#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_৩১
#Nishi_khatun
আজ বাবা বাড়িতে ফিরে এসেছি। তবে জীবন্ত লাশ রুপে গৃহ প্রবেশ করেছি। যাকে নিজের সবটা উজাড় করে আপন মনে করেছি। তার কাছে থেকে দূরে আসাটা সহজ কাজ ছিলো না। তবে দূরত্ব অনেক সময় সম্পর্কের ভীত আরও শক্ত পোক্ত করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আমিও সেই ভরসাতে বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছি।
বাড়ির ভেতরে এসে দেখি আমার বড় বোন আর দুলাভাই সেখানে আগে থেকে উপস্থিত। আমি তাদের দেখে খুশিতে আত্মহারা হবো না কি স্বামীর বিরহে বৈরাগী হব বুঝতে পারছি না। এখন অনুভূতি শূণ্য হয়ে গেছি।
তবে এই মূহুত্বে বোন কে দেখে একটু খুশি লাগছে না। প্রচণ্ড বিরক্তিকর লাগছে। যে মেয়ে বাবা- মা মারা গেছে সে খবর শুনেও নিজের স্বার্থের জন্য দেশে আসে নাই। আমি তার ছোট বোন! বাবা- মা দুজনকে হারানোর শোকে কাতার ছিলাম। তখন কি তার স্বার্থ আগে না বোন আগে ছিল? সেদিন যে বোনের কথা চিন্তা করে নাই! তাকে আমি কি করে সাদরে গ্রহণ করবো? আজ আমার কি তাকে আলিঙ্গন করা উচিৎ? আমার এখন প্রচুর রাগ লাগছে। ইচ্ছা করছে তাদের অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেই। কিন্তু আফসোস এসবের কোনটাই করতে পাড়বো না! কারণ আমার বিবেকে বাধবে। এসমস্ত কথা অরিন চিন্তা করছিল।
তখন অরিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,”পোলাপি খালা আপু যে আসবে সে কথা তো আমাকে বলো নাই? কেনো আমাকে বলো নাই জানতে পারি? না কি জানানোর প্রয়োজন বোধ করো নাই।”
অরিনের বোন বলে,”তোকে সারপ্রাইজ দিতে আমরা এসেছি। শুনলাম ভাইয়া তোকে তার কাছে নিয়ে স্টাডি করাবে তা-ই দেশে থেকে তোর সকল ফর্মালিটি পূরণে সাহায্য করতে চলে এসেছি।”
অরিন বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
“তোমরা আমার সম্পত্তির জন্য এসেছো তা-ই না? এসব কিছু নিছক মাত্র বাহানা। নয়তো বাবা- মা যখন মারা গেছে তখন কেন আসো নাই? আজ যখন জানতে পারছো আমার নামে এতো সম্পত্তি!
তখন তা ভোগ দখল করতে চলে এসেছো?
আর এখন আসছো আমাকে মিথ্যা শান্তনা দিতে?”
অরিনের বোন বলল- বনু তুই এসব কি বলছিস? আমরা বিদেশে সেটেল। আল্লাহর রহমতে সব কিছু আছে আমাদের। আমার মন মানুষিকতা এতোটা নিকৃষ্ট নয় যে ছোট বোনের হক নষ্ট করবো।
গোলাপি এসে বলে,”আম্মাজান আপনি ঐ বাড়িতে থেকে এসব কিছু শিখেছেন? নিজের আপন বোনের সাথে এভাবে কথা বলছো?”
অরিন তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”তাদের শিক্ষা এতোটা নিকৃষ্ট নয়। যদিও তারা আমাকে নিজের মেয়ের থেকে কম কিছু মনে করে নাই। যদি মেয়ে মনে না করতো! তাহলে আমার বাবার বাড়ির কাজের মানুষদের অতিথি বানিয়ে, তাদের ছেলের বিয়েতে দাওয়াত করে নিয়ে যেত না।”
রঙিলা বলে,”আম্মাজান আমাদের এভাবে কথা শোনাতে পারলেন? ”
অরিন তাদের কারো কোন কথার উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
নিজের রুমে এসে বিছানাতে উবু হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রাখে। এভাবে সারাদিন রুমের মাঝে নিজেকে বন্ধী করে রাখে। এদিকে ঐবাড়ির চিন্তায় অরিন অস্থির হয়ে গেছে। তার এভাবে চলে আসাতে হয়তো সবার খুব খারাপ লেগেছে। তবে কি করবে সে? অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধতা করতেই হয়।
এদিকে সেই সকালে ইফান নিজেকে রুমে বন্ধী করে রেখেছে। বাড়ির করো সাথে কোন রকমের যোগাযোগ করে না।
ইহান নিজের ভাইয়ের রুমের বাহিরে অনেকবার নক করেছে। তবে ইফানের রুম থেকে কোন সাড়াশব্দ আসছিল না। ইহানের কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে। ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে না তো। মনের মধ্যে তার অজানা ভয় রুহ কাুঁপিয়ে দিচ্ছে। সে খুব জোড়ে জোড়ে ইফানের রুমের দরজাতে কড়াঘাত করতে থাকে।
তা দেখে আজরিন বলে,”এমন পাগলামি কেন করছো? ইফান ভাইয়ের হয়তো কোন কারণে মন খারাপ তা-ই হয়তো একা থাকতে চাইছে।”
ইহান আজরিনের উপর রেগে বলে,”আমার ভাইয়ার অতীত ভুলে গেছো বুঝি? জানো না কয়েকবছর আগে কি হয়েছিল? আমি আমার ভাইকে নিয়ে কোন রিস্কি নিতে রাজী না।”
আজরিন শুকনা ঢোক গিলে কাঁপাকাপা কন্ঠে ইফান ভাই, ইফান ভাই বলে ডাকতে থাকে।
জিনিয়া স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তার কোন অনুভূতি কাজ করছে না।
অরিনের কেন জানি ভাল লাগছিল না। তখন সে জিনিয়ার কাছে কল করে। জিনিয়ার ফোনের স্কিনে অরিনের নামটা জ্বলজ্বল করছিল। তখন ইহান দ্রুত কলটা রিসিভ করে বলে,
“অরিন আমার ভাইয়া!”
অরিন উদ্বিগ্নতার সাথে বলে,”কি হয়েছে লেকচারার সাহেবের?”
ইহান বলে,”ভাইয়া রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কোন সাড়াশব্দ করছে না। আমার খুব ভয় করছে। আমি আমার ভাইটা কে হারাতে চাইনা।”
অরিন- আচ্ছা টেনশন করবেন না। আমি বেপারটা দেখছি।
ইফান বিছানাতে সোজা হয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ তার মুঠোফোনের স্কিনের উপর “আমার স্বপ্ন ” লেখা নামটা জ্বলজ্বল করছিল।
স্কিনের উপর ভেসে থাকা নামটা দেখে ইফানের জানে জান ফিরে আসে। দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে-
ফোনের ওপাশ থেকে দ্রুত গামী ট্রেনের গতিতে ঝড় তুলে অরিন বলতে থাকে,
“এই আপনার সমস্যা কোথায়? এভাবে রুমের মাঝে নিজেকে বন্ধী করে রাখছেন কেন? বাহিরে আপনার জন্য কতো মানুষ চিন্তায় মরে যাচ্ছে বুঝতে পারছেন?”
ইফান নরম শুরে বলে,”তুমি কি আমার জন্য তাদের মতো চিন্তিত?”
অরিন ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,”ফাইজলামি করছেন তা-ই না? এভাবে রুমে বসে সুইসাইড করার প্লানিং করে বসে আছেন? আপনি কি সুইসাইড করবেন। আমি দড়ি কলশি নিয়ে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।”
ইফান -দড়ি কলশি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তুমি সুইসাইড করবে না তা আমি জানি! কারণ তোমার বাড়ির শতশত মাইল আশেপাশে কোন পুকুর নেই। তা-ই বানিয়ে গল্প বলেও লাভ নেই। তোমার উপর নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস আছে।
অরিন- এতোটা যখন বিশ্বাস করেন তখন আমাকে ভালোবাসেন সে কথাটা স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়?
ইফান- সব সময় ভালবাসার কথা মুখ দিয়ে প্রকাশ করতে হয় না। কিছু সময় তা মানুষের অনুভূতি কথা এসব কিছু থেকে বুঝে নিতে হয়। ভালোবাসি এটা একটা শব্দ মাত্র! তবে এই শব্দ ছাড়াও ভালবাসা
প্রকাশ করা সম্ভব।
অরিন- থাক! থাক! এতো বড় বড় লেকচার দিতে হবে না। এত ভাড়ী ভাড়ী শব্দ বোঝার বয়স আমার হয়নি।
আপনি এসব আগলা আলাপ বাদ দিয়ে চুপচাপ নরমাল বিহেভিয়ার করুণ। এমন ভাব করছেন যেনো বউ অন্যের সাথে পালিয়ে গেছে।
ইফান অট্টহাসি দিয়ে বলে,”আচ্ছা!
ম্যাডাম সমস্যা নেই। আপনার কথামত কাজ হবে।”
অরিন ফোনের লাইন ডিসকানেক্ট করে স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
(ব্যাক্তিগত ব্যস্ততার জন্য গল্প দেওয়া সম্ভব হয় নি। আশা করি এখন থেকে রেগুলার পাবেন গল্পটা)
”
”
”
চলবে…..