একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️পর্ব-৩২

0
10106

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

কোয়েল অনেক আশা নিয়ে রাজের দিকে চেয়ে রইলো প্রশ্নটা করে। প্রশ্ন শুনে রাজও গাড়ি থামিয়ে কোয়েলের চোখের দিকে তাকায়। দুজনের চোখই ছলছল করছে, কথা বলছে একে অপরের সাথে। অনেক না বলা কথা যা এতদিন জমে ছিলো। অনেক অনুভূতি যা বলে প্রকাশ পায় না তা হয়তো ওদের চাহুনি দ্বারা প্রকাশ পাচ্ছে।

কোয়েল: (চোখ নামিয়ে নিয়ে) আসছি আমি।

কোয়েল সিট বেল্ট খুলে নামতে না নামতেই রাজ নেমে কোয়েলের সামনে এসে দাঁড়ায়। কোয়েল রাজের চোখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নিলে রাজ কোয়েলকে মাঝখানে রেখে কোয়েলের দু-পাশে হাত রেখে গাড়িতে ভর করে ওর দিকে ঝুঁকে পড়তেই কোয়েল চোখ বুজে নেয়।

রাজ: (কানের কাছে আস্তে করে) কোনদিকে না তাকিয়ে, সোজা হস্টেলে যাবি। নো ডানদিক, বাঁদিক আর নো উপর, নিচ একদম সোজা হস্টেল। আজকে আর জানো বাইরে বেড়ানো না হয়। গট ইট?

রাজ কথা শেষ করে কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল চোখ মেলে রাজের চোখের দিকে তাকায়। রাজ কোয়েলের দিকে এগিয়ে যায় ওর চোখের দিকে তাকিয়েই কিন্তু হঠাৎ করেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কোয়েলেরও জানো ঘোর কেটে যায়, আমতা আমতা করে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,

কোয়েল: আসছি আমি। সাবধানে যাবে।

এটুকু বলেই কোয়েল রাজের কথামতো সোজা হস্টেলে ঢুকে যায় কোনদিকে না তাকিয়ে। রাজ পিছন ফিরেই আড় চোখে কোয়েলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,

রাজ: (মনে মনে– খুব ইচ্ছা করছিলো তোমার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে কিন্তু আমি এখনও সেই অধিকার তোমার থেকে পাইনি। আজ এরকম কিছু একটা হঠাৎ তোমার সাথে করলে যদি হিতে বিপরীত হয়ে যেতো? তুমি যদি আরো দূরে সরে যেতে আমার থেকে তাহলে? এটা আমি কিছুতেই মানতে পারতাম না, কিছুতেই না।)

কোয়েল: (মনে মনে– কখন যে কি চলে এই ছেলেটার মাথায় কিছুই বুঝিনা ছাই! ধুর, ভালো লাগে না। কি ভাবলাম আর কি হলো। এই জন্যেই বলে আশা করতে নেই। ভাবলাম ওর ঠোঁটের ছোঁয়া পাবো তা না ব্যাঙ! ধুর, ধুর!)

৪৮.
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হওয়ার পর মনে হলো উনি হয়তো এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। নাকি চলে গেছেন? দেখি বরং একবার। টাওয়াল টা রেখে জানলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখলাম ওনার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।

মৌমিতা: যা ভেবেছিলাম তাই। উনি এখনও এখানেই দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু কেন? আমি তো সেই কখন চলে এসেছি তাহলে…ওহ! কোয়েল তো এখনও ফেরেনি।

আমি আবার জানলার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি গাড়ি থেকে বেরোলেন। ঠিক করলাম ওনার সাথে একবার দেখা করে কোয়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। যেই ভাবা সেই কাজ আমি ঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরোতে নিলাম আর সজোরে ধাক্কা খেলাম।

মৌমিতা: উফফ, কোয়েল! (কপালে হাত দিয়ে)

কোয়েল: এতো তাড়াহুড়ো করে কই যাচ্ছিস তুই। (কপাল ডলতে ডলতে)

মৌমিতা: নীচে আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন তাই যাচ্ছিলাম। উনি হয়তো তোর জন্যেই অপেক্ষা করছেন। কই ছিলি তুই এতক্ষন?

কোয়েল: (আমতা আমতা করতে করতে) ইয়ে, আমি একটু রাজের সাথে ছিলাম।

মৌমিতা: সিরিয়াসলি? কোনো কথা বার করতে পেরেছিস?

কোয়েল: ধুর! আর বলিস না। কিছুই বললো না আমায়। শুধু বললো…

মৌমিতা: শুধু কি বলেছেন?

কোয়েল: বললো যে, ওর প্রিয় মানুষকে ওর থেকে কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছেন পরেশবাবু।

মৌমিতা: আদিত্য তাহলে ঠিকই আন্দাজ করেছিলেন। রাজদাকে পরেশবাবু ভয় দেখিয়েছেন।

কোয়েল: হ্যাঁ। আচ্ছা তুই নীচে যা। ওরা হয়তো যায়নি এখনও দেখা করে আয় একবার।

মৌমিতা: যাবো বলছিস?

কোয়েল: নিজের বরের সাথেই দেখা করতে যাচ্ছিস বইন আমার। যা, যা, দূর হ!

মৌমিতা: হুহ! (ভেংচি কেটে)

কোয়েল: আর শোন! নিচে নেমে ভালো করে চারিদিকটা দেখবি তো।

মৌমিতা: কেন?

কোয়েল: আগে দেখে আয়। তারপর বলবো। আমি ফ্রেশ হতে চললাম।

কোয়েল ওয়াশরুমে চলে গেলে আমিও নীচে নেমে যাই। হস্টেল থেকে বেরোতেই দেখতে পাই রাজদা আর আদিত্য কথা বলছেন একে অপরের সাথে তাই আর আগে না এগিয়ে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লাম।

রাজ: আদি তুই এখানে কি করছিস?

আদিত্য: আমারও তো একই প্রশ্ন বন্ধু। তুমি এখানে কি করছো? (হেসে)

রাজ: কোয়েল গেছিলো আমার পিছু পিছু। একা আসবে তাই পৌঁছে দিলাম। (মুখ ঘুরিয়ে)

আদিত্য: বাহ! প্রেম না করেই শুধু শুধু হস্টেলে পৌঁছে দিলি? এটা আমাকে মানতে হবে? (হেসে ফেলে)

রাজ আদিত্যের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু তাচ্ছিল্য হেসে চুপ করে রইলো। আদিত্য রাজের অবস্থা বুঝে নিজের হাসি থামিয়ে রাজের কাঁধে হাত রেখে বললো,

আদিত্য: কোয়েলও তোকে ভালোবাসে রাজ। নিজের অনুভূতি কোয়েলকে বোঝানোর আগে কোয়েলের তোর প্রতি অনুভূতিগুলো আগে বোঝার চেষ্টা কর। তুই যদি মনে ধরে বসে থাকিস যে ও তোকে ভালোবাসে না তাহলে তোদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে। আগে নিজের ডাউট ক্লিয়ার কর যে ও তোকে সত্যি ভালোবাসে কি না।

রাজ: (আদিত্যের দিকে তাকিয়ে) শেষমেশ তুইও ভালোবাসায় বিশ্বাস করলি তাই তো?

আদিত্য: (মাথা চুলকে) কি জানি কিভাবে ভালোবেসে ফেললাম।

রাজ: ওই যে বললাম, বিয়ে! ইংরেজি ভাষায় অ্যাটাচমেন্ট আর বাংলায় বিয়ে। তুই কাওকে কখনও ভালোবাসার চোখে দেখিসনি কারণ তুই এটায় বিশ্বাসী ছিলিস না। কিন্তু তুই জেলাসি, অধিকারবোধ এসবে তো বিশ্বাসী ছিলি না এমন তো নয়? বিয়ের জন্য তোর এগুলো হয়েছে আর সেখান থেকেই ইউ আর ফল ইন লাভ! ইউ নো ইট ইজ দ্য বেস্ট ফিলিং হোয়েন ইউ ফল ইন লাভ। (মুচকি হেসে)

আদিত্য: ভাগ্যিস বিয়েটা করেছিলাম নাহলে এতো ভালো একটা ফিলিংস কোনোদিন ফিল করতে পারতাম না। (নিজে নিজে হেসে)

রাজ: আমি আমার ডাউট ক্লিয়ার করি আর তুমি নিজের ফিলিংস ফিল করাও। আমি চললাম, চলে আসিস। টাটা!

রাজ হেসে চলে গেলে আদিত্য অবাক হয়ে রইলো।

আদিত্য: হুট করে এভাবে চলে গেল কেন? একই জায়গায় তো যাবো তো ওর আগে যাওয়ার কি হয়েছিলো? (অবাক হয়ে)

__আপনি এতক্ষন দাঁড়িয়ে কেন ছিলেন?

আদিত্য পিছন থেকে মৌমিতার গলার আওয়াজ পেয়ে রাজের চলে যাওয়ার কারণ বুঝলো। মৌমিতার দিকে ফিরতেই দেখলো মৌমিতা ওর দিকেই তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মৌমিতা: (মনে মনে– কিছু না বলে হুট করে এগিয়ে আসছেন কেন? কি করলাম আবার?)

আদিত্য আমার দিকে এগোতে শুরু করলে আমি মাথা নামিয়ে নেই। উনি আমার সামনে এসে আমার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে বলেন,

আদিত্য: ঘরে যাও, এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক না এখন।

আমি আদিত্যের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে চারিদিকে একটু তাকালাম। তখনই আমার মনে পড়লো কোয়েলের কথা।

আদিত্য: যেতে বলেছি আমি? (ধমক দিয়ে)

মৌমিতা: আব… ঠিক আছে যা..

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদিত্য আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে হস্টেলের ভিতর ঢুকিয়ে দিলেন।

আদিত্য: সিধে ঘরে, একদম বেড়াবে না আজকে।

মৌমিতা: আপনি, আপনি একা বাড়ি যাবেন? রাজদা কোথায়? (চিন্তিত হয়ে)

আদিত্য: রাজ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। তুমি যাও।

মৌমিতা: কিন্তু আমি তো দেখলাম রাজদা চলে গেলেন তাহলে?

আদিত্য: আমি তোমাকে যেতে বলেছি তো? (রেগে, অনেক জোরে)

আমি কেঁপে উঠলাম আদিত্যের ধমক শুনে। কাচুমাচু মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে পিছতে পিছতে বললাম,

মৌমিতা: বাড়ি পৌঁছে ফোন করবেন, আমি অপেক্ষা করবো।

কথা শেষ করে ছুটে চলে এলাম। ঘরে আসতেই দেখলাম কোয়েল কপালে হাত দিয়ে সমানে পায়চারি করছে। মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে চিন্তিত। আমাকে দেখতেই ছুটে এলো আমার কাছে।

কোয়েল: কি দেখলি বাইরে?

মৌমিতা: ওখানে অনেকগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো কোয়েল। ওদের চাহুনি আমার ভালো লাগলো না। আদিত্য আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগও দিলেন না ঘরে পাঠিয়ে দিলেন আর ব..

কোয়েল: আর বললো আজকে বেরোতে না তাই তো?

মৌমিতা: তুই কি করে জানলি? (অবাক হয়ে)

কোয়েল: রাজও আমাকে এক কথাই বললো। গাড়ি থেকে নামতেই হুট করে বললো যে সোজা হস্টেলে যেতে আর আজকে না বেরোতে।

মৌমিতা: আমি তো বুঝতে পারছি না ওরা আমাদের নিয়ে কেন চিন্তা করছে? আমার তো মনে হচ্ছে ওই লোকগুলো ওদের কোনো ক্ষতি করতে পারে। আমি স্পষ্ট দেখেছি রাজদা চলে গেছেন। এখন? এখন উনি কি একা যাবেন? আমার মাথায় না কিচ্ছু আসছে না বিশ্বাস কর। (কাঁদো কাঁদো গলায়, চিন্তিত হয়ে)

কোয়েল: পরেশবাবু আদিত্যদার ক্ষতি করবে না মৌ। কারণটা জিয়া! জিয়া ভালোবাসে আদিত্যদাকে। আদিত্যদা জিয়াকে প্রশ্রয় দিতো এই দিনটার জন্যেই যাতে পরেশবাবু আদিত্যদার ক্ষতি করতে চাইলেও ক্ষতি করতে না পারে কিন্তু তোকে জিয়া সহ্য করতে পারে না। আদিত্যদা আর তোকে একসাথে জিয়া দেখতে চায় না তাই পরেশবাবু তোর ক্ষতি করতেই পারে। তুই বুঝতে পেরেছিস কি না জানি না আমি তো বুঝে গেছি তুই আদিত্যদার উইক পয়েন্ট!

মৌমিতা: আদিত্য যেমন ওনার উইক পয়েন্ট জিয়াকে ওনার বিরুদ্ধে ইউস করেছেন তেমন উনিও আমাকে আদিত্যকে কাবু করতে ইউস করতে চাইছেন?

কোয়েল: এক্সাক্টলি! যেখানে রাজকেই উনি বলেছেন যে ওর থেকে ওর প্রিয় মানুষকে কেড়ে নেবেন সেখানে আদিত্যদার সাথে তো এটা করবেনই। শুধু তুই না, আন্টি মানে আদিত্যদার মা’ও আদিত্যদার উইক পয়েন্ট।

মৌমিতা: আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে কোয়েল। উনি, উনি আমাকে থাকতেই দিলেন না ওখানে।

কোয়েল: (মৌমিতাকে ধরে) আদিত্যদাকে আর কিছুক্ষণ পর কল করিস।

মৌমিতা: আমি উনাকে বলেছি বাড়ি পৌঁছে কল করতে।

কোয়েল: তাহলে ঠিক করবে চিন্তা করিস না। (মনে মনে– আমি তো কিছু বলতেও পারলাম না রাজকে। ও তো চলে গেলো, বাড়ি পৌঁছেছে? ওহ, আদিত্যদার সাথেই তো থাকছে আদিত্যদাকেই না হয় জিজ্ঞেস করবো। সেটাই ভালো হবে।)

৪৯.
মৌমিতা চলে যেতেই আদিত্য নিজের গাড়ির সামনে এসে নিজের শার্টের হাতা গোটাতে শুরু করলো। আদিত্যকে ওভাবে দেখে যে কয়জন ছেলে এতক্ষন দাঁড়িয়ে ওদেরকে নজরে রাখছিলো তারা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের গাড়ি করে চলে গেলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে। ওরা চলে যেতেই….

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here