আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪১

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪১

~ আপনার ইম্পর্ট্যান্ট কথাটা কখন বলবেন বলুনতো?
আপনার কথা শুনার অপেক্ষায় তো আমি বুড়ি হয়ে যাবো মনে হচ্ছে।
~ রিকের কাছে যাওয়ার খুব তাড়া বুঝি!
~ কি বললেন? আমি আবার এই কথা কখন বললাম।
~ ওহ আচ্ছা! বলোনি? তাহলে আর কিছু বলো ও না। চুপ করে আমার সাথে চলতে থাকো।
~ আজব মানুষ একটা! বললো ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে, আর এখন তামাশা করছে। ( বির বির করে )
হঠাৎ রিক ওর এক হাত আকড়ে ধরে হাঁটতে লাগলো।
~ আরে ( নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে ) কি হলো হাত ধরলেন কেনো? ছাড়ুন।
~ কেনো আমি হাত ধরলে কি সমস্যা? রিকের হাত তো বেশ সানন্দে ধরে হাঁটছিলে!
~ এই আপনি আমাকে বারবার রিক ভাইয়ার নাম নিয়ে খোঁচা দিচ্ছেন কেনো?
রেহান কিছু বললো না। মিহি আবার ওর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই,,,
~ আরেকবার মোচড়ামুচড়ি করলে কিন্তু সকলের সামনে সোজা কাধে তুলে নিবো। এন্ড ইউ নো আমি যা বলি তাই করি! (ধমক দিয়ে )
মিহি আর কিছু বললো না পরে যদি সত্যি সত্যি কাঁধে তুলে নেয় তখন কী হবে!

নিধি চুপচাপ অভ্রর সাথে হাঁটছে। নিধির যে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে অভ্র তা বেশ বুঝতে পারছে। অভ্র সাত পাঁচ না ভেবে নিধির পিছনে এক হাত দিয়ে ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরলো। নিধি চমকে ওর দিকে তাকাতেই কাধেঁ মাথা রাখতে ইশারা করলো। নিধি কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে থাকলো। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,” কি হয়েছে?”
~ হঠাৎ এতো কেয়ার দেখাচ্ছেন যে! তাও আবার আমার ভাই এর প্রেজেন্সে?
~ তোমার কি মনে হয় কেনো দেখাচ্ছি কেয়ার?
~ আরশির জীবনে সূর্য ভাইয়া আছে জেনে, কি ঠিক~ বলছি তো?
অভ্র নিধির চোখে চোখ রেখে বললো,,,
~সব সময় আমাদের কাছে যেটা ঠিক মনে হয় সেটা ঠিক নাও হতে পারে..
~ তাহলে আপনি বলে দিন কোনটা ঠিক!
~ বলবো অবশ্যই বলবো। কিন্তু এখন না। সময় হোক। তুমি না টায়ার্ড? একটু আগে তো নাহিদের কাধে মাথা রেখে হাঁটছিলে তো এখন কি হলো?
~ হ্যাঁ কিন্তু এখন ঠিক আছি।
~ তাই! আমি তোমার পাশে আসতেই তুমি ভালো হয়ে গেলে? নাকি আমার কাধে মাথা রাখতে তোমার প্রবলেম আছে? নাহিদ কে ডাকবো?
~ মানে! আমি কি একবারো বলেছি যে আমার আপনার কাধে মাথা রাখতে সমস্যা আছে? আর নাহিদ ভাইকে ডাকবেন কেনো, আপনার না কি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আমার সাথে? বলুন তাহলে।
~ হ্যাঁ বলবো তো আগে কাধে মাথা রাখো তারপর বলছি।
~ অ্যা! কাধে মাথা রাখার সাথে আপনার ইম্পর্ট্যান্ট কথার কি সম্পর্ক?
~ আহ! এতো কথা বলছো কেনো? তোমার জন্য আমি আমার কথাটা বলতে পারছিনা। রাখো রাখো মাথাটা আমার কাঁধে রাখো।
নিধি হা করে তাকিয়ে থেকেই ওর কাঁধে মাথা রাখলো। অভ্র নিধিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মুচকি হাসলো। নিধি কিছুসময়ের জন্য চুপচাপ অভ্রর কাধে মাথা রাখে। তারপর মাথাটা হালকা বাঁকিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,,
~ এবার বলুন কি বলবেন।
~ উম, তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?
~ আমি হঠাৎ আপনার উপর রাগ করতে যাবো কেনো?
~ আরে ঐযে ঐদিন লাস্ট যখন ফোনে কথা হলো আমাদের ঐ দিনের ইন্সিডেন্ট টা নিয়ে রেগে নেই তো তুমি?
নিধির হঠাৎ করে ওদের সেদিনের হওয়া কথাগুলো মনে পড়ে গেলো। সাথে সাথে ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অভ্রর কাধ থেকে মাথা সরাতে নিলেই অভ্র আরো শক্ত করে নিধিকে জড়িয়ে ধরলো।
~ সরছো কেনো এভাবে থেকেই বলো।
~ রেগে নেই কারো উপর আমি।
~ আই এম সরি। আমার তখনই তোমার সাথে সবটা ক্লিয়ার করা দরকার ছিলো। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধা ছিলো, সংকোচ বোধ ছিলো যার জন্য আমি তোমার সাথে ওই ব্যাপারে কথা বলতে পারিনি।
~ এখন এসব বলে কি হবে আর আপনার আমাকে কিছু এক্সপ্লেইন করার কোনো দরকার নেই।
~ আমার বলার ছিলো তাই বললাম। তুমি না শুনলে ভালো আর শুনে থাকলে অন্য কান দিয়ে বের করে দাও। ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে )
নিধি ভ্রু কুঁচকে অভ্রর দিকে তাকালো। অভ্রর ঠোটে মৃদু হাসি।

আরশি কে হালকা ধাক্কা দিয়ে,, ” কি ভাবছো?”
~ হুঁ? না কিছু না।
~ বলো।
~ বললাম তো ক…( সূর্য এক ভ্রু উচুঁ করে তাকাতেই চুপ হয়ে গেলো )
~ বলো।
~আচ্ছা ন্যান্সি আপু তো আপনাকে পছন্দ করতো, বেশিরভাগ সময় আপনার আশেপাশেই থাকতো। তাহলে হঠাৎ আপুর কি হলো?
~ কেনো তুমি কি চাইছো? ও আমার আশে পাশে থাকুক এটাই চাইছো?
~ না! ( মৃদু চিৎকার করে ) আব না মানে বলছি যে আমি তো সেটা মিন করি নি। আম জাস্ট কিউরিয়াস।
( মাথা নিচু করে )
~ হেই ডোন্ট বি স্যাড। আমি মজা করছিলাম। ন্যান্সি আমাদের ব্যাপারে সবটা জানে।
আরশি গোল গোল চোখে সূর্যের দিকে তাকালো। সূর্য ওর নাক টেনে দিয়ে বললো,,
~ হ্যাঁ রিক-রোজ-ন্যান্সি ওরা সবাই সবটা জানে। আপু জানিয়েছে ওদের। এর জন্যই ন্যান্সি আমাদের মাঝ থেকে সরে গেছে। আর এতে তোমার লাভ ই হয়েছে তাই না বলো? ( আরশি সূর্যের দিকে তাকালো ) মানে তোমার একটা সতিন কমে গেলো আর কি। এমনেই তো সতিনের অভাব নেই তোমার।
~ (বুকে হাত গুজে) কোথায় আমিতো দেখতে পাচ্ছিনা।
~ দেখতে চাও?
~ না থাক কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
~ ডোন্ট বি জেলাস। আই এম অল ইউরস। ( আরশির মাথার এক পাশে চুমু দিয়ে )
আরশি মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,,
~ আচ্ছা আর কতক্ষন লাগবে পৌঁছাতে?
~ এইতো আর আধাঘন্টা। কেনো?
~ সুজানা আপু একা আছে কটেজে। আর কি জানি এখনো পা ব্যাথা করছে কি না? ( চিন্তিত স্বরে )
~ আরে ডোন্ট ওয়ারি মাহির ভাই আছে তো আপুর সাথে। আপুর কোনো প্রবলেম হবে না। তুমি জাস্ট আমার দিকে ফোকাস করো।
আরশি মুখ ভেংচি দিলো। সূর্য ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। একটুপর দুজনেই এক সাথে হেসে দিলো।

~ আরে মাহির এবার তো আমার চোখটা খুলে দে।
~ দিচ্ছিতো ব্যাস্ত হচ্ছিস কেনো।
মাহির সুজানার চোখ খুলে দিলো। সুজানা আস্তে আস্তে ওর চোখ খুলে চারপাশে তাকালো। ওরা রোদেলা তে এসেছে। পুরো রুম লাল আর সাদা বেলুন দিয়ে সাজানো। বেলী ফুলের ঘ্রাণে ছেয়ে আছে পুরো রুম। সাদা কভারে মোড়ানো টেবিলে লাল আর সাদা গোলাপের পাঁপড়ির মাঝে রাখা জিনিসটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো সুজানা। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের জিনিসটার দিকে।
~ দেখে নে আমার ঠিক করা পাত্রীকে।
সুজানা একবার মাহিরের দিকে তাকালো আরেকবার সামনে তাকালো। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো।
~ ম. মাহির এ. এটা তো….
মাহির মুচকি হাসলো।
সুজানা হাত দিয়ে ফ্রেম টাকে ছুঁয়ে দিলো। ওর সামনে একটা বড়ো ফ্রেমের এক পাশে ওর ছোটবেলার ছবি আর অন্যপাশে সেদিন সানসেটের সময় তোলা ছবি।
সুজানা ছলছল চোখে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহির সুজানার এক হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো। চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে দিয়ে বললো,,,
~ আই এম সরি এভাবে তোকে এসব বলছি। বাট আই কান্ট ওয়েট মোর! তুই এখানে আসার পর থেকেই তোকে আমার মনের কথা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু ওয়ে পাই নি বলার। আজকে যখন পেয়েছি তখন এই সুযোগটা আর হারাতে চাই নি।
সুজানা চুপ করে অপলক তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে। মাহির সুজানার দু হাত নিজের হাত দ্বারা আবদ্ধ করে বললো,,
~ আমি জানি তুই হয়তো ভাবছিস আমি আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট করে ফেলেছি। বাট ট্রাস্ট মি আমি আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে নষ্ট করতে চাইছি না। আমি শুধু আমাদের বন্ধুত্বের পাশপাশি আরেকটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছি। যেই সম্পর্কের দ্বারা আমরা সারাজীবন বৈধভাবে একে অপরের সাথে থাকতে পারবো। একে অপরের খেয়াল রাখতে পারবো, আমি নির্দ্বিধায় তোর কেয়ার নিতে পারবো, অপলক তোর দিকে তাঁকিয়ে থাকতে পারবো। আমার এতো বছরের জমানো ভালোবাসা তোকে উজাড় করে দিতে পারবো। হয়তো আমার ফিলিংস গুলো ওয়ান সাইডেড, কিন্তু তবুও আমার ফিলিংস গুলো তোকে জানালাম। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার মনের কথাগুলো তোকে বলতে না পারছিলাম ততক্ষন পর্যন্ত কেনো যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না। কিন্তু এখন নিজেকে বেশ হালকা লাগছে। আমি কোনো প্রেসার ক্রিয়েট করব না তোর উপর। তোর যা সিদ্ধান্ত হবে সেটাই মেনে নিবো। কখনো ফোর্স করবো না। বাট এখন কিছুতো বল!
~ আমাকে কিছুক্ষন একা থাকতে দিবি প্লিজ?
মাহির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
~ টেক ইওর টাইম।
মাহির বাইরে চলে গেলো। সুজানা আরো একবার পুরো ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে নিলো। ফ্রেমটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে কিছু একটা ভাবতে লাগলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here