না অনেক কেয়ারিং নাহলে একটা সামন্য এমপ্লোয়ের জন্য এতো কিছু কোন স্যার ই বা করে। এই জন্যই হয়তো বড়রা বলে কাউকে না জেনে তাকে জাজ করা উচিৎ না।
(মনে মনে কথা গুলো বলে নিশ্বাস ছাড়ে)

নিরঃনামো এসে গেছি আমরা

আদ্রি গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখে বিশাল এক বিল্ডিং এর সামনে এসে দাড় করায়েছে গাড়িটা। আদ্রি বিল্ডিং টা চেনে। ঢাকার সবচেয়ে নামীদামী বিল্ডিং এর মধ্যে এটা একটা বেশ নামকরা ব্যক্তিরা এখানে থাকে বলে জানা তার।

আদ্রিঃআমরা এখানে কেনো
নিরঃআসো আমার সাথে
আদ্রির আর কি করার নির এর পিছনে হাটা ধরে নির তাকে নিয়ে একটা রুমের সামনে আসে। রুম টা ৮ তলায় লিফট আছে দেখে যাতায়াতে তেমন কোন সমস্যা হয়না
আদ্রিঃস্যার এটা কি আপনার
নিরঃএই পুরো বিল্ডিং টাই আমার
আদ্রিঃহোয়াট(চিল্লায়ে)

নির আদ্রির এমন রিয়েকশানে বিরক্ত হয়।
নিরঃহুস চুপ গনো ধোলাই খাওয়ানোর শখ আছে
আদ্রিঃসরি

মিনিট ৫ এক পরে একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।আদ্রি মটেও কোন মেয়েকে আশা করেনি।

মেহেরঃভাইয়া তুই এখানে এতো রাতে
নিরঃহুম তোর সাথে আজকে থেকে এই থাকবে রাতের মধ্যে পরিচয় হয়ে নিস এই নেও তোমার লাগেজ কালকে টাইমলি চলে আসবে আর তুই ও অনেক ছুটি কাটিয়েছিস

মেহেরঃজ্বি ভাইয়া
আদ্রিঃহুম

নির চলে যায় মেহের ও আদ্রিকে নিয়ে রুমে ঢুকে ওকে একটা রুম দেখিয়ে দেয় থাকার জন্য রাত যেহেতু অনেক হয়েছে তাই আলাপ এর পর্বটা কালকের জন্য রেখে দিলো,,,,,,

চলবে!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here