একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-২৬

0
10832

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

‘কি রে? এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কি উঁকি ঝুঁকি করছিস?’

আমি প্রিন্সিপাল ম্যাডামের রুমের বাইরে বেশ অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠিক তখন কোয়েল পিছন থেকে ডাকলে আমি ওর দিকে তাকাই তারপর আবার ওইদিকে তাকিয়ে বলি,

‘আদিত্য আর রাজদা প্রিন্সিপাল ম্যাডামের ঘরে আছেন।’

‘ওহ আচ্ছা বুঝলাম, বরের জন্য অপেক্ষা করছিস।’

‘বাজে কথা বলিস না তো। জানিস ওনার ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা? তুই তো খুব বলেছিলি কিছু হবে না।’

‘আদিত্যদার হাতে ব্যান্ডেজ করা?’

‘হ্যাঁ। উনি যখন এলেন তখন দেখেছি।’

‘ও আচ্ছা। তা রণিতকে কোথাও দেখেছিস?’

‘ওকে আমি দেখতে যা…বো…

কোয়েল আমার দিকে ছোটো চোখ করে হালকা হেসে তাকাতেই আমার মাথায় ব্যাপারটা খেললো। আদিত্য রণিতকে কিছু করেননি তো? হে ভগবান। আমি অসহায় ভাবে কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল বলে,

‘আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। সামনে তাকাও, তোমার পতিদেব আসছে। তাকেই জিজ্ঞেস করে নাও হতে ব্যান্ডেজের কারণ। আমি চলি।’

কোয়েল কথাটুকু বলে চলে গেলে আমি সামনের দিকে ঘুরতেই দেখি আদিত্য আর রাজদা এদিকে আসছেন। আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। ওনারা এদিকে না এসে অন্য দিকে চলে যেতে নিলে আমি ওদের দিকে এগাই আর তখনই রাজদার সাথে আমার চোখাচুখি হয়। রাজদা আমাকে চোখের ইশারায় ওরা যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে যেতে বলে। আমিও সেই মতো চুপচাপ ওদের পিছু পিছু যেতে থাকি।

‘ম্যাডাম যাই বলুক কাজটা কিন্তু আমাদের করতেই হবে রা….তুমি?’

আদিত্য নিজের মতো করে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন রাজদা যে কখন সরে গেছেন টেরই পাননি। রাজদা সরে গিয়ে আমাকে ওনার পিছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে ইশারা করে চলে যান।

‘হ্যাঁ, কেন জিয়াকে আশা করেছিলেন?’

আমার কথা শুনে উনি চলে যেতে নিলে আমি মুখ টিপে হাসি থামিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম,

‘কোথায় যাচ্ছেন? জিয়ার কাছে?’

আমার প্রশ্ন শুনে উনি আমার দিকে রেগে তাকালে আমি জোর করে নিজের হাসি থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার সামনে এসে উনি জোরে বলেন,

‘তোমার প্রবলেমটা কি? সারাক্ষন কেন জিয়া জিয়া করো? ও কি তোমাকে আমার চামচামি করতে পাঠিয়েছে?’

‘আমি জিয়ার চামচামি করছি? (রেগে)’

‘তা নয় তো কি। সারাক্ষন জিয়ার নাম জপতে থাকো। জিয়া যে আশ্রম খুলেছে জানতাম না তো। তুমি সেই আশ্রমেই যাচ্ছো নাকি জপ শিখতে?’

‘হিহিহি। উপস, স্যরি স্যরি। আসলে এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আদিত্যদার কথাটা শুনে হাসি পেয়ে গেলো। কেটে পর কোয়েল! (বিড়বিড়িয়ে)’

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই কোয়েলের হাসি শুনে ওর দিকে তাকালাম। ও সুরসুর করে কেটে পড়লো কথাগুলো বলে। আদিত্যের দিকে আবার তাকাতেই দেখি উনিও হাসছেন, আমাকে তাকাতে দেখে আবার চুপ করে গেলেন। আমি ওনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেন?’

আদিত্য চুপ করে রইলেন আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বদলে। উনি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন দেখে আমি আবার বললাম,

‘কি হলো বলবেন তো?’

‘হম? তেমন কিছু না।’

‘তাহলে কেমন কিছু? শুধু শুধু কি হাত কেটে যায় নাকি মানুষের? দেখি হাতটা।’

আদিত্য আমার দিকে তাকালে আমি নিজেকে সংযত করে বললাম,

‘(আমতা আমতা করে) না মানে কতটা কেটেছে দেখতাম আর কি।’

‘(হেসে) আচ্ছা? ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে দেখতে?’

ওনার কথা শুনে আবার বিপাকে পড়ে গেলাম। কি বলবো ভাবছি এমন সময় উনি আমার কাছে এসে স্লো ভয়েজে বললেন,

‘এতো চিন্তা আমার জন্য?’

‘না মানে…

‘মানে কি?’

‘আপনি আসল কথাটা না বলে কথা কেন ঘোরাচ্ছেন?’

‘(হেসে) তাই নাকি? আমি কথা ঘুরাচ্ছি?’

‘ত..তা নয়তো কি?’

‘আচ্ছা বেশ। রাজের সাথে একটু মারামারি করতে গিয়ে কেটে গেছে।’

‘(ভ্রু কুঁচকে, রেগে) কি?’

‘হ..হ্যাঁ। আমার মাথা গরম ছিলো ওর কাজকর্মে তাই মেরে দিয়েছি। ওইসব আমাদের মধ্যে হতেই থাকে।’

‘আচ্ছা এই ব্যাপার? ঠিক আছে আমি রাজদার থেকে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি।’

‘এই কেস করেছে। (বিড়বিড়িয়ে)’

‘কিছু বললেন?’

‘ইয়ে হ্যাঁ মানে না মানে, রাজ তো বেরিয়ে গেছে ভার্সিটি থেকে। পরে কথা বলো।’

‘আগে তো দেখি।’

বলেই হাঁটতে শুরু করলাম রাজদা যেদিকে গেছেন সেদিকে। কেমন জানো মনে হচ্ছে মিথ্যে কথা বলছেন উনি আমাকে। উনি রাজদাকে কেন মারতে যাবেন? অবশ্য রাগের মাথায় কি করেন না করেন তা তো ঠিকও থাকে না ওনার। তাও একবার জিজ্ঞেস করবো আমি।

‘ওই তো রাজদা।’

কিছুটা যেতেই দেখলাম রাজদা দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছেন। আমি জোর পায়ে হেঁটে রাজদার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘রাজদা।’

‘আরে মৌমিতা? তুমি এখানে?’

‘হ্যাঁ। আপনার খোঁজ নিতে এসেছি।’

‘(অবাক হয়ে) আমার খোঁজ কেন?’

‘কালকে আদিত্য আপনাকে মেরেছে তো তাই। তা আপনি ঠিক আছেন তো?’

‘(আশ্চর্য হয়ে) আমাকে আদিত্য মেরেছ..ছে.. হ..হ্যাঁ হ্যাঁ মেরেছে তো, মেরেছে।’

রাজদা কে পিছনের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে দেখে আমি পিছন ফিরলাম। ফিরতেই দেখি আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন।

‘এ কি? আপনি এখানে কেন? কখন এলেন আপনি?’

‘এ..এই তো, এক্ষুনি এলাম। তুমি রাজকে খুঁজছিলে তাই ভাবলাম আমিও তোমাকে একটু হেল্প করি। তাই আর কি!’

আমি আদিত্যের কথা শুনে পাত্তা না দেওয়ার ভান করে রাজদার দিকে ফিরতেই রাজদা একটা ক্যাবলামার্কা হাসি দিলো আর বললো,

‘আমি একদম ঠিক আছি। আদিত্য আর আমার মধ্যে এসব প্রায়ই চলতে থাকে, হে হে হে। (আদিত্যের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে) তুমি চিন্তা করো না।’

‘আচ্ছা।’

আমি ঘুরে আদিত্যের দিকে তাকাতেই আদিত্যও ক্যাবলামার্কা হাসি দিলো আমাকে দেখে। আমি সেই দেখে ভ্রু কুঁচকাতেই আদিত্য চুপ করে গেলেন। আমি এগানো শুরু করলাম।

‘কি রে আদি, তুই মিথ্যে বলেছিস কেন?’

‘তো কি সত্যি বলতাম?’

‘পরে সত্যি জানলে কি হবে বল তো?’

‘আগে জানুক। তারপর দেখা যাবে।’

‘রণিতের হাত-মুখ আস্ত আছে তো?’

আমি কিছু দূর যেতেই দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছন ফিরে রাজদাকে জিজ্ঞেস করলাম কথাটা। রাজদা আমতা আমতা করে বললো,

‘ইয়ে,ম..মানে?’

‘না, আপনাকে আদিত্য এমন মারলো যে ওনার হাত কেটে গেলো কিন্তু আপনার কিচ্ছুটি হলো না, তাই জিজ্ঞেস করলাম। আপনিই তো ভালো জানবেন তাই না? যাই হোক, মিথ্যে বলার চেষ্টাটা আর কোনোদিন করবেন না আপনারা, স্পেশালি আপনার বন্ধুকে বলবেন। আর সাথে এটাও বলবেন যাতে রাগের মাথায় বেশি গায়ের জোর না দেখায়। আসি।’

আমি কথাগুলো বলে একবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে সামনে ফিরলাম। সামনে ফিরতেই হাসি পেলো কিন্তু না হেসে মুখ চেপে চলে এলাম ওখান থেকে।

‘নে, আরো বল মিথ্যে। গাধা একটা।’

‘তোর কপালে একটা ব্যান্ডেজ করিয়ে আনা দরকার ছিলো।’

‘শুধু কেন ব্যান্ডেজ করবো আমি?’

‘শুধু শুধু কেন? সত্যি সত্যি করার ব্যবস্থা করে দিতাম আমি।’

আদিত্য বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে রাজের দিকে তাকিয়ে হাসলে রাজ নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো,

‘আয়। দেখি কেমন সত্যি করতে পারিস।’

আদিত্যকে আর কে পায়? দিয়েছে ভোঁ দৌঁড়। ওর পিছন পিছন রাজও দৌঁড়াচ্ছে।

অন্যদিকে,

কোয়েল হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে আমার কথা শুনে। সত্যি বাবা, হাসার মতোই কথা। মানুষ মিথ্যে বলতে পারে না ঠিক আছে বাট এরকম? এগুলো তো বোকামি। নিজেরই হাসি পাচ্ছে এসব কথাগুলো ভেবে।

‘দেখ, দেখ। আদিত্যদা তোকে কত ভালোবাসে। তোর জন্য বেচারা রণিতকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিলো। আগেই বলেছিলাম আমি এগুলো তোকে ইভেন আজকে সকালের কথাটাও মিললো আমার। হুহ!’

‘বাদ দে এসব কথা। আমি তো ভয় পাচ্ছি রণিত এতে রেগে গিয়ে আবার কিছু করবে না তো? এখন না করুক আদিত্য ভার্সিটি থেকে পাস আউট করে গেলে তো করতেই পারে?’

‘নাহ সোনা। তোমার বর তোমার প্রেমে পড়েছে বলতে গেলে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তোমার আর কোনো ক্ষতি হতে অন্তত উনি বেঁচে থাকতে দেবেন না। বুঝলে?’

‘কি সব আজে বাজে কথা বলছিস? বেঁচে কেন থাকবে না?’

‘বাহবা! এখন যদি বলি তুমিও তোমার বরকে ভালোবাসো, ওমনি লম্বা লম্বা ডায়লগ দিতে শুরু করবে। এদিকে এত্তো এত্তো ভালোবাসা, এত্তো এত্তো কেয়ার। কি যে করবো তোদের নিয়ে আমি!(কপালে হাত দিয়ে)’

কোয়েলের কথাগুলো শুনে আমার নিজেরও ভালো লাগছে। উনি সত্যি আমার জন্য রণিতকে মারলেন? তাছাড়া আর কি বা হবে? ওনার তো রণিতের সাথে ইনফ্যাক্ট কাওর সাথেই কোনো শত্রুতা নেই। রণিত আমাকে প্রপোজ করেছে, আমাকে ছুঁয়েছে বলেই উনি ওকে মেরেছেন। ভাবতেও অবাক লাগছে, আজ যদি অঙ্কিত আমাকে না বলতো যে রণিতের অবস্থা খারাপ, সে হসপিটালে ভর্তি। তাহলে জানতেই পারতাম না বিষয়টা। উনি সত্যি আমার জন্য ভাবেন এটা তো কিছুদিন আগে থেকেই বুঝতে পারছি আমি। তাহলে কি উনি সত্যি সবটা নতুন করে শুরু করতে চান? কোয়েলের কথা মতো কি উনি আমাকে ভালো…

‘(অবাক হয়ে) একি!’

আমি কোয়েলের চিৎকার শুনে সামনে তাকাতেই দেখি আদিত্য কোয়েল কে সামনে রেখে ওকে বাঁচাতে বলছে রাজদার থেকে। কারণ রাজদা ওকে মারবে বলে ধরতে চাইছেন। বেশ বুঝতে পারলাম মিথ্যে ধরা পড়েছে তাই এই অবস্থা। আমি এখানে দাঁড়িয়ে হাসছি আর ওদিকে বেচারি কোয়েল একবার এদিক আরেকবার ওদিক করছে। ইশ! কি বাজে একটা অবস্থা। আমি কোনো মতে হাসি থামিয়ে ভাবলাম,

‘না, না। এবার থামাতে হবে। নাহলে এ সারাদিন চলবে। আর এরা যা করছে, এরপর তো পরে যাবে।’

আমার ভাবতে দেরী হলো কিন্তু ওটা বাস্তবায়িত হতে দেরী হলো না। রাজদা আদিত্যকে ধরতে গেলে আদিত্য কোয়েলকে রাজদার দিকে ঠেলে দেয় আর নিজে এদিকে দৌঁড়ে আসতে নিলে হোঁচট খায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে আদিত্যকে ধরে নেই আর উনি আমাকে শক্ত করে ধরেন।

‘ঠিক আছেন আপনি?’

‘তুমি ঠিক আছো?’

‘হ্যাঁ আমি কে…

‘তুমি ঠিক থাকলে আমিও ঠিক আছি।’

আমি ওনার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নামাতেই কোয়েলের দিকে চোখ গেলো। কোয়েলের কোমর রাজদা শক্ত করে ধরে আছে আর কোয়েল রাজদার কলার। ঠিক যেমন লাইব্রেরিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো একদৃষ্টে, এখনও তাই। আমার তাকানো দেখে আদিত্যও তাকালেন ওদের দিকে। আশেপাশে থাকা কয়েকটা স্টুডেন্টসও তাকিয়ে আছে। তাই আমি আদিত্যকে ছেড়ে দূরে সরে এলাম। আদিত্য সামান্য হেসে মাথা চুলকে আমার দিকে তাকালে আমি ওনার দিকে আর না তাকিয়ে কোয়েলের কাছে এগিয়ে জোরে জিজ্ঞেস করি,

‘এই কোয়েল! ঠিক আছিস?’

কোয়েল আর রাজদা একে অপরকে মুহূর্তের মধ্যে ছেড়ে দেয় আর ছিটকে দূরে সরে যায়। আমি একটু অবাক হই এতে। আদিত্য কোয়েলকে কিছু বলতে নিলেই কোয়েল দৌঁড়ে চলে যায় অন্যদিকে। আমি রাজদার দিকে তাকালে রাজদাও অন্য প্রান্তে চলে যায়। এটা কেমন হলো? আমি কনফিউজড হয়ে আদিত্যের দিকে তাকালে উনি আমাকে কোয়েলের পিছনে যাওয়ার ইশারা করে নিজে রাজদার পিছনে চলে যান। আমিও ওনার কথা মতো ছুট দেই কোয়েলের পিছনে।

[অনেক তো বরের পিছনে ছুটলি বেবি! এবার আমার পিছনেও একটু ছোট!😗]

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here