সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব-২২

0
1050

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ২২
,
,
,
,
,
দেখতে দেখতে কেটে গেলো একটা সপ্তাহ।বাবার মৃত্যুর কথা এখনো জানেনা আদ্রিয়ান আদ্রি।মিসেস খান চলে গেছেন আমেরিকাতে। আদ্রি নির এর বাসাতেই থাকে এক প্রকার বাধ্য হয়ে। নওমি আর ওর ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে খুব ভালো বেস্ট ফ্রেন্ডস তারা।

জানালার বাহিরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নওমি।দৃষ্টিতে উদ্দাসীনতা এসে হানা দিয়েছে। তার কোন কিছুই মনে নেয় আগেকার কোন কথা। সবাই শুধু এই টুকু বলেছে তার এখন ২২ বছর তাছাড়া কিছু তার জানা নাই।

নওমিঃএই যে নিল আকাশ তুমি তো খুব বিশাল। তোমার কোন সীমানা তো নেই।পুরো পৃথিবীতে আবৃত হয়ে আছো তাহলে তুমি নিশ্চয় জানো এই ১০ বছরে কি হয়েছে।আমার না কেন জেনো খুব একা একা লাগছে কিন্তু আমার কাছে তো সবাই আছে বাবা আম্মুর কবরেও যায় রোজ। তবুও কিসের এই অজানা অনূভুতি কেনো মনে হয় কেউ খুব কাছে থেকেও নেই। কখনো কখনো কি মনে হয় যানো কেউ আমাকে দেখছে। খুব গভির ভাবে দেখছে। (মন খারাপ কর কথা গুলো আওরাতে থাকে নওমি)

নওমির জানালা থেকে কিছু টা দূরেই অন্ধকারে ভ্যানের উপরে বসে থেকে নওমিকে দেখছে আদ্রিয়ান। লাল দুই ঠোঁটের ভাজে পুরছে জলন্ত সিগারেট।উজ্জ্বল মুখটা কেমন কালো হয়ে গেছে।।

নির তখন আসে নওমির রুমে।বোনের উদাস দৃষ্টি নির এর চোখে বড্ড কাটা দিছে।।তার বোনের মন টা ভালো নেয় কিন্তু সে নিরুপায় কি করে করবে মন ভালো তার বোনের। এটা যে মনের টান তার বোনের মন ও যে পুরছে তার প্রিয় মানুষ টার জন্য যার কথা তার মনে না থাকলেও তার প্রতিটি নিশ্বাস তার মনের মাঝে গেথে আছে।

নিরঃপিচ্চি
নওমি এতোটাই প্রকৃতি দেখতে মশগুল ছিলো যে ভাইয়ের ডাক তার কান অব্দি পৌঁছাতে পারেনি।

নির পুনরায় ডেকে উঠে এবার ডাকটা একটু জোড়েই ছিলো চমকে উঠলো পিছনে তাকিয়ে ভাইকে দেখে শান্ত হয়।নির বোনের ভয়ার্ত মুখটা দেখে এগিয়ে যায় বোনের কাছে এক হাত দিয়ে আগলে নেয় বোনকে।

নিরঃমন খারাপ কেনো বুচি(আদূরে কন্ঠে)
নওমিঃজানিনা ভাইয়া।জানো কাউকে না খুব মনে পরে মনে হয় কেউ একজন খুব কাছে থেকেও দূরে। কেউ একজন আছে যাকে এই মন কাছে চায় খুব করে কিন্তু কে সে। খুব চেষ্টা করি পুরাতন কথা গুলো মনে করতে কিন্তু পারিনা। চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসে।
নিরঃফাকা বসে থাকিস তাই এইসব উল্টো পাল্টা চিনতা ঘুরে বেরায়। কালকে থেকে সকাল বেলা উঠে বাড়ির সব কাজ করবি। বসে থেকে মোটা হয়ে যাছিস(নাক টিপে)

নওমিঃআমি কাজ করবো। আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি দ্বারা

বলেই নওমি নির এর পিছা নিতে শুরু করে মারার জন্য। নির ও দেয় দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে দুইজন নিচে নেমে আসে। আদ্রিতা কফি নিয়ে কিচেন থেকে বের হছিলো তখনি নির দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আদ্রির পিছনে যেয়ে লুকিয়ে কানে কানে কিছু বলে ততক্ষনে নওমিও নিচে নেমে আসে দুই ভাই বোনের ধরাধরির মাঝেই নির আদ্রির গালে কিস করে দেয় দৌড়। নওমি সেটা দেখে হো হো করে হেসে উঠে আদ্রি লজ্জায় সেখান থেকে চলে যায়।

নির আদ্রিয়ান কে দেখেনিয়েছিলো নিচে তাই আদ্রিকে কানে কানে বলে দিলো আদ্রিয়ান বাহিরে।আদ্রি মনে মনে নির কে বকে বাহিরের দিকে চলে গেলো।

আদ্রি যেয়ে আদ্রিয়ান কে দেখে আদ্রিয়ান বসে বসে সিগারেট ফুকছে।আদ্রি রেগে আদ্রিয়ান এর হাত থেকে সিগারেট টেনে নিয়ে নেয়।

আদ্রিঃকি এই সব হ্যা কি এই সব ভালোই তো উন্নতি হয়েছে।
আদ্রিয়ানঃসোনাবাচ্চা তুই এই রাতে বাহিরে কেন বাসার ভিতরে যা।
আদ্রিঃচুপ একদম চুপ আর একদিন যদি দেখেছি এইসব ছাইপাঁশ গিলতে। তবে
আদ্রিয়ানঃতবে(ভ্রু কুচকে)
আদ্রিঃতবে আমিও খাওয়া শুরু করে দিবো(মাঝায় হাত দিয়ে)
আদ্রিয়ানঃতুই খাবি (হো হো করে হেসে দিয়ে).
আদ্রি নাক ফুলায়। আদ্রিয়ানঃখাবো না আর যা(আলতো হেসে আদ্রিয়ান বোনকে বুকে জরায় নিলো)

——–

পেটে হাত দিয়ে বিছানার এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না তার।বমি করতে করতে অবস্থা খারাপ।যে সময়টা একটা মেয়ে সবার সাপোর্ট চায় সে জায়গায় মেহের কে একাই সব সহ্য করতে হচ্ছে।

মেহেরঃকি হয়েছে বাবাটা ঘুমচ্ছোনা কেনো হাম মাম্মাম প্রচুর টায়ার্ড। একটু ঘুমাও। এই রাতে তোমার আইস্ক্রীম খাইতে ইচ্ছা হলো পাগল বাচ্চাটা। আচ্ছা চলো দেখি ফ্রীজে আছে কি না।

মেহের উঠে যেয়ে ফ্রীজ খুলে দেখে ফ্রীজে আইস্ক্রীম নাই। মেহেরঃআইস্ক্রীম তো নাই বাচ্চাটা আচ্ছা আজকে থাক কালকে খাওয়াবো কেমন
উফফ বাবার মতোই জেদী আচ্ছা চলো দেখি

মেহের মাথায় ওর্না পেচিয়ে বের হয়ে যায়। মেহের আশেপাশে তাকায়ে দেখে দূরের একটা ছোট সোপ। মেহের সেখানে যায়তেই পা দুইটা থমকে যায়। রিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু একা নয় তার পাশেই বসে আছে অত্যন্ত সুন্দরী এক রমনী।পরনে কালো শাড়ি পরি থেকে জেনো কোন অংশে কম লাগছেনা মেয়েটাকে।

মেহের এর চোখ দুইটাতে পানিতে টইটম্বুর হয়ে আছে। জেনো এই মহূর্তে জল গরিয়ে পরবে চোখ থেকে। রিয়াজ এর কোন দিকে খেয়াল নেই সে তো ব্যাস্ত নিজের হাতের ফোন চালাতে।

মেহেরঃখুব তো বলেছিলাম পারবো তোমাকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে কিন্তু কোথায় পারছি।বুকের ভিতর টা যে জ্বলে যাছে।সে তো কেবল তোমার পাশে দাড়িয়েছে তাতেই এই অবস্থা (মনে মনে কথা গুলো নিজেকে বলে)

মেহের এর ধ্যান ভাংগে দোকানদারের ডাকে
ঃআপামনি আপনাকে কি দিবো
মেহেরঃভ্যানিলা চকলেট স্ট্রোবেরি ম্যংগো সব মিক্স করে দেন (নিজেকে স্বাভাবিক করে)

উপস্থিত সবাই অবাক হয় হয়তো প্রথমবার কেউ এমন টা চেয়েছে।রিয়াজ মেহের এর কন্ঠ শুনে তাকায় সব চেয়ে বেশি অবাক হয় তার অর্ডার করা স্টাইলে। কারন মেহের স্ট্রোবেরি আর ম্যংগো আইস্ক্রীম সহ্য করতে পারেনা।

সেখানে থাকা এক বয়স্ক মহিলা মেহের দিকে যেয়ে মেহের এর থুতনি তুলে
মহিলাঃকি রে মা মুখের যে তেজ যে লাবণ্যতা কয় মাস চলছে হুম
মেহের ঘাবড়ে যায় পিছনে তাকিয়ে একবার রিয়াজ এর দিকে চায় রিয়াজ ও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে ও যে অবাক হয়েছে সেটা তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট।

মেহেরঃনা না আন্টি আপনি কি বলছেন এরকুম কিছুই না
(কথা কাটাতে)
মহিলাঃএই চুল তো আর এমনি এমনি পাকে নি রে মা। মেয়েদের মুখের এই উজ্জ্বলতা তখনি আসে যখন সে তার মাঝে অন্য কোন প্রান থাকে।

মেহের কি বলবে বুঝতে পারেনা। তখনি দোকানদার এর ডাক পরে। মেহের মহিলা কে বিদায় দিয়ে চলে যায়। রিয়াজ তার পাশে থাকা মেয়েটাকে যেতে বলে সেও মেহের এর পিছু নেয়।

হঠাৎ করে হাতে টান পরায় মেহের ভয় পেয়ে যায়। পিছনে ঘুরে রিয়াজ কে দেখে অবাক হয় সাথে খানিকটা ঘাবড়েও যায়

মেহেরঃতু তুমি এখানে। আর ধরেছো কেনো ছাড়ো
রিয়াজঃআগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।(হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে)
মেহেরঃকি কিসের প্রশ্ন হ্যা আর কিসের উত্তর।
(ঘাবড়ে যেয়ে)
রিয়াজঃকি হয়েছে তোমার
মেহেরঃকি করবা যেনে সেটা
রিয়াজঃমেহের কি হয়েছে
মেহেরঃহবু বউ কিন্তু মাশাল্লাহ খুব সুন্দর কোন হুর
রিয়াজঃআমার বউ তার থেকে হাজার গুনে সুন্দর(মনে মনে)কথা কাটাবা না
মেহেরঃতোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করিনা আর ভুলে যেও না তুমি নিজে সব শেষ করেছো।সো এই অধিকার আমার উপর খাটাবা না।

মেহের হাত ঝাড়া দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।রিয়াজ সেখানে দাঁড়ায় থাকে

রিয়াজঃতোমার এই এড়িয়ে যাওয়াটা আমার সামনে সব স্পষ্ট করে দিলো মায়াপরী। তোমাকে আমি কোন দিন ও ছাড়তাম না আর না তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বিয়ে করতাম। একটু সময় দিতে পারোনি। তুমি আমার কাছ থেকে এতো বড় একটা সত্যি লুকিয়ে একদম ঠিক করোনি।।।।(ডেভিল স্মাইল দিয়ে)

,
,
,
,
,
চলবে!!!!

জর এখনো কমে নি ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন রি চেক করা হয়নি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here