একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️ পর্ব-৪৪

0
8601

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৬৫.
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলে কোয়েল জোরে হেসে দেয় ফলে আমিও হেসে ফেলি। আমরা গল্প করতে থাকি ব্যালকনিতে গিয়ে। কোয়েল এখন বেশ স্বাভাবিক হয়েছে তাই জিজ্ঞেস করি….

মৌমিতা: আচ্ছা রাজদা কোথায় থাকে? এতদিন হলো রাজদার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারলাম না। খুব কম কথা বলেন উনি সবার সাথে, এমন কেন?

কোয়েল আমার প্রশ্ন শুনে সামান্য হেসে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর বললো,

কোয়েল: রাজের কেউ নেই আদিত্যদা ছাড়া, আমার জানা মতে।

মৌমিতা: মানে? (অবাক হয়ে)

কোয়েল: হ্যাঁ। ও অনাথ আশ্রমে মানুষ। জ্ঞান হওয়ার পরে ও, অনাথ আশ্রমটি যে চালান তাঁকেই বাবা ভাবতো। উনি রাজকে বলেননি প্রথমে যে ওর বাবা-মা নেই। রাজের পড়াশোনায় আগ্রহ ছিলো বলে উনি নিজের খরচায় রাজকে স্কুলে ভর্তি করেন। রাজ স্কুলে আসলে প্রথম প্রথম চুপচাপই থাকতো, যেমনটা তুই বললি খুব কম কথা বলে।

মৌমিতা: তাহলে ওনার সাথে পরিচয় কীভাবে?

কোয়েল: বলছি। আদিত্যদাও খুব একা থাকতে ভালোবাসতো ছোটো থেকে। মনের মতো বন্ধু নাহলে কথা বলতো না। একদিন রাজ স্কুলের মাঠে একপাশে চুপ করে বসে ছিলো। তখন কিছু সিনিয়ররা ওর দিকে বল ছুঁড়ে মারে। রাজ কিছু না বলে বল ফিরিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলে ওকে ধাক্কা মেরে ওরা ফেলে দেয়। তখন আদিত্যদা এসে ওকে তুলতেই ওরা আদিত্যদাকে দেখে কোনো কথা না বাড়িয়েই কেটে পরে। আগাগোড়াই আদিত্যদাকে সবাই খুব মেনে চলে কারণ আদিত্যদার রাগটা সাংঘাতিক। এরপর রাজ আদিত্যদাকে থ্যাংক ইউ বলে ক্লাসে চলে যায়। সেদিন রাজের গায়ে নাকি প্রচুর জ্বর ছিলো তবুও সে এসেছিল পড়া বোঝার জন্য কারণ কিছুদিন পর থেকে পরীক্ষা ছিলো আর ওর কোনো টিচার ছিলো না যে ওকে পড়া বোঝাবে। আদিত্যদা রাজকে ধরে তোলার সময় সেটা বুঝতে পেরেছিল। তখন তো বোঝেনি ওটা জ্বর, বুঝেছিল গাটা ভীষণ গরম।

মৌমিতা: তারপর?

কোয়েল: তারপরের দিন রাজ যখন নিজের মতো করে বেঞ্চে বসেছিলো টিফিন টাইমে তখন আদিত্যদা রাজের পাশে গিয়ে বসে আর নিজের টিফিন এগিয়ে দিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। রাজ প্রথমে চুপ করে থাকলেও পরে তা স্বীকার করে। রাজ টিফিন আনতো না, ওর কোনো টিচারও ছিলো না কারণ অনাথ আশ্রমটা যে চালাতো তার স্ত্রী রাজকে পছন্দ করতেন না। তাই সে স্কুলে ভর্তি করে দিলেও এইসব দিকগুলো অতটাও দেখতে পারতো না। এক বছর ওভাবেই চলে যায়, রাজ আর আদিত্যদা যখন ফাইভে ওঠে তখন আদিত্যদা জোর করে রাজের সাথে ছুটির সময় ওকে ছাড়তে যায়। সেদিনই জানতে পারে রাজ অনাথ আশ্রমে মানুষ। সেটা দেখার পর আদিত্যদা আর কথা না বলে চলে আসে নিজের বাড়ি।

মৌমিতা: উনি নিশ্চই কিছু একটা ভেবে রেখেছিলেন রাজদার জন্য, তাই না?

কোয়েল: (হেসে) হম। আঙ্কেলের সাথে কথা বলে রাজকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে আদিত্যদা। আঙ্কেল অনাথ আশ্রমের মালিকের সাথে কথা বলতেই উনি রাজি হয়ে যান। আঙ্কেল তো রাজকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু অনাথ আশ্রমের মালিকটা ওনাকে বলে যে এটা রাজকে জিজ্ঞেস করে করা উচিত কারণ ওর বাবার পদবী ও এতদিন ব্যবহার করেছে।

মৌমিতা: মানে? রাজদার বাবা মায়ের খোঁজ উনি জানতেন?

কোয়েল: হ্যাঁ। আসল ঘটনা এখানেই! সেইদিন আঙ্কেলকে উনি জানান যে রাজ ওনার বন্ধুর ছেলে। রাজের মায়ের যেদিন লেবার পেইন উঠেছিল সেদিন রাজের বাবা ওনাকে দেখতে হসপিটালে যাওয়ার সময় গাড়ি একসিডেন্ট করেন। ওনাকে হসপিটালে ভর্তি করলে উনি বলেন যে রাজকে আর ওনার স্ত্রী কে জানো ওনার বন্ধু একটু দেখে রাখেন এবং তারপরেই মারা যান। রাজের বাবার একসিডেন্ট এর খবর রাজের মাকে দেওয়া হয়নি যাতে উনি কোনো শোক না পান। কিন্ত শেষ রক্ষা করা যায়নি রাজের জন্মের পরেই রাজের মা মারা যান আর রাজকে অনাথ আশ্রমে নিয়ে আসেন।

মৌমিতা: কে এই অনাথ আশ্রমের মালিক?

কোয়েল: সৌভিকদার বাবা।

মৌমিতা: কি? (অবাক হয়ে)

কোয়েল: হ্যাঁ। সুরেশ আঙ্কেল! এই কারণেই সৌভিকদা রাজকে পছন্দ করে না একদম।

মৌমিতা: তুই এগুলো কীভাবে জানলি?

কোয়েল: আদিত্যদাই বলেছে যখন বড়ো হয়েছি। রাজ নিজেও জানে পুরো বিষয়টা। ও যখন জানতে পেরেছে তখনই বলে দিয়েছে নিজের বাবার পদবী পরিবর্তন করবে না। রাজ আদিত্যদার বাড়িতে চলে এলে রাজের বই খাতা সব কিছুই আঙ্কেল কিনে দিতো। নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসেন রাজকে আঙ্কেল আন্টি আর আদিত্যদা ভাইয়ের মতো। কি না করেছে আদিত্যদা ওর জন্যে ছোটো থেকে? এর প্রতিদান হিসেবে ও কি করলো? হুট করেই কাওকে কিছু না জানিয়ে চলে গেলো। (রেগে)

মৌমিতা: তুই তো বলেছিলি আদিত্যর থেকে তোর খোঁজ নিতো রাজদা। তাহলে উনি কি সব জানতেন?

কোয়েল: আমি জানি না। আমি কিছুই বুঝতে পারি না, কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারি না এই বিষয়ে। রাজ যখন একটু বড় হয় মানে এইটে ওঠে, তখন থেকেই টিউশনি শুরু করে আর নিজের বইখাতার খরচ নিজে চালাতে থাকে। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছে, জ্ঞান হয়েছে এসব বিষয়ে সেদিন থেকেই ও আদিত্যদার হেল্প ছাড়া চলার চেষ্টা করতে শুরু করে। হয়তো ওর এটাই মনে হয় যে আদিত্যদা ওকে দয়া করছে সেইজন্যেই হয়তো অকৃতজ্ঞের মতো চলে গেছিলো। ভালোবাসাটা কখনো বোঝার চেষ্টা করেনি। (রেগে মুখ ফিরিয়ে)

মৌমিতা: কোয়েল প্লিজ! এভাবে না জেনে আজে বাজে কথা বলিস না। যদি উনি অকৃতজ্ঞই হতেন তাহলে ফিরে আসতেন না কোনদিনও। হতেই তো পারে উনি বাধ্য হয়েছেন কাওকে কিছু না জানাতে? পরিস্থিতির কারণে আমরা অনেক সময় নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু কাজ করতে বাধ্য হই। এক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই আর এমনটাই যদি হয়ে থাকে তাহলে পরে তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি তো? (কোয়েলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে)

কোয়েল: (মৌমিতাকে জড়িয়ে ধরে) তাহলে ও কেন এভাবে ছেড়ে চলে গেছিলো বল? ওর ধারণা নেই আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি এই চারটে বছর। এখন যখন ফিরে এসেছে তখনও কিছুই বলছে না। ও যতদিন আমাকে সত্যিটা না জানাচ্ছে ততদিন আমি ওকে একসেপ্ট করবো না।

আমি কোয়েলের কথা শুনে ওকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

মৌমিতা: একসেপ্ট করবি না মানে? রাজদা তোকে প্রপোজ করেছে?

কোয়েল: হ্যাঁ। ট্রেইনে…

মৌমিতা: যখন রাজদার কাছে গেছিলি ওঠার সময় তাই তো?

কোয়েল: (হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো)

মৌমিতা: দেখ, নিজের মনের কথাটা যখন জানিয়েছে তখন সব সত্যিটাও ঠিক জানাবে। হয়তো শুধু সময়ের অপেক্ষা করছে, সঠিক সময়ের। এসব নিয়ে মন খারাপ না করে ঘরে আয়।

আমি কোয়েলকে একটু একা থাকতে দিয়ে ঘরে চলে এলাম। ওর নিজেকে একটু সময় দেওয়ার প্রয়োজন এখন।

কোয়েল: (মনে মনে– ও তো আজকে বললো যে ও বাধ্য ছিলো আর আগে বলেছিল সময় আসলে ও সবটাই জানাবে। শুধু অপেক্ষা করতে সময়ের কিন্তু এর কত অপেক্ষা করবো আমি? আর কত?)

কোয়েল ঘরে চলে আসে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর। কোয়েল ঘরে আসার কিছুক্ষণ পরেই আদিত্য বলেন যে ব্রেকফাস্ট করে নিতে। আমরা ব্রেকফাস্ট করতে এলে দেখি রাজদা নেই। আদিত্যকে জিজ্ঞেস করতেই উনি বলেন,

আদিত্য: জানি না। খাবে না বললো দ্যান ঘুরতে যাওয়ার কথা বললাম তখন ও না করে দিলো। কি জানি কি হয়েছে আমি আর কোনো কথাই বলবো না ওর সাথে।

আদিত্য রেগে চলে গেলে আমি কোয়েলের দিকে তাকাই আর কোয়েল একটি নিশ্বাস ফেলে রাজদার ঘরের দিকে চলে যায়।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

বি: দ্র: আমি আগেই জানিয়েছি পরীক্ষা আমার তাই এখন পর্বগুলো একটু ছোটো হবে। দুঃখিত তার জন্যে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here