আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪২

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪২

~ আপ্পি.. আপ্পি? কোথায় তুমি?
আরশির আওয়াজ পেয়ে সুজানা দ্রুত ওর চোখের পানি মুছে ফেললো। নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো,,,

~ আরশি রানি আমি রুমেই আছি। ভিতরে আয়।

দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে নিয়ে হা হয়ে গেলো আরশি। দরজার হ্যান্ডেল ধরে দাড়িয়ে রইলো। ওর পিছু পিছু মিহি, রিক, রোজ আর ন্যান্সি ও এলো। ওকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো,,
~ কি হলো আরশি এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো? (ন্যান্সি )
~ কি হলো ভুত দেখেছিস নাকি? এরোকম শকড হয়ে দাড়িয়ে আছিস কেনো?
আরশির কোনো জবাব না পেয়ে রিক ওর মাথার উপর দিয়ে রুমে উকি দিলো। কিন্তু ভিতরে দেখার পর ওর রিয়্যাকশন ও আরশির মতো হয়ে গেলো। রিক আর আরশি একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
বাকিরা ওদের উপর বিরক্ত হচ্ছে। সুজানা ওদের দিকে এগিয়ে এলো। আরশির এক হাত ধরে ওকে রুমের ভিতরে নিয়ে এলো।। আরশি ভিতরে ঢুকার পরে বাকিরা ও সুরসুর করে ভিতরে ঢুকে পড়লো।
~ আপু এই ঘর এমন করে সাজানো কেনো? ( ভালো করে পুরো রুমে চোঁখ বুলালো) নাহ এটা তো আমাদেরই রুম। কিন্তু এভাবে সাজালো কে? ( রিক )
~ এই আপু তুমি আর ভাইয়া তো একাই ছিলে কটেজে তার মানে তোমরাই সাজিয়েছো । এক মিনিট ভাইয়া তোমাকে প্রপোজ করেছে নাকি? সত্যি করে বলো। ( মিহি এক্সসাইটেড হয়ে বললো )
~ এই আপ্পি মিহি যা বলছে তা কি ঠিক?
~ কি বলছিস তোরা এসব! এমন কিছুই না।
~ তাহলে ঘর এমন করে সাজানো কেনো? ( রোজ )
~ আরে এটাতো.. এটা..
~ হুঁ এটাতো, এটা কেনো আপ্পি?
~ উম এটা মাহির জাস্ট আমার মুড ঠিক করার জন্য করেছে। আমার মুড অফ ছিলো ঝর্ণা দেখতে যেতে পারিনি তাই। নাথিং এলস। ( আড়চোখে সবার দিকে তাকালো)
সবাই চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
~ তোরা এভাবে দেখছিস কেনো? আমি সত্যি বলছি বিলিভ মি।
~ আচ্ছা আচ্ছা উই ট্রাষ্ট ইউ আপ্পি।
~ আরে আপু তোমাকে তো সব থেকে এক্সাইটিং নিউজ ই দেয়া হয়নি। ( সুজানার পাশে ধপ করে বসে পরলো )
~ কি নিউজ?
~ আরশি আর সূর্য ভাইয়ার ব্যাপারে। আজকে যা হলো না আপু! তুমি মিস করে গেলে।
~ ভাই আর আরশি রানির ব্যাপারে! কি হয়েছে। ( আরশির দিকে একবার তাকিয়ে মিহির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো )
~ মিহি চুপ কর। আপ্পি ও তো বাজে বকে জানোই। শুনতে হবে না।
~ কেনো ? কেনো শুনতে হবে না। অবশ্যই শুনতে হবে। এমন এক্সাইটিং একটা কথা আর আমি আপু কে বলবো না তা তো হতেই পারে না। আমিতো বলবোই। আপু তুমি আমার কথা শোনো।
~ হ্যাঁ মিহি তুমি বলো।
~ আজকে না আরশি রানি ভাইয়ার কোলে চড়ে ঝর্ণায় গোসল করেছে।
~ কি!!! সত্যি? এটাতো ম্যাজিক হয়ে গেলো। লাইক সিরিয়াসলি ভাই আর আরশি, কোলে করে গোসল মানে… আচ্ছা তা এই ম্যাজিকটা হলো কি করে?
~ আরে আপু বুঝলে না! আরশি রানির ম্যাজিক এগুলো।
~ শাট আপ মিহি। উল্টা পাল্টা বকিস না।
~ মিহি তো সত্যিই বলছে আরশি। আমরা সবাই কিন্তু সবটা দেখেছি। ( রোজ )
~ উফফ কি মোমেন্ট ছিলো ! আমার তো তখন একটা কথাই মনে পড়ছিলো,” বাহো কে দারমেয়া দো দিল মিল রাহে হে! ” ( সবাই হেসে উঠলো )
মিহি আজ কি কি হয়েছে সবটা সুজানাকে বলছে।
আরশি মিহি কে আর সূর্য কে বির বির করে বকছে।

মাহির কটেজের ব্যাক সাইডে দাড়িয়ে আছে। সূর্য আর অভ্র কথা বলতে বলতে পিছন সাইডে গেলে মাহির কে উদাস হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। মাহির অন্যমনস্ক থাকায় ওদের উপস্থিতি টের পায় নি।
~ মাহির ভাই!
~ ( চমকে উঠে পিছনে তাকালো ) ওহ সূর্য অভ্র! তোমরা চলে এসছো? কখন এলে?
~ ২০ মিনিট হলো। তুমি বলো তোমার কি হয়েছে, এতো কি ভাবছিলে?
~ না না তেমন কিছুনা। কেমন মজা করলে তোমরা? সবাই আনন্দ করতে পেরেছে তো? সকলের হাসি খুশি মুখ দেখেতো মনে হচ্ছে ভালোই আনন্দ করেছো।
অভ্র মুচকি হাসলো। সূর্য মাহিরের কাধে হাত রেখে বললো,,
~ কি হয়েছে বলো আমায়। আমি বুঝতে পারছি তুমি কিছু একটা নিয়ে টেন্সড। নাও টেল মি কি নিয়ে টেনশন করছো? আমাদের অবর্তমানে কি কিছু হয়েছে?
মাহির নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
~ আপনারা গল্প করুন আমি আসছি।
সূর্য মাথা নেড়ে সায় দিলো। মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ এবার বলো কি হয়েছে?
মাহির সূর্যকে সবটা খুলে বললো। সব শুনে সূর্য বললো,
~ এটাকে কি প্রপোজ করা বলে? মানে তুমি আপুকে কি বললে,, যে তুমি ওর সাথে সারাজীবন থাকতে চাও। বাট তুমি কি আপুকে বুঝিয়েছো যে তুমি ওকে কতোটা ভালোবাসো ?
মাহির মাথা নেড়ে না বোঝালো।
~ তাহলে ওকে বলো, বুঝাও তুমি ওকে কতোটা ভালোবাসো। ওকে প্রপারলি প্রপোজ করা উচিত তোমার।
~ বাট ওকে এমনিতেই আপসেট মনে হলো। প্রপোজ করার পর যদি আমার মুখ ই না দেখতে চায় তখন কি হবে ? ( অসহায় ভাবে তাকিয়ে )
সূর্য হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো,,
~ সিরিয়াসলি ভাইয়া তুমি কি এখন আপুকে ভয় পাচ্ছো? সাহসী তরুণ জার্নালিস্ট মাহির রহমান কিনা একটা মেয়েকে ভয় পাচ্ছে!!
~ এতো হেসো না বুঝলে! যখন আমার মতো সিচুয়েশন এ পড়বে তখন বুঝবে।
~ আমি এমন সিচুয়েশন কখনো ক্রিয়েট হতেই দিবো না।
~ ওকে উই উইল সি। এখন আমাকে বলো কীভাবে কি করবো?
~ সত্যি বলতে আমি নিজেও এইসব ব্যাপারে তেমন কিছু জানিনা।
~ তাহলে কে হেল্প করবে আমায়?
সূর্য আর মাহির একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

সন্ধ্যার দিকে কটেজের একদম শেষ প্রান্তের বেঞ্চে বসে আছে আরশি। নিরিবিলি পরিবেশ। কানে ইয়ারফোন গুজে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে শুনতে পরিবেশ টাকে উপভোগ করছে। সূর্য আস্তে করে আরশির পাশে এসে বসলো। আরশি এখনো বুঝতে পারেনি যে সূর্য ওর পাশে এসে বসেছে। সূর্য কিছুক্ষন আরশির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বেঞ্চে ভর দিয়ে আরশির দিকে এগিয়ে এসে ওর গালে চুমু দিলো। এমন নিরিবিলি পরিবেশে হঠাৎ এমন হওয়ায় আরশি ভয় পেয়ে বেঞ্চ থেকে দুরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। সূর্য কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। পরক্ষনেই সূর্যের এমন কাজে রেগে গেলো। দুহাত কোমরে রেখে বললো,,,
~ আপনি এমন করেন কেনো? হুট করে এমন একটা কাজ করেন যে আমার হার্ট অ্যাটাক হতে হতে বেচেঁ যায়।
~ আমি কি করলাম? ( ইনোসেন্ট ফেস করে )
~ আপনি জানেন না আপনি কি করেছেন?
~ না তো। তুমিই বলে দাও। ( মুচকি হেসে )
সূর্যের হাসি দেখে আরশির বিরক্ত লাগছে। তাই ভ্রূ কুচকে বললো,,,
~ আপনি যখন তখন হুট করে আমার কাছে চলে আসেন যার জন্য আমি মোটেও প্রিপেয়ার্ড থাকি না। আর এইযে আপনি এখন যেটা করলেন ওটার জন্য ও প্রিপেয়ার্ড থাকি না।
~ এখন কি করলাম? ( উঠে ধীরে ধীরে আরশির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে )
আরশি ঘাবড়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,,
~ আ.আমি জানিনা। আব আমাকে আপ্পি ডাকছে বোধয়। আমি যাই।
আরশি চলে যেতে নিলেই সূর্য ওর হাত ধরে আটকালো। একটানে নিজের কাছে নিয়ে এসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো। আরশি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। সূর্য ওর থুতনি ধরে মুখটা উপরে তুললো। ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো,,
~ আমার দিকে তাকাও আর বলো আমি একটু আগে কি করেছি। ( সূর্যের চোখে নেশা খেলা করছে )
~ আম.. আমি কিছু বলিনি।
~ তো এখন বলো।
~ না না কিছু বলতে চাই না। প্লিজ সরুন আপনি। কেউ এসে যাবে। ( আরশির ঠোঁট কাপছে )
~ হুম। (আরশির গালে নাক ঘষে )
~ তো ছাড়ুন আমায়।
~ হুম।
~ প্লিজ ছা…
আরশি আর কিছু বলতে পারলো না। ওর কাপা কাপা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়েছে সূর্য। সূর্যের শার্টের কলার খামছে ধরে চোঁখ বন্ধ করে ফেললো আরশি। সূর্য ওকে আরো কাছে টেনে নিলো। সুখের সাগরে ভাসতে লাগলো দুজনে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here