একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-১২

0
12024

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

২৬.
‘বাবা, মা? তোমরা এখানে কীভাবে এলে? কে খবর দিলো? কি করে কি আমি তো কিছুই…

‘আচ্ছা আগে তুই শান্ত হ একটু। তারপর সব বলছি।’

আমি বসতেই মা বললো,

‘তোর বান্ধবী কোয়েল আমাদের আগে দিয়েই ফোন করে জানিয়েছিল। আমরা ভেবে ছিলাম আসবো না তারপর তো বেয়াই মশাইরা এমন ভাবে বললেন যে আমরা না করতে পারলাম না।’

আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ির দিকে তাকালাম। হ্যাঁ, আমার বাবা-মার পিছনে তারাও উপস্থিত ছিলেন। তারাও তো আমার বাবা-মা। সত্যি আমি ধন্য এমন আরেকটা বাবা-মা পেয়ে। আমি গিয়ে শাশুড়ি মা কে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর আস্তে করে বললাম,

‘মা, আপনার ছেলে তো আমাকে পরিচয় দিতে বারণ করেছে। এখন যদি কেউ এসে পড়ে তাহলে কি হবে? আর বাবা-মাও তো সবটা জেনে যাবে।’

‘চিন্তা করো না আমরা এখানে থাকতেই পারি তার কারণ আমাদের ছেলেও পার্টিসিপেট করেছে। তাই কেউ কোনোরকম সন্দেহ করবে না। গ্রীন রুমে সব পার্টিসিপেন্টসদের গার্জেন আসতে পারে।’

আমি আশ্বস্ত হলাম শ্বশুরমশাইয়ের কথা শুনে। একটু পরেই কোয়েল এলো গ্রীন রুমে, তখন। আমি আমার বাবা-মায়ের সাথেই কথা বলছিলাম। কোয়েল গিয়ে শ্বশুরমশাই আর শাশুড়ি মাকে নমস্কার করতে গেলেই ওরা ওকে জড়িয়ে ধরে।

‘তারমানে ওনার বাবা-মায়ের সাথেও কোয়েলের আলাপ আছে। হবে নাই বা কেন? এই জন্যেই পিছন থেকে কলকাঠি টা নেড়েছে। হচ্ছে তোর, চল হস্টেলে।’

আমি মনে মনে কথাটা বলে নিলাম। কোয়েল আমার বাবা-মা কে প্রণাম করে কিছুক্ষণ ওদের সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেলো। কোয়েল বেরোতে না বেরোতেই উনি আসলেন। শ্বশুরমশাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও শাশুড়ি মা ওনাকে জড়িয়ে ধরলেন। উনি শ্বশুরমশাইকে ডাকলেন,

‘ড্যাড, কথা বলবে না আজও?’

উনি শ্বশুরমশাইয়ের হাতটা ধরতেই উনি ওনাকে বুকে টেনে নিলেন। আমিও এটাই চেয়েছিলাম, আমার জন্য ওনাদের সম্পর্কে জানো কোনো চিড় না ধরে। শ্বশুরমশাইকে ছেড়ে বাবার দিকে উনি তাকাতেই আমিও বাবার দিকে তাকালাম, দেখলাম বাবা-মা একটু ইতস্তত বোধ করছে। মিথ্যে হাসি দিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবে ওনাকে তার আগেই উনি এগিয়ে গিয়ে বাবা-মাকে প্রণাম করেন।

‘কেমন আছেন আপনারা? আসলে আমি এখানে চলে আসার পর আর যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি।’

‘না না বাবা ঠিক আছে। আমরা ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?’

‘হ্যাঁ। আছি কোনোরকম।’

কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে বলতেই আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। ওনার তো ভালো থাকার কথা, জিয়ার সাথে পার্টিসিপেট করেছেন। ওহ, জিততে পারেননি তাই ভালো নেই?

‘আচ্ছা, তোমরা কথা বলো। আমরা আসছি।’

বাবা-মা, শ্বশুরমশাই শাশুড়ি মা বেরিয়ে গেলে আমিও পিছন ফিরে ওয়াশরুমে চলে যেতে নিই কিন্তু পারি না। পিছন থেকে আমার হাত ধরে টেনে আমাকে দেয়ালে শক্ত করে চেপে ধরলেন উনি। ওনার চোখে চোখ পড়তেই আমি কিছু বলার সাহস পাইনা। ওনাকে দেখলে কেউ বলবে না, কিছুক্ষণ আগে উনি এত ভালোভাবে কথা বলছিলেন। মুহূর্তেই আমার উপর এত কেন রেগে গেলেন বুঝতে পারছি না। চোখগুলো দেখে মনে হচ্ছে গিলেই ফেলবেন আমাকে। এতক্ষন নীরব থাকার পর উনি সরব হলেন, বললেন,

‘অঙ্কিতের সাথে পার্টিসিপেট কেন করেছো?’

‘আমি কার সাথে পার্টিসিপেট করবো না করবো সেটা তো আমার ব্যাপার তাই না?’

‘আচ্ছা?’

‘হ্যাঁ। আমি আপনাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি…

‘একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে নাও খুব ভালো ভাবে। অঙ্কিতের সাথে জানো তোমাকে নেক্সট দিন থেকে না দেখি। তাহলে ফল ভালো হবে না।’

কথাটা বলে উনি সরে গেলেই আমি বলি,

‘কেন? কেন আমি আপনার কথা শুনবো? কে হন আপনি আমার? কি অধিকার আপনার আমার উপর?’

আদিত্য আমার দিকে ফিরলেন। ওনার তাকানো দেখে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। এত করুন ভাবে কেন তাকাচ্ছেন উনি আমার দিকে? আমি তো ভুল কিছু বলিনি। উনিই তো আমাকে প্রথম থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন তাহলে? আমি জানো আর পারলাম না নিজের মনের ভিতর আমার প্রশ্নঃ গুলো আটকে রাখতে। ওনার সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘আপনি তো দিব্যি অন্য একটা মেয়ের সাথে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমি কি কিছু বলেছি তাতে? সেই মেয়েটা আপনার সামনে আমাকে বারবার অপমান করেছে, আপনি কিছু বলেননি, কোনোরকম প্রতিবাদ করেননি কারণ আপনি আমায় স্ত্রী হিসেবে মানেননা। বিয়ের কনসেপ্টটাকেই মানেন না। আপনি যদি জিয়া কে কিছু বলতেন তাহলে ও এরকমটা করার সাহস পেত? আপনি বলুন আমি সেটা চাইও না। আমি আপনার কথাটাই মেনে নিয়েছি। না আমি আপনার কোনো বিষয়ে মাথা ঘামাবো আর না আপনি। তাই আমি কার সাথে কথা বলবো, থাকবো সেটা আমার ব্যাপার আপনি না করার কেউ না। আপনি যদি একটা অন্য মেয়ের সাথে নাচতে পারেন তাহলে আমিও পারি। আপনি যখন চাইলেই আটকাতে পারতেন জিয়ার সাথে পারফরম্যান্স তখন তো আপনি সেটা করেননি, কেন? কোনো উত্তর আছে আপনার কাছে?’

আমার কথা শেষ হতেই অঙ্কিতের আওয়াজ পেলাম পিছন থেকে। অঙ্কিত এগিয়ে এলে আদিত্য আর অঙ্কিত একে অপরের দিকে তাকায় এরপর আদিত্য আমার দিকে একনজর তাকিয়ে চলে গেলেন।

‘কি রে এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা ফ্রেশ হয়েনে।’

অঙ্কিতের কথায় ওর দিকে তাকালাম, জিজ্ঞেস করলাম,

‘কিসের এতো শত্রুতা তোমার ওনার সাথে?’

‘উনি বলতে? আদিত্য?’

‘হম।’

‘ওইসব নিয়ে পড়ে কথা হবে। কেন? আদিত্য কিছু বলছিলো তোকে এই নিয়ে?’

‘নাহ। কিন্তু আমি এখনই জানতে চাই।’

‘আচ্ছা তুই আগে ফ্রেশ হয়েনে। তারপর আমি তোকে সবটা বলবো।’

আমি অঙ্কিতের কথামতো ফ্রেশ হতে চলে গেলাম আর মনে পরে গেলো সেইদিনের কথা যেদিন …..

ফ্লাশব্যাক…..

‘এই কোয়েল? কি করবো এখন?’

কোয়েল নিজের মতো পায়চারি করেই চলেছে। আমি বাধ্য হয়ে উঠে গিয়ে ওকে একটা ঠেলা মেরে বললাম,

‘আরে কি রে! টেনশন হচ্ছে তো নাকি?’

‘উফ! তা আমারও তো টেনশন হচ্ছে নাকি? ভাবতে দে না আমাকে একটু শান্তিতে।’

কোয়েলের কথা শুনে আমি গিয়ে বসলাম আর ওকে বললাম,

‘এই জন্য বলেছিলাম আমার নাম দিতে না। এখন দেখ, হিপহপ বা সালসা করার জন্য আমার পার্টনার প্রয়োজন যেটা নে…

‘পেয়েছি!’

আমি কোয়েলের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। ওর চোখে মুখে আনন্দের ছাঁপ।

‘কাকে পেলি?’

‘চল।’

কোয়েল আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে এলো ভার্সিটির সে জায়গায় যেখানে আদিত্যরা থাকেন। আমি তো বুঝতেই পারছি না কোয়েল কি চাইছে। আদিত্য দেয়ালে ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বই পড়ছিলেন এমন সময় কোয়েল ওনার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘আদিত্যদা!’

‘হম বল।’

আদিত্য বই থেকে মুখ তুলে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন একবার। আমি মাথা নিচু করে নিলে উনি আবার কোয়েলের দিকে তাকান যা আমি আড় চোখে দেখতে পেলাম।

‘তুমি কি কম্পিটিশনে কাওর সাথে পার্টিসিপেট করছো?’

‘কেন? হঠাৎ এই প্রশ্ন?’

‘না, আসলে মৌয়ের কোনো পার্টনার নেই তাই তুমি যদি…

‘তা তোর ফ্রেন্ডের পার্টনার দরকার যখন সে কেন কিছু বলছে না? তার নিশ্চই আপত্তি আছে?’

আমি ওনার কথা শুনে ওনার চোখের দিকে তাকালে আমার মনে পড়ে যায় শেষ দিনের ওনার সাথে করা ব্যবহারের। আমি কোনো উত্তর না দিলে উনি আমার দিকে তাকিয়েই কোয়েল কে বলেন,

‘তোর ফ্রেন্ডের আপত্তি না থাকলে আমারও…

‘তোমারও কিছু করার নেই আদিত্য।’

আমরা সবাই দেখলাম জিয়া এসে আদিত্যের পাশে দাঁড়ালো। বললো,

‘তুমি আমার সাথে পার্টিসিপেট করছো আদি। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বলেই দিয়েছেন।’

‘হোয়াট?’

‘ইয়াহ!’

‘ইম্পসিবল। আমাকে না জানিয়ে ম্যাডাম আমার নাম কম্পিটিশনে কিছুতেই দিতে পারেন না।’

‘কিন্তু উনি দিয়েছেন। আর তুমিও তো আমার সাথেই পার্টিসিপেট করতে চাও তাই ন…

আদিত্য চলে গেলেন। কোথায় গেলেন জানি না। আমিও কোয়েলের হাত ধরে ওকে ওখান থেকে নিয়ে চলে এলাম।

‘কি দরকার ছিল তোর ওনার কাছে যাওয়ার যেখানে তুই জানিস যে জিয়া পার্টিসিপেট করছে?’

‘মৌ, আদিত্যডা জিয়া যে পছন্দ করে না। দেখলি না কীভাবে চলে গেলো। সব শুধুমাত্র ওর বাবার জন্য। ওর বাবার কথায় ম্যাডাম চলেন এই জন্য…

‘প্লিজ! আমি এব্যাপারে কিছুই শুনতে চাইছি না। বাদ দে। চল এখান থেকে।’

‘দাঁড়া। আমার সাথে চল।’

‘আবার কোথায়?’

‘চল তো।’

অন্যদিকে,

‘ম্যাডাম এবার কিন্তু এটা বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমার অনিচ্ছায় আমি কেন এই কম্পিটিশনে অন্য একজনের সাথে পার্টিসিপেট করব? আমার যার সাথে ইচ্ছা তার সাথেই আমি পার্টিসিপেট করবো। দ্যাটস ফাইনাল!’

‘এরকম করো না আদিত্য। তুমি তো জানো আমার হাত-পা বাঁধা। উনি আমাদের ভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের হেড আর সি.এম. এর সাথে ওনার কানেকশনের কথাও তো কাওর অজানা নয়। শুধুমাত্র উনি একজন সফল বিজনেসম্যান তাই জন্যে ওনার এতোটা পাওয়ার। আমাকে উপরমহল থেকে প্রেসার দেওয়া হয়েছে আদিত্য, আমার কিচ্ছু করার নেই। একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ?’

‘ওনাকে তো আমি দেখে নেবো। অনেক অহংকার না নিজের পাওয়ারের প্রতি? ওনার দম্ভ যদি আমি না ভেঙেছি তাহলে আমার নামও আদিত্য ব্যানার্জী না।’

আদিত্য চলে গেলে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বলেন,

‘আমিও তাও চাই আদিত্য। তুমি আমাদের ইউনিভার্সিটির একজন ব্রাইট স্টুডেন্ট। পারলে তুমিই পারবে এই কাজটা করতে।’

এদিকে,

‘কি রে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস, বলবি তো?’

‘চুপ।’

কোয়েল আমাকে নিয়ে এলো একটা ছেলেদের দলের সামনে। আমি তো বুঝতে পারছি না এই মেয়েটা কি চাইছে। কোয়েল দাঁড়াতেই ওদের মধ্যে দিয়ে একটা ছেলে কোয়েল কে দেখতে পেয়ে ওর সামনে চলে এলো। কোয়েল আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ছেলেটাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরতেই ছেলেটাও জড়িয়ে ধরলো কোয়েলকে। এদিকে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কোয়েল ছেলেটাকে বললো,

‘একটা হেল্প চাই? করবে?’

‘তোর কথাই তো কোনোদিন ফেললাম না তুই আবার হেল্পের কথা জিজ্ঞেস করছিস? সাহস তো কম না তোর।’

কোয়েল লাজুক হেসে ছেলেটি কে নিয়ে সাইডে চলে গেলো। আমার বেশ ভালোই লাগলো ছেলেটাকে। কথাবার্তা খারাপ না। কিন্তু কোয়েলের সাথে কি সম্পর্ক? কিছুক্ষণ পর কোয়েল আর ছেলেটি এসে দাঁড়ালো, কোয়েল বললো,

‘ও অঙ্কিত। তোর হিপহপ ডান্সের পার্টনার।’

আমি অবাক হয়ে তাকালাম অঙ্কিতের দিকে। ও আমার দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালে আমিও হ্যান্ডশেক করি।

প্রেসেন্ট…..

এরপর থেকেই কদিনের মধ্যে অঙ্কিতের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ও আদিত্যের বয়সই। দুজনেই MBA করছে। বাট ওকে আপনি বলা বারণ আর দাদা বলাও। যাই, এইবার জানতে হবে শত্রুতা টা ঠিক কি কারণে। আমি ফ্রেশ হয়ে হলে এলাম দেখলাম অঙ্কিত বসে আছে একা হলরুমের সিটে, সবাই চলে গেছে। আমি গিয়ে ওর পাশে বসতেই ও তাকালো আমার দিকে হেসে…..

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here