আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৫৫

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৫৫

আরশি সোফায় বসে সবার দিকে তাকাচ্ছে আর চকলেট খাচ্ছে। সবাই ছুটোছুটি করছে। সন্ধ্যায় ওর আর সূর্যের গায়ে হলুদ। মিহি গাঁদা ফুলের ঝুড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো হুট করে রেহান চলে আসায় ধাক্কা লেগে ফুলগুলো মাটিতে পড়ে গেলো। রেহানের হাতে ডেকোরেশন এর জিনিসপত্র। মিহি রাগি চোখে রেহানের দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। উল্টো ফুল ঝুড়িতে ভরতে লেগে গেলো। রেহান ও ওকে সাহায্য করছে আর কি যেনো বলছে। মিহি কোনো কথা বলছে না। আরশি ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
— ব্যাপারটা কি হলো! আজ এরা ধাক্কা খাওয়ার পর ও ঝগড়া করলো না কেনো? বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছি এরা আগের মতো ঝগড়া করছে না। কাহিনি কি? ( বির বির করে )
ডান পাশে তাকাতেই দেখলো নিধি হলুদের ডালা সাজাচ্ছে আর অভ্র ওকে নানাভাবে বিরক্ত করে যাচ্ছে। কখোনো গাল ধরে টানছে নয়তো চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। নিধি রাগি চোখে তাকাতেই মিষ্টি হাসি দিচ্ছে। আরশি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। চারপাশে খালি প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছে ও।
— আরশি আপু তোমাকে বড়ো আপু ঘরে ডাকছে। ( ফারহানা সূর্যের কাজিন )
— আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
আরশি ঘরে গিয়ে দেখলো সূর্য ওর বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আশে পাশে তাকিয়ে বললো,,
— আপনি এ ঘরে কি করেন? আপ্পি কোথায়?
— নেই ( ভাবলেশহীন ভাবে )
— নেই মানে! কিন্তু আপ্পি তো আমাকে এই ঘরেই আসতে বললো।
— তোমার আপ্পি নয় আমি বলেছি।
— কি!
— হ্যা। কাম হেয়ার!
আরশি ঢোক গিলে বললো,,
— আমি বরং নীচে যাই দেখি কে কি করছে!
— আই সেইড কাম হেয়ার!
সূর্যের কাছে যেতেই ওর হাত টান দিয়ে ওকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। আরশি চোখ বড় বড় করে সূর্য কে দেখছে। আরশির মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিতে দিতে বললো,,
— ঘুম পাচ্ছে আমার ঘুমোবো। আমার সাথে সাথে তুমিও ঘুমাবে। রাতে ঘুমোতে পারিনি ঠিক করে।
— আপ,,, আপনি ঘুমোন না আমার তো ঘুম পাচ্ছে না।
— না পেলেও আমার পাশে শুয়ে থাকতে হবে। সো চুপচাপ শুয়ে থাকো।
আরশি কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে ঘুমিয়ে গেলো। আরশি চেয়ে ও নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। বেশ কিছুক্ষণ পর নিজেও ঘুমিয়ে গেলো। ঘুম ভাঙলো আসরের আযানের সময়। পাশে তাকিয়ে সূর্যকে পেলো না। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই অহনা এসে ওকে টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো।
— তুই ঘুমিয়েছিলি বলে ডাক দেয়নি। একটু কিছু মুখে দে। আরেকটু পরে সব গেস্ট আসতে শুরু করবে খেতে পারবি না ঠিক মতো।
— তোমরা সবাই খেয়েছো মামনি?
— হ্যা আমাদের খাওয়া শেষ তুই খেয়ে নে।
আরশি খেয়ে উঠোনে এসে দেখলো স্টেজ সাজানো হয়ে গেছে। বিশাল উঠোনের একপাশে বর কে হলুদ ছোঁয়ানো হবে অপরপাশের স্টেজে কনেকে। মুখোমুখি বর-বউয়ের স্টেজ সাজানোর প্ল্যান টা মাহিরের ছিলো। বড়োরা আপত্তি করেছিলো কিন্তু সূর্যের আইডিয়াটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে বিধায় কারো বারণ শুনে নি। আরশি চারপাশে ভালো ভাবে দেখে আবার ভিতরে চলে গেলো। কেউ দেখলে কি বলবে! বিয়ের কনে এভাবেই ডেং ডেং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।।

সন্ধ্যায় আরশি কে লাল পারের কাচা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে সাথে আর্টিফিসিয়াল ফুলের গয়না। পায়ে আলতা, হালকা সাজের সাথে রক্তলাল লিপস্টিক। আরশি কে সাজানো শেষে সুজানা ওকে দেখে বললো, মাশআল্লাহ! আরশি রানি তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। থু থু! কারো নজর যেনো না লাগে। ( জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলো )
মিহি,নিধি, সূর্যের কাজিনরা ও আরশির অনেক অনেক প্রশংসা করলো। ওকে দেখে সূর্যের রিয়্যাকশন কি হবে সেসব নিয়েও হাসি ঠাট্টা করছিলো। যেগুলো শুনে আরশি লজ্জায় লাল-গোলাপি বর্ণ ধারণ করছিলো। আরশি কে স্টেজের কাছে নিয়ে আসলে অহনা আর আরিয়া ওর কপালে চুমু দিয়ে বসিয়ে দিলো। আরশি একবার আড়চোখে সূর্য যেখানে বসবে সেদিকে তাকালো। মাহির, রেহান, অভ্র আর নাহিদ বসে আছে স্টেজে। সূর্য নেই। আরশি চোঁখ সরিয়ে নিলো। হঠাৎ চারপাশে চাপা গুঞ্জন শুনতে পেলো। সূর্যের কাজিনরা ওওওও করে উঠলো। মিহি আরশি কে হালকা চিমটি কেটে সামনে তাকাতে ইশারা করলো। আরশি সেদিকে তাকাতেই দ্বিতীয়বার পলক ফেলতে পারলো না। সূর্য ওর স্টেজের দিকে যাচ্ছে কিন্তু ওর নজর আরশির দিকে। সূর্য সাদা পাঞ্জাবির সাথে কালো ধুতি পায়জামা পরেছে। চুলগুলো বরাবরের মতো উপরের দিকে উঠানো। হাতে ব্ল্যাক বেল্টের ঘড়ি। মুখে লেগে আছে এক চিলতে হাসি। দূর থেকেই আরশি কে ইশারা করে বুঝালো ওকে ভীষন সুন্দর লাগছে। বাকিরা শব্দ করে হেসে দিলো। হাসির আওয়াজে আরশির ঘোর কাটলো। মাথা নামিয়ে লাজুক হাসলো। মাহির সুজানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যা দেখে সুজানা লজ্জায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। গাঢ় সবুজ শাড়ি পড়েছে আজকে সুজানা, মিহি, নিধি আর সূর্যের বাকি কাজিনরা। মাহির বেশ কয়েকবার সুজানাকে ইশারা করে স্টেজের পিছনের দিকে খালি জায়গাটায় যাওয়ার জন্য বলেছে কিন্তু প্রতিবার সুজানা চোঁখ বড় বড় করে মাথা নেড়ে না করেছে। মাহির ওর দিকে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে।
সুজানা ওকে দেখে মিটি মিটি হাসছে। মাহির কে সবুজ পাঞ্জাবি তার উপর কালো মখমলের কটি। ভীষন কিউট লাগছে দেখতে। সবাই প্রথমে সূর্য কে হলুদ লাগাচ্ছে। ওর হলুদ দেওয়া শেষ হলে সেই হলুদ আরশির গায়ে ছোঁয়ানো হবে। মাহির আর সুজানা এক সাথে সূর্য কে হলুদ ছোঁয়ালো। সূর্য মাহির কে ফিসফিস করে বললো,,
— রিক রা কতদূর এলো ভাইয়া? অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে গেছে!
— আমি কল করেছিলাম বললো গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়েছে। চিন্তা করোনা কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে পড়বে।
নিধি হলুদ লাগাতে যাচ্ছিলো অভ্র ওর হাত ধরে বললো,
— চলো আমরা ও একসাথে হলুদ ছোঁয়াবো।
নিধি আড়চোখে রেহানের দিকে তাকালো। রেহান মিহিকে দেখতে ব্যস্ত। নিধি ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে অভ্রর সাথে মিলে সূর্যকে হলুদ ছোঁয়ালো।

আরিয়া নিরবে কেঁদে দিলেন। নিজের মেয়েটা কে সবসময় বেশ চিন্তায় থাকতেন তিনি। খালি মনে হতো ওদের জন্যই বোধয় ছেলেমেয়ে দুটোর জীবন নষ্ট হয়ে গেলো। অপরাধবোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। কিন্তু এখন তিনি নিশ্চিন্ত। ছেলেমেয়ে দুটো একে অপরকে ভালোবাসে। নিজেদের ইচ্ছেতে আবার বিয়ে করছে। এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে।
আরিয়ার ভাবনার মাঝেই আফিফ হাসান এসে ওনার কাঁধে হাত রাখলেন। আরিয়ার চোঁখে পানি দেখে ওনাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
— আজকে কাদার দিন নয় বুঝলে আরু! আজকে উল্লাসের দিন। যতো পারো ততো হাসো। কান্না নট অ্যালাউড।।
আরিয়া মুচকি হাসলেন।
— এই এই আমার আপুকে আমি আগে হলুদ লাগাবো!! প্লীজ মামনি, মা আমি আগে লাগাই?
— অবশ্যই লাগাবি আরশ। আয় আপুকে হলুদ ছুঁইয়ে দে!
আরশ হেলে দুলে আরশি কে হলুদ লাগিয়ে দিলো। আরশির চোঁখ ছলছল করছে।
— ওমা আপু কাদছিস কেনো? কেউ তো বকে নি তবে কি এই হলুদে জ্বলছে তোর! উঠিয়ে ফেলবি! এই আপু বল না!
আরশি আরশ কে জড়িয়ে ধরে বললো,,
— আমার মোটেও জ্বলছে না ভাই। চোখে কি যেনো পড়েছে তাই হয়তো পানি পড়ছে। তুই চিন্তা করিস না।
সুজানা এগিয়ে এসে দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আরশি কে শান্ত হতে বলে আরশ কে সূর্যেরর পাশে বসিয়ে দিলো। হঠাৎ কেউ চেঁচিয়ে বললো,,
— উই আর ব্যাক গাইস!!
রিক ব্ল্যাক পাঞ্জাবি, হোয়াইট প্যান্ট, হাতে সিলভার ওয়াচ পরে বড়সড় হাসি দিয়ে সকালের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর পিছনে ন্যান্সি আর রোজ সবুজ গাউন পরে মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে।
সূর্য-মাহির-রেহান-অভ্র-নাহিদ এগিয়ে গিয়ে রিককে জড়িয়ে ধরলো। রোজ আর ন্যান্সি আরশিদের কাছে এলো।
— নাও তোমরা এসে গেছে এবার হলুদ ছুঁইয়ে দাও তো জলদি।।
ওরা প্রথমে সূর্যকে তারপর আরশিকে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো।
— হোয়াট ইজ দিস গাইস! আমার ফ্রেন্ডের হলুদ আজ অথচ কোনো গানবাজনা নেই নট ফেয়ার! আরে কেউ মিউজিক অন করো রে!!!
কেউ একজন গান চালিয়ে দিলো।

🧡🧡
tu ho gayi one to two
oh kudiye what to do
oh ho gayi munde di
(tu turu turu turu )

রিক সবাইকে টেনে নিয়ে এলো নাচার জন্য। সবাই উরাধুরা নাচছে। বড়রা ওদের কান্ড দেখে হাসছে। রেহান আর অভ্র গিয়ে সূর্য কে ও টেনে নিয়ে এলো। আরশি কে জোর করেছিলো কিন্তু ও নাচবে না বলেছে। এক দফা নাচানাচি শেষ করে সবাই থামলো।
— আচ্ছা আমার না কাপল ডান্স দেখতে ইচ্ছে করছে।
তোমাদের কি ইচ্ছে করছে না?
— হ্যা করছে। ( সবাই একসাথে )
— কাদের ডান্স দেখতে চাও তোমরা??
— সূর্য-আরশি, সূর্য-আরশি!!
— ওকে। তো সূর্য আরশি তোমরা কি দেখতে পেয়েছো সবাই কি চাচ্ছে? তো আর দেরী না করে ডান্সফ্লোরে চলে এসো তো!!
সূর্য আরশির দিকে তাকিয়ে হাসছে। আরশি মাথা নাড়িয়ে না করছে। সবাই ডান্স করতে বলছে। সূর্য ঠোঁট কামড়ে হেসে আরশির সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। আরশি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। সূর্য আরশির দিকেই তাকিয়ে আছে। আরশি কিছুটা ইতস্তত করে হাত বাড়িয়ে দিলো।
— ওওওওও।।। ( রিক শিস বাজাচ্ছে , বাকিরা হাত তালি দিচ্ছে )

সূর্য আরশির হাত ধরে মাঝে এনে দাঁড় করালো। রিক গিয়ে মিউজিক অন করলো।

❤️❤️❤️❤️

Dua bhi lage na mujhey
dawa bhi lage na mujhey
jabse dil ko mere tu laga hain
neend raton ki meri
chahat baaton ki meri
chain ko bhi mere
tune yu thaga hain
jab sanse varu main
band ankhey karu main
najar tu yaar ayaaa
Dil ko karar aya
tujhpe hai pyar aya
pehli pehli baar aya
o yaara…………

আরশি আর সূর্য একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে ডান্স করছে। চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে ওদের কোনো খেয়াল নেই। দুজন একে অপরকে গভীরভাবে অনুভব করতে ব্যস্ত। মাহির সুজানাকে টেনে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে এলো। ওদের দেখা দেখি আরো অনেকে যোগ দিয়েছে। অভ্র নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে ডান্স করতে লাগলো। নিধি ফিসফিস করে বললো,,
— কি করছো অভ্র! ভাইয়া আছে তো এখানে।
— হ্যা আছে সে ও এখন তার প্রিয়তমাকে নিয়ে ব্যস্ত।
নিধি অভ্রর কথা শুনে রেহানের দিকে তাকালো। রেহান মিহির হাত ধরে টানছে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু মিহি বারবার না করছে। রেহান শেষে রেহান মিহি কে কোলে তুলে নিয়ে এলো। মিহি র চোঁখ কপালে। নিজেকে রেহানের থেকে ছাড়ানোর জন্য দাপাদাপি করছে।
— আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নামান আমাকে! রেহান! আরে এখানে আমার পরিবার আছে আপনার পরিবার আছে তারমধ্যে আপনি কি শুরু করলেন!
— শুরুতেই যদি আমার কথা শুনতে তাহলে আমাকে এটা করতে হতো না এখন বুঝো ঠ্যালা!

রেহান মিহির কোমর জড়িয়ে নাচতে লাগলো। মিহি বারণ করে যাচ্ছে কিন্তু মিহির কোনো কথাই ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here