রহিবে মনের গহীনে পর্ব-২২

0
1822

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_২২
#Nishi_khatun

অরিনের মনটা আজ খুব ভালো! কারণ ইহানের দুদিন পরে আসার কথা ছিল। কিন্তু সে আজ হুট করে সারপ্রাইজ দিতে চলে এসেছে। আর এখানে আসার পর থেকে অরিনকে সাথে করে গ্রামের আনাচেকানাচে ঘুরছে তো ঘুরছে।
ইহান একা ছিল না তার সাথে ইফান আর আজরিন ও ছিল। তবে ইফান একটা জড়পদার্থের মতো সকল স্থানে নিজের ভূমিকা পালন করেছে।

ইফান কে নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।
তবে অরিনের খারাপ লাগে ইফানের জন্য।

এদিকে বিকালে ইফতারি করার পূর্বে বাড়ির সকলে একত্রে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এমন সময় ইহান ইফান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ভাই তুই কি এ জীবনে বিয়ে করবি না?”

ইফান অরিনের চোখে চোখ রেখে সোজাসুজিভাব উত্তর দেয়,”নাহ বিয়ে করার দরকার মনে করছি না!”

ইহান তেঁতে উঠে বলে,”তোর জন্য কি আমি সারাজীবন চিরকুমার থাকবো?”

-আমি কি তোকে ধরে বেধে রেখেছি? তোর ইচ্ছা হলেই তুই আজকেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারিশ শুধু আমাকে এসব বিয়ে শাদীর ঝামেলা থেকে মুক্তি দিবি তাহলে হবে।

ইহান এবার তার বাবা- মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,” তোমরা কি তোমাদের বড় ছেলেকে রেখে ছোট ছেলের বিয়ে দিবে?”

ইজাজ ইহানের এমন কথাবার্তাতে বিব্রতবোধ করছে!নিজের ছোট ছেলের এমন লাগামহীন কথাবার্তা শুনে সবার সামনে লজ্জায় পড়েছে।
মনে মনে ভাবছে,
“কোন ছেলে এমন বিয়ের জন্য লাফালাফি করে?
এ তো দেখছি বিয়ে বিয়ে করে আমার মান সম্মান ধুয়ে দিচ্ছে।”

জিনিয়া একটু গরম কন্ঠে বলল-
“ইহান এখানে এসব কোন ধরণের কথা আলোচনা করছিস?
আমরা বাড়িতে গিয়ে এসব কিছু না হয় আলোচনা করবো।”

ইহান তো নাছোড়বান্দা সে বেঁকে বসে বলে ওঠে,
“যার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে সে করবে না বিয়ে। তাহলে যে বিয়ে করতে চাইছে তার অনুভূতি কে তো তোমাদের সম্মান করা উচিৎ আর হ্যা বলে দেওয়া উত্তম। ”

জিনিয়া রেগে বলে,”তুই কি চাইছিস?
সব সময় সব স্থানে নিজের যিদ বজায় রাখা।
একবার যে কথা বলবে তার ফলাফল না জেনে খান্ত হবি না?”

-জানোই যখন তখন আমাকে ত্যাড়ামি করতে বাধ্য করো কেন?

ইহানের নানা-নানি,মামা-মামী, সহ সেখানে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে আছে। সবাই জানে ছোট থেকে ইহান খুব জেদি আর একরোখা। যা বলবে ইহান তা-ই করবে। আর যখন ইহান জিদ ধরে তখন কারো সাধ্য নেই তাকে বোঝাবে। তা-ই তো বাকিরা দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

ইজাজ নিজের মানসম্মান বাঁচাতে বলে বসে,”হ্যা আমরা তো বিয়ে ইফান কে ছাড়া দিতে রাজী আছি। তুই এখুনি বিয়ের পিঁড়িতে বসবি? না কি বিয়ে কমপ্লিট করে দেশে এসেছিস? ”

ইহান এবাব লজ্জা পেয়ে বলে,”কি যে বলোনা বাবা! আমি কি তোমাদের ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারি? তবে তোমরা সবাই যখন একসাথে উপস্থিত আছো তখন শুভ কাজটা সম্পন্ন করে যাবো।”

জিনিয়া- তা কোথায় সে দুভাগ্যবতী? তোর কোন পছন্দমতো কেউ আছে? না কি আমাদের এখন হাতে হারিকেন নিয়ে মেয়ে খুঁজতে যেতে হবে?

ইহান আর কিছু বলবে তার পূর্বে মাগরিবের আজান পড়ে। সবাই দ্রুত ইফতার করতে শুরু করে।
ইফতারি করে বাড়ির ছেলেরা দ্রুত মসজিদে চলে যায়। তাদের বাড়ির কাছে মসজিদ তা-ই।

নামাজের শেষে বাড়িতে এসে ইফান আর ইহান তাদের বাবা- মা’র রুমে প্রবেশ করে। বাবা- মা ইহান কে উদ্দেশ্য করে বলে,”ইহান তুমি আর সেই বাচ্চা ছেলেটা নেই। তাহলে কেন এখনো সবার সামনে আমাদের অপদস্থ করতে পিছপা হও না?
সেই ছোট থেকে তুমি আমাদের সব সময় অপমানিত করে আসছ। কই তোমার বড় ভাই তো এমন না। একটু কিছু নিজের বড় ভাইয়ের থেকে শিখতে পারো!”

ইহান গম্ভীর কন্ঠে বলে,”দরকার নেই ইফান ভাইয়ার কাছ থেকে কোন কিছু শেখার। তার কাছ থেকে এটা শিখবো কি ভাবে নিজের বুকের মাঝে কষ্টের পাহাড় চাঁপা দিয়ে রাখা যায়?”

ইফান চিৎকার করে বলে বলে,
“ইহাননননন”

জিনিয়া- ইহান ইফানের অতীত নিয়ে খোঁচা দিবি না।

ইহান মুচকি হেসে বলে,
” তাহলে আমার বিয়ে দিয়ে দাও দ্রুত আমি আমার বউ পোলাপান নিয়ে সুখে সংসার করতে চাই।”

জিনিয়া- কোন মেয়ে তোর নজরে আছে না আমরা খুঁজবো?

ইহান মাথা নিচু করে লজ্জাবতী লাজুকলতা সেজে বলে,”ঘরে তো মেয়ে আছে তোমরা কষ্ট করে বাহিরে কেন খুঁজতে যাবে শুনি?”

ইফান দ্রুত বলে ওঠে,”তোর আজরিন কে পছন্দ সে কথা সোজাসুজিভাব বাবা- মা কে বলে দিলেই তো পারতিস এতো ঘাটাঘাটির দরকার ছিলো না।”

ইহান বিরক্তিবোধ করে বলে,”আমি কি আজরিনের কথা বলেছি একটিবার ও? আমার অরিন কে পছন্দ। অরিনকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবো। তোমরা দ্রুত অরিনের সাথে বিয়ের বেপারে আলোচনা করো।”

ইফান জোড়ে চিৎকার করে বলে,”অরিনের বিয়ে দেওয়া সম্ভব না। আর তাও তোর সাথে তো কোনদিন ওহ না।”

-কেন আমি কি ছেলে হিসাবে খারাপ? আর তোমাদের সাথে কেন আমি কথা বলে সময় নষ্ট করছি? আমি অরিনের সাথে সোজাভাবে কথা বলছি।

ইফান – বলছি না অরিনের সাথে তোর বিয়ে হবে না।

ইহান -আরে ধুর তুই চুপ থাকতো ভাই।
ঘরে সুন্দরি ভালো গুণবতী মেয়ে থাকতে আমি কিছুতে বাহিরের কোন মেয়েকে বাড়ির বউ করে আনবো না।

ইহানের এমন কথাবার্তা শুনে ইফানের সারা শরীর রাগে জ্বালা-পোড়া শুরু করে দিছে।

ইফান মনে মনে ভাবলো,” ইহান যদি নিজের ছোট ভাই না হতো তাহলে আজ ওর খবর ছিল।”

ইফান পাশে টেবিলের উপর থাকা কাঁচের গ্লাস তুলে মেঝেতে আছাড় দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

জিনিয়া এসে ইহানের গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”তুই জানিস কি করতে চাইছিস তুই? অরিনের সাথে তোর বিয়ে দেওয়া সম্ভব না। আর আমরা চাইলেও তোর সাথে অরিনের বিয়ে দিতে পারবো না। আমাদের সমস্যা একটু বুঝতে চেষ্টা কর।”

ইহান সোজা অরিনের কাছে চলে আসে।
আজরিনের রুম থেকে অরিনের হাত ধরে বাহির করে সোজা ছাঁদে নিয়ে চলে আসে। ছাদে এসে অরিনের হাত ছেড়ে দিতেই ইহান অরিনকে বলে,

“আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তুমি কি রাজী?”

অরিন ইহানের মুখের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ছাঁদে বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা থাকার কারণে তারা যে সাইডে আছে! তাদের ঐ দাঁড়ানো স্থান আলোকিত হয়ে আছে।

অরিন এবার বুঝতে পারছে ইফান এমন কিছু হয়তো আন্দাজ করেছিল তা-ই জন্য ইহানের কাছ থেকে সব সময় তাকে দূরে রাখত।

অরিন আশেপাশে তাকিয়ে মনে মনে ইফান কে খুঁজতে থাকে।
অরিন মনে মনে বলে,
–“তবে আজ সে কোথায় সে? তাকে যে আমার আজ বড্ড বেশি দরকার। এতোদিন সত্যি তাকে ভুল বুঝেছি। মুখের কঠোর কথা শুনে কাউকে বিচার করা উচিৎ নয়। আমি তার মনের খবর না জেনে নিজের মন্তব্য তার উপর চাপিয়ে এসেছি। সে স্বামী হিসাবে নয়! আমাকে সব সময় একজন অভিভাবক হিসাবে মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছে। আমি তো পাগল তার মুখে ভালোবাসার বুলি শুনতে চেয়েছি। তার কেয়ার করা,খেয়াল রাখা,যত্ন গুলোকে এক নিমিষে ভুলে গেছি কিন্তু কি ভাবে পেরেছি এসব আমি? এখন এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না আমার এখন পরিস্থিতি সামাল দিতেই হবে।”

অরিন নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে ওঠে,
“দুঃখী আমি আপনাকে বিবাহ করতে পারবো না। ”

ইহান গম্ভীর স্বরে বলে,”কেনো পারবে না?”

অরিনে সোজাসুজি জবাব- আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি সে আমার পৃথিবী। আমি নিজের দুনিয়াকে ধোঁকা দিয়ে আপনার সাথে সংসার করার কথা চিন্তা করতে পারি না। তাছাড়া আমি আমার বাবার বিজনেস, কোম্পানি সব কিছুর উত্তরাধিকারী।
তার সব কিছু সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার দাঁয়িত্ব কর্তব্য। আমি মোটেই এখন এসব বিয়ে শাদী করে সংসারে জড়াতে চাই- না।

ইহান বলে,
-“তুমি ইফান ভাই কে ভালোবাস তা-ই না? তার জন্য তুমি আমাকে রিজেক্ট করে দিচ্ছ? ”

-যদি উত্তর হ্যা বলি তাহলে কি করবেন? আমাকে জোড় করে বিয়ে করবেন? না কি কোন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে আপনাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবেন? ”

আমি এতোটা খারাপ ব্যক্তি নই তুমি যতোটা মনে করছো আমাকে। তুমি যদি সত্যি ইফান ভাইকে ভালবেসে থাক তাহলে আমার থেকে বেশি খুশি
আর কেউ হবে না। আমিও চাই কেউ একজন আমার ভাইকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসুক। নিঃস্বার্থ ভাবে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাস বে।
যে ভালবাসাতে থাকবে না কোন ধোঁকাবাজি।
না কেউ ভাঙ্গবে আমার ভাইয়ের মন।

জানো অরিন আমার ভাই না অনেক ভালো। ছোট থেকে খুব চাপা স্বভাবের। কখনো কারো সামনে নিজের মনের কথা প্রকাশ করবে না। মনের ভেতরে চলা ঝড়ের আভাস কেউ কখনো ওর চেহারা দেখে বুঝতেই পারবে না। আমি জানি আজও ও বেচারার হৃদয়ের রক্তক্ষণ হয়! তবে কেউ নেই ওর সেই ক্ষত স্থানে মলম লাগানোর মত।

অরিন -কেন আপনার ভাইয়ের প্রেমিকা আছে তো। তাকে বলেন সে লাগাবে তার হৃদয়ে মলম।

ইহান অট্টহাসি দিয়ে বলে,” প্রেমিকা আর ইফানের? তুমিও হাসাতে পারো ভালোই। ওর কোন প্রেমিকা নেই। যদি থাকতো তাহলে আজ ওর একটা সুখের সংসার হইতো। এভাবে একা একা রুক্ষতার চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে রাখতো না। জীবন্ত জড়বস্তু হয়ে বেঁচে আছে সে।”

অরিন- মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?
আপনার ভাই ছোট থেকে এমন রক্ষ স্বভাবের?

ইহান -আমার ভাইয়াটা আমার মতো অশান্ত ছিল না। কখনো তা-ই বলে এমন রুক্ষ আর জড়বস্তু ছিল না। ওর জীবনটা এক কালবৈশাখী ঝরে এলোমেলো হয়ে গেছে। জড়বস্তু হয়ে বেঁচে থাকতে হতো না।

অরিন -কী এমন কালবৈশাখী ঝড় এসেছিল তার জীবনে জানতে পারি?

-শুনবে তুমি সে গল্প? আমার ভাইয়ের জীবনটা বিষাক্ত হওয়ার কাহিনী?

–হ্যা বলেন! আমিও জানতে চাইছি।

(গল্পটা কেমন লাগছে? সুন্দর ভাবে কি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি? সবার কাছে মন্তব্য আশা করবো!)




চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here