রহিবে মনের গহীনে পর্ব-৩২

0
2149

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_৩২
#Nishi_khatun

ইহানের জান পরাণ চুপসে যাওয়া অবস্থা ভাইয়ের টেনশন এমতাবস্থায় হঠাৎ ইফান দরজা খুলে বাহিরে বেড়িয়ে আসে। ইফান কে সুস্থ সবল অবস্থায় দেখে ইহান দ্রুত ভাইকে জড়িয়ে ধরে।

ইফান ইহানের মাথায় হাত বু্লিয়ে দিয়ে বলে,”পাগল ভাই একটা। এতোটা চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি এমন কোন কাজ করব না যার জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা মনে কষ্ট পাবে!”

ইহান ইফানের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলে,”এত সময় ধরে ডাকাডাকি করছি! তোমার কোন সাড়াশব্দ নেই। যেই-না অরিন আম্মুর কাছে ফোন করলো তাকে তোমার খবর দিলাম তার পাঁচ মিনিট পর তুমি বাহিরে! এসবের মধ্যে কি অরিনের কোন হাত আছে?”

ইফান মুচকি হেসে বলে,” হাত-পা থাকলেও থাকাতে পারে । আবার হাত-পা নাও থাকতে পারে।”

এসব উল্টাপাল্টা কথা বলে সে বাড়ির বাহিরে চলে যায়।

পরেরদিন খুব ভোরে ইহান বাড়ি থেকে নিজের বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

সকালে নাস্তার টেবিলে অরিনের বাড়ির সবাই একত্রিত হয়ে নাস্তা করছিল কিন্তু অরিন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলোনা। অরিন ড্রাইনিং রুমে আসছিল, ঠিক সে সময় তাদের বাড়ির ভেতরে ইহান হুরমুর করে প্রবেশ করে।

অরিন ইহান কে দেখে খুব খুশি হয়। তবে বাকিটা হঠাৎ অপরিচিত আগন্তুক কে দেখে খুব একটা খুশি হয় না।

ইহান অরিনদের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই তার দৃষ্টি ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত অরিনের বড় বোনের উপর গিয়ে স্থির হয়।

ইহান সেখানে স্থির হয়ে জমে যায়। অরিন ইহানের কাছে যেতেই তার কানে ইহানের বিড়বিড় করা কথা পৌঁছে যায়।

“এতবছর পর রুহানি এখানে কেন?”

রুহানি নামটা শুনে অরিনের কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে। সে ডাইনিং টেবিলের উপর উপস্থিত তার বোনের দিকে তাকিয়ে নিজেই কয়েকবার বড় বোনের নাম আওড়াতে থাকে। “রুহানিকা আফরোজ ” ওরফে রুহানি! আমার বড় বোন সেই রুহানি? কিন্তু এটা কি ভাবে সম্ভব? আমার বোন কখনোই পাষাণী হতে পারে না। আমাদের তো কোন কিছুর অভাব নেই। তাহলে সে কেনো ইফানের সাথে ঐরকম কিছু করবে? ইহান হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।

অরিন ইহানের হাত ধরে তার রুমের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন রুহানিকা এসে পথ আগলে বলে,”অরিন ছেলেটা কে? আর তুই তার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”

অরিন বলে,”কারো স্বপ্ন ভাঙ্গতে নিয়ে যাচ্ছি না। সে বিবাহিত তার বউ আছে। সব থেকে বড় কোথা সে আমার আত্মার আত্মীয়।”

রুহানিকা – মানে কি বলতে চাইছিস তুই?

-আপু তোমার এতো কিছু জানতে হবে না।
তাছাড়া এই কয়েকবছর যখন চুপচাপ ছিলে তখন না হয়, এখন এই কয়েকটা দিন ও চুপচাপ থাকবে?

অরিন ইহান কে নিয়ে চলে যেতেই গোলাপি বলে,” অরিন আম্মার সাথে যে গেছে সে হচ্ছে ইহান বাবাই। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হলো। অরিন আম্মায় যে বাড়িতে থাকতো সে বাড়ির ছোট ছেলে সে।”

রুহানিকা বলে,”ওহ আচ্ছা। ”

এদিকে অরিন রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ইহান কে উদ্দেশ্য করে বলে, “আপনি আপুকে দেখে রুহানি কেন বলছেন?”

ইহান ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,”কারণ ঐ ডায়নি মেয়েটা সেই পাষাণী। যে আমার ভাইয়ের সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। ইফানকে দিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণ করে তাকে মরার জন্য ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। আমি এই ডায়নিকে কোনদিন ও চিনতে ভুল করবো না। যার জন্য আমার ভাইয়ার সাজানো জীবনটা তছনছ হয়েগেল। সে ভালোবাসা কে ভালোবাসতে ভয় করে আজও। তা-ই তো সে এখনো কাউকে বিশ্বাস করে সংসার শুরু করতে পারে নাই।”

অরিন তবুও দৃঢ়কণ্ঠে বলে ওঠে,
“আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে?
আমার বড় বোন আসল অপরাধী?”

ইহান তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলে,”পৃথিবীর নিয়ম বড়ই অদ্ভুত! কেউ নির্দোষ হলে তার সত্যতার প্রমাণ করতে হাজার বার চিৎকার করতে হয়। কিন্তু একটা মিথ্যা প্রমাণ করতে কোন প্রমাণ দরকার হয় না।”

অরিন স্থির দৃষ্টিতে ইহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইহান তখন নিজের পিছনের শার্ট উঁচা করে একটা ডায়েরি বাহির করে অরিনের হাতে ধরিয়ে দেয়। আর বলে,”ভাগ্যের কি পরিহাস দেখো! আমি ডায়েরিটা চুরি করে এনেছিলাম তোমাকে সেই হৃদয়হৃীনাকে দেখতে। আফসোস, সে সশরীরে তোমার বাড়িতে তোমার সামনে উপস্থিত। এখন ভেবে দেখো, প্রমাণ দেখার পর তুমি কি করবে জানতে অধির আগ্রহের সাথে বসে রইলাম।”

অরিন ইহানের হাত থেকে ডায়েরিটা হাতে নিয়ে কাঁপাকাপা হাতে পৃষ্ঠা উল্টাতে শুরু করে।
ডায়েরির প্রথম পাতায় রুহানিকার কিশোরী বয়সের ছবি। ইফানের ডায়েরিতে রুহানির ছবি দেখে কোন কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না তার। ডায়েরির কয়েকটা পাতা উল্টাতে আরো বেশ কিছু ছবি দেখে। যেখানে ইফান আর রুহানিকা কাঁপল সাজে ছবি তুলেছে।

ইহান অরিনের রুম থেকে বেড়িয়ে যাবার সময় অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আশা করবো আমার ভাইয়ের সাথে ইনসাফ করবে তুমি। বড় বোনের মত ছলনাময়ী হবে না। আর যদি ছলনা করতে চাও করতেই পারো বড় বোনের আদুরে ছোট বোন বলে কথা!

ইহান প্রস্থান করার পর অরিন মেঝেতে বসে পড়ে। চিৎকার করে কান্না করতে চাইছে তবে শব্দ গলার বাহিরে বেড়িয়ে আসতে চাইছে না।

এমন সময় ইফান অরিনের কাছে কল করে।
অরিন নিজেকে সংযত রেখে কথা বলতে শুরু করে।

ইফান – আরে আমার ফাজিল স্টুডেন্ট যে আমার কথা ভুলেই গেছে।

– ভুলে যদি যায়! তবে তোমাকে মনে কে রাখবে শুনি?ভুলে যাবার জন্য আসি নাই তোমার জীবনে।

ইফান – তোমার কিছু হয়েছে? গলাটা কেমন জানি শোনা যাচ্ছে। তোমার কি কোন সমস্যা হচ্ছে ওখানে?

– নাহ! আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।
এমনিতে গলাটা খারাপ হয়ে গেছে।

ইফান – দেখো কোন সমস্যা হলে বলতে পারো।
যদি না বলতে চাও তাহলে সমস্যা নেই।
আমি তোমার বাড়িতে চলে আসি।

– একদম আমাদের এবাড়িতে আসবে না। দরকার হলে আমি যাবো তোমার কাছে। আমি চাইনা তুমি তোমার কালো অতীতের সম্মুখীন হও।

ইফান- কালো অতীত মানে কি?

-আরে ঐ যে, আমাকে যে ট্রাজেডির মধ্যে প্রথম দেখেছিলে সেই ট্রাজেডি তো আমার জীবনের কালো অতীত। তাছাড়া তুমি এবাড়িতে আসলে রেগুলার আসতে চাইবে। তখন নানারকম কথার সৃষ্টি হবে। তেমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক এটা চাইছি না।

ইফান অরিনের কথায় সহমত প্রকাশ করে।

এভাবে বেশ কিছুদিন পার হয়ে যায়। অরিন তার বড় বোন রুহানিকার সাথে কোন রকমের কথায় বলে না। সে একই বাড়িতে থেকে বড় বোন কে ইগনোর করে চলে। এটাও বেশ দৃষ্টি কটু দেখায়। তবে অরিন সে সব নিয়ে মাথা ঘামাই না।

এদিকে দেখতে দেখতে অরিনে এইচএসসি পরিক্ষার রেজাল্ট বাহির হয়। অরিন খুব ভালো ফলাফল করেছে। অরিনের রেজাল্ট শুনে ইফান বেশ খুশি হয়।

রেজাল্ট অনেক ভাল হওয়াতে ইফান অরিনকে অভিনন্দন জানাতে কল করে।

অরিন ইফানকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে,”আচ্ছা আপনার কি হওয়া স্বপ্ন ছিলো জীবনে? ”

ইফানের হাসি মুখটা মলিন হয়ে যায় তবুও অরিনকে বুঝতে না দিয়ে বলে,”জীবনে একটা সময় অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। তবে নিজের কিছু ভুলের জন্য স্বপ্ন গুলো ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছে। এখন তো জীবনে আর কোন স্বপ্ন অবশিষ্ট নেই।”

-আরে ধুর,সেই মরা স্বপ্নের কোন নাম ঠিকানা কিছু তো ছিল না কি?

ইফান- হুম! আমার ল পড়ার খুব স্বপ্ন ছিল।
তবে ওটা ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে মিটে গেছে।

-ভাগ্যিস ল’য়ার হও নাই। নয়তো সারাদিন মিথ্যা কে সত্যি আরে সত্যি কে মিথ্যা বানাতে ব্যস্ত থাকতে।

ইফান- আচ্ছা অনেক তো হলো, তোমার এখন কি করার ইচ্ছা তা-ই বলো।

-নিজের কিছু অসমাপ্ত কাজ আছে আপাতত সে কাজ গুলো শেষ করতে চাইছি এখন।

ইফান- আচ্ছা তোমার কাজ গুলো দ্রুত শেষ করো। নয়তো ভার্সিটিতে ভর্তির পর আর কোন কিছু করার চান্স পাবে না।

-জি! অবশ্যই!

(মন্তব্য আশা করবো)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here