‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৩||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৪০.
আমি আর কোয়েল ভার্সিটির মাঠে হাঁটছিলাম। তাড়াতাড়িই এসে পড়েছি আজকে ভার্সিটিতে কারণ কোয়েল লাইব্রেরিতে যাবে বইয়ের জন্য। কিন্তু ম্যাডাম না থাকায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটা হৈ-চৈ শুনতে পেলাম। আমি কোয়েলকে বললাম,
‘ওদিক থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসছে না?’
‘হ্যাঁ, আমিও তো সেটাই শুনতে পাচ্ছি। কেউ কি এসেছে নাকি?’
‘ঠিকই তো। ওদিকে তো ভার্সিটির মেইন গেট কিন্তু কে এমন এসেছে যে এতো চিল্লাচিল্লি হচ্ছে।’
‘(হেসে) দেখ তোর কম্পিটিটর এসেছে হয়তো। তুই যেদিন নিউ লুক নিয়ে এসেছিলি সেদিনও এরকম হয়েছিলো।’
‘চুপ কর আর চল।’
‘ধুর খালি ধমক দেয়। রসকসহীন একটা!’
[কি রে সুমি বেবি? তুই রসকসহীন?😂🤣]
আমি আর কোয়েল ভার্সিটির মেইন গেটের দিকে এগিয়ে গেলে দেখতে পাই আদিত্যের গাড়ি গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে। আদিত্য তো বাইক নিয়ে আসে তাহলে আজ গাড়ি নিয়ে এসেছে কেন?
‘আজকে বাইক নিয়ে আসেননি কেন আদিত্য?’
কথাটা কোয়েলকে জিজ্ঞেস করতেই দেখলাম কোয়েল ঘামছে, দেখে মনে হচ্ছে নার্ভাস হয়ে পড়েছে। ওর হাত ধরে আরেকটু এগোতেই দেখলাম দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে সবার সাথে কথা বলছে। ওদের মধ্যে একজন তো আদিত্য আরেকজন কে? পিছন ফিরে থাকায় মুখটা দেখতে পাচ্ছি না।
‘এই কোয়েল? তুই চিনিস আদিত্যের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কে?’
কোয়েল উত্তর না দিলে আমি ওকে একটু ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘এই কোয়েল? কি হয়েছে বল তো তোর? এরকম চুপ করে আছিস কেন?’
‘ক..কই? কিছু না। আমার কি হবে?’
‘ওহ, ছেলেটাকে চিনিস?’
‘ন..না। চিনি ন..না।’
কোয়েলের ব্যবহারটা কেমন অস্বাভাবিক লাগছে আমার কাছে। এদিকটায় আসার পর থেকেই কেমন জানো ঘামছে, কথা বলতে পারছে না। আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো আদিত্যের গলার আওয়াজে,
‘সো গাইজ! আমার সাথে এটা কে এইটা জানতেই দাঁড়িয়ে আছো তো তোমরা? দেখে নাও কে…
আদিত্য নিজের দু-হাত আগে করে ছেলেটিকে দেখালে ছেলেটি আদিত্যের হাতে মারে আর বলে,
‘আমি এখানে নতুন না। এমনভাব করছিস জানো আমি কোনো সেলিব্রেটি।’
আদিত্য কোনো উত্তর দেবে তার আগেই আশেপাশের সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
‘রাজজজ!’
‘দেখ, তুই সেলিব্রেটি।’
আদিত্যের কথায় ছেলেটি অর্থাৎ রাজ হাসলো। হেসে আমাদের দিকে তাকাতেই রাজের হাসি আস্তে আস্তে মলিন হতে শুরু করলো। আমি সেটা দেখে কোয়েলের দিকে তাকাতেই দেখলাম ও এভাবে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
‘রাজজ!’
সামনে তাকাতেই দেখলাম জিয়া দৌঁড়ে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরলো। ওর জড়িয়ে ধরতেই আদিত্য দু-হাত তুলে এক-কদম অন্যদিকে চেপে এলো আর মিটমিট করে হাসতে লাগলো। এদিকে বেচারা রাজের অবস্থা খারাপ। জিয়া মাথা তুলে রাজকে জিজ্ঞেস করতেই রাজ নিজের মুখ স্বাভাবিক করে নিলো,
‘কেমন আছো তুমি? আর কোথায় ছিলে এতদিন?’
‘আমি ভালো আছি জিয়া। তুমি কেমন আছো?’
‘আমি ভালোই আছি। বললে না তো কোথায় ছিলে?’
‘এখানেই, তার আশেপাশে।’
‘তার আশেপাশে বলতে?’
‘ম..মানে তোমাদের আশেপাশে নাহলে এক্সাম দিতে কীভাবে আসতাম বলো?’
‘আমি খুব খুব খুব হ্যাপি তুমি আসায়। অনেক মিস করছিলাম আমি তোমায়।’
কথাটুকু বলেই জিয়া আবার রাজকে জড়িয়ে ধরলে আদিত্য আবার হেসে উঠলো যা দেখে রাজ পারলে গিলেই ফেলে আদিত্যকে। আদিত্য নিজের হাসি থামিয়ে বললো,
‘তুই সবার সাথে কথা বল। এখানে সবাই তোকে অনেকককক মিসসসস করছিলো। আমি আসছি।’
কথাটা শেষ করেই আদিত্য পালালো একপ্রকার ওখান থেকে। এদিকে রাজ সমানে চেষ্টা করছে জিয়াকে ছাড়ানোর কিন্তু জিয়ার ছাড়ার কোনো নামই নেই। নানান কথা ও বলে চলেছে রাজকে ওর বাহু জড়িয়ে। সেইসময় হুট করেই রাজের ফোনে ফোন আসে হয়তো, তাই ও জিয়াকে বলে,
‘আমার একটা খুব জরুরি কল এসেছে আমি আসছি। পরে কথা বলবো।’
রাজকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও প্রায় পালালো জিয়ার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে। আমি তো হেসেই ফেললাম। হাসতে হাসতে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি কোয়েল নেই।
‘যাহ বাবা! কোয়েল কোথায় গেল? এক্ষুনি তো এখানেই ছিল। উফঃ, এই মেয়েটাও না কখন কি করে বোঝা মুশকিল।’
আমি কোয়েলকে খুঁজতে শুরু করলাম কি আর করার। তখনই হুট করে মনে পড়লো ওর তো লাইব্রেরি যাওয়ার কথা। মনে হয় ওখানেই গেছে। কথাটা মনে পড়তেই লাইব্রেরির দিকে হাঁটা ধরলাম।
অন্যদিকে,
‘এই হারামজাদা! তুই আমাকে ওই শাকচুন্নির হাতে ফেলে পালালি কেন? এই বন্ধুত্ব তোর? ওই ডাকিনি এক্ষুনি আমার প্রাণ নিয়ে নিচ্ছিলো জাপটে ধরে।’
আদিত্য রাজের কথা শুনে হাসতে লাগলো ফোন ধরে। আদিত্যের হাসি শুনে রাজ রেগে বললো,
‘তুই হাসছিস? শোন, ও তোর পিছনে পরেছে ওকে আমার ঘাড়ে ঝোলানোর চেষ্টাও করবি না।’
‘আরে তুই চটছিস কেন? তোকে বাঁচানোর জন্যেই তো ফোনটা করলাম। আমি ওখান থেকে বেরিয়ে না এসে তোকে ফোন না করলে দুজনকেই ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। মেয়েটা পারে বটে!’
‘দাঁড়া না। আছে ওর কপালে।’
‘কি আছে?’
‘সময় হলেই দেখতে পাবি। ওর ছ্যাঁচড়ামি আমি যদি না বার করেছি তো আমার নাম রাজ রয় না। সকলের সামনে কাঁদিয়ে ছাড়বো।’
‘এটা তো আমিও চাই। ওর জন্য মৌ কম কষ্ট পায়নি।’
‘আহা, মৌমিতা থেকে মৌ? মেরি মেহনাত রাঙ লায়ি হেইন লাগত হেইন। তা মৌয়ের আগে “আমার” টাও বসা।’
‘(মুচকি হেসে) প্রিন্সিপালের রুমে যায় জলদি, রাখলাম আমি।’
রাজ ফোন রেখে কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রিন্সিপালের রুমে এগিয়ে গেলো। এদিকে, আদিত্য প্রিন্সিপালের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে হাসছে আর ভাবছে,
‘সিরিয়াসলি? আই অ্যাম ইন লাভ? আদিত্য ব্যানার্জী ইজ ইন লাভ? আমার তো নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না, মৌকে কিভাবে বিশ্বাস করাবো? ওহ গড!’
আদিত্য মুখ বেজার করে দেয়ালে মাথা ঠেকালো।
‘উহুম, হার মানলে চলবে না। ভালো যখন বেসেছি হাল এতো সহজে ছাড়বো না। শি ইজ মাইন! অনলি মাইন! ওই আমার ফাস্ট লাভ আর ওই লাস্ট। মৌকে ছাড়া যে আমার চলবে না, ওকে যে আমি ভালোবেসে ফেলেছি এটা ওকে বুঝতেই হবে। এট এনি কস্ট ওকে বুঝতে হবে।’
এদিকে,
রাজ নিজের মনে ফোন ঘাটতে ঘাটতে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো সেই সময় ওর পা আটকে গেলো। আস্তে আস্তে নিজের বাঁ দিকে তাকাতেই ওর হার্টবিট ফাস্ট হতে শুরু করলো। রাজ কিছু না ভেবেই ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দৌঁড়ে লাইব্রেরিতে ঢুকে গেলো।
কোয়েল লাইব্রেরিতে থাকা মইতে দাঁড়িয়ে উপর থেকে একটা বই নামানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু অনেক উপরে থাকায় সেটা হাতের নাগালে পাচ্ছিলো। কোয়েল তাই আরেকটা ধাপ উপরে উঠে দুই-হাত বাড়াতেই বইটা হাতে পেয়ে গেলো কিন্তু হঠাৎ করেই ব্যালেন্স হারিয়ে পরে গেলো। কোয়েলের চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে থাকার কারণ ছিলো সে ব্যাথা পাবে কিন্তু কই? কোনো ব্যাথা তো হচ্ছে না। আর কার স্পর্শ সে অনুভব করছে? ব্যক্তিটির শরীরের সুবাস পেয়ে কোয়েল জানো ইচ্ছা করেই চোখ খুলছে না।
রাজ বাইরে দাঁড়িয়েই দেখতে পেয়েছিলো কোয়েলকে অতো উপরে বই হাতড়াতে। তাই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে আর আসতে না আসতেই দেখে কোয়েল আরো উপরে উঠেছে। কোয়েলকে ডাক দিতে যাবে তার আগেই কোয়েল পরে যেতে নিলে রাজ ধরে নেয়। কোয়েল চোখ বুজে থাকায় বেশ ভালোই হয়েছে রাজের। তখন সবার মাঝে জিয়া চলে আসায় কোয়েল সরে যাওয়ায় রাজ ঠিক ভাবে দেখতেই পায়নি কোয়েলকে। রাজ আস্তে আস্তে কোয়েলকে সোজা করে দাঁড় করালেও ওকে ছাড়ে না। কিন্তু সোজা করে দাঁড় করানোর ফলে কোয়েল চোখ খোলে। চোখ খুলতেই রাজের সাথে চোখে চোখ পড়ে যায় কোয়েলের। দুজনেই নির্বাক হয়ে একে অপরকে দেখছে। না রাজ কোয়েলের কোমর ছেড়েছে আর না কোয়েল রাজের কলার।
‘কোয়েল! তুই ঠিক আছিস?’
আমি লাইব্রেরিতে ঢুকতে গিয়ে দেখতে পাই কোয়েল অনেক উপরে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে ডাকবো সেই সময়েই ও পা হরকে পরে যাচ্ছে দেখে সেদিকে এগোতে নিলেই দেখি রাজদা কোয়েলকে ধরে নিয়েছে। আমার গলার আওয়াজ পেয়ে কোয়েল বলতে গেলে এক ঝটকায় রাজের থেকে সরে গেলো। জানো কোনো ঘোর কাটলো।
‘হ..হ্যাঁ। আমি ঠিক আছি। চল ক্লাসের জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে।’
কোয়েল আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে নিলেই আমি ওকে বলি,
‘রাজদা তোকে বাঁচালো, একটা থ্যাংক ইউ তো বল অন্তত।’
‘থ্যাংক ইউ।’
কোয়েল আমার কথা শুনে রাজদার দিকে না ফিরেই থ্যাংক ইউ টা কোনো রকমে বলে আমাকে নিয়ে টানতে টানতে ওখান থেকে চলে এলো। আসার সময় আমি পিছন দিকে ফিরে রাজদার দিকে তাকালে দেখতে পাই রাজদা অসহায় ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেও আমি লক্ষ্য করেছি রাজদা কোয়েলের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর কোয়েল সরে যাওয়ায় ওকে খুঁজছিলো। ব্যাপার টা কি?
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী