একদিন তুমিও ভালোবাসবে ❤️ পর্ব-৪৮

0
9083

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৭০.
রাতে,
আমি আর কোয়েল ঘরে ছিলাম সেই সময় অঙ্কিত এসে নীচে বাগানে যেতে বললো। আমরা কিছুক্ষণ আগেই সবার সাথে আড্ডা দিয়ে ঘরে চলে এসেছিলাম।

কোয়েল: আবার কেন? সবে তো বনফায়ার শেষ হলো মনে হয়।

অঙ্কিত: শেষ হওয়ার আগেই তো তোরা চলে এলো। আর এসেছিস তিরিশ মিনিট হয়ে গেছে, চল একটু ফিনিশিং টাচ দেওয়া বাকি এখনও।

অঙ্কিত চলে গেলে আমি কোয়েলকে বললাম,

মৌমিতা: ফিনিশিং টাচ বলতে কি বোঝাতে চাইলো?

কোয়েল: সেটা তো বাগানে গেলেই বোঝা যাবে। চল দেখি।

আমি আর কোয়েল ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে চলে এলাম। কিন্তু বাগানের দিকে যতো এগোচ্ছি সব কেমন জানো শান্ত লাগছে। বাগানে আস্তেই দেখলাম আগুনটা এখনও জ্বলছে কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।

মৌমিতা: এই কোয়েল এখানে তো কেউই…কোয়েল!

আমি পাশ ফিরে কোয়েলকে ডাকতে গেলাম কিন্তু কোয়েল নেই। একি? কোয়েল কোথায় গেল? এক্ষুনি তো এখানে ছিলো তাহলে…

__কাওকে খুঁজছো?

আমি আদিত্যের গলার আওয়াজ পেয়ে পিছন ফিরলাম, দেখলাম উনি দু-হাত পিছনে করে দাঁড়িয়ে আছেন।

মৌমিতা: অঙ্কিত বললো যে বাগানে আসতে। কিন্তু সবাই কোথায়? আর কি সব ফিনিশিং টাচের কথা বলছিলো ও। কোনো স্পেশাল কিছু আছে কি?

আদিত্য: (দুষ্টু হেসে) আছে তো। দেখতে চাও তুমি?

মৌমিতা: (কিছু না বুঝেই) হ্যাঁ।

আদিত্য: ওই তো পিছনে দেখো।

আদিত্যের কথা আর ইশারায় আমি পিছনে তাকালাম কিন্তু কই? কিছুই তো নেই। তাই আবার ওনার দিকে ফিরলে আমি এক কদম পিছিয়ে যাই ওনাকে দেখে। উনি হাঁটু গেড়ে আমার দিকে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে আমার সামনে বসে আছে। আমি ওনার চোখে চোখ রাখতেই উনি বলতে শুরু করলেন,

আদিত্য: আমি জানি আমার থেকে এসব কোনো কিছুই এক্সপেক্টেড না ইভেন আমি নিজেও কোনোদিন ভাবিনি আমার সাথে এমন কিছু হবে। ভাবিনি, ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে বাধ্য হবো। ভাবিনি, কোনো মেয়েকে এতোটা ভালোবাসবো যে, যে না থাকলে আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারবো না। জীবনে প্রথম আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি আর শেষ পর্যন্ত তোমাকেই ভালোবাসবো। আই লাভ ইউ মৌ! আই নো আমি ভুল করেছি তাই একটা সুযোগ চাইছি সবটা ঠিক করার। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ।

আদিত্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখলাম আশপাশ থেকে সবাই “ইয়েস” বলতে বলছে। অঙ্কিত, কোয়েল আর রাজদাও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে সবার সাথে। আদিত্যও ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আমার দিকে তাকালেন।

আদিত্য: আমি তোমাকে….

আমি ওনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।সিধে ঘরে চলে এসেছি, পিছনে তাকাবার প্রয়োজনও মনে করিনি।

আদিত্য: মৌ! মৌ আমার কথাটা তো শুনে যাও! (জোরে)

আদিত্য উঠে দাঁড়ায় অসহায় মুখ করে। মাথা নীচু করে নিলে রাজ এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। বেশ অপমানজনক হলেও আদিত্য সেই নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। সে ভাবছে মৌমিতা এইভাবে কেন রিয়াক্ট করলো? এখন কি ওর কাছে যাওয়াটা ঠিক? নাকি মৌমিতা চায়ই না সুযোগ দিতে তাই চলে গেলো? মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে আদিত্যের। এই সময় কোয়েলপাশ দিয়ে গেয়ে ওঠে,

কোয়েল: আভি তো ইয়ে পেহলি মনজিল হেইন, তুম তো আভি সে শারমা গায়ে। উঁহু, উঁহু! নাহ মানে গানটা গাইতে খুব ইচ্ছা হলো আর কি। যাই হোক, আমিও বরং যাই। বায় দ্য ওয়ে, সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে সারপ্রাইজ পেতে কেমন লাগলো? (হেসে)

রাজ: লাইক সিরিয়াসলি? তোর হাসি পাচ্ছে? এখানে একজন হার্ট হলো আর তোর হাসি পাচ্ছে? (রেগে)

কোয়েল: আদিত্যদা যদি ভুল স্টাইলে প্রপোজ করে তাহলে হার্ট তো হবেই তাই না?

আদিত্য: আমাকে তো ও আর কিছু বলতেই দিলো না তো কি করবো? (অসহায় ভাবে)

কোয়েল: কি আবার করবে? পরে বুঝিয়ে বলে দেবে। যাই দেখি, কই গেলো। মৌ রে, কই গেলি রে?

কোয়েল মৌমিতা যেদিকে গেছে সেদিকে চলে গেলে আদিত্য করুনভাবে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।

আদিত্য: আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো আর যদি না ভালোবেসে থাকো তাহলে বলবো, “একদিন তুমিও ভালোবাসবে”।

আদিত্য চলে যায় সেই জায়গা ছেড়ে। রাজ আর অঙ্কিত ও চলে যায় আদিত্যের পিছন পিছন। এদিকে কোয়েল এসে দেখে মৌমিতা বেডের উপর চুপচাপ বসে আছে অন্যদিকে তাকিয়ে। কোয়েল গিয়ে মৌমিতার পাশে বসতেই মৌমিতা বলে ওঠে,

মৌমিতা: তুই সবটা জানতিস তাই না?

কোয়েল: একদমই না। বাগানে পা রাখতেই রাজ পিছন থেকে আমার মুখ চেপে আমাকে ওদের দিকে টেনে নিয়ে যায়। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে বলতে হবে না সব দেখতেই পাবো চোখের সামনে।

মৌমিতা: উনি এটা ঠিক করলেন না।

কোয়েল: তুই কি ঠিক করলি?

মৌমিতা: (অবাক হয়ে) তুই বলছিস কথাটা? সিরিয়াসলি কোয়েল? আমি ওনার স্ত্রী হই, প্রেমিকা না। এতে এটাই প্রমান হলো যে উনি এখনও আমাদের বিয়েটা মেনে নিতে চান না।

কোয়েল: তুই না বড্ড হড়বড় করিস জানিস তো? তুই আদিত্যদার পুরো কথাটা শুনেছিস আদৌ? ও তো বলতেই যাচ্ছিলো ও তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে। তুই “আমি তোমাকে…” এতটুকু শুনেই লাফাতে লাফাতে চলে এলি।

মৌমিতা: অ্যাঁ? উনি এমন বলতেন? (অসহায় ভাবে)

কোয়েল: আজ্ঞে। এটাই তো বললো আমাকে। গাধী একটা! কতো বড়ো অপমান হলো বল তো আদিত্যদার। তাও আদিত্যদা সেসব না ভেবে তুই রিপ্লাই না করে ওরোম ভাবে চলে এলি দেখে মন খারাপ করে আছে।

মৌমিতা: উনি কোথায়?

কোয়েল: জানি না। চল রাতের খাবার খেয়ে নিবি, ওখানেই পেয়ে যাবো আশা করছি।

আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পারার পর খুব খারাপ লাগছে। হুট করে এভাবে পুরো কথা না শুনে চলে আশাটা ঠিক হলো না। কোয়েলের কথা মতো নীচে চলে গেলাম খেতে কিন্তু আদিত্যকে কোথাও দেখলাম না। কোথায় উনি? কোনোরকম একটু খেয়ে নিয়ে উঠে পড়লাম।

কোয়েল: মনে হয় বাগানের ওদিকেই আছে। মন খারাপ করে খেতেই এলো না বেচারা। বায় দ্য ওয়ে, তুই দেখা হলে আদিত্যদা কে কি বলবি? মানে হ্যাঁ নাকি না? (মুচকি হেসে)

মৌমিতা: আব, ক..কি আবার বলবো?

কোয়েল: ইশ, ঢং করছে দেখো। হ্যাঁ বলবি তো? বল, বল।

আমি শুধু লাজুক হেসে মাথা নাড়লাম আর তাতেই কোয়েল এক লাফ দিলো। আমি হেসে ওখান থেকে বাগানের দিকে চলে এলাম। একটু এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম কিন্তু কেউ নেই। হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলে কেউ হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে পিছন থেকে হ্যাঁচকা টান মারলে আমি ব্যক্তিটির বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। মাথাটা তুলতেই দেখলাম, আদিত্য।

মৌমিতা: আপনি? এভাবে কেউ টানে নাকি? ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি।

আদিত্য: আমি ছাড়া তোমাকে ছোঁয়ার অন্যকাওর সাহস আছে বলে আমার মনে হয় না।

মৌমিতা: আ..আপনি নেশা করেছেন?

আদিত্য কথা বলতেই আমি অ্যালকোহলের সুবাস পেলাম ওনার মুখ থেকে। সাথে সাথেই আমি মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলে উনি আমাকে আরো শক্ত করে ধরে বললেন,

আদিত্য: মৌ প্লিজ! আর আমাকে দূরে সরিয়ে রেখো না। আমি আর পারছি না তোমার থেকে দূরে থাকতে। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ।

মৌমিতা: (নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে) আদিত্য প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। এখন আপনি হুঁশে নেই।

আদিত্য: আমি হুঁশেই আছি লাভ। প্লিজ একটাবার আমার কথাটা শোনো।

আদিত্য আমার মুখ নিজেরদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে, ওনার কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকিয়ে বললেন,

আদিত্য: আমি জানি আমি ভুল করেছি বাট সেই একটা রাতের জন্য তুমি আর কতদিন আমাকে শাস্তি দেবে বলো? জিয়ার ব্যাপারটাও তো তুমি সব জানো এখন। সত্যি বলছি আমি, তুমি ছাড়া আমার লাইফে আগে কেউ আসেনি আর না পরে আসবে। আমি তোমার সাথেই আমার হোল লাইফ স্পেন্ড করতে চাই। একটা চান্স দাও, প্লিজ…

আদিত্য হঠাৎ করেই আমার মুখের দিকে এগিয়ে আসলে আমি বুঝতে পারি উনি কি চাইছেন। সাথে সাথে চোখ বুজে নিলেই কেন জানো আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। মনে পরে যায় ওনার কথাগুলো যখন উনি অস্বীকার করেছিলেন। চোখ খুলে ফেলি আমি! আর নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেই আদিত্যকে। ওনার বুকে বেশ জোরেই ধাক্কাটা মারি ফলে উনি অনেকটা পিছিয়ে যান।

মৌমিতা: আর কতবার বললে আপনি বুঝতেন যে আমি চাইছি না এই মুহূর্তে আপনার কাছে আসতে? আপনি কি মনে করেন বলুন তো নিজেকে? যখন যেটা ইচ্ছা সেটা করবেন আর আমি সেটা মেনে নেবো? বিয়ের রাতে ঠিক এভাবেই আমাকে শক্ত করে ধরে বলেছিলেন যে আপনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানেন না, কোনোরকম সম্পর্ক রাখতে চান না। এরপরে আপনি কি আপনার এই কথা রাখতে পেরেছেন? আজ কয়েকমাস পর ঠিক একইভাবে আমাকে বলছেন আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে চান। কি সিওরিটি আছে আপনি এই কথার দাম দেবেন? শুভদৃষ্টির সময় ওই যে একবার তাকিয়ে ছিলেন তারপর আর ফিরেও তাকাননি আমার দিকে। এদিকে এখন চোখে চোখে রাখছেন। কীভাবে বিশ্বাস করবো যে আপনি আবার বদলে যাবেন না? কীভাবে বিশ্বাস করবো আপনাকে? বলতে পারেন?

আদিত্যর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পরতে দেখলে আমি চুপ করে যাই।আমি কি একটু বেশি বলে ফেললাম? যখনই আমি ওনাকে মেনে নেবো ভাবছি তখনই এই প্রশ্নগুলো যে আমার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এইভাবে বলাটা ঠিক হলো না, আমি তো ভালো ভাবেও বলতে পারতাম।

আদিত্য: তু..তুমি যেটা বলেছো একদম ঠিকই বলেছো। কিন্তু কি বলো তো, আমি নিজেও জানতাম না আমি এইভাবে বদলে যাবো। এইসব ভালোবাসা সম্পর্কে না ছিলো বিশ্বাস আর না ছিলো কোনো ধারণা। বিশ্বাস করতাম না দেখেই ধারণা রাখতে চাইনি কোনোদিন। কিন্তু তোমাকে দেখলে কেন জানো তোমার প্রতি আমার একটা টান অনুভব হতো। তুমি অন্যকোনো ছেলের সাথে কথা বললে একটা ভয় হতো হারিয়ে ফেলার। তোমাকে কেউ বাজে কথা বললে আমার খারাপ লাগতো আর, আর তোমার কষ্ট হলে আমারও কষ্ট হতো। এই অনুভূতিগুলোর কারণ বুঝতে পারছিলাম না তখন রাজ বললো এটাই নাকি ভালোবাসা। জানি না কীভাবে কি হয়ে গেছে, ভুল হয়ে গেছে আমার। স্যরি! সবকিছুর জন্য স্যরি! পারলে ক্ষমা করে দিও। শুধু শেষে এটুকুই বলবো, একবার ভালোবেসে ফেললে, সত্যিকারের ভালোবেসে ফেললে মানুষ হয়তো সেটা জীবনেও ভুলতে পারে না। সবারটা জানিনা, আমি তো পারবো না। আগেইন স্যরি, আজকের জন্য এবং আগে যা যা করেছি সব কিছুর জন্য।

আদিত্য চলে গেলে আমি মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে আসি। এদিকে আদিত্যকে চোখ মুছতে মুছতে আসতে দেখলে রাজ ঘাবড়ে যায়। আদিত্যের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আদিত্য রাজকে দেখে, ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। রাজ বুঝতে পারে সাংঘাতিক কিছু হয়েছে কিন্তু কিছু বলে না সেই মুহূর্তে। আদিত্যকে এভাবে কাঁদতে আজ অবধি দেখেনি রাজ। বাবার সাথে কথা কাটাকাটি হলে হয়তো সামান্য চোখের জল ফেলতো কিন্তু এভাবে মন খুলে কাঁদবে আদিত্য ব্যানার্জী? অবাক লাগছে রাজের সাথে ভয়ও হচ্ছে। আদিত্য কিছুক্ষণ পর সরে এসে অন্যদিকে ঘুরে বললো,

আদিত্য: আমাকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দে।

কথাটা বলেই আদিত্য বেরিয়ে গেলো গেস্ট রুম থেকে। গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে রোডে উঠে গেলো সোজা।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

বি:দ্র: ধামকাটা কেমন লাগলো এবং পরবর্তীতে কি হবে তা জানাতে ভুলবেন না গঠনমূলক মন্তব্য দ্বারা। একটু ভালো ভাবে মন্তব্য করলে খুশি হবো।

আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here