#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৭
হেমন্তি, ইলহাম,কেয়া একসাথে রুমের বাহিরে চলে আসলো আর দেখলো ইমজাদ আর তার পুরো পরিবার হলরুমে বসে আছে।ইলহাম হেমন্তির পাশে দাড়িয়ে আছে ইমজাদের নজর সেখানে পরতেই সঙ্গে সঙ্গে নজর সরিয়ে মনে মনে বললো,
~নতুন জীবনে পুরনো কথা না মনে করাই শ্রেয়।
অনুর মা বললেন,
~আপনাদের আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?
ইমজাদের বাবা বললেন,
~নাহ কোনো অসুবিধা হয়নি।
অনুর মা বললেন,
~আপনাদের বড় ছেলে আর বউ কোথায়?
ইমজাদের মা বললেন,
~কিছু কাজের কারণে আসতে পারেনি বিয়েতে অবশ্যই চলে আসবে।
অনুর মা বললেন,
~ঠিক আছে কিন্তু আজ আসলে আমি অনেক খুশী হতাম।
ইমজাদের মা বললেন,
~আমার ছোট বউমা কোথায়?
অনুর মা বললেন,
~রুমে আছে আপনি আসেন আমার সাথে।
অনুর মা ইমজাদের মাকে নিয়ে অনুর রুমে চলে গেলো দেখা করানোর উদ্দেশ্যে।কেয়া ইমজাদের পাশে বসে বললো,
~আপনি এতো চুপ করে আছেন কেন?কথা বলতে পারেন না আপনি বোবা।
ইমজাদ কেয়ার কথা শুনে বললো,
~আমি বোবা না আসলে কথা বলার মতো মানুষ নেই এখানে।
ইলহাম এগিয়ে এসে ইমজাদের সাথে হাত মিলিয়ে বললো,
~কেমন আছেন আপনি?
ইমজাদ বললো,
~ভালো আপনি কেমন আছেন?
ইলহাম বললো,
~ভালো। আপনি কী কোনো কারণে আনইজি ফিল করছেন?
ইমজাদ বললো,
~আসলে নতুন পরিবেশ তো তাই।
ইলহাম কেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তুমি আপুর কাছে যাও আমি একটু কথা বলবো।
কেয়া সেখান থেকে চলে গেলো ইলহাম ইমজাদের পাশে বসে বললো,
~হেমন্তি বললো আপনি তাদের কলেজের সিনিয়র।
ইমজাদ বললো,
~জ্বী।
ইলহাম বললো,
~তাহলে তো অনুকে চিনেন আমার মতে আপনার ভিতর জড়তাটা কম থাকার কথা কিন্তু আমি তো দেখছি একদম উল্টো সব।
ইমজাদ কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললো ইলহাম বললো,
~আপনি চিন্তামুক্ত হয়ে এই দিনটাকে ইনজয় করুন কারণ এ দিনটা আপনার জীবনে বার বার আসবেনা।
ইমজাদ তার দিকে অবাক নয়নে তাকালো ইলহাম হালকা হেসে ইমজাদের কাঁধে হাত রেখে সেখান থেকে উঠে পরলো।
___________________♥_____________________
খাবারের পরই অনুকে নিয়ে আসা হলো ইমজাদের পাশেই তাকে বসিয়ে দেওয়া হলো।ইমজাদের মা হাতের আংটির বক্সটা ইমজাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
~নে পরিয়ে দে অনুকে।
ইমজাদ আংটিটা নিয়ে অনুর দিকে ফিরতেই অনু হাত এগিয়ে দিলো ইমজাদ আংটি পরিয়ে দিতেই অনু সবার অগোচরে ইমজাদকে চোখ টিপ দিলো।ইমজাদ আশেপাশে তাকিয়ে একটা ঢোক গিললো অনুও ইমজাদের হাতে আংটি পরিয়ে দিলো।সবাই খুশী হয়ে হাত তালি দিলো এরপর বিয়ের তারিখটাও ঠিক করে ফেলা ঠিক ১০ দিন পর বিয়ের তারিখ দেওয়া হলো।সবাই অনু আর ইমজাদকে দোয়া করতে লাগলো হেমন্তি আর ইলহাম একসাথে গিয়ে অনু আর ইমজাদের সাথে দেখা করে আসলো।হেমন্তি পারভীন বেগমের পাশে দাড়িয়ে বললো,
~মা,তোমাদের সাথে এই ছেলেটাই কী তানভীর?
পারভীন বেগম বললো,
~হুম আসলে এতো আয়োজনে তোকে পরিচয় করাতে পারেনি।
হেমন্তি বললো,
~আমি পরে দেখা করে নেবো নে আজ রাতও অনেক বেশি হয়ে গেছে।
পারভীন বেগম বললেন,
~আমরাও রওনা দিবো।
ইলহাম বললো,
~সবাই একসাথে গাড়িতে চলে যাবো তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।
আফজাল হোসেন বললেন,
~তার কোনো দরকার নেই আমরা যেতে পারবো আর তানভীর তো রয়েছেই আমাদের সাথে কোনো টেনশন করো না।
ইলহাম বললো,
~ঠিক আছে বাবা আপনি বলছেন তাই আর জোর করলাম না।
ইমজাদরা চলে যাওয়ার পরপরই হেমন্তিরাও বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।হেমন্তি আর ইলহাম গাড়ি নিয়ে রওনা হলো বাসার দিকে আর তানভীর দুটো রিক্সা নিয়ে হাজির হলো সিএনজি পায়নি তাই।পারভীন বেগম আর কেয়া এক রিকশায় উঠে বসলো কেয়া ওড়নাটা তানভীর কেয়ার কোলে উঠিয়ে দিয়ে বললো,
~সাবধানে বসো নাহলে পরে যাবে।
কেয়া ওড়নাটা শক্ত করে ধরলো আর মনে মনে বললো,
~এতোটাও খারাপ না যতটা আমি ভেবেছিলাম।
রিকশা চলতে শুরু করলো তানভীর আর আফজাল হোসেন অন্য রিকশায় উঠে বসলেন।
হেমন্তি আর ইলহাম বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে দুজনই শুয়ে আছে বিছানায় হঠাৎ হেমন্তি ইলহামের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে ইলহামের দিকে তাকালো।ইলহাম বললো,
~ঘুমিয়ে পরেছিলে?
হেমন্তি বললো,
~নাহ ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম।
ইলহাম হেমন্তিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
~তুমি খুশী তো অনুর জন্য?
হেমন্তি বললো,
~ইমজাদ ভাইয়া ভালো ছেলে ওকে সুখী রাখবে।
ইলহাম হেমন্তির ঘাড়ে মুখ গুজে ফিসফিস করে বললো,
~আমার না একটা ইচ্ছে জেগেছে মনে।
হেমন্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~কী ইচ্ছে?
ইলহাম ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে বললো,
~তোমায় কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা চরম ভাবে গ্রাস করছে আমায় বেগমজান।
“বেগমজান” নামটা শুনে আরো লজ্জা পেয়ে গেলো হেমন্তি সে ইলহাম থেকে সরে আসতে নিবে তখনই ইলহাম তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
~বেগমজান এখন তো আমার কাছে ধরা দিতেই পারেন।
হেমন্তি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো ইলহাম হেমন্তির কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে তার গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো। হেমন্তি ইলহামকে জড়িয়ে ধরলো ইলহাম বললো,
~এটাকে তোমার সম্মতি ভেবে নিলাম।
_________________♥___________________
ছুটির দিন বিধায় ইলহামের অফিসের আজ তাড়া নেই তাই হেমন্তিও ঘুমে বিভোর গতকাল রাতে যে ভালোবাসার সাগরে ডুব দিয়েছিল তার কারণেই ঘুমটা আরো ঘারো প্রভাব ফেলেছে।হঠাৎ ফোনের রিংটনে হেমন্তি পিটপিট করে চোখ খুললো আর দেখলো সে ইলহামের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে।তা দেখে হেমন্তি আরো লজ্জা পেলো কালকে রাতের কথা মনে পরতেই তার গাল দুটো লাল হয়ে যাচ্ছে।আবারো ফোনের আওয়াজে তার ধ্যান ভাঙ্গলো ইলহামের ফোন বাজছে তাই সে ধীরে ধীরে ইলহামকে ডেকে তুলতে লাগলো,
~শুনুন আপনার ফোন বাজছে।
দুবার ডাকতেই ইলহামের ঘুম ছুটে গেলো সে ফটফট করে চোখ খুলতেই হেমন্তিকে দেখতে পেলো আর মুচকি হেসে হেমন্তির গালে স্পর্শ করলো।হেমন্তি বললো,
~আপনার বাজছে।
ইলহাম হেমন্তিকে ছেড়ে দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো হিয়ার নাম জ্বলজ্বল করছে।ইলহাম ফোন রিসিভ করতেই হিয়া বললো,
~ইলহাম,বাবা রওনা দিয়েছে আমি অনেক বললাম বিকেলে আমাদের সাথে চলুন কিন্তু শুনলেন না। তার এখনই তার বউমাকে দেখতে হবে।
ইলহাম বললো,
~ঠিক আছে।
হিয়া বললো,
~বিকেলে আমি আর তোর ভাইয়া আসছি।
ইলহাম বললো,
~আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
বলেই ফোন রেখে দিলো ইলহাম বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো হেমন্তি নেই। সে ওয়াশরুম থেকে পানি পরার আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারলো হেমন্তি ওয়াশরুমে আছে।ইলহাম আবার গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো মাথা ব্যাথা করছে প্রচুর তাই চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।হেমন্তি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলো রান্নাঘরে আজাদ সাহেব আসছেন সে শুনেছেন তাই সে নাস্তা তৈরি করতে লাগলো।আজ দুপুরের খাবারটা সে আজাদ সাহেবের পছন্দে বানাবে ভেবেছে তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।হেমন্তি হাতের কাজ রেখে দরজার কাছে গিয়ে তা খুলে দিলো আজাদ সাহেব হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়েছেন হাতে বড় ইলিশ মাছ নিয়ে।হেমন্তি বললো,
~বাবা,আমার কথা আপনার মনে পরেছে?
আজাদ সাহেব বাসায় প্রবেশ করে বললেন,
~আমার বউমার কথা মনে পরেছে দেখেই তো চলে আসলাম।
হেমন্তি বললো,
~ইলিশ মাছটা বেশ তাজা লাগছে।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আসলে ইলিশ পোলাও খেতে মন চাইছে তাই নিয়ে এলাম।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে বেশ আজ ইলিশ পোলাও করা হবে।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আমিও কিন্তু তোমায় সাহায্য করবো।
হেমন্তি বললো,
~সাহায্য পরে করবেন আগে নাস্তাটা করে নিন।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আচ্ছা ইলহাম কোথায়?
হেমন্তি বললো,
~ঘুমিয়ে আছে।
আজাদ সাহেব বললেন,
~জাগিয়ে তুলো আজ এক সাথে নাস্তা করবো।
অতঃপর ইলহাম,হেমন্তি আর আজাদ সাহেব একসাথে বসে নাস্তা করে নিলো ইলহাম বললো,
~আপনি কেন বাজারে গিয়েছিলেন একা একা আমাকে বললেই আমি এনে দিতাম।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আমার মন চেয়েছে আমি এনেছি আর শোন হিয়ারা বিকেলে আসবে।
ইলহাম বললো,
~জানি ফোন করেছিল।
এভাবেই দেখতে দেখতে ১০দিন কেটে গেলো অনুর বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।সকালেই হেমন্তি রেডি হয়ে বসে আছে অনুর বাসায় যাবে বলে হিয়াও তার সাথে যাবে অনু হিয়াদেরও ইনভাইট করেছে।হেমন্তি ইলহামকে বললো,
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)