একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-১১

0
12845

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

২২.
Quien eres tu? (Who are you?)
Donde has estado? (where have you been?)

He removido cielo y tierra y no te encontre (I moved heaven and earth and not find you)

Y llegas hoy (but you arrive today)
Tan de repente (So suddenly)

Y das sentido a toda mi vida con tu querer(and give meaning to my life with your love)

স্টেজের মাঝে লাল পোশাকে জিয়া সালসা ডান্সের স্টেপ করে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো অপেক্ষা করছে নিজের পার্টনারের। শুধুমাত্র জিয়া নয় ওর সাথে আমিও হয়তো অপেক্ষা করছি ওর পার্টনার কে সেটা জানার জন্য। মনটা ভীষণ অস্থির করছে, কিছুতেই ফোকাস করতে পারছি না অন্য বিষয়ে। হঠাৎই ছেলের সুর ভেসে এলো,

Na main samjha, na main jaana
Jo bhi tumne mujhse kahaa hai Senorita

Magar phir bhi, na jaane kyun
Mujhe sunke, accha laga hai senorita

আদিত্য! আদিত্যই জিয়ার পার্টনার। আদিত্য কে দেখার পরে পা নিজে থেকেই কেন জানো পিছিয়ে গেলো। এটাই জানার জন্য মনটা এতটা ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। ভীষণ করে জানতে ইচ্ছা হচ্ছিলো সত্যিই কি উনি জিয়ার পার্টনার? প্রশ্নের উত্তর তাহলে অবশেষে পেলাম আমি, হাহ!

No desvies la mirada (do not look away)
Quedate cerca de mi (stay close to me)

Mujhko baahon mein tum ghero
Samjhi na senorita

ওদের একসাথে নাচ শুরু হলে আমি চোখের জল আড়াল করতে গ্রীন রুমে চলে এলাম। এসে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। মন চাইছে এই সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে অনেক দূরে চলে যাই। কেন? কেন সব সময় আমার সাথেই এমন হয়? কষ্টগুলো কি শুধু আমার জন্যেই তুলে রেখেছেন ভগবান? পারছি না, কিছুতেই আজ নিজের মনকে মানাতে পারছি না।

‘এই মৌ! কি হয়েছে? তুই এভাবে চলে এলি কেন?’

আমি কোনোমতে কান্না চেপে কোয়েল কে উত্তর দিলাম,

‘আরে কিছুই না। চোখে মুখে জল দিতে এসেছিলাম। তুই যা আমি ঠিক আছি।’

‘আচ্ছা।’

কোয়েল চলে গেলে আমি আরো কিছুক্ষণ বসে রইলাম। চোখে মুখে জল দিয়ে বেরিয়ে এলেও চোখের জল থামার নাম নিচ্ছে না আমার।

‘কি হয়েছে তোর বল তো? কাঁদছিস কেন?’

কোয়েলকে দেখে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। ও কাছে আসতেই ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।

‘কি হয়েছে বলবি তো? কেন কাঁদছিস? কেউ কিছু বলেছে তোকে?’

‘নাহ। বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ছে। সবার বাড়ির লোক এসেছে কিন্তু আমার বাড়ির লোক আসতে পারেনি। আসলে আমার সব কম্পিটিশনে আমার বাবা-মা থাকতই তাই ওদের কথা খুব মন..

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। মিথ্যে বলার অজুহাতে কেঁদে মনটা হালকা তো করতে পারবো।

‘দেখ মৌ! একদম কাঁদবি না। আঙ্কেল আন্টি নেই তো কি হয়েছে আমি তো আছি নাকি? বান্ধবী না ভেবে বোন ভেবেনে আমায়। তাহলেই তো হলো।’

কোয়েল আমাকে সোজা করে চোখের জল মুছিয়ে বললো আবারও বললো,

‘কাওর ব্যবহারে কষ্ট পাস না। কেউ কাওর জন্য কখনও অপেক্ষা করে না, সময়ের সাথে সাথে সবাই এগিয়ে যায়। যারা অপেক্ষা করে তারা শুধুমাত্র কষ্টই পায় জানিস তো? অপেক্ষাটা তো তখন স্বার্থক যখন, যার জন্য অপেক্ষা করছিস সেও তোকে পাওয়ার জন্যই অপেক্ষারত। সব কিছুই দুদিক থেকে থাকাটা প্রয়োজন বুঝলি? কোনো কিছু একতরফা হলে সেটার থেকে কোনো আশা রাখতে নেই। আশা জিনিসটা বড্ড খারাপ জানিস নিশ্চই? যা, রেডি হয়েনে ভালো ভাবে। এসব নিয়ে আর ভাবিস না।’

কোয়েল নিজের ফোন নিয়ে চলে গেলো আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। কিন্তু ওর কথায় বুঝতে পারলাম ও আমার মিথ্যেটা ধরে নিয়েছে। কোয়েলের কথাগুলো মাথায় ঘুরতে থাকার ফলে আমি রেডি হতে শুরু করলাম। ঠিকই বলেছে ও, আমার আশা করাটা ঠিক হয়নি। এতে কষ্টটা তো শুধু আমিই পাচ্ছি, যার জন্য পাচ্ছি সে তো ভালোই আছে কোনো ধারণাও নেই তার এ বিষয়ে। তাহলে কেন আমি তার জন্য নিজের সময় নষ্ট করবো? আমাকেও এইবার নিজের দিকটা বুঝে নিতে হবে।

২৩.
আদিত্য বসার সিটের পাশে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় জিয়া আদিত্যের বাহু একহাত দিয়ে জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বললো,

‘আদি! আজ আমি খুব হ্যাপি জানো তো? আজ কতদিন পর তোমার সাথে ডান্স করতে পারলাম। আর এই পারফরম্যান্সটার জন্যে আমরা একসাথে প্র্যাকটিসও করতে পেরেছি।’

‘কথাটা এইটা নয় জিয়া। বল, এই পারফরম্যান্স এর জন্য প্র্যাকটিসের বাহানায় তুই আমার কাছাকাছি থাকতে পেরেছিস। তুই তো চেয়েছিলিস হিপহপে নাম দিতে, যাতে আমার আরো ক্লোজ আসতে পারিস কিন্তু আমার জন্যেই সেটা হলো না কি তাই তো?’

আদিত্যের কথায় জিয়া চুপ করে গেলো। আদিত্য নিজের বাহু থেকে জিয়ার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

‘পারফরম্যান্স শেষ তোর সাথে আমার সম্পর্কও শেষ। তাই আমার কাছে তো দূর, সামনেও আসবি না তুই। তোর বিহেভিয়ারের জন্য আজ তুই আমাকে হারালি জিয়া। বারণ করেছিলাম বাড়াবাড়ি করিস না।’

‘কি এমন করেছি আমি?’

‘আমি মৌমিতার পার্টনার হিসেবে নাম দিতে চেয়েছিলাম এটা তুই জানতিস তাই তুই তাড়াতাড়ি করে আমার সাথে তোর নামটা দিয়ে দিয়েছিস আর আমায় বলছিস প্রিন্সিপাল ম্যাডাম দিয়েছেন। কি মনে করেছিস তুই আমি কিছু জানি না?’

‘তো কেন তুমি মৌমিতার পাইটনার হতে চাইছিলে? কে হয় ওই মেয়েটা তোমার? চেনা নেই জানা নেই হুট করেই কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। শুধুমাত্র কোয়েলের ফ্রেন্ড দেখে তুমি ওকে হেল্প করতে চাইছিলে নাকি অন্য কিছু?’

‘সেটা, সেটা তোর জেনে লাভ নেই। ইউ জাস্ট স্টে আওয়ে ফ্রম মি!’

আদিত্য রেগে অন্য দিকে চলে গেলো। জিয়া ওখানে দাঁড়িয়ে আদিত্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

‘থ্যাংক গড আমি আগে ভাগে তোমার আর আমার নাম টা দিয়ে দিয়েছিলাম। নাহলে আজ তুমি ওই ক্ষ্যাত, দুদিনের আসা মেয়েটার সাথে তুমি পার্টিসিপেট করতে। এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছি, ভালোই টেক্কা দিচ্ছিলো আমায় এবার দেখি কার সাথে পার্টিসিপেট করে ফাইনাল রাউন্ডের পার্ট ওয়ানে। আর রইলো বাকি তোমার থেকে দূরে থাকার কথা? হাহ! সেটা তো ইম্পসিবল। তোমার ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তুমি তো আমারই হবে।’

‘আমাদের নেক্সট পার্টিসিপেন্ট হলো, মৌমিতা ব্যানার্জী!’

হোস্টের ঘোষণা শেষ হতেই জিয়া মনে মনে হাসলো। অন্ধকার হয়ে গেলো স্টেজ, সুর ভেসে এলো একটি ইংলিশ গানের।

‘এইটা তো হিপহপ নাচের গান। একা একা নাচবে নাকি?’

জিয়া মনে মনে কথাটা ভাবতেই দেখতে পেলো স্টেজে মৌমিতাকে। মৌমিতা একাই স্টেপ করছে একটা ব্ল্যাক প্যান্ট আর ব্রাউন কালারের লং গোলগলা ঢিলে ঢালা টি-শার্ট।

Girl, you know I want your love
Your love was handmade for somebody like me
Come on now, follow my lead
I may be crazy, don’t mind me

মৌমিতা একটা দড়ি ধরে টানার মতো স্টেপ করে পিছন দিকে ঝুলে পড়তেই একটা ছেলে এসে মৌমিতাকে ধরে নিলো। তারপর একসাথে স্টেপ করা শুরু করলো। ছেলেটি আসতেই হলে সিটি বেজে উঠলো, হাততালি পড়তে লাগলো।

Say, boy, let’s not talk too much
Grab on my waist and put that body on me
Come on now, follow my lead
Come, come on now, follow my lead

মৌমিতা আর ছেলেটার নাচ যথেষ্ট পরিমাণের ক্লোজ যা আদিত্যের চোখের সামনেই হচ্ছে। আদিত্য মৌমিতার নাচ শুরু হতেই যেখানে ছিলো সেখানেই জমে গেছিলো। ছেলেটাকে দেখার পরেই আদিত্যের চোয়াল ও হাতের মুঠ শক্ত হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে আদিত্য শুধু বললো,

‘অঙ্কিত!’

আদিত্য আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ব্যাকস্টেজে চলে গেলো। এদিকে জিয়া হা করে মৌমিতা এবং অঙ্কিতের নাচ দেখছে।

I’m in love with the shape of you
We push and pull like a magnet do
Although my heart is falling too
I’m in love with your body
And last night you were in my room
And now my bedsheets smell like you
Every day discovering something brand new
I’m in love with your body

ব্যাকস্টেজে পৌঁছনোর পরেই আদিত্য দেয়ালে সজোরে একটা ঘুষি মারে যা দেখতে পেয়েই কোয়েল ছুটে এসে আদিত্যকে আটকায়। আদিত্য রাগী চোখে কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল ভয় পেলেও নিজেকে শক্ত রাখে।

Oh-I-oh-I-oh-I-oh-I
I’m in love with your body
Oh-I-oh-I-oh-I-oh-I
I’m in love with your body
Oh-I-oh-I-oh-I-oh-I
I’m in love with your body
Every day discovering something brand new
I’m in love with the shape of you

আদিত্যর জানো মাথা ফেটে যাচ্ছে অঙ্কিতকে মৌমিতার এতটা কাছে দেখে। যখনই মৌমিতা যে অঙ্কিত টাচ করছে তখনই আদিত্যের হাত, মুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছে। কোয়েল মনে মনে ভাবছে,

‘এতো দেখে মনে হচ্ছে অঙ্কিত স্টেজ থেকে নামলে ওকে গিলেই খেয়ে ফেলবে। কিন্তু আদিত্যদা এতোটা রিয়াকট কেন করছে? তখন জিয়ার সাথে আদিত্যদা কে দেখে মৌ রিয়াক্ট করলো আর এখন মৌয়ের সাথে অঙ্কিত কে দেখে আদিত্যদা রিয়াক্ট করছে। ব্যাপার টা কি? আমি যা ভাবছি সেটাই সত্যি না তো?’

কোয়েলের ভাবনা শেষ হওয়ার আগে মৌমিতার পারফরম্যান্স শেষ হয়ে যাওয়ায় হাততালির রোল পরে যায়, আর সেই আওয়াজের কোয়েলের ঘোর কাটে।

‘এই রে, এইবার কি হবে?’

আমি নীচে নেমে আসছি অঙ্কিতের সাথে তখন দেখলাম কোয়েলের সাথে আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়তেই আমি অঙ্কিতকে ওনার সামনে দাঁড়াতে দিলাম না। অঙ্কিতের হাত ধরে ওনার সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে চলে এলাম।

‘ও আমার সামনে দিয়ে অঙ্কিতের হাত ধরে নিয়ে গেলো? এতো বড়ো সাহস?’

‘কেন সাহস হবে না ওর? আর এখানে সাহসের কি আছে? ওর ইচ্ছে ও কার হাত ধরবে আর কার না। তুমি এখানে বলার কে আদিত্যদা? তোমার কি অধিকার ওর উপর? এতোই যখন রাগ তাহলে জিয়ার সাথে কেন পারফরম্যান্স করলে?’

কোয়েল চলে গেলো আর আদিত্য চুপ করে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলো। কোয়েল ও মৌমিতার কাছে গ্রীন রুমে গিয়ে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য মৌমিতা কে রেডি করতে লাগলো, অঙ্কিত চলে যাওয়ার পর।

২৫.
নেক্সট অর্থাৎ ফাইনাল রাউন্ডের পার্ট টুতে সব পার্টিসিপেন্টস ব্যালে করবে। জিয়া ফাস্ট পারফরম্যান্স দিতে ওঠে। নাচ যখন প্রায় শেষের দিকে তখনই জিয়া পা মচকে পরে গেলো। সবাই বসা থেকে উঠে পড়লো, কয়েকজন জিয়াকে ধরে তুলতে গেলে জিয়া ঠিক করে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারলো না। জিয়া আদিত্যের দিকে তাকালে আদিত্য মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্যদিকে। জিয়াকে নিয়ে চলে গেলে জাজেস্টরা ঘোষণা করে যে জিয়া নাচতে পারবে না তাই এই রাউন্ডের পয়েন্টস সে পাবে না।

জিয়া পার্টিসিপেট না করায় আমার নাম ডাকা হলো। ভগবানের দয়ায় আমি আমার নাচটা ভালোভাবেই কমপ্লিট করেছি। এইবার পালা রেজাল্টসের। আমি সহ সব পার্টিসিপেন্টসেরা স্টেজের সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আমার পাশেই অঙ্কিত আর কোয়েল। সবার প্রথম সেকেন্ড রানার-আপ ঘোষণা করা হলো, সেখানে আমার নাম নেই। টেনশন আরো বেড়ে গেলো, এরপরই নাম নিলো ফাস্ট রানার-আপ জিয়ার।

‘মাই গড, জিয়া ফাস্ট রানার-আপ?’

কোয়েলের কথা শুনে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। সত্যি তো, জিয়া ফাস্ট রানার-আপ? অঙ্কিত আমাকে বললো,

‘টেনশন নট!’

‘আমাদের কম্পিটিশনের উইনার হলো, মৌমিতা ব্যানার্জী!’

এক মিনিটের জন্য আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কোয়েল আমাকে ধাক্কা দিতেই অঙ্কিত আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার বিস্ময়তা জানো কাটতেই চাইছে না, আমিও অঙ্কিত কে জড়িয়ে ধরলাম কারণ ও না থাকলে আমি পারতাম না জিততে। অঙ্কিতকে ছেড়ে কোয়েলকে জড়িয়ে ধরার পর কোয়েল আমাকে স্টেজে পাঠালো। আমি ট্রফি নিতেই দেখলাম কোয়েলের পিছনে আমার বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানো বিশ্বাসই করতে পারছি না, যে আমার চোখের সামনে আমার বাবা-মা দাঁড়িয়ে? প্রথমত, কম্পিটিশন জেতা আর এখন বাবা-মা।

অন্যদিকে যে কেউ মৌমিতাকে খুব ভালো ভাবে নজরে রাখছে তা মৌমিতা জানেও না। কিছুক্ষণ আগের ঘটনার জন্য কিছুক্ষন পরে মৌমিতার সাথে কি হতে চলেছে সেটা ও কল্পনাও করতে পারছে না।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here