রহিবে মনের গহীনে পর্ব-২৯

0
1809

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_২৯
#Nishi_khatun

অরিন বেশ চিন্তা পড়েছে। তাকে কি তার লেকচার
বর বরযাত্রী হিসাবে নিয়ে যাবে? না কি সে এখানে বসে শুধু শুধু মুড়ি খাবে। সে সব কথা চিন্তা করে হাতের নখ কামড়াচ্ছে। তখন তার রুমে গোলাপি
আর রঙিলা প্রবেশ করে।

অরিন তাদের দেখে বুঝতে পারে হয়তো তারা কিছু বলতে চাইছে। তাদের রুমে আসতে দেখেও অরিন চুপচাপ বসে ছিল।

অরিনকে নিরব থাকতে দেখে গোলাপি বলে,
“আম্মাজান কাল সকালে রেডি থাকবেন।
আপনাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাব।
এখানে লেখাপড়া করতে আসছিলেন।
সেই লেখাপড়া কমপ্লিট হয়েগেছে আপনার।
এখন বাড়িতে ফিরে যাবার পালা।”

রঙিলা বলে,” আদিত্য আব্বাজান আপনারে নিয়ে বাড়ি যাইতে বলছে! জানেন তো সে ভালোর ভালো, খারাপের খারাপ। সে যখন বলছে তখন তার কথার অবাধ্যতা করার সাহস আমাদের কারো নেই। আশার করি আব্বাজান কে রাগান্বিত করতে এমন কোন কাজ করবেন না যার জন্য সে দেশে আসে। অনেক আগেই আপনাকে বিদেশ নিয়ে যেতে চাইছে। আপনি যেতে চাননি তা-ই জোড় করে নাই। এবার কিন্তু সে যদি জিদ করে তাহলে আপনার ইচ্ছার কোন মূল্য সে দিবে না।”

অরিন মাথা নিচু করে তাদের দু জনের কথা শুনছিল। তারা রুমের বাহিরে প্রস্থান করতেই অরিনের চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে।

অরিন জানে তার ভাই খুব ভালো, কিন্তু প্রচুর জিদ্দি! যখন সে রেগে যায় তখন তাকে ঠাণ্ডা করা সহজ কাজ নয়। আর সে অরিনকে প্রচুর ভালবাসে।
অরিন বলতে ভাই- ভাবী দু জনে পাগল।
আর বোনটা প্রচুর রাগী। বিদেশে যেতে না করেছে বলেই তার সাথে আজ দু বছর কোন যোগাযোগ করে না। তাতে অরিনের কোন সমস্যা নেই।
সে বড় আপুর থেকে বেশি ভাইয়াকে ভাল বাসে।
এখন সে কি সিদ্ধান্ত নিবে জানে না।

হুট করে সে সময় ইফান অরিনের রুমে এসে ব্যস্ততার সাথে বলে,”কি হলো এখনো রেডি হওনি কেনো? দ্রুত রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে চলে এসো। তুমি আমার সাথে যাবে তোমার স্বাদের ইহান ভাইয়ের বিয়ের বরযাত্রী হয়ে।

তখনো অরিন অন্যদিকে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ছিলে। নরম কন্ঠে উত্তর দিতে বলে,”আমি যাব না আপনাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে। আপনারা সবাই চলে জান অযথা আমার মতো বাহিরের মানুষের জন্য অপেক্ষা করবেন না।”

অরিনের মুখে এমন কথা শুনে ইফান বলল- তোমার মাথা ঠিক আছে তো? কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো তুমি? এই এদিকে ফিরে তুমি, ওদিকে কার চেহার দেখছো?

অরিন নিজের চোখের পানি সুন্দর ভাবে মুছে ইফানের দিকে ফিরে বলে,”আমি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আপনার কথার উত্তর দিয়েছি।”

ইফান অরিনের মুখের দিকে ভালভাবে তাকাতে দেখে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে আর মাথে পাপড়ি ভেজা।

অরিনের অনেকটা কাছে এসে ইফান বলল-
“তুমি কান্না করছিলে? তোমাকে আবারো কি নানা-নানি কিছু বলেছে? দেখো সত্যি কথা বলবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে না।”

অরিন ইফানের চোখে চোখ রেখে বলল- “আমাকে কেউ কিচ্ছু বলে নাই। আর যদিও বলে থাকে তাতে আপনার কোন সমস্যা হবার কথা নয় মিস্টার ইফান জাওয়াদ।”

অরিনের এমন বাচনভঙ্গি দেখে ইফান অবাকের চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে গেছে। অরিন আজ পর্যন্ত কখনো তার নাম ধরে কথা বলে নাই। তবে কি এমন হলো মেয়েটার সে কয়েক মুহূর্তে এতোটা বদলে গেল? সকালেও তো দেখলাম আম্মার কাছে ঘুরঘুর করছিল ইহানের বরযাত্রী সে যাবে কি না এই কথা জানতে। তাহলে এখন কেনো সে বদলে গেলো?

ইফান নিজেকে সংযত করে বলে,”অরিন তুমি ঠিক আছো? এভাবে কথা বলছো কেনো?”

অরিন বলে,”দেখুন এটা বিয়ে বাড়ি আর আমি একটা যুবতী মেয়ে। এভাবে একজন পুরুষ আমার রুমে এসে কথা বলছে বাহিরের কেউ দেখলে আমার চরিত্রের দিকে আঙ্গুল উঠবে। আপনি পুরুষ মানুষ আপনার এসবে কোন সমস্যা হবে না তবে আমার বহুত সমস্যা হবে।”

ইফান এবার রেগে যাচ্ছে অরিনের এমন কথা আর ব্যবহারে। এমন সময় জিনিয়া সেখানে উপস্থিত হয় নিজের হাতে সুন্দর একটা বক্স নিয়ে। রুমের ভেতরে এসে বক্সটা অরিনের হাতে দিয়ে বলে,”দ্রুত রেডি হয়ে এসো। ঐ দিকে ইহান পণ করেছে তুমি তার সাথে বরযাত্রী না গেলে সে বিয়ে করতে যাবে না। তার কথা! তাকে যে রিজেক্ট করেছে তার সামনে সে বিয়ে করবে।”

ইহানের এমন পাগলামি মার্কা কথা শুনে অরিনের মুখ থেকে হাসির ফুয়ারা ছুটছে।

আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসছি বলে সে বক্স হাতে বাথরুম প্রবেশ করে। কিছু সময়পর অরিন বাথরুমের বাহিরে বেড়িয়ে আসে।

অরিনের অবস্থা দেখে ইফান হেসে দেয়।
আর জিনিয়া হাসতে হাসতে অরিনের কাছে এগিয়ে যায়।

অরিন কান্নার ভাব করে বলে,”আন্টি আর কিছু উপহার দেওয়ার পাওনি তুমি? শাড়ি কেন দিয়েছ? জানো আমি কোনদিন ও শাড়ি পরি নাই। এটা কীভাবে পড়ে তা-ই জানি না।তা-ই তো কোনরকম পেঁচিয়ে বাহিরে এসেছি।”

জিনিয়া- আমারি ভুল! মামুনি কে শাড়ি উপহার দিয়েছি তবে তাকে পড়ানো শেখানো হয়নি।
এই ইফান তুমি বাহিরে যাও অরিনকে রেডি করবো।
ইফান রুমের বাহিরে চলে যেতেই জিনিয়া অরিনকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রেডি করে ড্রয়িংরুমে এনে হাজির হয়।

ইফান অরিনকে মুগ্ধ নয়তে তাকিয়ে আছে।
অরিন একটা হালকা গোলাপি কালারের শাড়ি পড়েছে সাথে বড় হাতার ব্লাউজ। মাথায় সুন্দর করে হিজাব। ঠোঁটে হালকা লিপজেল, চোখে হালকা কাজল। এতেই মাশাল্লাহ্ সুন্দর লাগছে।

এরপর সবাই বরযাত্রী হিসাবে রওনা দেয়।
কিছু সময়পর তারা কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে যায়।

সেখান যেয়ে বর আসনে বসে ইহান বেচারার তার হবু বউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ইহানের প্রতিক্ষার প্রহরের সমাপ্তি করে বধু বেসে সুন্দরি এক কন্যার আগমন হয়।

ইহান বধুবেসে কন্যাকে দেখে তাহার চক্ষু আকাশে। ইহান সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
“আজরিন তুই এখানে তাও আবার বউ সাজে কেন?”

আজরিন ইফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভাইয়া বিয়ের আসরে আমি কি অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করবো?”

ইফান ইহান কে সাইডে নিয়ে যেয়ে বলে,
“ইহান তুই যে মেয়ের সাথে প্রেম করতিস সে মেয়ে আজ সকালে তার এক্স বিএফ এর সাথে পালিয়ে গেছে। এখন তোর যে বউ দরকার তা আমরা বুঝতে পারছি। তা-ই জন্য আমরা আজরিনের সাথে তোর বিয়ে দিচ্ছি। দেখ ভাই এখন বিয়েটা তুই না করলেও সমস্যা নেই। আমি সকল অতিথিদের সামনে যেয়ে বলছি! আমার ভাই ইহানের সাথে যে মেয়ের বিয়ে হবার কথা ছিল। সে মেয়ে ইহান কে ত্যাগ করে পালিয়ে গেছে। এখন আমরা তাকে সুন্দরি মেয়ের সাথে বিয়ে দিব। কিন্তু আফসোস সে বিয়ে করবে না। তা-ই আজ এখানে কোন বিবাহ হবে না।
আপনার আসতে পারেন।”

সেই মেয়ের বাবা এসে ইহানের হাত ধরে কান্না করে মাফ চাইতে শুরু করে। বলে,”বাবা আমাদের মাফ করে দিও।আমার মেয়ে এমন কাজ করবে বুঝতে পারি নাই। তবে তুমি তোমার বড় ভাইয়ের কথা শুনে নিজেদের সম্মান টুকু বাঁচিয়ে নাও।”

বড় ভাইয়ের যুক্তি যুক্ত কথা আর প্রমাণ দেখে আর কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না। তা-ই সে আজরিন কে বিয়ে করার জন্য রাজী হয়ে যায়।

এরপর সুন্দর ভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়।তারপর তারা সেখান থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসে।

(দেড়িতে গল্প দেওয়ার জন্য দুঃখীত।
সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না। রাত ৮ টার সময় আসছে।)



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here