আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৪৫

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৪৫

~ আর ইউ ম্যাড মাইশা? কি করছিলিটা কি তুই ? ওখানে সবাই ছিলো তোর দিকে কীভাবে তাকাচ্ছিলো দেখেছিস? (রেহান )
~ ও দেখেছে নাকি যে ওকে জিজ্ঞেস করছিস? ( অভ্র )
মাইশার মাথায় থাপ্পর দিয়ে,,
~ তা দেখবে কি করে ও তো কোনো একজনের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো। ( নাহিদ )
~ তোরা এমন করিস কেন? আমার উচিত এখন তোদের উপড় রাগ করে থাকা, কিন্তু আমার মন খুব ভালো তাই রাগ করলাম না। আজ এতদিন পর আমার, আমার ক্রাশের সাথে দেখা হয়েছে। তার থেকে বড় কথা ক্রাশ আমাকে মনে রেখেছে। আল্লাহ এত খুশি আমি কোথায় রাখবো!!! (গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে )
~ ড্রামাকুইন তোর ড্রামাটা এবারে বন্ধ কর। আর মাহির ভাইয়ের উপর কুনজর দেওয়া বন্ধ কর। ( অভ্র )
~ কি বললি আমি কুনজর দিচ্ছি? আমি তার উপর সেই প্রথম দিন থেকে ক্রাশড। তার দিকে যখনি তাকাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাই। আর তুই কিনা আমার নজর কে কু নজর বলে দিলি?? ( ন্যাকা কান্না করে)
~ আহ স্টপ ইট মাইশা। তোকে একটা কথা জানিয়ে রাখছি মাহির ভাইয়া সু…..
রেহানের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মিহি ওখানে চলে এলো। ওকে দেখে রেহানের কথা মাঝ পথে থেমে গেলো।
~ আপনাদের সবাই ডাকছে। আমাদের এখন এখান থেকে যেতে হবে।
~ ঠিক আছে তুমি গিয়ে বলো মাইশা কে বায় বলে আসছি।
রেহানকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
~ এই না কিসের বায় আমি আমার ক্রাশের সাথে আরো কিছুক্ষণ থাকতে চাই।
~ ( দাতে দাত চেপে ) কানের নিচে যখন একটা পড়বে না তখন তোমার ঢং বের হয়ে যাবে। এখন সবাই ফিরে যাবে আর তুই ও তোর ফুপির কাছে যা।
~ রেহান প্লিজ ইয়ার এমন করিস না। আচ্ছা এখনকার মতো যা কিন্তু কালকে আমি তোদের সাথে যাবো প্লিজ।
~ মাইশা!!
~ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ।।। শুধু এটুকুই তো চাইছি আর তো কিছু চাইছি না ফ্রেন্ডের জন্য এতোটুকু করে দে প্লিজ। ( কাঁদো কাঁদো গলায় )
রেহান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,,
~ ঠিক আছে ঠিক আছে তুই কালকে আমাদের সাথে ব্যাক করবি কিন্তু কোনোরকম বাড়াবাড়ি যদি করেছিস তো তোর খবর আছে!!
~ আমি কিচ্ছু করবোনা শুধু দূর থেকে দুচোখ ভরে দেখবো।
রেহান বাঁকা চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইশা তা দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

মিহি কে যেতে বলা হলেও মিহি যায়নি। ওখানেই দাড়িয়ে কটমট করে মাইশা আর রেহানকে দেখছে। মাইশার রেহানের এভাবে হাত জড়িয়ে ধরাটা ওর একটুও ভালো লাগছে না।

নাহিদ এতক্ষন কান পেতে মাইশার কথা শুনছিলো। মাইশার এমন পাগলামো দেখে গাধী বলে সামনে তাকাতেই মিহি কে দেখতে পেলো। মিহির দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে বুঝলো ও রেহান আর মাইশা কে দেখেছে। তাও রাগি দৃষ্টিতে। নাহিদ মিহির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। আস্তে আস্তে মিহির পিছনে দাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে গান গাইতে শুরু করলো,,
~ পরান যায় জ্বলিয়া রে,,, পরান যায় জ্বলিয়া রে!!
মিহি হকচকিয়ে গেলো। নাহিদের দিকে তাকাতেই নাহিদ দুষ্টু হেসে বললো,,,
~ লাল মরিচের জ্বলছে মনে হচ্ছে বোম্বাই মরিচ আর ধানি লঙ্কা কে একসাথে দেখে।।
~ অ্যা! ক.কে লালমরিচ আর এই বোম্বাই মরিচ আর ধানি লঙ্কাটাই বা কে?
নাহিদ রেহান আর মাইশার দিকে ইশারা করে বললো,,
~ তুমি হচ্ছো লালমরিচ। রেহান বোম্বাই মরিচ আর মাইশা ধানি লঙ্কা।
মিহি ওদের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,,,
~ কি সব উদ্ভট নাম এগুলো! আ. আর আ. মার ওদের দেখে জ্বলবে কেনো??
~ জ্বলছে না বলছো? কিন্তু আমি যে লালমরিচ পোড়া গন্ধ পাচ্ছি!!!
~ আজগুবি কথা বন্ধ করুন। কারোরই জ্বলছে না।
~ ওকে না জ্বললেই ভালো। ওদের একসাথে কতো সুন্দর মানায় তাই না। কারো নজর যেনো না লাগে।
মিহি কপাল কুঁচকে নাহিদের দিকে তাকালে নাহিদ মেকি হাসি হাসে। মিহি আর কিছু না বলে রেহান-মাইশার দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়। নাহিদ ওর যাবার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসে। এই পুরো সময় অভ্র নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

~ এই মিহি এতক্ষন লাগে তোর আসতে! রেহান অভ্র ওদের বলেছিস ফিরে যাওয়ার কথা? ( মাহির )
~ না ভাইয়া বলিনি এতক্ষন ঐখানে তামাশা দেখতে ব্যস্ত ছিলাম তুমি একটু দয়া করে বলে এসো। তা না হলে আজকে আর বোধয় আসবেন না ওনারা।
~ কি বলছিস তামাশা মানে ? এই তুই কি কোনো কারনে রেগে আছিস?
~ না তো আমি কেনো রাগ করতে যাবো? কার উপর রাগ করবো? কেনো করবো? আচ্ছা তুমিই বলো আমার কি কারো ওপর রাগ করার কোনো কারণ আছে?
মাহির ঢোক গিলে না বোধক মাথা নাড়লো।
~ রাইট কোনো কারণ নেই। তাই আমিও রাগ করে নেই। বুঝতে পেরেছো?
~ হ্যাঁ বুঝেছি। তুই যা আরশিদের কাছে যা।
মিহি হনহন করে চলে গেলো। মাহির ওর যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে ভাবতে লাগলো। ও বেশ বুঝতে পারছে মিহি কোনো কারণে প্রচন্ড রেগে আছে। কারণ মিহি যখন রাগ করে থাকে তখনই এরকম উল্টো প্রশ্ন করে আর তুমি তুমি করে কথা বলে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে রাগলো কার উপর। রেহানের সাথে আবার ঝগড়া হলো না তো? না এর আগেও তো অনেকবার ঝগড়া হয়েছে কই এভাবে তো রিয়্যাক্ট করে নি। তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো!! এই মেয়ের কখন কি হয় কে জানে!

~ এভাবে আমার পিছু পিছু ঘুরছেন কেনো আপনি?
~ তো কি করবো? কতবার সরি বললাম তুমিতো পাত্তাই দিলে না। আমার দিকে ঠিক করে তাকাচ্ছো ও না। এরজন্যেই তোমার পিছন পিছন ঘুরে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছি।
~ আপনার মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশিই সাহস দেখাচ্ছেন? আমার ভাই এখানে আছে জেনেও আপনি এমন করেছেন! ভাই জানলে আপনার খবর করে দিবে।
~ কি করেছি আমি খবর করার মতন? আমি কি তোমার সাথে অসভ্যতামো করেছি, নাকি জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছি ?
নিধির গাল গরম হয়ে উঠলো। অভ্রর এমন লাগামহীন কথা শুনে দাতে দাত চেপে বললো,,
~ আপনি সত্যিই একটা অসভ্য।

নিধি দ্রুত হাটা শুরু করলো। অভ্র ও মুখ বাঁকিয়ে আবার নিধির পিছনে ছুটলো। ওর লক্ষ্য একটাই যে করেই হোক নিধিকে তার আগের ফর্মে ব্যাক করাতেই হবে। কেনো যেনো না অভ্র নিধির ওই পাগলামি গুলো কে মিস করছে খুব। নিধির ঠোটেঁ এখন আর আগের মতো অভ্র কে দেখলে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠে না। যা অভ্র মেনে নিতে পারছে না। নিধির আগের চাঞ্চল্যতা হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অভ্রর ভালো লাগা ও কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। আশেপাশের সব কিছু কেমন বিরক্ত লাগে ওর কাছে। তাই নিজের ভালো থাকার জন্যে হলেও নিধিকে আবার আগের মতো করতে হবে। তবেই অভ্রর শান্তি ।

কটেজে ফেরার পথে সুজানা বেশ কয়েকবার মাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। দু-একবার কথা ও বলতে চেয়েছিলো কিন্তু কোথাও একটা জড়তা কাজ করছিলো ওর মাঝে যার জন্য বলতে পারেনি। মাহির ও নিজ থেকে ওর সাথে কথা বলেনি। কখনো ফোন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো, কখনো বাকিদের সাথে কথা বলছিলো তো আবার কখনো অপন মনে হেঁটে চলেছিলো। সুজানার মাহিরের এমন ব্যাবহারে মন খারাপ হয়ে গেলো। এদিকে রিক,রোজ আর ন্যান্সি পুরো রাস্তা ঝগড়া করে পাড় করেছে।এদিকে নাহিদ অভ্র কে জ্বালানোর জন্য বারবার নিধির সাথে গিয়ে এটা ওটা বলে ওকে হাসাচ্ছে কখনো বা রাগিয়ে দিচ্ছে। অভ্র পারে না নাহিদের মাথা ফাটিয়ে দেয়। বারবার রাগি চোখে তাকাচ্ছে নাহিদের দিকে যা নাহিদ বরাবরের মতো উপেক্ষা করছে। রেহান আড়চোখে মিহির দিকে তাকাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে হেঁটে চলেছে। করো সাথে কোনো কথা বলছে না। খুব প্রয়োজনে হুঁ, হা তে উত্তর দিচ্ছে। রেহান ভাবছে,, এই টকিং মেশিনের কি হলো হঠাৎ এতো চুপচাপ হয়ে গেছে!! মিহির সাথে কথা বলতে গেছিলো কিন্তু মিহি ওকে ভেংচি দিয়ে রোজদের কাছে চলে গেছে। রেহান ভ্রু কুঁচকে মিহি কে দেখছে। আরশি সূর্যকে এই ছয় বছরে ও আর মিহি মিলে যতো দুষ্টুমি-ফাজলামি করেছে সব বলছে আর খিলখিল করে হাসছে। সূর্য মুচকি হেসে আরশির প্রতিটা কথা শুনছে আর ভাবছে এতো বছর কি করে যে তোমার থেকে দূরে থেকেছি তা কেবল আমিই জানি। প্রতিটামুহূর্তে তোমাকে মিস করেছি। বারবার মনে হয়েছে তোমার কাছে ছুটে চলে আসতে তখন পুতুল বউ এর সাথে আজগুবি গল্প করে নিজেকে সামলে রেখেছি। কিন্তু এখন আর আমার পক্ষে তোমার থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার করে নেবো। সম্পূর্ণ আমার। আর কখনো নিজের চোঁখের আড়াল হতে দিবোনা তোমায়। কথাগুলো ভেবে আরশির কথার মাঝেই ওর গাল টেনে দিলো সূর্য। আরশি চমকে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আড়চোখে সূর্যের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললো। আর একটু দূরে সরে হাঁটতে লাগলো। সূর্য আরশির কাণ্ডে হালকা শব্দ করে হাসলো। ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসলো। আরশি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও সূর্য আরো শক্ত করে ওর হাত আকড়ে ধরলো। অগত্যা আরশি কে হার মানতে হলো। হাতে হাত রেখেই বাকি পথ অতিক্রম করলো ওরা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here