‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৪৫.
কোয়েল আর আমি ওনার পিছনে এগোতেই দেখি আদিত্য আর রাজদা দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা গিয়ে প্রথমে আদিত্যকে জরিয়ে ধরলেন তারপর রাজকে জড়িয়ে ধরলেন। ভার্সিটির অনেকেই জড়ো হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই….পিছন থেকে একটা জোরে চিৎকার ভেসে আসে,
__কি হচ্ছে টা কি এসব?
কোয়েল: এটা তো জিয়ার বাবা।
মৌমিতা: আমি কোনদিন ওনাকে দেখিনি। তোকে বলেছিলাম না কিছু একটা হতে চলেছে? দেখ।
কোয়েল: কি যে করেছে এরা কে জানে। আদিত্যদা মনে হয়…
পরেশবাবু (জিয়ার বাবা): আদিত্য! তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে, আমার পারমিশন না নিয়ে কিভাবে এই কাজটা করতে পারো? তোমার কোনো ধারণা আছে এর ফলে তোমার কি শাস্তি হতে পারে?
আদিত্য: আপনি আমার শাস্তির কথা না ভেবে বরং নিজের শাস্তির কথা ভাবুন। আমাকে যদি কেউ শাস্তি দিতে চায় সেটা আপনি কিন্তু আপনাকে শাস্তি দেবে আইন। জানি ওখানেও টাকা খাওয়াবেন আপনি বাঁচার জন্য। সাথে মনে রাখবেন, আমি যেমন এটা জানি এরপর সবাই এটা জানবে। আপনি একজন ঘুষখোর, স্মাগলার সেটা সবাই জানবে! (জোরে)
পরেশবাবু: আদিত্য! দ্বারাও। এক্ষুনি আমি তোমার ব্যবস্থা করছি।
পরেশবাবু নিজের পকেট থেকে ফোন বার করতেই আদিত্যের বাবা অর্থাৎ আমার শ্বশুরমশাই পরেশবাবুর কাঁধে হাত রেখে বললেন,
আকাশবাবু: এতো হাইপার হচ্ছিস কেন তুই? এতদিন তুই এই ভার্সিটির বোর্ডের মেম্বার ছিলি আজ না হয় তোর জায়গাটা আমি নিলাম। এতে অসুবিধা কোথায়? আমি তো তোর বন্ধু তাই না?
আদিত্য: সো কলড ফ্রেন্ড ড্যাড!
আকাশবাবু: আহ আদি! বড়দের মাঝে কথা বলো না। আমরা কথা বলছি তো নাকি?
আদিত্যকে ধমক দিয়ে শ্বশুরমশাই পরেশবাবুকে আবার বললেন,
আকাশবাবু: দেখ তুই যেমন কাজ করেছিস তার পরিণাম তোকে একদিন না একদিন ভোগ করতেই হতো। এটা তুই নিজেও খুব ভালো ভাবে জানিস তাই বেকার ভার্সিটির বাইরে সিনক্রিয়েট করিস না।
কথাটা শেষ করতেই পরেশবাবু বাবার কলার ধরতে যান আর আদিত্য সাথে সাথে পরেশবাবুর হাত ধরে নেন,
আদিত্য: (অতিরিক্ত রেগে, দাঁতে দাঁত চেপে) সাহস তো কম না আপনার? আপনি আমার সামনে আমার বাবার গায়ে হাত তুলছেন? এটা ভার্সিটির বাইরে করার চেষ্টা করলে আপনার হাত ভেঙে রেখে দিতাম আমি।
রাজ: আদি! হাতটা ছাড় ওনার।(জোরে)
আদিত্য রাজের কথা শুনে রাজের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে চোয়াল শক্ত করেই পরেশবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
আদিত্য: আমার সামনে এই সাহসটা আর কোনোদিন দেখাবেন না। দেখালে আজ যেটা করিনি সেটা করতে বাধ্য হবো। আমি থাকতে আমার বাবার দিকে হাত তো দূর, চোখ তুলেও তাকাতে দশ বার ভাববেন।
কথা শেষ করে আদিত্য ঝাড়া মেরে পরেশবাবুর হাত ছেড়ে দেন। রাজ পিছন থেকে আদিত্যকে বলে ওঠে,
রাজ: আদি সরে আয়, প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম এসে পড়বেন।
রাজদা কথাটা বলতেই পরেশবাবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে রাজদার দিকে তাকালেন আর সেটা দেখতেই রাজদা সঙ্গে সঙ্গে ভয় পেয়ে যাওয়ার ভান করে বললেন,
রাজ: এভাবে তাকাবেন না স্যার, বাচ্চা ছেলে আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছি তো? (অসহায় মুখ করে)
পরেশবাবু: আমি জানি আদিত্যের সাথে তুমিই ছিলে। তুমিই ওকে মদত দিয়েছো এসব করার জন্য।
রাজ: একদম ঠিক জানেন। আমি ছাড়া কে বা আদির সাহায্য করতে পারে বলুন? কিন্তু আমি এসেছি দেখেই আজ আপনার এই দশা এমনটা ভাববেন না কারণ আপনি যা শুরু করেছিলেন তাতে আপনার পাপের ঘরা ভরে গেছিলো। আমি না আসলে আদি নিজেই কাজটা করে নিতো, মোট কথা আপনি ঠিক সময় ঠিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছেন। (মুচকি হেসে)
পরেশবাবু: তোমাকে তো আমি পরে দেখে নেবো। (দাঁতে দাঁত চেপে)
রাজ: কেন? এখন দেখতে কি সমস্যা? এতো প্রেসারে চোখের পাওয়ার বেরে গেছে নাকি?
রাজদার এমন কথা শুনে সবাই হেসে ফেললে পরেশবাবু রাজের দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে কথা বলতে শুরু করলেন যার ফলে কেউ কিছু শুনতে পাচ্ছি না।
পরেশবাবু: তুমি আমাকে চেনো না রাজ। তোমার উইক পয়েন্ট আমি খুব ভালো ভাবে জানি। তোমাকে জব্দ করার ওষুধ আমার হাতের মুঠোয় আছে। (মুচকি হেসে)
কোয়েল: (মনে মনে– হঠাৎ করে পরেশবাবু রাজকে এতো আস্তে আস্তে কি বলছেন? ওরা তো বেশ জোরে কথা বলছিল, তাহলে?)
মৌমিতা: (মনে মনে– কি হলো? পরেশবাবু কি বললেন এতো আস্তে রাজদাকে? কথা শেষ করে কোয়েলের দিকে তাকালেন কেন?)
পরেশবাবু হঠাৎ করেই কোয়েলের দিকে তাকালেন বাঁকা হেসে তাই আমি আর কোয়েল একে অপরের দিকে তাকালাম। আবার ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি রাজদা কে বললেন,
পরেশবাবু: আদিত্যের ব্যবস্থা এমনিতেই হয়ে যাবে ও নিয়ে আমি ভাবছি না।
রাজ: ভুলেও এই কাজটার কথা মাথায় আনবেন না।
পরেশবাবু: বাহবা! নিজের কথা না ভেবে বন্ধুর কথা ভাবছো? ভালো ভালো! আমার কিছু না। তোমরা যেমন তোমাদের কাজ করেছো আমিও আমার কাজ করবো।
রাজদা হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে গেছিলেন, এখন কেমন জানো রেগে পরেশবাবুর দিকে তাকালেন। ব্যাপার টা কি? সেটা ভাবার আর সময় পেলাম না তার আগেই প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম চলে এলেন।
প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম: প্লিজ কিপ সাইলেন্স। দেখুন, আপনাদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ এভাবে ভার্সিটির মধ্যে স্টুডেন্টদের সামনে সিনক্রিয়েট করবেন না। (হাত জোড় করে)
পরেশবাবু: আপনার থেকে আমি এটা আশা করিনি ম্যাডাম। (ক্ষোভ প্রকাশ করে)
প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম: দেখুন পরেশবাবু, আমার এখানে কোনোরকম কোনো হাত নেই। আদিত্য যে এরকম কিছু করবে ও সেটা আমাকে জানায়নি, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিভাবে বুঝবো বলুন হুট করেই কাওকে না বলে আদিত্য কমিশনারের কাছে আপনার বিরুদ্ধে এত স্ট্রং এভিডেন্স জমা দেবে আর কমপ্লেইন করবে? আমি জানলেও কিছু করতে পারতাম না কারণ এভিডেন্সগুলো সত্যিই খুব স্ট্রং। শেষে একটা কথাই বলবো আমি আপনাকে, আপনার থেকে আমরা কেউ এইসব আশা করিনি। প্লিজ, যা হয়েছে তা মেনে নিয়ে আপনি চলে যান। (হাত জোড় করে)
পরেশবাবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা আদিত্য, রাজদা আর বাবার দিকে তাকিয়ে প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম কে বললেন,
পরেশবাবু: এর মূল্য আপনাদের দিতে হবে। হারে হারে এবার আপনারা টের পাবেন আমি কি জিনিস।
আদিত্য: কথাটা আরেকবার রিপিট করুন আমি রেকর্ড করে কমিশনারকে পাঠাচ্ছি।
পরেশবাবু আদিত্যের কথা শুনে ওর দিকে তাকালে আদিত্য ঠোঁট বন্ধ করে হেসে চোখ বুজে সম্মতি জানান যে উনি কাজটা করবেন। পরেশবাবু আর কিছু না বলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করেন। আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার পর হঠাৎই উনি পিছন ফিরে কোয়েলের দিকে তাকান আর তারপর রাজদার দিকে তাকান। আমিও ওনার মতো রাজদার দিকে তাকালে দেখি রাজদা চোয়াল শক্ত করে পরেশবাবুর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। সেটা দেখে পরেশবাবুর দিকে তাকালে দেখতে পাই উনি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলেন আর চলে গেলেন।
কোয়েল: এই মৌ! চল এখন এখান থেকে।
মৌমিতা: (মনে মনে– রাজদার হঠাৎ চুপ করে যাওয়াটা বেশ সন্দেহজনক। হয়তো কোয়েল খেয়াল করেনি পরেশবাবুর চাহুনি তাই কিছু বললো না। উনি যেভাবে সবাইকে শাসালেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে উনি কিছু একটা করবেন। আদিত্যের কোনো ক্ষতি করবেন না তো উনি?)
কোয়েল: কি রে চল?
মৌমিতা: আদিত্যের কোনো ক্ষতি করবে না তো উনি? আমার খুব চিন্তা হচ্ছে কোয়েল। (ভয় পেয়ে)
কোয়েল: সকলের সামনে আদিত্যদাকে যে হুমকি দিয়েছে, সে যে কিছু একটা করবে সেটা স্বাভাবিক মৌ। আদিত্যদাকে এখন প্রতিটা মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।
মৌমিতা: আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। (কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে)
কোয়েল: আচ্ছা তুই চল। আদিত্যদারা ভিতরে যাচ্ছে প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের সাথে। ওখান থেকে যখন বেড়াবে তখন পুরো বিষয়টা জানতে চাইবো।
আমি আদিত্যের দিকে তাকালাম কোয়েলের কথা শুনে। কাকতলীয়ভাবে উনিও আমার দিকে তাকালেন একই সময়ে। আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রাজদার দিকে তাকালে উনিও রাজদার দিকে তাকান। তারপর আমার দিকে তাকালে আমি রাজদার দিকে ইশারা করে চলে গেলাম।
আদিত্য: (মনে মনে– তখন পরেশবাবু কিছু একটা বলছিলেন আস্তে করে রাজকে। তারপরেই রাজ চুপচাপ হয়ে গেলো। কি এমন বললো উনি ওকে?) কি বললো উনি তোকে?
রাজ: হম? কিছু না। ভিতরে আয় আঙ্কেলকে নিয়ে।
রাজ কথাটুকু বলেই ভিতরে চলে গেলো ভার্সিটির। আদিত্য রাজের ব্যবহারেই বুঝতে পারলো যে সত্যি কিছু একটা বলেছে পরেশবাবু ওকে।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী