#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_২৫
#Nishi_khatun
বাড়িতে ফিরে আসার পর সব কিছু আগের স্বাভাবিক নিয়মে চলছিল।
তবে এসবের মাঝে অরিনকে তার কলেজের সহপাঠীরা নানারকম কটু কথা বলে অপমানিত করত। অরিন কখনো তাদের সে সব কটু কথার প্রতিবাদ করে নাই। আসলে সে কোন রকম ঝামেলা করতে চাইছিল না। তবে তাদের বিদায় অনুষ্ঠানের দিন ঘটে যায় এক অঘটনীয় ঘটনা।
তাদের বিদায় অনুষ্ঠান দেখে অরিন সেদিন একটু সুন্দর একটা সিম্পল গাউন পড়ে সাথে হিজাব পরে। হিজাবের সাথে মেচিং করে হাতে কিছু চুড়ি পড়ে। চোখে হালকা কাজলের ছোঁয়া, ঠোঁটে লিপজেল।
এইতো কন্যার সাজ।
অরিন রেডি হয়ে যখন ড্রয়িংরুমে সবার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন ইফান জোড়ে মাশাল্লাহ্ বলে ওঠে।
অরিন মুচকি হাসি উপহার দেয়।
ইহান বলে,”উফফফফফ অরিন এই সিস্পল সাঁজেও তুমি মায়াবতীর থেকে কম লাগছো না। কেন যে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছ না বুঝতেছি না। দেখে আমাদের দু জন কে পাশাপাশি দাঁড়ালে পারফেক্ট কাঁপল মনে হয়।”
ইহানের মুখে এমন সুন্দর বানী শুনে ইফান দ্রুত অরিন কে নিয়ে বাড়ি থেকে প্রস্থান করে।
ইফান অরিন কে গাড়িতে নিজের পাশে বসিয়েছে জোড় করে। আজকাল অরিনের কাছ থেকে দূরত্ব তার সহ্য হয় না। তা-ই সে অরিনকে আগের থেকে বেশি কেয়ার করে।
অরিন এখন ইফানের কোন কথায় তর্ক করে না।
সে জানে লোকটার মনে পোড়া দাগ আছে সে দাগ মিশতে সময় লাগবে। আমি চাইলেও তা সহজেই মুছে ছেলতে পারবো না। তাই সম্পর্ক টাকে আরো বেশি সময় দিতে সে প্রস্তুত দরকার হলে আজীবন অপেক্ষা করবে।
এরপর তারা নিদিষ্ট সময় অনুযায়ী অরিনে কলেজে পৌঁছে যায়। ইফানের সাথে অরিনে কলেজের প্রিন্সিপ্যাল স্যারের ভাল সম্পর্ক থাকাতে, উনি ইফান কে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেন।
তা-ই অরিনের সাথে আজ সোজাসুজিভাব ইফান কলেজে প্রবেশ করে। এদিকে অরিন আর ইফান কে একসাথে কলেজে প্রবেশ করতে দেখে সাহিত্য, রাহিল, অন্তি এরা আরো কিছু ছেলেমেয়েদের সাথে নিয়ে ওদের অনুষ্ঠানে প্রবেশের রাস্তার মাঝে ঘিরে ধরে।
এমন কান্ডে অরিন হতবাক। সে কখনো চিন্তা করে নাই কলেজের শেষ দিন এরা কোন ঝামেলা করতে পারে।
ইফান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”এই তোমাদের সমস্যা কি? এভাবে আমাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
সাহিত্য বলে,”কি রে অরিন এটা বুঝি তোর নতুন নাগর?”
ইফান রেগে বলে,”জাস্ট মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ! জানো তুমি কার সম্পর্কে কি বলছো?”
রাহিল বলল- আরে রাখেন মিয়া! আপনার মতো কতো মাল এলো গেলো। তাছাড়া এই মেয়ে দুদিন পর পর নতুন ছেলের সাথে ঘুরবে আর আমরা তার প্রতিবাদ করবো না এটা হতে পারে না। আমাদের সমাজের একটা নিয়ম আছে। ”
ইফান দাঁত কিড়মিড় করে বলল- তোমাদের ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিতে পারলে এখন কলিজায় শান্তি লাগতো। যাদের নাক টিপলে দুধ বাহির হবে তারা আসছে সমাজ ঠিক করতে? এই তোমরা কি করে সমাজ ঠিক করবে? অন্যক সবার সামনে অপমানিত করে তার মান-সম্মানের বারোটা বাজিয়ে? সমাজ সংশোধন করা এতো সোজা?
সাহিত্য আরে রাখেন তো আপনার লেকচারার।
এমন ভাবে কথা বলছেন যেনো উনি কোন ভার্সিটির লেকচারার। আপনার লেকচার বাড়িতে যেয়ে দিবেন এখানে চলবে না।
এবার অরিন রাগে অপমানে চিৎকার করে বলে,”এই তোমাদের সাহস হয় কি করে আমাদের এভাবে অপমানিত করার? জানো ত যদি এখন তোমাদের নামে মানহানির মামলা করি তাহলে কী হবে? তোমাদের ফিউচার ফিনিশ হয়ে যাবে।”
অন্তি বলে,”চোরের মায়ের বড় গলা। বার বার ছেলে চেঞ্জড করতে লজ্জা করে না? কলেজে প্রথম এসে বলেছিল আমার বিয়ে ঠিকঠাক আছে। কেউ আমার সাথে প্রেম করার কথা চিন্তাও করবে না। আর এখন এসব কি রং তামাশা শুরু করেছো?”
এদিকে লোকজন অনুষ্ঠান দেখা বাদ দিয়ে এদের তৈরি করা তামাশা উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
ইফান নিজেদের চারপাশে এতো ভীড় দেখে সাহিত্যদের উদ্দেশ্য করে বলে,”দেখো এখানে আমরা কোন সিনক্রেট করতে চাইছি না। তোমরা ভদ্র ভাবে কথা বল এবং এই তামাশা করা বাদ দাও।”
তবে ঐ দুষ্টুদের দল ইফানের কথা শুনতে নারাজ।
এদিকে অরিনের মাথা লজ্জায় নিচু হয়ে গেছে চোখ থেকে বেহায়া অশ্রু ঝরতে শুরু করেছে।
জীবনে প্রথম বার কে ইফানের সাথে তার কলেজের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে এনেছিল। তবে কে জানতো তার সাথে আশার জন্য ইফানকে অপমানিত হতে হবে? অরিন যদি জানতো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তাহলে কোনদিন ইফানকে সঙ্গে আসার পারমিশন দিত না।
অরিনের চোখে অশ্রু দেখে ইফান বিচলিত হয়ে যায়। তারপর দ্রুত নিজের ফোন বাহির করে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে ফোন দেয়।
সাহিত্য হুট করে ইফানের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিতে যায়। ইফান সোজা সাহিত্যে গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
এতে করে উৎসাহীত জনতা ইফানের উপর ক্রোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাহিরের একজন আউটসাইডার কি ভাবে তাদের কলেজে এসে তাদের সহপাঠী কে থাপ্পড় দিতে পারে?
কলেজের মাঠে গোলমাল এর সংবাদ পেয়ে দ্রুত প্রিন্সিপ্যাল স্যার সমস্যা দেখতে চলে আসে।
সে এসে দেখে তো অবাক। আল্লাহ স্টুডেন্ট গুলো ইফানের সাথে দুর্ব্যবহার করছে। আর একটা মেয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের বাধা দিতে চেষ্টা করছে।
স্যার দ্রুত ভীড়ের মাঝে গিয়ে ইফান কে রক্ষা করে।
সবাই ইফানের কাছ থেকে দূরে সরে যেতেই অরিন সকলের সামনে ইফানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ইফান শক্ত হাতে অরিনকে জড়িয়ে ধরে রাখে।
প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলে,”তোমাদের একটু লজ্জা করে না এভাবে অন্যের সাথে দুর্ব্যবহার করতে? এসব শিক্ষা পাচ্ছ বুঝি শিক্ষিত হয়ে?”
রাহিল- স্যার আপনি জানেননা এরা দু জনে কি করেছে? মেয়েটার সাথে লোকটা খারাপ সম্পর্ক আছে।
রাহিলের কথাটা বলতে দেড়ি হয়েছিল কিন্তু প্রিন্সিপ্যাল সার তার গালে থাপ্পড় দিতে লেট করে নাই।
প্রিন্সিপ্যাল স্যার চিৎকার করে বলে,”জানো ঐ লোকটা কে? উনি ভার্সিটির একজন লেকচারার। আর তার সাথে তোমরা এমন কুচ্ছিত ব্যবহার করছো? আমি তাকে এখানে আসার দাওয়াত দিয়েছি তা-ই সে এসেছিল। কিন্তু আফসোস সে এভাবে অপমানিত হবে কখনো বুঝতে পারি নাই।”
সবাই আবারো বলে,”স্যার হতে পারে উনি ভার্সিটির লেকচারার তবে তার সাথে অরিনের খারাপ সম্পর্ক আছে!”
ইফান চিৎকার করে বলে,”ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে সোজা করে দিব। জানো অরিন আমার কে হয়? কি সম্পর্ক আমাদের মাঝে? জানলে তো একজন ও এখানে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় কথা বলতে পারবে না।”
সাহিত্য – কী এমন সম্পর্ক আপনাদের জানতে পারি?
ইফান চিৎকার করে বলে,”আমি অরিনের লিগ্যাল গার্ডিয়ান বুঝলে? শুদ্ধ বাংলাতে আমি অরিনের স্বামী। এখন এটা বলিও না যে আপনাদের বিয়ের কাবিন নামা দেখান।”
রাহিল বলে,”নিজেদের দোষ ঢাকতে এসব বলছেন।”
ইফান – তা তোমরা এমন কে হও আমার যে তোমাদের আমার বিয়ের কাগজপত্র দেখাতে হবে? কেউ বিয়ে করে কাবিননাম নিয়ে বসে থাকে না। তাছাড়া প্রিন্সিপ্যাল স্যার আপনি তো জানেন অরিনের সাথে আমার সম্পর্ক কি? তাহলে আপনার কলেজে এসে আমাকে যে এভাবে অপমানিত হতে হবে ভাবতেও পারি নাই।”
প্রিন্সিপ্যাল স্যার ইফানের কাছে মাফ চাইছিল তার স্টুডেন্টদের এমন খারাপ ব্যবহারের জন্য।
তবে ইফান তার কোন কোথার উত্তর না দিয়ে বলে,”কিছুদিন পর আমার স্ত্রীর উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষা। আশাকরি সেখানে তার কোন সমস্যা হবে না।”
বলেই অরিনের হাত ধরে সেখান থেকে প্রস্থান করে।
অরিন আজ স্তব্ধ হয়ে আছে। ইফান সবার সামনে তাকে স্ত্রীর বলে সম্বোধন করেছে। কিন্তু কি ভাবে সম্ভব? সে তো কোনদিন ও আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিবে না তাহলে এসবের মানে কি?
অরিন ইফানের দিকে প্রশ্ন বৃদ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। ইফান অরিন কে ইগনোর করে গাড়িতে উঠে বসে দ্রুত।
অরিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইফানের মনের খবর জেনেই ছাড়বে।
(আপনারা গঠনমূলক মন্তব্য করেন না দেখে আজকাল গল্প লেখায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে। )
”
”
”
চলবে……