সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব-২৪

0
1328

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ২৪
,
,
,
,
,
আয়নার সামনে দাঁড়ায় থেকে নিজেকে পর্যবেক্ষক করছে আদ্রি।পরনে তার ওফহোয়াইট রংগের ডিজাইনার শাড়ি চুল গুলোতে সাদা আর্টিফিশিয়াল ফুল কালো চুলে ফুল গুলো দেখতে অসম্ভব সুন্দর দেখাছে। চোখে টান টান করে কাজল দেওয়া।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। দুই হাত ভর্তি চুড়ি রিনঝিন করছে।

আদ্রির কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে সেখানে আগমন হলো নির এর। নির এর পরনেও ওফ হোয়াইট কালারের টি শার্ট হোয়াইট কালারের জ্যাকেট ব্লাক জিন্স। এক কথায় অসম্ভব সৌন্দর্য ঘিরে ধরেছে।স্পাইক করে রাখা চুল গুলো যেনো নিরের সৌন্দর্য দ্বিগুন করে দিয়েছে। আদ্রির খুব ইচ্ছা করছে নির এর গালে লেপ্টে থাকা খোচা খোচা দাড়ি গুলোর উপরে হাত বুলাতে কিন্তু তা কি সম্ভব।

নির মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে তার আদর পাখিকে।কতো দিনের তৃষ্ণা মেটাছে সে নিজেও জানেনা। তার বড্ড ইচ্ছা ছিলো তার আদর পাখিকে এই সাজে দেখার আজকে তার ইচ্ছা পূরণ হলো এখন যদি মৃত্যুও আসে সেটাতেও কোন আফসোস থাকবে না তার।

নির আদ্রির সামনে হাটু গেরে বসে পড়তেই ভয়ে আদ্রি দুই কদম পিছিয়ে যায় সেটা দেখে নির এর ভ্রু কুচকে যায় আপনাআপনি।

নিরঃকি সমস্যা পেছালেন কেনো।
আদ্রিঃআ আপনি এই ভাভাবে বসলেন কে কেনো (কথা বলতে বলতে বার বার কেপে উঠছে জিহবা)
নিরঃতোতলাছো কেন আমি তোমাকে ধমক দিলাম নাকি বকলাম করলাম টা কি সে ইট ড্যাম ইট কিসের ভয় সামনে আগাও বলছি (রেগে হুংকার দিয়ে উঠে)

আদ্রিকে এগুতে না দেখে নির আদ্রির হাত ধরে টেনে তাকে সামনে নিয়ে এলো। আদ্রির বাম পা তুলে নিজের হাটুর উপর নিতে নিলেই আদ্রি বাধা দেয়।
নির এবার রেগে জোরে টান দেয় আদ্রি কোনরকমে নিজেকে সামলায় তার আর সাহস হয়না পা টা সরানোর নির যে রকম একটা রাগী লুক দিয়েছে যে আদ্রি ভিজা বিড়াল।

নির সযত্নে আদ্রির দুই পায়ে সুন্দর করে আলতা পড়ায় দিলো।আদ্রি অবাক চোখে দেখছে। নির কিছুনা বলে আদ্রির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

দুইজনে পাশাপাশি হাটছে রাত তখন ১০ টা। দুইজনে কিছুদুরে এসে একটা রিক্সা নিলো। দুইজনে পাশাপাশি বসে পড়লো আদ্রি ইতস্ত হয়ে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসতে নিলেই নির আদ্রির কোমড় জড়িয়ে নিজের দিকে টেনে নিলো।

আদ্রি অবাক চাহনী নিয়ে দেখলো। চাঁদের আলোতে নির এর মুখটা যেনো মুক্তার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।আদ্রি খুব ইচ্ছা করছে তার পাশে বসা ওই অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ টার বুকে নিজের মাথা টা রাখতে কিন্তু সেটা কি সম্ভব। নিজের পাশে বসিয়েছে এটা কি অনেক নয় তার কি আদৌও অধিকার আছে নির এর পাশে বসার।

রিক্সার ঝাকনিতে আদ্রি পরে যেতে নিলেই নির আদ্রিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

দুইজন এসে পৌঁছায় নিস্তব্ধ এক স্বপ্নপুরিতে। আদ্রির মুখে বিস্ময় আলাদা এক সৌন্দর্যতে যেনো জায়গাটা ভরপুর।

নির তালি বাজাতেই সেখানে লাইট জ্বলে উঠে। নির আদ্রির হাত ধরে তাকে নিয়ে যায় জায়গাটির মাঝখানে। আদ্রি ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগে।চোখ মুখে উপচে পড়ছে আনন্দ।

আদ্রিঃওয়াও স্যার ইটস সো বিউটিফুল। জাস্ট ওয়াও এই সব আপনি করেছেন স্যার কার জন্য (উত্তেজনায় বের হয়ে যায় মুখ থেকে)
নিরঃআমার প্রিয়তমার জন্য
(কানের কাছে মুখ নিয়ে)

মহূর্তে মুখটা অন্ধকার হয়ে যায় আদ্রির। সে ভেবেছিলো সে তার নাম নিবে সে এটা আর বুঝলোনা যে প্রিয়তমা বলতে সে তাকেই বুঝিয়েছে।

আদ্রিঃওহ তাহলে আমাকে এখানে আনলেন কেনো।
(অভিমানী কন্ঠে)
নিরঃআচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়েছি আল্লাহ মানুষ এতোটা বোকা হয় এই মেয়েকে না দেখলে জানতাম ই না (মনে মনে) টেস্ট করানোর জন্য যদি তোমার ভালো না লাগে তাহলে আমি আমার প্রিয়তমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবো(মজা করে)
আদ্রিঃওহ। আপনি নিয়ে আসেন স্যার আপনার প্রিয়তমা কে অনেক সুন্দর ভিউ।
(আদ্রি কথা টা বলে চলে যেতে নিলেই নির আদ্রির শাড়ির আচল ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসেনি

নির কিছু বলতে যাবে তার আগেয় সেখানে কিছু লোক আসে।আদ্রি ঘাবড়ে যায়। নির ও অবাক হয় কারন এই জায়গাতে কোন কেউ আসতে পারবেনা কারন জায়গাটা আগে থেকেই নির তার গার্ডসদের দিয়ে জায়গাটা ক্লিয়ার করায় দিয়েছিলো

লোকগুলোর মাঝ থেকে বুড়ো করে একটা লোক সেখানে আসে
বুড়াঃতোমরা এখানে নষ্টামি করতে আসো হ্যা তোমাদের জন্য আমাদের এতো সুন্দর গ্রামটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আর না । এই এদের ধোর ধরে নিয়ে চল এদের আজকেই বিয়ে দিবো
(লোক গুলোকে ইশারা করে)

নির এর প্রথমে রাগ উঠলেও পরে বিয়ের কথা শুনে কিছু একটা ভাবলো তারপর শান্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো।আদ্রি ঘাবড়ে যায়
আদ্রিঃকি বলছেন এসব। আপনারা ভুল ভাবছেন আমাদের মধ্যে এমন কোন সম্পর্ক নেই। উনি আমার স্যার হয়।প্লিজ আমার সাথে বিয়ে দিয়ে উনার সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিবেন না।

লোকগুলো শুনলোনা দুইজনকে নিয়ে যাওয়া হলো।

—–

ঘুমন্ত নওমির মায়াবী মুখ দেখছে আদ্রিয়ান পরম সুখে পড়ার নাম করে ভিডিও কল দিয়েছিলো কিন্তু নওমি ঔষধ এর ইফেক্ট এ ঘুমিয়ে পরে পড়তে পড়তে।আর সেটার সুযোগ নিয়ে আদ্রিয়ান তার প্রান ভোমর কে দেখছে।

আদ্রিয়ানঃআর পারছিনা তোর কাছ থেকে দূরে যেতে খুব তাড়াতাড়ি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো আই প্রমিজ পিচ্চিটা।
(চমৎকার এক হাসি দিয়ে)

ঘুমের মাঝেই নওমির ঠোঁটের কোনে আলাদা এক প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো।

—-

রিয়াজ এর রুমে বসে আছে মেহের।হস্পিটাল থেকে ডাইরেক্ট কাজী অফিসে যেয়ে পুনরায় বিয়ে করে মেহের কে নিজের বাড়িতে উঠেছে রিয়াজ আজকে আর মেহের বাধা দেয়নি। সে চায়না তার সন্তান বাবাহীন অবৈধ বলে বেরে উঠুক।

রিয়াজ এর আম্মু মেহের কে দেখেই রেগে গেছিলেন মারার জন্য তেরে আসতে নিলেই রিয়াজ বাধা হয়ে দাড়ায়। রিয়াজ ওর মা কে মেহের আর ওর বাচ্চার কথা বলতেই কিছু না বলে তিনি ভিতরে চলে যায়।

তখন থেকে রিয়াজ এর আম্মু রুমের ভিতরেই আছে।

—-
রিয়াজ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে মেহের কে মন মরা হয়ে বসে থাকতে দেখে তার কাছে যায়

রিয়াজঃমন খারাপ আমার বউ টার হুম(মুখ তুলে)
মেহেরঃআন্টি সকাল থেকে কিছু খায়নি।এই বয়সে না খেয়ে থেকে যদি বিপি ফোল করে তখন।

রিয়াজ মেহের এর কথায় হো হো করে হেসে দেয়।মেহের ভ্রু কুচকে তাকায় রিয়াজ এর দিকে
মেহেরঃএদিকে চিন্তায় আমার কিছু ভালো লাগছে না আর তুমি হাসছো(রিয়াজ এর বাহুতে কিল ঘুষি দিয়ে)
রিয়াজঃআচ্ছা হাসবোন।আচ্ছা তোমাকে একটা গল্প শোনায়।তখন আমার ১৬ বছর। একদিন আব্বু আম্মুর মধ্যে তুমুল ঝগড়া লাগে হ্যা। আব্বু রেগে বেরিয়ে যায় আম্মুও দরজা বন্ধ করে বসে।যায় আমি আর আপু ভয় পেয়ে যায়। সারাদিন আম্মু।দরজা খুলেনা। আব্বু আসে রাত ১২ টার দিকে এসে এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখে আম্মু বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
আর তার আশেপাশে বিভিন্ন রকমের খাবারের প্যাকেট।

আম্মু ছোট বাচ্চাদের মতো চকলেট পেস্ট্রি এগুলো পছন্দ করে আর না খেয়ে থাকতে পারেনা।তাই এগুলো সব সময় আম্মুর।রুমের মিনি ফ্রীজে থাকে।আর সপ্তাহে ৪ দিন ই আব্বুর সাথে ঝগড়া করে রুমে বন্ধি হয়ে থাকে এটা নরমাল বিষয় বুঝলেন ম্যডাম এবার একটা হাসি দেন।

মেহের ও হেসে দেয়।রিয়াজ মেহের কে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

—-
আদ্রি কান্না করতে করতে অবস্থা খারাপ। তার মাথায় একটাই চিন্তা তার জন্য আজকে নির এর জীবন নষ্ট হয়ে গেলো কিছু ক্ষন আগেই নির আর আদ্রির বিয়ের কার্জকর্ম সম্পূর্ণ্য হয়েছে তখন থেকেই কেদে যাচ্ছে আদ্রি।

নির আর না পেরে যেটা করলো সেটাতে আদ্রির চোখ দুইটা বড় বড় হয়ে গেলো কান্না উধাও হয়ে গেলো,!!!!

চলবে!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here