#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_০৩
#Nishi_khatun
পরেরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে ইফান,জিনিয়া,ইজাজ রহমান,অরিন একত্রে বসে খানা খাচ্ছিল।
হঠাৎ করে অরিন বলে,”আচ্ছা আপনাদের বুইড়া পোলাডার কী দুঃখে জোড় করে বাল্যবিবাহ দিলেন জানতে পারি? না মানে আমার একশত বিবাহ দিলেও সমস্যা নাই। কিন্তু বেচারা জামাই সাহেবের বহুত সমস্যা।”
অরিনের মুখে এমন কথা শুনে ইফান, ইজাজ, জিনিয়া তিনজন একসাথে বিষম খায়।
অরিন তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
-আল্লাহ গো আল্লাহ! আপনাদের বাড়িতে জিনের সমস্যা আছে দ্রুত ওঝা,কবিরাজ, হুজুর কে ডাক দিন। না হলে তিন জন একসাথে কেন বিষম খাবেন বলেন?
ইফান দ্রুত পানি খেয়ে বলে,”এই বেয়াদব মেয়ে খাবার সময় তোমাকে এতো বকবক করতে কে বলে? তোমার উল্টাপাল্টা কথা শুনে আমাদের সকলের গলায় খাবার আটকে গেছে। তা বোঝার জন্য তো ঘটে বুদ্ধি থাকতে হয়। তোমার যে নাই তা ভুলে গেছি আমি।”
অরিন নরমগরম কন্ঠে বলল-
আমার বাবার গোপন জামাতা শুনেন,
ভুল কিছুই বলি নাই। যাহা বলেছি একদম সত্যি বলছি। আপনি সংসারে ‘স’ টা করবেন না তো বিয়ে কেন করছেন? আপনার বাবা- মা কে এই প্রশ্ন করার আমার পুরো অধিকার আছে। বুঝলেন লেকচারার সাহব।
ইফান ত্যাড়া ভাবে বলে,
-মা তোমাকে আগেই বলেছিলাম মেয়েটাকে হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করো নয়তো এ বাড়ির বাকীরা উচ্ছন্নে যাবে।
অরিন মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে বলে,”বাকিরা বলতে কে? আপনি,আপনার বাবা- মা তাছাড়া আর একটা মশা মাছিও নেই এই বাড়িতে। তারপর নিজের খাবারে সে গভীর মনোযোগ দেয়। এমন ভাব করে যেনো সে কিছুই বলে নাই।”
জিনিয়া নরম কন্ঠে বলে,”বাড়ির বাকি সদস্যদের সময় হলেই দেখতে পাড়বে। তার আগে ধুলোবালিও দেখতে পাড়বে না।”
ইজাজ রহমান তখন নরম সুরে বলে,”আম্মাজান আপনি কালকের বিয়ের কথাটা ভুলে জান।
আগেই বলেছি ওটা আমাদের চারজনের সিক্রেট!
এই সিক্রেটা সবার সামনে বলা যাবে না।”
অরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,”কেনো ভুলে যাবো? বিয়ে কেউ ভুলে যেতে করে বুঝি? বিয়ে করে সংসার করতে! আমি যখন বিয়ে করেছি তখন স্বামী ছাড়াই সংসার করবো।”
জিনিয়া তখন গম্ভীর ভাবে বলে,
–” পুতুলখেলা কেউ সারাজীবন মনে রাখে না।
আর তুমি অনেক ছোট এখনো এসব ঘর-সংসার করার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত হওনি। এসব সংসারে ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।”
কে শোনে কার কথা !
অরিন নিজের যুক্তি দিয়ে বলে,” তাহলে নানি -দাদীর শাশুড়িরা কি করে ১২/১৩ বছর বয়সে সংসার করেছিল? শুনেছি তারা ঐ বয়সে বাচ্চাদের বড় বড় আকারে ফুটবলের টিম বানিয়েছিল।”
ইফান দাঁতের উপর দাঁত রেখে কটমট করে বলে,
–“উচড়ে পাকা মেয়ে একটা। বড়দের সামনে কেউ এভাবে কথা বলে? বাবা-মা কথা বলার ম্যানার শেখায় নি তোমাকে? ”
ইফানের চেয়ারটা অরিনের পাশাপাশি হওয়াতে অরিন আস্তে করে ইফানের কানের কাছে বলে,
-“উচড়ে পাকা কি না তা জানি না! তবে হ্যাঁ যে টুকু পাকনামি শিখেছি সবটা আমার শত্রুর থেকে আপন কলিজার টুকরো বান্ধবীদের মেহেরবানি। বুঝলেন আমাকে বউ না স্বীকার করা স্বামী মহাদয়। ”
অরিনের মুখটা বিষাদের কালোরঙে ছেয়ে যায়। তারপর মুখে মলিন হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে,
–“মামুনি তো সব সময় ব্যস্ত থাকতো, বাবা বিজনেস নিয়ে বিজি। আমি তো সারাদিন স্কুলে থাকতাম।
আর ছুটির দিন বাড়িতে কেয়ারটেকার রঙিলা চাচা আর তার স্ত্রী গোলাপি বানুর সাথে সময় কাটতো।
আর পাশের বাড়ির এক দাদাভাই এর সাথে টুকটাক খুনশুটি। এই তাদের সাথে যা আমার সারাদিনের শয়তানী। তবে তারা কোনদিন আমার উপরে রাগ করতো না। এই যে আপনি কথা কথায় সব সময় আমাকে বকা দেন। আমি কি আপনাদের বাড়িতে থাকতে চেয়েছি?
কই- সে কথা তো মনে পড়ে না। জোড় করে আপনারা আমাকে আপনাদের সাথে রেখেছেন আবার আপনারা বড় বড় বুলি ছড়াচ্ছেন। আপনারা কে আমার?
তবুও সম্মান করি বলে চুপচাপ এখানে পড়ে আছি। নয়তো আল্লাহর রহমতে আমাদের বাড়ি গাড়ি কোন কিছুর কমতি নেই। আপনাদের মতো অনেক না থাকলেও যা আছে তা-ই নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।
বাবা- মা নেই তাতে কি? একলা ঠিকি সে বাড়িতে বসবাস করতে পারতাম। ”
জিনিয়া- নরম সুরে বলে,
-“তুমি জানো একা একটা মেয়ের এই সমাজের বসবাস করা কতোটা বিপদজনক? ”
অরিন নিজেকে যথেষ্ট সংযত রেখে কঠোর কন্ঠে বলে ওঠে,
– “যে মেয়ের বাবা- মা থাকে না তার জন্য তো বেঁচে থাকাটা বিলাসিতা। নয়তো বড় ভাই ভাবী থাকার পরেও কেনো আমি একলা পড়ে থাকবো পরের বাড়িতে? বোন আছে একটা তার কথা না বলাটা উচিৎ। তাছাড়া একলা কোথায় আমি?
রঙিলা চাচা আর পোলাপি বানু আছে তো আমার।
ওরা আমাকে কথা দিয়েছে সারাজীবন আমার সাথে থাকবে।”
জিনিয় বলে,”আম্মাজান এটা পরের বাড়ি কেনো হতে যাবে? এটা এখন থেকে তোমার নিজের বাড়ি।”
অরিন তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়…
এতঃপর ইজাজ রহমান কঠোর কন্ঠে বলে,
-“ওসব কাজের লোকেরা ততোদিন আপন থাকে যতোদিন তাদের টাকাকড়ি দেওয়ার মালিক থাকে। এখন তাদের টাকাকড়ি কে দিবে শুনি?”
অরিন নমনীয়তার সাথে বলল
– সবার টাকাকড়ির দরকার হয় না। কিছু সম্পর্ক এমনিতে গড়ে ওঠে। তাছাড়া বাবার মা’র এতো টাকাপয়সা সে সব কিছু তে তো আমার অধিকার আছে। আমি সে সব কিছু যখন ইচ্ছা খরচ করতেই পারি। তাছাড়া ভাইয়াও কিছুটা হেল্প করে আমাকে।
ইফান তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
– “টাকা বুঝি মামার হাতের মোয়া তা-ই না?
যে যখন ইচ্ছা উনি খরচ করতে পারবেন। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবার? তোমার এসব কিছু হেন্ডেল করার মতো না আছে যোগ্যতা না হয়েছে বয়স।”
— আমি জানি আর তো মাত্র দুই বছর! আমার
আঠারো বছর বয়স কমপ্লিট হলে সব কিছু আমার আন্ডারে চলে আসবে। তখন দেখবেন থাকবো না আপনাদের এই বদ্ধ বাড়িতে।
ইফান ভেঙ্গচি কেটে বলে,
– আমিও তা-ই চাই। তুমি আল্লাহ আল্লাহ করে কোন ভাবে দুই বছর পাড় করে দাও। তারপর তুমি তোমার রাস্তায় আমরা আমাদের রাস্তায়।
ইজাজ রহমান ইফান কে ধমকিয়ে বলে ওঠে,
— আহহহ ইফান মেয়েটার সাথে এতো কঠোরতার সহিত কথা কেন বলছিস? একটু সুন্দর করেও তো কথা বলতে পারিশ? না কি নিজের দাম্ভিকতা বজায় রাখতে ওটা কে বিষর্জন দিয়েছিস?
ইফান মিনমিন করে বলে,”ওটা আর কোথায় বিষর্জন দিতে পাড়লাম। যদি পারতাম তাহলে তোমরা এই কিশোরী বউটাকে আমার ঘাড়ে ঝোলাতে পাড়তে না।”
জিনিয়া-
ইফান তুই কি কিছু বিড়বিড় করে বলছিস?
একটু জোড়ে বল আমরাও তোর কথা শুনি।
-অরিনের খাওয়া কমপ্লিট! সে টেবিল থেকে বিদায়ের সময় হুট করে বলে,”বাবার বন্ধু তোমার শাশুড়ি মা নাতির মুখে মধু দিতে ভুলে গিয়েছিল বুঝি। এই জন্য তো তোমার ছেলেটা যখনি কথা বলার জন্য মুখটা খুলবে তখুনি চিরতার মতো তিতা কথা বলে। ”
জিনিয়া রেগে ইফান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“তোর জন্য এই পিচ্চি মেয়েটা আমার আম্মাকে কথা শুনিয়ে চলে গেলো। কী গো বাবুর আব্বু তুমি অরিন কে কিছু বলবে না?”
ইজাজ রহমান টেবিল থেকে উঠতে গিয়ে বলে,”মেয়েটা ভুল কিছু বলে নাই! দেখো তোমার মায়ের করা ভুলটা এখন সংশোধন করতে পারো কি না। যদি সম্ভব হয় তাহলে চলো ঘটা করে ছেলের মুখ মিষ্টি করিয়ে আনি।”
ইফান বাচ্চাদের মতো করে মায়ের কাছে নালিশ করে
– মা দেখো বাবা তোমাকে আর নানীমা কে ডাইরেক্ট অপমানিত করছে। তাও কার জন্য ঐ অরিনের জন্য।
জিনিয়া ইফানের মাথায় গাট্টা মেড়ে বলে,
-“বেয়াদব ছেলে তুই তো দেখছি রাবণের বাড়ির সদস্যের মতো কাজ করছিস!”
ইফান আশ্চর্যজনক ভাবে বলে,
–“মানেহহহ!”
জিনিয়া বলে,
– ”তুই তো দেখছি বিভিষণের মতো কাজ করছিস। আমার স্বামীর সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দিতে চেষ্টা করছিস!”
— আজব তো! যা সত্যি তাই তো বলছি মাত্র।
জিনিয়া ছেলের দিকে রেগে গরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
–“তুই যদি মেয়েটার সাথে একটু ভদ্র ব্যবহার করতিস তাহলে মেয়েটা ঐ কথা বলতো না। আর না তোর বাবা অরিনের কথায় তাল মিলাতে যেত।”
ইফান – বাহ এখন যতো দোষ আমার।
জিনিয়া- হ্যাঁ! যতো দোষ নন্দ ঘোষের। হুহ
ইফান রুমে এসে বলে,
–“নাহ! আর বাড়িতে থাকা যাবে না। বাড়ির কারো উপরে আর ভরসা নাই। কাল জোড় করে বিয়ে দিছে। দু দিন পর দেখা যাবে জোড় করে বাসরঘর করাবে। তার দুদিন পর আমাকে আব্বা বানিয়ে ছাড়বে।
নো নেভার, কাভি নেহি!
এসব কখনো সম্ভব না ঐ তাও আবার অরিনের বরিনের সাথে।
আল্লাহ গো বাঁচাও আমাকে।”
অরিনের মনটা আজ খারাপ কতোদিন হয়ে গেছে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এই অচেনা বাড়িতে আছে। এখানে প্রাণ খুলে কথা বলার মতো কেউ নেই।
যে বুইড়ার সাথে বিয়ে হলো সে বউ মানতে নারাজ। তাহলে যাবো তো কোথায় যাবো? আহারে রঙিলা আর গোলাপি যদি থাকতো তাহলে কতো মজাই না হতো। আচ্ছা ওদের এখানে আমার সাথে এনে রাখা যাবে না? নাহ ওরা তো বলেছে আমার জন্য ঐ বাড়িতে অপেক্ষা করবে।
ইশ রে! সবার বাবা- মা আছে শুধু আমার বাবা মা আমার সাথে নেই। কেনো আমাদের সংসারটা এভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে? এই সমাজটা খুব খারাপ। খুব খারাপ। তাতে আমার কী? আমি আমার মতো চলবো! সমাজের লোকের খায় না পড়ি? বিপদে পড়লে কেউ সাহায্য করে না। উল্টা তামাশা দেখতে আসে।
পড়ে আবার তারাই আপনার পেছনে কথা শোনাবে।
হু হ ওদের ওসব পঁচা কথায় কান দিতে অরিনের বয়ে গেছে। আমি কতো সুন্দর একটা জামাই পাইছি।
এই জামাইটারে পটিয়ে পাটিয়ে ঠিকি সংসারটা করবো নয়তো আমিও অরিন না, হুহ।
(প্লিজ প্লিজ সবাই গল্পটা সম্পর্কে খারাপ ভালো যাই হোক মন্তব্য করবেন।আপনাদের কাছে এইটুকু আশা করতেই পারি তো?)
‘
‘
‘
চলবে…