#দ্বিপ্রহরের_রাত্রি
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
#পর্ব_৫_এবং_৬
৫.
ছোট্ট ড্রয়িংরুমটায় এখন হৈচৈ-য়ের বদলে নিরবতা বিরাজমান। সামনে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে শ্রুতি। কলিজা কাঁপছে তার। সত্যিটা জানার পর পরিস্থিতি কোন আকার ধারণ করবে সেটা সে চিন্তাও করতে পারছে না। অনেকক্ষণ যাবৎ দুজনকেই নিশ্চুপ থাকতে দেখে সুলায়মান রহমান বললেন,’কীরে কী নাকি বলবি? বল।’
‘বলেন সব।’ শ্রুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল অরিত্র। শ্রুতি ভীতু দৃষ্টিতে একবার তার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নত করে নিল। অদিতি একবার স্বামীর দিকে তাকিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,’ও কী বলবে? তুই ওকে এখনও আপনি বলছিস কেন? ঝগড়া হয়েছে?’
অরিত্র নিজেই বলল,’মা, একটা কথা তোমাদের বলা হয়নি।’
শ্রুতির হাত-পা কাঁপছে অনবরত। অদিতি বেগম জিজ্ঞেস করলেন,’কী কথা?’
অরিত্র কয়েক সেকেণ্ড নিশ্চুপ থেকে হো হো শব্দ করে হেসে ফেলল। এতে উপস্থিত সবাই বেশ হকচকিয়ে যায়। এমনকি শ্রুতি নিজেও। ভড়কে গিয়ে সুলায়মান রহমান জিজ্ঞেস করেন,’হাসছিস কেন?’
‘মজা করলাম আব্বু। আমার আর শ্রুতির হুটহাট মানুষকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার অভ্যাস আছে। এটাই তোমাদের বলা হয়নি।’
শ্রুতি অবাক হয়ে তাকায় অরিত্রর দিকে। বাকিরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। অদিতি বেগম মেকি রাগ দেখিয়ে বলেন,’একদম তোর মতো একটাকেই খুঁজে এনেছিস।’
শ্রুতির বিস্ময় কাটেনি তখনও। এদিকে বাকিরা আবার তাদের আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে শ্রুতিকে চোখ টিপ দেয় অরিত্র।
সারাদিনে অরিত্রকে আর একা পেল না শ্রুতি। এমনকি সে নিজেও একা হতে পারেনি। মানুষজন সবসময়ই তার সাথে ছিল। যদিও তাদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। বরঞ্চ ফ্ল্যাটটা ছোটো হওয়াতেই মানুষজন বেশি মনে হচ্ছিল। আত্মীয়-স্বজনরা খেয়ে চলে যাওয়ার পর বাড়ির সবাই খেতে বসে। এখানে শ্রুতি নববধূর মতোই মাথায় লম্বা ঘোমটা এঁটে বসে ছিল। গরমে তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তার মধ্যে পরনে আবার শাড়ি। অদিতি বেগম লক্ষ্য করে বলেন,’এখন আর মাথায় ঘোমটা দিতে হবে না। ঘোমটা ফেলে দাও।’
শ্রুতি মাথা নাড়িয়ে বলল,’সমস্যা নেই। ঠিক আছি।’
‘কই ঠিক আছো? গরমে তো চোখ-মুখের অবস্থা কাহিল। দেখি ঘোমটা ফেলো।’ তিনি নিজেই ঘোমটা সরিয়ে দিলেন। ঘর থেকে একটা ছোট্ট টেবিল ফ্যান এনে পাশে রাখলেন। বাতাস লাগছিল শ্রুতি আর অরিত্রর গায়ে। অনিক তখন নিজের চেয়ার ছেড়ে এসে বলে,’ভাইয়া আমি এখানে বসব। বাতাস খাব।’
অরিত্র মুখ বিকৃত করে বলল,’এই মোডার জ্বালায় শান্তি নাই। সারাক্ষণ খাই খাই করে। এখন বাতাসও গিলবে।’
বাধ্য হয়ে অরিত্রকে উঠে অন্য চেয়ারে বসতে হলো। সুলায়মান রহমান খেতে খেতে বললেন,’এখন একটু কষ্ট করে এডজাস্ট করে নাও মা। একার ইনকাম বোঝোই তো। অরিত্রর চাকরী হয়ে গেলে আমরা একটা বড়ো বাড়ি নেব। তখন আর তোমার কষ্ট হবে না।’
শ্রুতি আপ্লুত হয়ে পড়ে আবেগে। মানুষগুলো এত কেন ভালো? সে বলল,
‘আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না আঙ্কেল।’
‘আঙ্কেল? কে আঙ্কেল?’
শ্রুতি থতমত খেয়ে বলল,’আব্বু।’
আজ রাতে দুজনকে এক ঘরেই থাকতে দেওয়া হয়েছে। এতে ঘোর আপত্তি রয়েছে অরিত্রর। শ্রুতি জিজ্ঞেস করল,’আপনি সবাইকে সত্যিটা বললেন না কেন?’
‘মায়া হলো আপনার জন্য ‘
‘ও।’
‘আপনি মায়ের কাছে যান।’
‘মানে?’
‘মানে আপনি মায়ের রুমে মায়ের সঙ্গে ঘুমাবেন। আপনি আর আমি একসাথে এক ঘরে থাকতে পারব না।’
‘কেন?’
‘কেন মানে? আপনি কি শুধু বড়ো হয়েছেন হাতে-পায়ে? আমি কোনো সুপুরুষ বা উত্তম পুরুষ কোনোটাই নই।’
‘তাতে আমার কী?’
‘আজব! আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে? বাইরের কেউ না জানুক; আমরা তো জানি আমরা বিবাহিত নই।’
‘ঠিক।’
‘কী টিকটিক ঠিকঠিক শুরু করেছেন? যান মায়ের কাছে।’
‘গিয়ে কী বলব?’
‘আমায় জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনার তো মিথ্যে কথার ঝুলি আছে। সেখান থেকেই বের করবেন।’
শ্রুতির মুখটা একটুখানি হয়ে যায়। মুখটা কালো করেই বলে,’আপনি সবসময় এভাবে কথা বলেন কেন? অপমান করেন শুধু।’
‘অপমান করিনি। আপনি এবার যান। আমার ঘুম পেয়েছে।’
অরিত্রর কথামতো শ্রুতি সেটাই করল। অদিতি বেগমও কিছুটা খুশি হন, শ্রুতি তার কাছে থাকতে চেয়েছে তাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনিকের সাথে ছাদে যায় শ্রুতি। অনিক হাঁপিয়ে পড়েছিল তাই ছাদের ফ্লোরেই পা ছড়িয়ে বসে পড়ে। পাশে বসে পড়ে শ্রুতিও। কিছু্ক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে শ্রুতি জিজ্ঞেস করে,’তোমার ভাই এখনও ঘুমায়?’
‘হুম।’
‘আচ্ছা অনিক একটা কথা বলো তো।’
‘কী কথা?’
‘তোমার ভাইয়ার কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল?’
‘গার্লফ্রেন্ড কী?’
শ্রুতি চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে থাকে অনিকের দিকে। পরক্ষণেই আবার হেসে ফেলে। অনিকের চুলে হাত বুলিয়ে বলে,’হায়রে বাচ্চাটা! আচ্ছা এইটা বলো, ঢাকায় কোথায় কোথায় ঘুরেছ?’
‘অনেক জায়গায় ঘুরেছি ভাবি।’
‘কিন্তু আমি কোথাও ঘুরিনি।’ মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলল শ্রুতি। কিছু সময় মাত্র আবারও উচ্ছসিত হয়ে বলল,’একটা কাজ করে দেবে?’
অনিক মাথা নাড়িয়ে বলল,’দেবো।’
‘তুমি বাড়িতে বলবে যে বেড়াতে যেতে চাও। তারপর আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাব।’
‘আচ্ছা।’
সকালে নাস্তার টেবিলে ঘটল অন্য ঘটনা। শ্রুতি ভেবেছিল এক আর অনিক বলেছে আরেক কথা। সকলের সামনে অনিক বলেছিল,’আব্বু, ভাবি না ঘুরতে যেতে চায়। আমাকে বলতে বলেছে। আমরা সবাই ঘুরতে যাব।’
এ কথা শোনার পর সকলের দৃষ্টি এসে পড়ে শ্রুতির দিকে। এদিকে লজ্জায় তার মরি মরি অবস্থা। অদিতি বেগম বললেন,’তা তো যাবেই। তবে আমরা সবাই না। অরিত্র আর শ্রুতি যাবে হানিমুনে।’
হানিমুনের কথা শুনে বিষম খায় অরিত্র। নাক-মুখ দিয়ে খাবার বের হওয়ার জোগার। চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। অদিতি বেগম পানি খাইয়ে দেন দ্রুত। পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। স্বগতোক্তি করে বলেন,’খাওয়ার সময় কে যে নাম করে!’
বিষম খেলে প্রায় প্রতিটি বাঙালির ধারণা কেউ হয়তো নাম করেছে। কিন্তু এই কথার সত্যটা কতটুকু তা আদতে জানা নেই।
অরিত্র কোনো রকম পরিস্থিতি সামলে নিয়ে বলল,’এখন কোনো হানিমুনের প্রয়োজনের নেই মা। আগে আমার চাকরী হোক।’
‘তুই চাকরীর জন্য ভাবছিস কেন? টাকা তো আমি দেবো।’ বললেন সুলায়মান রহমান।
এখানে অরিত্র ইমোশোনাল হওয়ার ভান ধরে বলল,’বাবা, নিজেরও ইচ্ছে, স্বপ্ন বলতে কিছু থাকে। প্লিজ! এ ব্যাপারে কোনো জোর কোরো না।’
সুলায়মান রহমানও কিছু বললেন না। ছেলের ইমোশোন বুঝতে পারলেন। এদিকে শ্রুতি মনে মনে বলে,’আরিব্বাস! এ তো দেখি আমার চেয়েও বড়ো অভিনেতা।’
খাওয়ার পরে সুলায়মান রহমান অনিককে নিয়ে চলে যান। ওকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তিনি অফিসে যাবেন। অদিতি বেগম ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শ্রুতিই জোর করে পাঠিয়েছে। আর নিজে টেবিল পরিষ্কার করছে। অরিত্র সোফায় বসে টিভি দেখছিল। শ্রুতি টেবিল পরিষ্কার করতে করতে অরিত্রকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে,’কে যেন বলেছিল আমার একাই নাকি মিথ্যা বলার অভ্যাস আছে।’
অরিত্র শুনেও ওর কথায় কান দিচ্ছিল না। শ্রুতিও সমানতালে উস্কাচ্ছিল। যখন একান্তই আর অনিক চুপ করে থাকতে পারছিল না তখন বলল,’শুনেন মিস, এই মিথ্যাটা না বললে কী হতো বুঝতে পারছেন তো?’
শ্রুতি কাঁধ নাড়িয়ে বলে,’না বোঝার কী আছে এখানে?’
‘আচ্ছা মেয়ে মানুষ তো আপনি! সবকিছুই সহজভাবে নেন।’
‘সহজ জিনিস সহজভাবে নেব না? আমি তো জানতামই আপনি এদিকটা ম্যানেজ করে নেবেন। তাইলে বলে এমন নাটক করবেন সেটা তো ধারণায় ছিল না।’
‘শুনেন, আমি কোনো নাটক করিনি। এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না।’
‘বুঝি, বুঝি।’
‘নিকুচি করেছি আপনার বোঝার।’
অরিত্র মেকি রাগ দেখিয়ে টিভি বন্ধ করে চলে যায়। নয়তো শ্রুতির কবল থেকে মুক্তি পাওয়া তো অসম্ভব প্রায়। শ্রুতিও বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসে।
______________
৬.
সময়ের প্রবহমানে কেটে গেছে দেড় মাস। এই বাড়িতে শ্রুতির খারাপ লাগেনি একটুও। সবাই এত এত পরিমাণে বেশি ভালোবেসেছে যে, সে সকলের মায়ায় পড়ে গেছে। কিন্তু তবুও কোথাও যেন একটা একাকিত্ববোধ, শূন্যতা। এই বাড়ির সকলে যতই ভালোবাসুক না কেন নিজের বাড়ির জন্য মন কেমন করত সবসময়। এই দেড় মাস সে অদিতি বেগমের সঙ্গেই ঘুমিয়েছে। এতে তার মনে সন্দেহ জন্মেছিল। জিজ্ঞেসও করেছিল আসল ঘটনা কী! শ্রুতি বলতে পারেনি। হয়তো আশ্রয় হারানোর ভয় কিংবা কোনো অদৃশ্য মায়ার টানে। কিন্তু এভাবে আর কত দিনই বা চলবে? শ্রুতির আর মন মানছে না। বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে। এই ব্যাপারে অরিত্রর সঙ্গে কথা বলতে হবে। অরিত্রর চাকরী হয়েছে পনেরো দিন হবে। অফিস ছুটি পাঁচটায়। এখন ঘড়িতে তিনটে বাজে। আরও দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে অদিতি বেগমকে সব জানানো প্রয়োজন।
শ্রুতি ছোটো ছোটো কদমে রান্নাঘরে আসে। রান্না করছিলেন তখন তিনি। শ্রুতি কিছু্ক্ষণ নিশ্চুপ হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে।
‘কী ব্যাপার? কিছু বলবে?’ শ্রুতিকে খেয়াল করে জিজ্ঞেস করলেন অদিতি বেগম। আরও কিছু্ক্ষণ সময় নিশ্চুপ থেকে শ্রুতি বলল,’কিছু বলতে চাই মা।’
‘হ্যাঁ, বলো।’
‘যদি আপনি রাগ করেন?’
‘করব না। তুমি বলো।’
‘যদি জানতে পারেন, আমার আর অরিত্রর বিয়ে হয়নি?’
এতক্ষণ অদিতি বেগম কাজ করতে করতে কথা বলছিলেন। এবার কাজ রেখে তিনি শ্রুতির দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। কেননা এখানে শ্রুতির জন্য বড়ো ধরণের চমক অপেক্ষা করছিল। শ্রুতি ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। অদিতি বেগম বললেন,’যদি বলি আমি সত্যিটা জানি?’
শ্রুতি ঘাবড়ে যায়। নিরুত্তর হয়ে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অদিতি বেগম শ্রুতির চিবুকে হাত বুলিয়ে বললেন,’মায়ের থেকে কি কিছু লুকিয়ে রাখা যায় বলো তো? মা সবসময় তার সন্তানদের চিনতে পারে। মন পড়তে পারে। যদি সে হয় বন্ধুর মতো। তুমি আসার কিছুদিন পর থেকেই সত্যিটা আমি আর অনিকের বাবা জেনেছি। আমার পাগল ছেলে ভেবেছিল সত্যিটা বললে যদি তোমায় না থাকতে দেই? এজন্য সেও প্রথমে বলতে রাজি হতে চায়নি। মা-বাবার কাছে কি আর সত্যি লুকানো যায়? তবে শর্ত দিয়েছিল, আমরা কেউই যেন তোমায় বুঝতে না দেই; তবেই সে সত্যিটা বলবে।’
শ্রুতির কথা বলার মতো ভাষা নেই। সে জানত মানুষগুলো ভালো। কিন্তু এত বেশি ভালো তা জানার ছিল না। চোখ নির্গত হয়ে পানি বের হয় তার। অদিতি বেগম ব্যস্ত হয়ে বলেন,’আরে মেয়ে কাঁদছ কেন তুমি? কান্না করবে না একদম।’
‘সত্যিই রাগ করেননি আপনারা?’
‘একটুও না মা। কিন্তু আমায় এটা বলো তো, আজ হঠাৎ এই কথাগুলো বলছ কেন?’
‘বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে।’
‘ফিরে যেতে চাচ্ছ?’
শ্রুতি উপর-নিচ মাথা ঝাঁকালো। অদিতি বেগম নিরুত্তর। তার মন চাইছে না শ্রুতিকে যেতে দিতে। তার তো ইচ্ছে সত্যি সত্যিই শ্রুতিকে অরিত্রর বউ বানিয়ে এই বাড়িতে রেখে দেওয়ার। কিন্তু তার একার ইচ্ছে হলেই কি হবে? এখানে ওদের দুজনের মতামতেরও প্রয়োজন রয়েছে। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বললেন,’আচ্ছা অরিত্র আসুক।’
‘আমায় যেতে দেবেন?’
অদিতি বেগম হেসে ফেললেন। বললেন,’কেন দেবো না? তোমায় আটকে রাখার কিছু তো নেই আমাদের কাছে।’
শ্রুতি খুশি। ভীষণ খুশি সে আজ। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আনন্দ, কাছের মানুষদের দেখতে পাওয়ার আনন্দ সবকিছুই আজ তাকে পেয়ে বসেছে। সে উচ্ছসিত হয়ে বলল,’তাহলে আমি জামা-কাপড় গুছিয়ে রাখি?’
‘আরে আস্তে। এত অস্থির হয়ে পড়ছ কেন?’
‘আমার যে কত খুশি খুশি লাগছে তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না মা।’
শ্রুতি খুশি খুশি মনেই ঘরে চলে যায়। অদিতি বেগম ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। ‘মা’ ডাকটি এখনও তার কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। শ্রুতি চলে গেলে আর কখনই ওর মুখ থেকে মা ডাকটি শুনতে পারবে না। এতদিনে তার মনেই হয়নি, এই মেয়েটি আসলে তাদের কেউ নয়। সর্বক্ষণ মনে হতো, সে তো আমাদেরই একজন। শ্রুতির চঞ্চলতা, মিষ্টি হাসি, মাঝেমধ্যে বোকা-সোকা কথাবার্তা, মায়া মায়া মুখ এবং সহজ-সরল ব্যবহার দিয়ে সবার সঙ্গে খুব সহজেই মিশে গেছে। আপন হয়ে গিয়েছিল প্রতিটি মানুষের। মায়ার বন্ধন অদৃশ্য চৌম্বকের মতো টানে।
অরিত্র অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পরে দরজা খুলে দেয় শ্রুতি। এটা তার প্রতিদিনের রুটিনই বলা চলে। অরিত্র চাকরী নেওয়ার পর থেকে এই সময়টায় কলিংবেল বাজলেই শ্রুতি বুঝতে পারে অরিত্র আসছে। শ্রুতি সব সময়কার মতো মিষ্টি করে হেসে তাকিয়ে আছে। তবুও অতিরিক্ত খুশি খুশি ভাবটা যেন উপচে-ই পড়ছিল। যার দরুণ অরিত্ররও বুঝতে অসুবিধা হয় না। হালিমের প্যাকেট শ্রুতির হাতে দিয়ে সে ভেতরে আসে। শ্রুতি রান্নাঘরে গিয়ে বাটিতে হালিম নিয়ে অনিক আর অদিতি বেগমের কাছে যায়। অরিত্র বা অদিতি বেগম কেউ খায় না তেমন। অনিক আর শ্রুতিই খেল। অরিত্র ফ্রেশ হয়ে মায়ের রুমে এসে কিঞ্চিৎ অবাক হয়। বিছানার ওপর জামা-কাপড়ের স্তুপ। এগুলো সব শ্রুতির। অরিত্র কিছু বুঝতে না পেরে মায়ের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল,’কোথাও যাচ্ছ নাকি শ্রুতিকে নিয়ে?’
শ্রুতি আমোদিত কণ্ঠে বলল,’বাড়ি চলে যাব আমি।’
অরিত্র কিছু্ক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জিজ্ঞেস করে,’বাড়ি চলে যাচ্ছ মানে?’
‘আমাদের বাড়ি যাচ্ছি।’
অরিত্র অদিতি বেগমের দিকে তাকালেন। ছেলের মনোভাব বুঝতে পেরে বললেন,’শ্রুতি সব বলল আমায়। বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাল অফিসে ফোন দিয়ে ছুটি চেয়ে নিস।’
‘আচ্ছা।’ বলে অরিত্র নিজের ঘরে চলে যায়। শ্রুতিও আসে পিছু পিছু। রুমে এসে বলে,’জামা-কাপড় নেব কীসে? ব্যাগ লাগবে তো একটা।’
‘আমার লাগেজ নিয়ে যান।’
‘আচ্ছা।’
শ্রুতি বিছানায় দু’পা উঠিয়ে বসল। অরিত্র চুল আঁচড়াচ্ছিল। শ্রুতি তখন আয়নার দিকে অরিত্রকে দেখে বলল,’আমি তো চলে যাচ্ছি। আর জ্বালাব না, বিরক্ত করব না। আপনি তো এখন খুশি তাই না?’
অরিত্র আয়নায় শ্রুতিকে দেখে নিল। হেসে বলল,’মিস করব আপনাকে খুব।’
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ। কিছু ঘটনা আমি এখানে স্কিপ করে গেছি। যেগুলো পরবর্তী পর্বতে জানানো হবে। আর গল্প দেওয়া অনেক দেরিতে হচ্ছে সেটা আমিও বুঝতে পারছি। তবে পড়াশোনার বাইরে যেই সময় পাই সেসময়টা ব্যতীত আর লেখারও সুযোগ নেই আমার। আশা করি আপনারাও বুঝতে পারবেন।]