আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪৪

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪৪

স্টোন গার্ডেন। বেশ গোছানো একটি জায়গা। নান্দনিক পাথরের ব্যাবহারে এখানে আছে বসার বেঞ্চ, সেতু এবং উন্মুক্ত প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ। সাজেকের মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে সাজেক রিসোর্টের পাশেই স্টোন গার্ডেন। সূর্যরা আজকে এখানেই এসেছে। আল্লাহর সৃষ্টি যে কতোটা সুন্দর তা পদে পদে প্রমাণ পাচ্ছে আরশি। মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখছে। সুজানা বার বার আড়চোখে মাহিরের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু মাহির তাকাচ্ছে না।সবার সাথে গল্প করতে ব্যাস্ত। সুজানার সাথে কথা ও বলেনি কোনো। এক প্রকার ইগনোর করছে। সুজানার মোটেও ভাল লাগছে না মাহিরের এই ইগনোরেন্স। মাহিরের দিকে তাকিয়ে বির বির করে বললো,,,
~ কি করেছি আমি? একটু কথা ও বলছেনা তাকাচ্ছে ও না। এমন করার মানে কি?

~ আরশি আয় দোলনায় বসবো আমি। আর তুই ধাক্কা দিবি।
মিহি আরশি কে টেনে নিয়ে গেলো দোলনার কাছে। মিহি দোলনায় দুলছে আর একেক পোজে ছবি তুলছে। আরশি চুপচাপ প্রকৃতি দেখছে আর দোলনায় ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। ওর কাধে কেউ আস্তে করে থাপ্পর দেওয়াতে পাশে তাকিয়ে দেখলো রেহান দাড়িয়ে আছে।
~ তোমাকে সূর্য ভাইয়া ঐদিকে ডাকছেন। ( হাত দিয়ে সূর্য যেদিকটায় আছে ঐদিকে ইশারা করে )
~ আরশি একটু জোরে ধাক্কা দে!
আরশি মিহির দিকে তাকিয়ে তারপর রেহানের দিকে তাকালো। রেহান হেসে বললো,,
~ তুমি যাও আমি দেখছি।
আরশি কিছুটা ইতস্তত করে সূর্যের কাছে চলে গেলো।

~ ডাকছিলেন?
~ না ডাকি নি।
~ কিন্তু রেহান ভাইয়া যে বললো!
~ আচ্ছা রেহান বলেছে? কই আমিতো জানিনা কিছু।
আরশি কিছুক্ষন বোকার মতো তাকিয়ে রইলো সূর্যের দিকে। ওকে এভাবে তাকাতে দেখে সূর্য আরশির এক হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
~ মজা করছিলাম। আমিই ডেকেছি তোমাকে। কি করবো বলো না ডাকলে তো তুমি নিজ থেকে কখনো আসতে না।
আরশি সূর্যের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে একটু সরে দাড়ালো। সূর্য ভ্রু কুঁচকে আরশি কে দেখছে।
~ কি হলো, সরলে কেনো?
~ এখানে এতো মানুষ আছে আপনি দেখতে পারছেন না?
~ হ্যাঁ তো। ঐ দেখো আরো কাপলরা ও আছে। জড়িয়ে ধরে ছবি ও তুলছে। ( ঠোঁট ফুলিয়ে )
আরশির সূর্যের এমন ফেস দেখে হাসি পেলো। সাথে এক ভয়ঙ্কর ইচ্ছা জাগলো। সূর্যের কাছে গিয়ে ওর গাল দুটো টেনে দিলো। সূর্য চোঁখ বড় বড় করে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। আরশি সূর্যের তাকানো দেখে হেসে দিলো। সূর্য ও মুচকি হাসলো।

নাহিদ ভ্রু কুঁচকে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। তার কারণ ও যতবার নিধির সাথে কথা বলতে গেছে ততোবার অভ্র বাঁধা দিয়েছে। নাহিদকে কিছু বলার সুযোগ ই দিচ্ছেনা। অভ্র নিধির পাশে দাড়িয়ে আছে। নিধি রোজ আর ন্যান্সির পিক তুলে দিচ্ছে। নাহিদ মুখ গোমড়া করে রিকের পাশে গিয়ে পাথরের উপর বসে পড়লো। রিক ওর হাতের কোকাকোলার ক্যান নাহিদের দিকে এগিয়ে দিলো।
~ আমরা কালকে ফিরে যাচ্ছি তাইনা?
~ মাহির ভাইয়া তো তাই বললো। আচ্ছা এই অভ্রর হয়েছেটা কি?
~ কেনো কি হবে আবার?
~ কেমন অদ্ভুত বিহেভ করছে।
~ কোথায় আমার তো মনে হচ্ছে না..
~ আরে তুমি খেয়াল করোনি আমি কালকে থেকে যতবার নিধির সাথে কথা বলতে গেছি ততোবার ও আটকে দিয়েছে। একবার দু বার কো-ইন্সিডেন্ট হতে পারে কিন্ত বারবার না।
~ কি জানি! রেহান ও তো একি কাজ করছে।
~ কি করছে?
~ কালকে মিহির সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম ও এসে মিহি কে নিয়ে চলে গেলো। কোথায় গেলো কে জানে। আবার ডিনারের সময় মিহির পাশে বসতে গেলাম কোত্থেকে হুট করে এসে বসে পড়লো আমাকে রোজের পাশে বসিয়ে দিলো। এখানেই শেষ নয়।
এখানে এসে মিহি আমাকে বলেছিলো ওর ছবি তুলে দিতে তখন রেহান আমার হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে বললো ও তুলে দিবে। কি হয়েছে ওর বুঝলাম না।
~ অভ্র আর রেহান দুটোই আজব বিহেভ করছে।
~ হ্যাঁ দে আর বিহেবিং লাইক আ পসেসিভ হাসব্যান্ড।
নাহিদ রিকের কথা শুনে চমকে গেলো। রিক নিজের কথা শুনে নিজেই অবাক হলো। ওরা এঁকে অপরের দিকে তাকালো তারপর এক সঙ্গে অভ্র-নিধি আর রেহান-মিহির দিকে তাকালো।
~ এটা তো আমার মাথাতেই আসে নি। ওরা জেলাস ফিল করছিলো তার মানে। ( নাহিদ )
~ এখানে আসার পর তো দেখছি একের পর এক কাপল সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
~ তাই তো দেখছি। কিন্তু আমার দুই বন্ধু যে এভাবে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে তা তো আগে জানতাম না।
রিক দাত বের করে হাসলো।

~ এই আরশি এই পিকটা কেমন এসছে বল তো!
পিকটা দেখানোর জন্য পিছনে ঘুরতেই রেহান কে দেখে মিহির হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো।
~ আপনি! আপনি এখানে কি করছেন? আরশি কোথায়? কালকে থেকে এতবার করে আমার সামনে আসছেন কেনো আপনি?
মিহির পাশে ধপ করে বসে পরলো। মিহি ভ্রু কুঁচকে রেহান কে দেখছে।
~ শুনো মেয়ে এভাবে তাকানোর কিছু হয় নি। আমি ইচ্ছে করে তোমার কাছে আসি নি। আরশি কে সূর্য ভাইয়া ডাকছিলো তাই ওকে পাঠিয়ে দিয়ে আমি নিজেই আপনার সেবাতে নিয়োজিত ছিলাম।
~ কিসের সেবা?
~ কেনো এইজে আপনি যে দোলনা তে দুলছেন তা ধাক্কাটা আরশি চলে যাওয়ার পর কে দিচ্ছিলো শুনি?
~ ওহ! তো আমি কি দিতে বলেছিলাম নাকি?
~ না আমাকে কেনো বলবেন বলেছিলেন তো আরশি কে।
~ আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো?
~ কিভাবে বলছি?
~ এই যে আপনি আপনি করে!
~রিস্পেক্ট দিচ্ছিলাম হজম করতে পারোনি তাই না?
মিহি কট মট করে রেহানের দিকে তাকালো।
~ আপনার সাথে ভালো করে কথা বলাটাই বেকার।
মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো।
~ আচ্ছা তো কার সাথে কথা বলা তোমার কাছে কাজের, রিকের সাথে?
~ আবার? আবার আপনি রিক ভাইয়ার নাম নিয়ে আমাকে খোঁচা দিচ্ছেন?
~ হ্যাঁ দিচ্ছি। এবার উত্তর দাও।
~ কিচ্ছু বলবো না আপনাকে আমি। কালকে রাতে তো বললাম ই যে ওনাকে আমি ভাই হিসেবেই দেখি তাও আপনার এসব বলাই লাগবে। রিক ভাইয়াকে নিয়ে আপনার সমস্যাটা কোথায় আমি বুঝিনা।
~ ওকে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে তোমাকে নিয়ে।
~ আমি কি করেছি?
রেহান কিছু বলতে নিয়েও চুপ করে গেলো।
~ ফরগেট ইট।
~ না বলুন। কি করে……
মিহি আর কিছু বলতে পারলো না। হা করে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। হঠাৎ করে এই মেয়ে কোথা থেকে এলো। রেহান মেয়েটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করালো।
~ মাইশা তুই এখানে?
~ আমিও প্রথমে তোকে এখানে দেখে বিশ্বাস করতে পারিনি। বাট আই এম সো হ্যাপি তোর সাথে দেখা হয়ে গেলো।
~ তুই এখানে কি করিস?
~ আমিতো ফুপিদের সাথে এসেছি। হঠাৎ করেই ঘুরার প্ল্যানটা হলো তাই তোদের জানানো হয় নি। তুই কি অভ্রদের সাথে এসছিস?
~ হ্যাঁ আমাদের ও হঠাৎ করেই প্ল্যানটা হয়ে গেছে।
এদিকে মিহির ভীষন বিরক্ত লাগছে মাইশার রেহানকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখায়। নাম শুনেই চিনতে পেরেছে এইটা ওই মেয়েটা যে রেহানকে নিয়ে পোস্ট করেছিলো। রেগে আরশির পাশে এসে দাড়িয়ে গেলো। আরশি আর সূর্য গল্প করছিলো মিহি কে এভাবে রাগে গজগজ করে পাশে দাঁড়াতে দেখে অবাক হলো।
~ কি হয়েছে মিহি? রেগে আছিস কেনো?
~ওদিকে দেখ।
আরশি আর সূর্য মিহির কথামতো রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে গল্প করছে।
~ ঐ মেয়েটা কে?
~ ওনার কলিজার ফ্রেণ্ড। নিজের মেয়ে ফ্রেন্ডকে জড়িয়ে ধরলে দোষ না অথচ আমি রিক ভাইয়ার হাত ধরে হেঁটেছি বলে কতগুলো কথা শুনালো। খোঁচা দিয়ে কথা বললো। ফালতু লোক একটা।
আরশি আর সূর্য এঁকে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।

মাইশা একে একে সকলের সাথে পরিচিত হলো। মাহির একটু ফোনে কথা বলার জন্য অন্য পাশে গিয়েছিলো এসে দেখলো ওরা সবাই কারো সাথে কথা বলছে। সেদিকে এগিয়ে গেলো।

মাইশা মাহির কে এখানে দেখে অবাক হয়ে গেলো। রেহান অভ্র আর নাহিদের দিকে তাকালো। যার অর্থ আমি কি ঠিক দেখছি!! রেহান আর অভ্র ঢোক গিলে মাথা নাড়লো। নাহিদ মূখে হাত দিয়ে মাইশা আর মাহির কে দেখছে।

~ মাইশা রাইট??
মাইশা আরো অবাক হলো মাহিরের মুখে নিজের নাম শুনে। তারমানে উনি আমাকে মনে রেখেছেন। দ্রুত মাথা নেড়ে বললো,,,
~ হ. হ্যাঁ আমি মাইশা। আ. আপনি এ. এখানে ? ( নার্ভাস হয়ে )
মাহির সুজানার দিকে তাকালো। সুজানা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ সরিয়ে মাইশার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
~ আমরা সবাই প্ল্যান করেই এসেছি।
~ ও. ওহ । ভালো, খুব ভালো। ( মাহিরের দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে )
মাহির কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো মাইশার এভাবে তাকিয়ে থাকায়। সুজানা চোখ ছোট ছোট করে মাইশার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইশার এভাবে তাকিয়ে থাকাটা সবাই লক্ষ্য করেছে। রেহান মাইশা কে আলতো করে ধাক্কা দিলো। মাইশার কোনো হেলদোল নেই। অভ্র এবারে একটু জোরেই ধাক্কা দিলো। মাইশা হকচকিয়ে গেলো। মাহিরের দিকে তাকিয়ে রেহান-অভ্রর দিকে তাকালো।
~ ক…কি হয়েছে ধাক্কা দিচ্ছিস কেনো?
রেহান আর অভ্র অসহায় ভাবে মাইশার দিকে তাকালো। নাহিদ মূখে হাত দিয়েই মিটিমিটি করে হেসে যাচ্ছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here