‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব ৬৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
কেউ কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে এই প্রশ্নটা কানে ভেসে এলে সবাই পিছনের দিকে ফিরে তাকায়। আদিত্য হেসে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে রাজকে! কোয়েলও খুশি হয়ে এগোতে নিলে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করে থেমে যায়। করুন ও অসহায় ভাবে একবার নিজের বাবার দিকে তাকায়, আরেকবার রাজের দিকে তাকায়।
আদিত্য: আব, রাজ তুই আমার সাথে ওদিকে চল। তোকে আমার কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করাবো।
বুঝতে পারলাম আদি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রাজদাকে নিয়ে চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই কাকাই বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
আশীষবাবু: দাদা, তোমার কি মত বললে না তো?
আকাশবাবু: দেখ এখানে আমি আর কি বলবো? তুই কোয়েলের বাবা, তুই যা করবি ওর ভালোর জন্যই তো করবি। এখন কোয়েল মা কি চাইছে এটাই বড়ো কথা।
কাকাই কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল চুপ করেই থাকে। সেই দেখে আমি বলে উঠি,
মৌমিতা: এটা নিয়ে না হয় পরে…
কোয়েল: আমি রাজি।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগে যে কোয়েল এমন কিছু বলবে সেটা ভাবিনি আমি। সবার সামনে কোয়েলকে কিছু বলতেও পারছি না। কোয়েল নীচের দিকেই তাকিয়ে আছে একভাবে। কাকাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম কাকাইও অবাক হয়েছে। আমি কোয়েলকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে আস্তে করে বললাম,
মৌমিতা: কি বলছিস এসব তুই? মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোর?
কোয়েল: যা বলেছি ঠিকই বলেছি। আমি রাজি! (জোরে)
কোয়েল এটুকু বলেই চলে গেলো। সবাই হাসিমুখে এই বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলে আমি আদিকে মেসেজ করে দিলাম জানো এক্ষুনি আমার সাথে দেখা করে রাজদাকে সঙ্গে নিয়ে। কিছুক্ষণ পর, ওরা আসলে আমি সাথে সাথে বলে উঠি,
মৌমিতা: কোয়েল বিয়েতে মত দিয়েছে।
আদিত্য: হোয়াট? ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
রাজ: বুঝলাম না। কি ব্যাপারে কথা বলছিস তোরা?
আমি রাজদাকে সবটা খুলে বলতেই রাজদা কেমন জানো নিস্তেজ হয়ে গেলেন। এমন সময় কাকাই আমাদেরকে ডেকে দেখালেন,
আশীষবাবু: আদি! দেখ তোর বোন কত খুশি। ওর সাথেই আমি বিয়ে ঠিক করেছি কোয়েলের। আজ ওদের প্রথম দেখা কে বলবে?
আমরা কাকাইয়ের ইশারা অনুযায়ী তাকিয়ে দেখলাম কোয়েল একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আমরা বেশ অবাক হলাম কাকাইয়ের কথা শুনে। আমাদের সাথে সাথে কাকাইও অবাক হয়েছে। সেটা না হয় মেনে নিলাম কিন্তু কাকাইকে খুব একটা খুশি মনে হচ্ছে না, এমন কেন?
রাজ: আদি, বউদি আমি আসছি।
আমাদের ঘোর কাটলো রাজদার কথায়। আমাদেরকে কোনো প্রতিক্রিয়া করার সুযোগ না দিয়েই রাজদা বেরিয়ে গেলো। আদিওগেলো না রাজদার পিছনে। শুধু আস্তে করে বললো,
আদিত্য: সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাবে ভাবেনি হয়তো।
মৌমিতা: তুমি কোয়েলের সাথে একবার কথা বলো। ও আমাকে কিছুই বলেনি। (আস্তে করে)
আদি আমাকে সম্মতি জানালো। কিছুক্ষণ পর আদি, গেস্টদেরকে বাবা আর কাকাইকে ম্যানেজ করতে বললো। ও অন্যদিকে গেলে বুঝলাম কোয়েলের সাথে কথা বলতেই গেছে তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।
৯৭.
আদিত্য: তুই রাজকে ব্লক করেছিস কেন ছুটি? তুই কি করতে চাইছিস বলবি আমাকে?
কোয়েল: বিয়ে!
আদিত্য: রাজ ব্যতীত অন্যকাওকে বিয়ে করার কথা ভাবছিস তুই? দেখ ছুটি, এটা লাইফের অনেক বড়ো একটা ডিসিশন।সামান্য কারণে রাজের উপর অভিমান করে এতো বড়ো ভুলটা করিস না তুই।
কোয়েল: সামান্য অভিমান দাভাই? এতদিনেও তোমার প্রানপ্রিয় বন্ধুর সময় হয়নি আমাকে জানানোর যে, সে চার বছর আগে কোথায় গেছিলো, কেন গেছিলো। কি বলবো আমি মিস্টার সেনকে? এটাই যে, আমি এমন একজনকে বিয়ে করতে চাই যে কি না আমাকে চার বছর আগে কোনো কিছু না বলেই উধাও হয়ে গেছিলো? তখন উনি যদি উল্টে আমাকে প্রশ্ন করেন, কি সিওরিটি আছে যে সে ভবিষ্যতে তোমাকে এভাবে একা করে যাবে না? এর কি উত্তর দেবো আমি, তুমি আমাকে বলতে পারো? অনেক অপেক্ষা করেছি দাভাই! অনেক! আর পারবো না। তোমার বন্ধুর যদি আমাকে নিজের করার হতো তাহলে সে এভাবে এতদিন হাত গুটিয়ে বসে থাকতো না। ও যখন আমাকে চায় না তাহলে আমি কেন শুধু শুধু অপেক্ষা করব? বলে দিও তোমার বন্ধুকে আমি ওকে মুক্তি দিয়ে দিলাম, সারাজীবনের মতো।
কোয়েলের চোখ দিয়ে অনবরত জল গাল গড়িয়ে পড়ছে। কোয়েলের কথাগুলো সত্যি, যুক্তিযুক্ত তাই আদিত্যও কোনো উত্তর দিতে পারছে না। কোয়েলের কাছে গিয়ে আদিত্য ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আদিত্য: এতে তো তুই নিজেকে শাস্তি দিচ্ছিস ছুটি। তুই যে রাজকে ছাড়া ভালো থাকবি না এটা তুই নিজেও ভালো ভাবে জানিস। বিয়ে করাটা কি খুব জরুরী? তুই তো আ…
কোয়েল: দাভাই প্লিজ! আমার যা ডিসিশন নেওয়ার সেটা আমি নিয়ে নিয়েছি। পারলে তোমার বন্ধুকে গিয়ে বলো, আমাকে পেতে হলে, আমাকে অর্জন করে নিতে আর নাহলে ঠিক এভাবেই জানো সময়ের অপেক্ষা করতে করতে আমাকে অন্যকাওর হয়ে যেতো দেখে।
আদিত্য আর কিছু না বলে চলে এলো সে স্থান ছেড়ে। কি করে বলবে এই কথাগুলো সে রাজকে? তবুও আদিত্য রাজকে ফোন করে জানার চেষ্টা করলো যে সে এখন কোথায়। সেন্টারেই আছে নাকি বেরিয়ে গেছে কিন্তু এ কি? রাজের ফোন তো সুইচ অফ বলছে।
আদিত্য: রাজের ফোন সুইচ অফ বলছে কেন? আবার কিছু করে বসবে না তো রাগের বশে? খবর কীভাবে নেবো এখন আমি ওর?
আমি আদিকে খুঁজতে এসে দেখলাম ও চুপ করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও আমার দিকে তাকালো। বেশ চিন্তিত লাগছে ওকে দেখে তাই জিজ্ঞেস করলাম,
মৌমিতা: কি হয়েছে আদি? কোয়েল কি বললো?
আদি আমাকে পুরো ঘটনা বলতেই আমি ওকে আশ্বাস দিয়ে বললাম,
মৌমিতা: রাজদাকে এখন একটু একা থাকতে দাও। আমি তোমাকে বলছি রাজদা নিজের কোনো ক্ষতি করবে না।
আদিত্য: হম, সেটা তো আমারও মনে হচ্ছে মাঝে মধ্যে। কিন্তু আবার ভয় পাচ্ছি পাগলটা যদি কিছু ঘটিয়ে ফেলে? ওর পাগলামি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তোমার মৌ।
মৌমিতা: রাজদা যার জন্য পাগলামি করে সেই মানুষটা অন্যকাওর হয়ে যাবে সেটা কি মেনে নেবে বলে মনে হয় তোমার? চলো ওদিকে, সবাই খুঁজছে তোমায়।
আমি আদিকে বুঝিয়ে নিয়ে এলাম ঠিকই কিন্তু চিন্তা তো আমারও হচ্ছে। কি হতে চলেছে ভবিষ্যতে কিছুই বুঝতে পারছি না। সব ঠিক হবে তো আদৌ?
রাতে,
আমি নিজের ঘরে, ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে আছি। অপেক্ষা করছি আদির জন্য। পাশ ফিরে তাকাতেই যখন আমার আর আদির নাম গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লেখা দেখলাম বিছানার মধ্যখানে তখন আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। যেই লম্বা ফুলগুলো ঝুলছে সেগুলোই হাত ছোঁয়াতেই চোখের সামনে ছয়/সাত মাস আগের ঘটনা ভেসে উঠলো। ঠিক এভাবেই সবটা সাজানো ছিলো, সুন্দর করে। কিন্তু আদি আসা মাত্রই সবটা কেমন জানো ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছিলো। কত সহজে এই বিয়ে, আমাকে অস্বীকার করেছিলো। বারণ করেছিলো আমি জানো নিজেকে ওর স্ত্রী হিসেবে কাওকে পরিচয় না দিই। আর আজ দেখো! সেই মানুষটাই আমাকে চোখে হারায়। নিজে থেকে সবার সামনে নিজের স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে আজ আমাকে নিজের মর্যাদা দিতে চলেছে। পরিস্থিতি কতো তাড়াতাড়ি বদলে যায় তাই না? ভাবতেই অবাক লাগে।
আদিত্য: এতো কি ভাবছো যেআমার উপস্থিতিও টের পাচ্ছো না? হম?
এতটা কাছ থেকে আদির স্বর কানে আসতেই ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম। বুঝতে পারলাম ও আমাকে পিছন থেকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিয়েছে। আমি কোনো উত্তর না দিয়েই লাজুক হাসলাম। আদি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেও ওর দিকে তাকালাম না,আজ বোধ হয় একটু বেশিই লজ্জা লাগছে আমার ওর চোখে চোখ রাখতে।
আদিত্য: কি ভাবছিলে এতো? আগের কথা?
মৌমিতা আস্তে করে নিজের মাথা নাড়িয়ে সায় দিলে আদিত্য মৌমিতার মুখটা তুলে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
আদিত্য: আমি আর আমার নিজের ভুলের কথাটা মনে করতে চাই না। সবটা নতুনভাবে শুরু করতে চাই, থাকবে তো আমার পাশে? পারবে না সবটা ভুলে সারাজীবনের জন্য আমার সাথ দিতে?
মৌমিতা: পারবো। আমি মৃত্যুর আগে অবধি তোমার পাশেই থাকবো আদি।
আদিত্য: ছেড়ে যাবেনা তো আমায়? আই ক্যান্ট লিভ উইদআউট ইউ।
মৌমিতা আদিত্যের বুকে মাথা রেখে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো,
মৌমিতা: যেখানে আমিই পারবো না তোমাকে ছেড়ে থাকতে সেখানে কীভাবে ছেড়ে যাবো তোমায়?
আদিত্য হেসে মৌমিতার কাঁধে মুখ গুঁজে বললো,
আদিত্য: আই লাভ ইউ!
মৌমিতা: আই লাভ ইউ টু!
আদিত্য মৌমিতাকে সোজা করে ওর ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটজোড়া দ্বারা বন্দি করে নিলো। একহাত দিয়ে কোমরটা জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো মৌমিতাকে। মৌমিতাও ধীরে ধীরে নিজের জড়তা কাটিয়ে আদিত্যের চুলের ভাঁজে হাত প্রবেশ করিয়ে আরেক হাত দিয়ে আদিত্যের বাহু আঁকড়ে ধরলো।
পরেরদিন সকালে,
কোয়েল নিজের ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছে এমন সময় দেখলো আশীষবাবু বসে আছেন ড্রয়িং রুমে খবরের কাগজ নিয়ে। কোয়েল তা দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আশীষবাবুই জিজ্ঞেস করেন,
আশীষবাবু: ইউনিভার্সিটি যাচ্ছো?
কোয়েল: হ্যাঁ।
আশীষবাবু: আচ্ছা। সাবধানে যেও।
কোয়েল কোনোমতে মাথাটা নেড়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর মৌমিতা আর আদিত্যও নেমে আসে। আর বেরিয়ে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আকাশবাবুও অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে মিতা দেবী রান্নার লোককে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে নিজের ঘর গোছাতে চলে যান। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আশীষবাবু একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। উনি চুপচাপ সোফায় বসে নিজের হাত ঘড়িতে বারবার সময় দেখছেন। জানো কাওর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
আশীষবাবু: সময় তো হয়ে গেলো। এখনও এলো না যে?
__আমি কখনও কথার খেলাফ করি না মিস্টার সেন।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]